হুজুরের অপপ্রচারের খণ্ডন

প্রিয়রত্ন বিদ্যার্থী
0

হুজুরের অপপ্রচারের জবাব



এক ভ*ন্ড হুজুর কিছু মনগড়া রেফারেন্স উদ্ধৃত করে অপপ্রচার করেই চলেছে, তার চেলারা সেটার কপিপেস্ট করে অপপ্রচারের মাত্রা আরো অধিক করে দিয়েছে। মনে হলো সেই মিথ্যাচারের জবাব দেওয়া আমাদের উচিৎ তাই সেই অপপ্রচারের স্কিনসর্ট (সংযুক্ত আছে) নিয়ে নিলাম এবং এক এক করে প্রত্যেকটা দাবীর খণ্ডণ করলাম। চলুন তাহলে দেখে নিই -

ভন্ড চ্যালাদের ভন্ডামী

১.হুজুরের দাবীঃ~ ইসলামে কাউকে আব্দ (দাস) বলা হারাম, কারন আমরা আল্লাহ এর দাস। দাস তার মনিব কে রব্ব বলতে পারবেনা কারন রব্ব একমাত্র আল্লাহ। মুসলিম ৫৬৭৯-৮১।

☞প্রথমে কিছু সমার্থক শব্দ জেনে নিই- দাস শব্দের স্ত্রীবাচক হলো দাসী, দাস = গোলাম, বাঁদি (স্ত্রীবাচক), ক্রীতদাস....।

➤এখন হুজুরের দাবীর খণ্ডণ করা যাক - হুজুর দাবী করেছেন ইসলামে কাউকে দাস বলা হারাম কারন তারা নাকি আল্লাহর দাস তাই। তার পক্ষে যে রেফারেন্স উদ্ধৃত করেছে তা ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত মুসলিম শরীফের। নবী বলেছেন বলেই সেখানে (মুসলিম শরীফ-৫৬৭৮-৫৬৮১) উদ্ধৃতি  রয়েছে।  কিন্তু দেখা যায় নবী নিজেই 'গোলাম, দাস, দাসী শব্দের ব্যাবহার করতেন।
(সহীহ বুখারী-৬২৫৯, ই.ফা.) (সুনানু নাসাঈ-৪১৮৫, ই.ফা.) (সহীহ বুখারী-২০৯২, ই.ফা.)

নবী নিজেও বাঁদি (দাসী) রাখতেন এবং তার সাথে সহবাস করতেন, যার জন্য আয়েশা এবং হাফসা এই দুই স্ত্রী নবীর সাথে লেগে থাকতেন। (সুনানু নাসাঈ শরীফ-৩৯৬১, ই.ফা.) তাছাড়াও তিনি দাস ক্রয় করতেন (সুনানু নাসাঈ-৪১৮৫, ই.ফা.) দাস বিক্রিও করতেন (সহীহ বুখারী-২১৪১, ৬২৫৯, ই.ফা.)

২.হুজুরের দাবীঃ~ কথিত বর্নপ্রথা দাসপ্রথা নাই, সবাই আদম সন্তান সুরা হুজরাত ৪৯:১৩, সুরা নিসা ৪ঃ১, (আহমাদ ২৩৪৮৯, শুআবুল ঈমান, বাইহাক্বী ৫১৩৭নং)

➤উপরেই তথ্য সংবলিত প্রমাণ উদ্ধৃত করা হয়েছে যা দ্বারা হুজুরের দাবীর খণ্ডণ হয়ে যায় তথাপি আরো কিছু তথ্য দেওয়া যাক।কোরআনেই দাসরপ্রথার উল্লেখ রয়েছে যা তাদের নিকট স্বীকরণীয়। যেমন - সূরাঃ আল-মুমিনুন এবং আল-মাআরিজে বলা হয়েছে -

তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে [যৌনাঙ্গ] সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না। (কোরআন -২৩/৬)

কিন্তু তাদের স্ত্রী অথবা মালিকানাভূক্ত দাসীদের বেলায় [যৌনাঙ্গ সংযত না রাখলেও] তিরস্কৃত হবে না। (কোরআন -৭০/৩০) 
সূরা আল-আহযাব এর ৫০ নং আয়াতেও দাসীর উল্লেখ রয়েছে।

