নমস্কার মিত্রগণ।
আজতে আমরা জানবো বৈদিক সনাতন ধর্মের একমাত্র মহামন্ত্র গায়ত্রী হবার কারণ কি?
অন্য কোন কিছু নয় কেন?
ॐ भूर्भुवः स्वः
तत्सवितुर्वरेण्यं
भर्गो देवस्य धीमहि
धियो यो नः प्रचोदयात्।
ও৩ম্ ভূর্ভুবঃ স্বঃ
তৎসবিতুর্বরেণ্যং
ভর্গোদেবস্য ধীমহি।
ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।।
(ঋগ্বেদ-৩/৬২/১০, যজুর্বেদ-৩/৩৫ ও ৩০/২ এবং সামবেদ উত্তরার্চ্চিক-৬/৩/১০)
বঙ্গানুবাদঃ- পরমাত্মা প্রাণস্বরুপ, দুঃখনাশক ও সুখ স্বরুপ। তিনি আমাদের বুদ্ধিকে শুভ গুণ, কর্ম ও স্বভাবের দিকে চালনা করেন। সেই জগদুৎপাদক ও ঐশ্বর্যপ্রদাতা পরমাত্মার বরণযোগ্য পাপ-বিনাশক তেজকে আমরা ধারণ করি।
মহামন্ত্র হবার কারণ:
গায়ত্রী বেদের সর্বশ্রেষ্ঠ মন্ত্র। পরমাত্মার ধ্যানের জন্য গায়ত্রী সিদ্ধ বৈদিক মন্ত্র। এই মন্ত্রের দ্রষ্টা ঋষি বিশ্বামিত্র এবং দেবতা সবিতা। ঋষি বিশ্বামিত্র সর্বপ্রথম এই মন্ত্রের মর্ম্ম উপলব্ধি করে প্রচার করেছিলেন। মন্ত্রের দেবতা বা বিষয় সবিতা অর্থাৎ জগৎ-স্রষ্টা ব্রহ্মা। বেদারম্ভ সংস্কারে আচার্য এই মন্ত্রে ব্রম্মচারীকে দীক্ষা দান করেন। এই মন্ত্রের ছন্দের নাম গায়ত্রী। গানকারীকে ত্রাণ করে বলে এই মন্ত্রের নাম গায়ত্রী। প্রতিদিন উপাসনায় গায়ত্রী মন্ত্র জপ বা পাঠ করা আবশ্যক। গায়ত্রী মন্ত্রে দশটি শব্দ আছে।
যেমন- তৎ, সবিতুঃ, বরেণ্যম্, ভর্গঃ, দেবস্য, ধীমহি, ধিয়ঃ, যঃ, নঃ, প্রচোদয়াৎ। গায়ত্রী মন্ত্রের পূর্ব্বে প্রণব মন্ত্র "ওঁ" এবং "ভূর্ভুবঃ স্বঃ"(ভূঃ, ভুয়ঃ, স্বঃ) যোগ করে উচ্চারণ করতে হয়।
[তথ্যসূত্রঃ সত্যার্থ প্রকাশ, পৃষ্ঠা ১-৩।]
সকল সনাতন ধর্মালম্বীর উপনয়ন (পৈতা বা যজ্ঞোপোবীত) হয় এই গায়ত্রী মন্ত্রে।
শ্রীরামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ, শ্রী চৈতন্যদেব সহ সনাতন সভ্যতার সকল দিকপালরাই সকল সময়ে গায়ত্রী মহামন্ত্রকে সকলের মুক্তির একমাত্র পথ হিসেবে বলে গিয়েছেন।
কিন্তু অতিব কষ্টের বিষয় সমাজে কিছু মিথ্যচারী ব্যাক্তি গোষ্ঠী নিজ স্বার্থ হাসিল করার জন্য মনগড়া ব্যাখ্যা করে গায়েত্রী মন্ত্র থেকে সাধারণ সনাতনীদের দূরে রাখার চেষ্ঠা করছে।
আজ আমরা বিখ্যাত বিভিন্ন মনিষী গায়ত্রী মন্ত্র নিয়ে কি বলেছেন তা দেখব।
১. মহাঋষি বিশ্বমিত্র বলেছেন, “গায়ত্রীর সমান পবিত্র মন্ত্র চার বেদের মধ্যে আর নাই।
২. মহাঋষি যাজ্ঞবল্ক্য বলেছেনঃ “গায়ত্রীর থেকে শ্রেষ্ঠ মন্ত্র কখনও হয় নাই, আর কোনদিন হবেও না। উপনিষদ যেমন বেদের সার তেমনি গায়ত্রীও সকল বেদের সার।