দাসীর সাথে যৌনসঙ্গম করলে তিরস্কৃত তো হবেইনা বরং ইসলামে দাসীর সাথে যৌনসম্ভোগ করলে সওয়াব মিলে, এটি স্বয়ম্ নবী বলেছেন (মিশকাতুল মাসাবীহ-১৮০৪, আধুনিক প্রকাশনী)

নিজ স্ত্রী ব্যতীত অন্যের সহিত মিলিত হওয়াকে সনাতন ধর্মানুযায়ী ব্যভিচার অথবা ধর্ষণ বলা হয়। উপরোক্ত আয়াত দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে বুঝিয়া লইবেন...। 

অপরদিকে সনাতন ধর্মে, নিজ স্ত্রী ব্যতীত অন্য নারীদেরকে মায়ের মতো মান্য করাকেই যথার্থ বলা হয়েছে—

মাতৃবৎ পরদারাংশ্চ পরদ্রব্যাণি লোষ্ঠবৎ।
আত্মবৎ সর্বভূতানি যঃ পশ্যতি স পশ্যতি।। (চাণক্য নীতি - ১২/১৩)

অনুবাদঃ- যে ব্যক্তি [নিজ স্ত্রী ব্যতীত] অন্য নারীকে মাতার সমান দেখেন, [নিজ ধন ব্যতীত ] অন্যের ধনকে মাটির ঢেলার সমান মনে করেন, আর সংসারের সমস্ত প্রাণীকে নিজ আত্মার সমান দেখেন বাস্তবে সেই যথার্থ দেখেন।

নিজ স্ত্রী ব্যতীত অন্যের সাথে যৌন সঙ্গম করলে এর কঠিন শাস্তির বিধানও রয়েছে —

পুমাংসং দাহয়েৎ পাপং শয়নে তপ্ত আয়সে।
অথ্যাদধ্যুশ্চ কাষ্ঠানি তত্র দহ্যেত পাপকৃত্।। (মনুস্মৃতি-  ৮/৩৭২)

পদার্থঃ- (পাপং পুমাংসম্) নিজ স্ত্রীকে ছেড়ে পরস্ত্রী বা বেশ্যাগমন করে সেই পাপী কে (আয়সে তপ্ত শয়নে)  উত্তপ্ত লোহার পালঙ্কে শায়িত করে (চ) আর (কাষ্ঠানি অভ্যাদধ্যুঃ) তার উপর লাকড়ি রেখে (তত্র পাপকৃত্ দহ্যেত)  বহু পুরুষের সম্মুখে ভস্ম করে দেবে।

অনুবাদঃ- নিজ স্ত্রীকে ছেড়ে পরস্ত্রী বা বেশ্যাগমন করে সেই পাপী কে সেই পাপীকে উত্তপ্ত লোহার পালঙ্কে শায়িত করে আর তার উপর লাকড়ি রেখে বহু পুরুষের সম্মুখে ভস্ম করে দেবে অর্থাৎ অগ্নি দ্বারা পুড়িয়ে মারবে।

হুজুরের দাবীঃ~ #হিন্দু ধর্মে শুদ্র জন্মগত কৃতদাস, আযাদ নাই। ঋগ্বেদ ১০/৯০/১১, যজুর্বেদ ৩১/৬, মনুসংহিতা ১ঃ১-৩,৮ঃ৪১৩-৪১৫

হুজুরের বানান লক্ষ্য করা বাদ দিয়ে রেফারেন্স অনুযায়ী মন্ত্র এবং শ্লোকদ্বয় দেখা যাক, তিনি অত্র তিনটি স্টেপে রেফারেন্স দিয়েছে, তিনটিই দেখা যাক ক্রমান্বয়ে -

➡১.(ঋগ্বেদ-১০/৯০/১১)

যৎপুরুষং ব্যদধুঃ কতিধা ব্যকল্পয়ন্।
মুখং কিমস্য কৌ বাহূ কা উরু পাদা উচ্যেতে॥
(ঋগ্বেদ-১০/৯০/১১)

প্রথমে হুজুরের প্রিয় হরফ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ভাষ্যানুবাদ - পুরুষকে খণ্ড খণ্ড করা হল, কয় খণ্ড করা হয়েছিল? এর মূখ কি হল, দু হস্ত, দু উদ, দু চরণ কি হল? (ঋগ্বেদ-১০/৯০/১১)

[হরফ প্রকাশনী থেকেই প্রকাশিত যজুর্বেদ-৪০/৮ মন্ত্রের ভাষ্যানুবাদে বলা হয়েছে - 

ব্রহ্ম [ঈশ্বর] প্রাকৃত শরীর রহিত, অক্ষত [অখণ্ডিত], স্নায়ুরহিত..। 

এর দ্বারাই উপরোক্ত মন্ত্রার্থের খণ্ডণ হয়ে যায়। তবে হুজুরের দাবীকৃত বাক্যের কিছুই কিন্তু পাওয়া যায়নি]  এইবার আর্য ভাষ্য দেখা যাক -

পদার্থঃ- (যত্ পুরুষং ব্যদধুঃ) যে পরমাত্মাকে পুরুষ রূপে কল্পিত করেছে, দেহ রূপে নির্ধারিত করেছে (কতিধা ব্যকল্পয়ন্) কতো প্রকারে কল্পিত করা হয়েছে (অস্য মুখং কিম্-আসীত্) এর মুখ কি (কৌ বাহূ) কোনটি হস্ত (কৌ উরু পাদা উচ্যেতে) কোনটি উরু, কোনটিকে পাদ বলা হয়॥

ভাবার্থঃ- রূপকালঙ্কারে সমষ্টি পুরুষকে দেহরূপে কল্পিত করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো তাঁহার কোনটি মুখ, কোনটি বাহু, কোনটি উরু, আর কোনটি পা। এর উত্তর পরবর্তী মন্ত্রে রয়েছে।

[ভাষ্যকারঃ শ্রী স্বামী  ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজক বিদ্যামার্তণ্ড]

যজুর্বেদেও উক্ত মন্ত্রটি উপলব্ধ। তাই ঋষিপ্রণীত ভাষ্যটিও দেখা যাক -

পদার্থঃ- হে বিদ্বানগণ ! আপনারা (য়ৎ) যে (পুরুষম্) পূর্ণ পরমেশ্বরকে (বি, অদধুঃ) বিবিধ প্রকারে ধারণ করেন, তাঁহাকে (কতিধা) কত প্রকারে (বি, অকল্পয়ন) বিশেষ করিয়া করেন এবং (অস্য) এই ঈশ্বরের সৃষ্টিতে (মুখ) মুখের সমান শ্রেষ্ঠ (কিম্) কে (আসীৎ ) আছে (বাহু) বাহুবল ধারণকারী (কিম্) কে (উরূ) ঊরূর কার্য্য কে করে এবং (পাদৌ) পায়ের ন্যায় নীম্ন অংশ (কিম) কে (উচ্যেতে) অভিহিত হয়॥ (যজু-৩১/১০)

ভাবার্থঃ- হে বিদ্বানগণ ! এই সংসারে অসংখ্য সামর্থ্য ঈশ্বরের, সেই সমুদায়ে উত্তম অঙ্গ মুখ ও বাহু আদি অঙ্গ কে আছে? ইহা বলুন ॥  [ভাষ্যকার : মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী]

➡২.(যজুর্বেদ -৩১/৬)

তস্মাদ্যজ্ঞাত্ সর্বহুতঃ সম্ভৃতং পৃষদাজ্যম্।
পশুংস্তাংশ্চক্রে বায়ব্যানারণ্যা গ্রাম্যাশ্চ যে॥
(যজুর্বেদ-৩১/৬)

হুজুরের প্রিয় হরফ প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত ভাষ্যানুবাদ - সে পুরুষ সর্বহুত যজ্ঞ থেকে দধি মিশ্র আজ্য সম্পন্ন করেছেন। তারপর তিনি বন্য ও গ্রাম্য বায়ব্য পশুদের উৎপন্ন করেছেন৷

আর্য ভাষ্যানুবাদ -

পদার্থঃ- হে মনুষ্য! (তস্মাত্) সেই পূর্বোক্ত (সর্বহুতঃ) যিনি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য সেই (যজ্ঞাত্) পূজনীয় পুরুষ পরমাত্মা হইতে সকল (পৃষদাজ্যম্) দধ্যাদি ভোগ করার যোগ্য বস্তু (সম্ভৃতম্) সম্যক্ সিদ্ধ উৎপন্ন হয়েছে (যে) যে (আরণ্যাঃ) বনের সিংহ আদি (চ) আর (গ্রাম্যাঃ) গ্রামে জন্মিত গৌ আদি রয়েছে (তান্) সেই সব (বায়ব্যান্) বায়ু তুল্য গুণযুক্ত (পশুন্) পশুদের যিনি (চক্রে) উৎপন্ন করেন, তাঁহাকে তোমরা জানো॥