৩. মহর্ষি মনু বলেছেন, “গায়ত্রী মন্ত্র সকল বেদের সার।গায়ত্রী মন্ত্র বিনা আর কোন পরিশুদ্ধির মন্ত্র নেই।
৪. ঋষি অত্রি বলেছেন, “পবিত্র গায়ত্রীর মন্ত্র দ্বারাই সকলের আত্মাকে পরিক্ষার করা সম্ভব।
৫. ব্রহ্মর্ষি নারদ বলেছেন, “যেখানে ভক্তিরুপী গায়ত্রী বিদ্যমান, সেখানে ঈশ্বরের না থাকার কোন সন্দেহ নাই।
৬. ঋষি পরাশর বলেছেন, “পবিত্র বেদের সকল সুক্তের মধ্যে গায়ত্রীর শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত।
৭. আর্য সমাজের সংস্থাপক মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী বলেছেন, “গায়ত্রী পরিত্যাগ করে অন্য কোন বস্তুর ধ্যান করা কখনও উচিৎ নহে। কারণ এর তুল্য কিছুই নাই। ইহা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ মন্ত্র আর নাই।
৮. শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছেন, “বেদ গায়ত্রী মন্ত্র জপের দ্বারা অনেকে সিদ্ধি প্রাপ্ত হন।
৯. স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, “গায়ত্রী সৎবুদ্ধির মন্ত্ৰ। এই জন্য এই মন্ত্রকে সকল মন্ত্রের মুকুটমণি বলা হয়।
১০. কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, “ভারতবর্ষকে জাগানোর বেদ গায়ত্রী মন্ত্র এত সরল যা এক নিঃশ্বাসে উচ্চারণ করা যায় এবং গায়ত্রী মন্ত্র দ্বারা অধ্যাত্মিক ও ভৌতিক উভয়বিধ কল্যাণ লাভ করা যায়।
১১. জগৎগুরু আদি শংকরাচার্য বলেছেন,”গায়ত্রীর মহাত্ম বর্ণনা করা মানুষের সামর্থের উর্দ্ধে, এবং গায়ত্রী মন্ত্ৰই এক মাত্ৰ আদি মন্ত্ৰ।
১২. ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণ বলেছেন, “গায়ত্রী মন্ত্র মৃতের মধ্যে জীবন জাগানোর আকুল পাৰ্থনা।
১৩. গান্ধী বলেছেন, “গায়ত্রী মন্ত্রের নিয়মিত জপ অসুস্হ ব্যক্তির নিরাময় এবং আত্মার উন্নতির জন্য উপযুক্ত সাধনা। স্থির মন এবং শান্ত হৃদয়ে গায়ত্রী জপ করলে সমস্ত বিপদ হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
১৪. মহর্ষি বশিষ্ঠ বলেছেন, “জড়বুদ্ধি, কু-পথগামী ও চঞ্চলমতি ব্যক্তিও গায়ত্রীর প্রভাবে উচ্চস্থর লাভ করে থাকেন।
১৫. সনাতন ধর্মের প্রাণপুরুষ যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,“ছন্দ বিশিষ্ট গায়ত্রীই সর্বশ্রেষ্ঠ মন্ত্র।
১৬. মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্র বলেছেন, “রাত্রি প্রভাত হয়েছে দেখে পূর্ব সন্ধ্যার উপাসনা সমাপন পূর্বক, সমাহিত চিত্তে গায়ত্রী মন্ত্রে, ঈশ্বর উপাসনা করতে আরম্ভ করলাম।