ভাবার্থঃ- যিনি সকলের গ্রহণ করার যোগ্য, পূজনীয় পরমেশ্বর, সারা বিশ্বের কল্যাণের জন্য দই আদি ভোজন যোগ্য পদার্থ আর গ্রামের তথা বনের পশু রচনা করিয়াছেন, সকলে তাঁহার উপাসনা করো॥  [ভাষ্যকারঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী]

➡৩.(মনুস্মৃতি-১/১-৩ এবং ৮/৪১৩-৪১৫)

মনুং একাগ্রং আসীনং অভিগম্য মহর্ষয়ঃ।
প্রতিপুজ্য যথান্যায়ং ইদং বচনং অব্রুবন্॥ 
(মনুস্মৃতি-১/১)

পদার্থঃ- (মহর্ষয়ঃ) মহর্ষিগন (একাগ্রম্ আসীনম্) একাগ্রপূর্বক বসে থাকা (মনুম্) মনুর (অভিগম্য) নিকটে গিয়ে, তাদের (যথান্যায়ম্) যথোচিত (প্রতিপূজ্য) প্রণাম করে (ইদম্) এই কথা (অব্রুবন্) জিজ্ঞেস করেন।

ভাবার্থঃ- মহর্ষি মনু একাগ্রচিত্তে বসে, ঈশ্বরের চিন্তন করছিলেন, সেই সময় অনেকজন ঋষি আর্য আসলেন তারপর পরস্পর অভিবাদন সেরে জানার উদ্দেশ্যে ঋষি আর্যগন মহর্ষি মনুকে জিজ্ঞাসা শুরু করলেন।

ভগবনসর্ববর্ণানাং যথাবদনুপুর্বশঃ।
অন্তরপ্রভবানাং চ ধর্মান্নো বক্তুং অর্হসি॥ 
(মনুস্মৃতি-১/২)

পদার্থঃ- (ভগবন্) হে ভগবান! আপনি (সর্ববর্ণানাম্) সমস্ত বর্নের (যথাবত্) সঠিকভাবে  (অনুপূর্বশঃ) ক্রমানুসারে (অন্তরপ্রভবাণাম্ চ) এবং সমস্ত বর্নের মধ্যে থাকা বর্নাশ্রমের (ধর্মান) কর্তব্য সম্পর্কে (নঃ) আমাদের (বক্তুম্) বলার (অর্হসি) সামর্থবান।

ভাবার্থঃ- হে ভগবান মনু আপনি বর্ণ অর্থাৎ - ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়,বৈশ্য,শূদ্র সম্পর্কে এবং এই চার বর্নের মধ্যে থাকা বর্ণাশ্রম অর্থাৎ - ব্রহ্মচর্য, গৃহস্থ,বানপ্রস্থ ও সন্যাসের কর্তব্য সম্পর্কে আমাদেরকে যথাযথ বলুন।

ত্বং একো হ্যাস্য সর্বস্য বিধানস্য স্বয়ংভুবঃ।
অচিন্ত্যস্যাপ্রমেযস্য কার্যতক্ত্বার্থবিতপ্রভো॥ 
(মনুস্মৃতি- ১/৩)

পদার্থঃ- (প্রভো) হে প্রভু (ত্বম একঃ হি) কেবল আপনি (অস্ত্য সর্বস্য বিধানস্য) এই সব বেদ শাস্ত্রের বিধান সম্পর্কে (স্বয়ংভুবঃ) ঈশ্বর প্রদত্ত যা অপৌরুষেয় (অচিন্তস্য) সত্য, যুক্তিযুক্ত যা ভাবনার বাহিরে (অপ্রমেয়স্য) যেথায় সব অর্থাৎ অপরিমিত সত্য বিদ্যার বিধান রয়েছে  (কার্যতক্ত্বার্থবিত) ব্যবহারিক তথ্য সম্পর্কে জানেন।

ভাবার্থঃ- হে প্রভু  - অপৌরুষেয়, অনাদি  বেদে যে কর্মের  অর্থাৎ যজ্ঞাদি কার্য্য ও ব্রহ্মতত্ত্ব সম্পর্কে যা বর্ননা করা হয়েছে , তার যথার্থ ভাব কেবল আপনি জানেন। আমরাও তা সম্পর্কে অবগত হতে চাই।

[হুজুরের প্রিয় মানবেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়কৃত অনুবাদও দিয়ে দিলাম, নয়তো পরে কেহ ভাবতে পারেন ঐটাতে হয়তো হুজুরের উদ্ধৃত কথন রয়েছে, তাই দেখা যাক তাতে কি রয়েছে-

অনুবাদ : ভগবান্ মনু একাগ্রচিত্তে সুখে উপবিষ্ট আছেন, মহর্ষিগণ তাঁর সমীপে অভিগমন ক'রে যথাবিধি তাঁর পূজাদি ক'রে তাঁকে বললেন - ভগবন্! আপনি চার বর্ণের এবং তদনন্তর সম্ভূত সমীর্ণ জাতিগণের সমুদায় ধর্ম আনুপূর্বিক আমাদের বলুন। কারণ হে প্রভো! সেই কর্মবিধায়ক অচিন্ত্য অপরিমেয় অপৌরুষেয় ও সমগ্র বেদশাস্ত্রের কার্য, তত্ত্ব এবং অর্থজ্ঞান বিষয়ে উপদেশ দিতে একমাত্র আপনিই অদ্বিতীয়।। ১-৩৷৷  

এতেও হুজুরের লিখার কিছুই নেই, অর্থাৎ হুজুর যে মিথ্যাচারী তা প্রমাণিত ।

☞অষ্টম অধ্যায়ের ৪১০-৪২০ নং পর্যন্ত প্রক্ষিপ্ত। কেন প্রক্ষিপ্ত তা হুজুরের রেফারেন্সকৃত ৩টি শ্লোকের পরে লিখছি -

শূদ্রং তু কারয়েদ্দাস্যং ক্রীতং অক্রীতং এব বা ।
দাস্যায়ৈব হি সৃষ্টোঽসৌ ব্রাহ্মণস্য স্বয়ম্ভুবা ॥ ৮/৪১৩

অনুবাদঃ ক্রীত অর্থাৎ অন্নাদির দ্বারা প্রতিপালিত হোক বা অক্রীতই হোক শূদ্রের দ্বারা ব্রাহ্মণ দাসত্বের কাজ করিয়ে নেবেন। যেহেতু বিধাতা শূদ্রকে ব্রাহ্মণের দাসত্বের জন্যই সৃষ্টি করেছেন।।

ন স্বামিনা নিসৃষ্টোঽপি শূদ্রো দাস্যাদ্বিমুচ্যতে ।
নিসর্গজং হি তত্তস্য কস্তস্মাত্তদপোহতি ॥ ৮/৪১৪

অনুবাদ: প্রভূ শূদ্রকে দাসত্ব থেকে অব্যাহতি দিলেও শূদ্র দাসত্ব কর্ম থেকে অব্যাহতি পেতে পারে না। দাসত্বকর্ম তার স্বভাবসিদ্ধ কর্ম (অর্থাৎ জন্মের সাথে আগত)। তাই ঐ শূদ্রের কাছ থেকে কে দাসত্ব কর্ম সরিয়ে নিতে পারে ।

ধ্বজাহৃতো ভক্তদাসো গৃহজঃ ক্রীতদত্ত্রিমৌ ।
পৈত্রিকো দণ্ডদাসশ্চ সপ্তৈতে দাসয়োনয়ঃ ॥ ৮/৪১৫

অনুবাদঃ দাসত্বের কারণজনিত দাস সাত প্রকার, যথা

(১) প্রজ্ঞাহৃত অর্থাৎ যুদ্ধে শত্রুকে পরাজিত করে তার যে দাসকে বিজেতা সংগ্রহ করে। 

(২) ভক্তদাস:- যে লোক কেবল ভাত খেতে পাওয়ার জন্য দাসত্ব স্বীকার করেছে। 

(৩) গৃহজ– গৃহে উৎপন্ন অর্থাৎ বাড়ীতে যে দাসী থাকে তার গর্ভে উৎপন্ন; এর অন্য নাম গর্ভদাস।

(8) ক্রীতদাস = যে দাসকে তার পূর্ব প্রভুর কাছ থেকে মূল্য দিয়ে কেনা হয়। 

(৫) দত্রিম দাস - স্নেহ-ভালবাসাবশতঃ কিংবা পুণ্যলাভের জন্য প্রভু যে দাসকে অন্য কাউকে দান করেছে। 