১৭. পণ্ডিত দীনবন্ধু বেদশাস্ত্রী বলেছেন, “গায়ত্রীই বেদের সর্বশ্রেষ্ট মন্ত্র, পরমাত্মারত্মার ধ্যানের জন্য, একমাত্র গায়ত্রীই শ্রেষ্ঠ সিদ্ধ বৈদিক মন্ত্র।
১৮. মহর্ষি চরক বলেছেন, "যিনি ব্রহ্মচার্য পালন করে মহামন্ত্র গায়ত্রী দ্বারা উপাসনা করেন, এবং আমলকী রস পান করেন, তিনি দীর্ঘজীবী হন।
১৯. মহর্ষি ব্যাসদেব বলেছেন, “যেমন ফুলের সার মধু, দুধের সার ঘি, তেমন বেদের সার হল গায়ত্রী মহামন্ত্র। সাধনার দ্বারা সিদ্ধিলাভে গায়ত্রী কামধেনুর সমান। যিনি গায়ত্রী ছেড়ে অন্যকিছুর উপাসনা করেন, তিনি ভিক্ষুকের মতই মূর্খ।
২০. ঋষি শঙ্খ বলেন, “গায়ত্রী মন্ত্র পতিত ব্যাক্তির উদ্ধারকর্তা।গায়ত্রী এর চেয়ে বড় কিছু ত্রিলোক এর কোথাও নেই।
২১. ঋষি শৌনক বলেন, “কোন দ্বিজ সকল ধর্মকর্ম পালন না করেও কেবল যদি গায়ত্রী জপ করেন তিনি মুক্তি লাভ করেন।
২২. অধ্যাপক আর শ্রীনিবাসন বলেন, “হিন্দু শাস্ত্রের যত মন্ত্র আছে তার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হল গায়ত্রী মন্ত্র।
২৩. লোকমান্য তিলক বলেন,"শুধু রাজনৈতিক মুক্তি ই ভারতের জনগণের মুক্তি এনে দেবেনা,এর জন্যে দরকার আত্মার মুক্তি আর তার জন্য দরকার অসৎ কে ত্যাগ করে সৎ এর আশ্রয় গ্রহণের পথ গায়ত্রী মন্ত্র।
২৪. মহামান্য মদন মোহন মালবিয়া বলেন, "ঋষিরা আমাদের যত মণিমুক্তো দিয়ে গেছেন তারমধ্যে সবচেয়ে দামী সম্পদ হল গায়ত্রী।সকল পার্থিব সম্পদকে তুচ্ছ করে ঈশ্বরভক্তিতে নিমগ্ন হওয়ার শক্তি হল গায়ত্রী।
২৫. ড.সর্বেপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ বলেন, "গায়ত্রী হল বৈশ্বিক প্রার্থনামন্ত্ৰ, আমরা যদি একে নিয়ে ভাবি তাহলেই বুঝব এর গুরুত্ব কত বেশী।এটি জীবনীশক্তিকে উদ্বুদ্ধকারী মন্ত্র।
২৬. স্বামী শিবানন্দ বলেন, "সকল মন্ত্রের মধ্যে হৃষীকেশ, সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে শক্তিশালী মন্ত্র হল গৌরবান্বিত গায়ত্রী মন্ত্র।
২৭. সদগুরু সন্ত কেশবদাস বলেন, "চিন্ময় চৈতন্যের একমাত্র দ্বার গায়ত্রী মন্ত্র।
২৮. রামকৃষ্ণ মঠের স্বামী মুখ্যানন্দ বলেন, "এখন ই সময় নারী-পুরুষ, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মধ্যে মহামন্ত্র গায়ত্রী প্রচার করার।
২৯. শঙ্কর মঠের চন্দ্রশেখরেন্দ্র সরস্বতী স্বামী বলেন, "যে ব্যাক্তি প্রতিদিন ভক্তির সাথে গায়ত্রী পাঠ করে সে রক্ষিত হয়।
৩০. শ্রী সত্য সাঁই বাবা বলেন, "প্রণব ওঁ এর বিস্তার ই হল গায়ত্রী।
“গায়ত্রী মন্ত্র গুরুমন্ত্র, একমাত্র মহামন্ত্র.”