(৬) পৈতৃকদাস– বংশানুক্রমিক দাস; এবং 

(৭) দণ্ডদাস = রাজদণ্ড দিতে অসমর্থ হ'য়ে যে লোক দাসত্ব স্বীকার করে।

[হুজুরের প্রিয় মানবেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়কৃত অনুবাদিত ও সম্পাদিত মনুস্মৃতি হইতে উদ্ধৃত ]

প্রক্ষিপ্তানুশীলন – মনুস্মৃতি অষ্টম অধ্যায়ের ৪১০ হইতে ৪২০ নং পর্যন্ত প্রক্ষিপ্ত। নিম্ন কারণে প্রক্ষিপ্ত-

১.বিষয়বিরোধ - অষ্টম অধ্যায়ের প্রারম্ভে মহর্ষি মনু- অষ্টম-নবম অধ্যায়ের ১৮ মুখ্যবিষয়ের সংকেত করেছেন [মনু.৮/৪-৭]। সেই নির্ধারণ অনুসারে অষ্টম অধ্যায়ে পনেরো নং 'স্ত্রীসংগ্রহণ' বিষয় পর্যন্ত বর্ণন রয়েছে, যা ৩৮৭ নং শ্লোকেই সমাপ্ত হয়ে যায়। ইহার পশ্চাৎ ষোলো নং 'স্ত্রী-পুরুষ-ধর্ম' বিষয়, যা নবম অধ্যায়ের প্রথম শ্লোক থেকে প্রারম্ভ হয়। এর মধ্যে এই শ্লোকদ্বয় বিষয়বহির্ভূত এবং বিষয়ক্রমের বিরুদ্ধ। অতঃ এই শ্লোকদ্বয় প্রক্ষিপ্ত।

২.প্রসঙ্গবিরোধ - (ক) মহর্ষি মনুর স্বয়ম্ নির্দেশিত বিষয়সংকেত শ্লোক [৮/৪-৭] অনুসারে ১৮ ব্যবহার নির্ণয়ের সমাপ্তি ৯/২৫০ নং শ্লোকে হয়েছে। ব্যবহারের সমাপ্তির পূর্বেই ৪১৯-৪২০ শ্লোকে সকল ব্যবহারের সমাপ্তি এবং তার ফলের কথন অসঙ্গত। (খ) বৈশ্য-শূদ্রের কর্মের প্রসঙ্গ [৯/৩২৬-৩৩৫ (১০/১-১০)] শ্লোকে রয়েছে, অত্র তা প্রসঙ্গবিরুদ্ধ।

৩.অন্তর্বিরোধ – (ক) ৪১২-৪১৮ নং শ্লোকের মধ্যে দাসরপ্রথার উল্লেখ রয়েছে এবং তাদের বলাত্ কাজ করানোর বিধান রয়েছে। এই প্রথা মহর্ষি মনুর মান্যতা বিরুদ্ধ। কাজ করানোর জন্য মহর্ষি মনু বেতন প্রদানের বিধান করেছেন [৮/২১৪-২১৬]। মহর্ষি মনুর ব্যবস্থায় 'দাস এর' অস্তিত্বই নেই, যত্র কোথাও দাস শব্দ থাকলেও তা সেবক অর্থে প্রয়োগ হয়েছে [৪/১৮০]। তিনি তো শূদ্র বর্ণ মেনেছেন এবং তাদের সেবাকার্য্য নির্ধারিত করেছেন আর তাও বল প্রয়োগ করে নয় অপিতু শূদ্রকে দ্বিজাতিদের স্বেচ্ছায় সেবা করার অধিকার দিয়েছেন [১/৯১, ৯/৩৩৪-৩৩৫, ১০/৯৯]। 

(খ) ৪১৬ নং শ্লোক ৫/১৫০ এবং ৯/১১৪,১৩০,১৩১ আদি শ্লোকের বিরুদ্ধ সেখানে  ধনের উপর স্ত্রী,কণ্যার অধিকার মানা হয়েছে। 

এই অন্তর্বিরোধের আধারেও এই শ্লোক প্রক্ষিপ্ত।

৪.শৈলীগত বিরোধ – এই শ্লোকগুলোর শৈলী মহর্ষি মনুর শৈলীর ন্যায় নির্লিপ্ত এবং সমভাবযুক্ত না হয়ে পক্ষপাত, দুরাগ্রহ এবং ঘৃণাযুক্ত। এই আধারেও এই শ্লোকগুলো মনুপ্রণীত সিদ্ধ হয়না। এই প্রক্ষিপ্ত শ্লোকের মধ্যে ব্রাহ্মণকে কর্তব্যভ্রষ্ট হলেও কোন দণ্ডের উল্লেখ করেনি, অন্যত্র কর্তব্য ত্যাগ এবং অপরাধ করলে ব্রাহ্মণকে অন্য বর্ণ হইতে অধিক দণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে [৮/৩৩৭-৩৩৮]। 

অতঃ এই বিসংগতির জন্য এই শ্লোকদ্বয় প্রক্ষিপ্ত।

বিশেষ –এই শ্লোকদ্বয়কে স্থানভ্রষ্ট না মেনে প্রক্ষিপ্ত এইজন্যই মানা হয়েছে, কেননা এগুলো - 

(১) বিষয়বিরোধের সাথে-সাথে অন্য আধারের ভিত্তিতেও প্রক্ষিপ্ত সিদ্ধ হয়। 

(২) এই অধ্যায়ে এই শ্লোকের সাথে সম্বন্ধ কোন প্রসঙ্গও নেই যে ঐখান থেকে শ্লোকগুলোকে খণ্ডিত মেনে স্থানভ্রষ্ট বলা যায়।

➤মিথ্যাচারী হুজুর ঋগ্বেদ- ১০/৯০/১১, যজুর্বেদ ৩১/৬, মনুসংহিতা ১/১-৩ শ্লোকের কোথায় পেলেন যে শুদ্র জন্মগত কৃতদাস, আযাদ নাই! ইহা কি আসমানী দৃষ্টিতে দৃষ্ট হয়েছে হুজুরের!

মনুস্মৃতি-৮/৪১৩-৪১৫ শ্লোক যে প্রক্ষিপ্ত তা উপরেই প্রমাণ দিয়াছি। কিন্তু তাতেও দাস মুক্তির উল্লেখ রয়েছে [৮/৪১৪] এবং স্বেচ্ছায় দাসত্ব স্বীকারেরও উল্লেখ রয়েছে [৮/৪১৫] যা মিথ্যাচারীর বিরুদ্ধে যায়। তাছাড়া শূদ্র তো জন্মসূত্রে হয়না, হয় গুণ-কর্মানুযায়ী -

তজাত্যাব্রাহ্মণশ্রাত্রক্ষত্রিয়োবৈশ্যএবন।
নশূদ্রোনর্চবম্লেচ্ছোভেদিতাগুণকর্মভিঃ। 
(শুক্রনীতি - ১/৪/৩৮)

অনুবাদঃ- এই জগতে জন্মদ্বারা ব্রাহ্মণ - ক্ষত্রিয় - বৈশ্য -
শূদ্র - ম্লেচ্ছ হয় না, কিন্তু গুণ এবং কর্মভেদে হয়।

অন্যদিকে দেখা যায় কেহ দাস মুক্ত করলে নবী স্বয়ম্ সেই দাসকে আবার দাসেই পরিণত করতে বিক্রি করে দিয়ে (সহীহ বুখারী-২৩৬৭, ই.ফা)।

হুজুরের দাবীঃ~ মেয়েকে দাসী বানায় বিক্রি বাধ্যতামূলক ঋগ্বেদ ৬/২৭/৮, মনুসংহিতা ৩:৫৩, ৯ঃ৪,৯/৯০-৯৪,গীতা ১৮:৪১–৪৪,১৮:৪৭, ৩ঃ৩৫।

➡৪.(ঋগ্বেদ-৬/২৭/৮)

দ্বয়াং অগ্নে রথিনো বিংশন্তি গা বধুমন্তো মঘবা মহ্যং সম্রাট্।
অভ্যাবর্তী চায়মানো দদাতি দূণাশেয়ং দক্ষিণা পার্থবানাম্।। 
(ঋগ্বেদ-৬/২৭/৮)

হরফ প্রকাশনী হইতে প্রকাশিত ভাষ্যানুবাদ - হে অগ্নি! চয়মানের পূর্ব, ঐশ্বর্যশালী সম্রাট অভ্যবর্তী আমাকে রথ ও রমণী সহকারে বিংশতি গোমিথুন প্রদান করেছেন। পৃথুর বংশধরের এ দান অক্ষয় অর্থাৎ কেউই এর বিলোপ করতে সমর্থ নয়।