যেসকল গ্রন্থে গায়ত্রীকে মহামন্ত্র হবার কথা বলা হয়েছে রেফারেন্স গুলো :-
(অর্থববেদ- ১৯/৭১/১), (মনুসংহিতা- ২/৮১ & ২/৮৩), তৈত্তিরীয় আরণ্যক (২। ১১। ১-৮),
(শঙ্খসংহিতা- ১১/১৮), (নিরুক্তকার যাস্ক- ৭।৪।১৫), (নারায়ণোপনিষদ- ৩৪),
(দেবী ভাগবত- ১১/১৬/১৫), (দেবী ভাগবত- ১২/৮/৮৯), (ভাগবত- ১০।৪৫।২৯),
(বৃহৎযোগী যাজ্ঞবল্ক্য- ১০/১০) প্রভৃতি।
গায়ত্রী মন্ত্রের বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য
Letter (Gland) Granthi Involved Energy
1. tat Tapini success
2. sa Saphalta bravery (Parakram)
3. vi Vishwa maintenance (Palan)
4. tur Tushti wellbeing (Kalyan)
5. va varda Yog
6. re revati love (prem)
7. ni Sookshma money
8. yam gyana brilliance(tej)
9. bhar bharga defence (raksha)
10. go gomati intellect (buddhi)
11. de devika suppression (daman)
12. va varahi devotion (nistha)
13. sya sinhani dharna (power of retention)
14. dhee dhyan Pran (life-breath)
15. ma maryada self-restraint (sanyam)
16. hi sfuta tap
17. dhi medha far-sightedness
18. yo yogmaya jagriti (awakening)
19. yo yogini production
20. naha dharini sarasta (sweetness)
21. pra prabhava ideal
22. cho ooshma courage
23. da drashya wisdom (vivek)
24. yat niranjan sewa (service)
সর্বশেষ উল্লেখ্য, গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু নিজে গায়ত্রী মন্ত্রে দীক্ষিত ছিলেন।
তিনি ও৩ম্ নাম জপ করতেন এবং বেদ অধ্যায়ন করতেন।
তথ্যসূত্রঃ চৈতন্য চরিতামৃত আদি লীলা, ৭ম অধ্যায়ের ১৩২ শ্লোকে বেদকেই স্বতঃপ্রমাণ বলা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে ও৩ম্ নামের শ্রেষ্ঠত্ব।
তাই আসুন আমরা সবাই বেদকে গ্রহণ করি।
ও৩ম্ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ
তথ্যসূত্রঃ
Carpenter, David Bailey; Whicher, Ian (২০০৩)। Yoga: the Indian tradition। London: Routledge। পৃষ্ঠা 31। আইএসবিএন 0-7007-1288-7।
ঋগ্বেদ ৩/৬২/১০
যজুর্বেদ ৩/৩৫/২
সামবেদ উত্তরার্চ্চিক ৬/৩/১০
অর্থববেদ- ১৯/৭১/১
সত্যার্থ প্রকাশ
http://www.awgp.org/spiritual_wisdom/gayatri/activation_of_internal_power_centres_by_gayatri_sadhan
Tags:
গায়ত্রী মহামন্ত্র