আর্য ভাষ্য-

পদার্থঃ- হে (অগ্নে) অগ্নিসম বর্ত্তমান! যে (বধুমন্তঃ) শ্রেষ্ঠ বধূ আর (রথিনঃ) শ্রেষ্ঠ রথ যাঁহার হবে (দ্বয়ান্) প্রজা  আর সৈন্যদের (মধবা) প্রসংশিত ধনশালী (সম্রাট্) উত্তম প্রকারে শোভিত আর (অথ্যাবর্তী) চারো দিকে বিজয় বর্তমান (চায়মানঃ) সম্মানিত হোন আপনি (বিংশতিম্) বিংশ (গাঃ) গৌকে যেভাবে (দদাতি) আপনি দিয়ে থাকেন (মদ্যম্) আমার জন্য যে (পার্থবানাম্) রাজাদের (ইয়ম্) এই (দুণাশা) দুর্লভ নাশ যাহার এমন (দক্ষিণা) দক্ষিণা আপনাকে দেওয়া হয়েছে, তা দ্বারা তাঁকে প্রসন্ন করুন।

ভাবার্থঃ- যে রাজা কুলীন, বিদ্যা এবং ব্যাবহারে নিপুণ ধার্মিক রাজা আর প্রজাদেরকে ভয়রহিত করেন, সে অতুল প্রতিষ্ঠা প্রাপ্ত হয়। 
[এই সুক্তে ইন্দ্র, ঈশ্বর, রাজা এবং প্রাজাদের গুণবর্ণন করায় এই সুক্তের অর্থ এর পূর্বোক্ত সুক্তের অর্থের সাথে সঙ্গতি জানা প্রয়োজন বা উচিত]

ভাষ্যকারঃ ঋষি দয়ানন্দ সরস্বতী

[মিথ্যাবাদী মুসলিম ব্যক্তির কথনের কিছুই নেই এই মন্ত্রে]

➡৫.(মনুস্মৃতি-৩/৫৩,  ৯/৪, ৯/৯০-৯৪)

আর্ষ গৌমিথুনং শুক্লং কেচিদাহুমৃষৈব তত্।
অল্পোহ্যপ্যেবং মহান্ বাপি বিক্রয়স্তাদেব সঃ।। 
(মনুস্মৃতি- ৩/৫৩)

মানবেন্দুকৃত ভাষ্যানুবাদ - কোনও কোনও পণ্ডিতের মতে, আর্ষ বিবাহে বরের কাছ থেকে যে এক জোড়া গরু গ্রহণ করা হয়, তা শুল্ক। মনুর মতে, তা ঠিক নয় (অর্থাৎ গোমিথুনকে শুল্কবুদ্ধিতে গ্রহণ করা উচিত নয়)। কারণ, শুল্ক অল্পই হোক বা বেশীই হোক, তা গ্রহণ করলেই বিক্রয় সিদ্ধ হয় (অর্থাৎ শুল্ক স্বীকার করলে, মূল্যকে মূল্য বলেই বুঝতে হবে এবং মূল্যের বিনিময়ে যা দেওয়া হয়, তা বিক্রয় করাই হয়)। [আর্ষ বিবাহে গোমিথুন দান গ্রহণ কন্যা বিক্রয় বুদ্ধিতে নয়। গোমিথুন গ্রহণের যে বিধান, তা শাস্ত্রসম্মত এবং তার সংখ্যাগত পরিমাণ শাস্ত্রের দ্বারা নিয়মিত। বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিক্রেয় বস্তুর গুণদোষ বিচার করে মুল্যের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু আর্ষবিবাহে যে গোমিথুন গ্রহণ করা হয়, তা ধর্মপ্রয়োজনে, উপভোগের জন্য নয়]।

এই অনুবাদেও এমনটা বলেনি যে মেয়েকে দাসী বানায় বিক্রি বাধ্যতামূলক, আর ব্রেকেটে দেওয়া লিখনী অনুবাদের অংশই নয় যার জন্যই ব্রেকেট দিয়েছে। 

এবার দেখি আর্য ভাষ্য-

পদার্থ+ভাবার্থঃ- (কেচিত্) কিছু লোক (আর্ষ) আর্ষ বিবাহে (গৌমিথুনং শুল্কম্) এক জোড়া ষাঁড় শুল্ক নেওয়ার (আহুঃ) কথন করে (তত্) তা (মৃষা+এব) ভুল তথা  মিথ্যা (অপি+এবম্) কেননা এই প্রকার (অল্পঃ+অপি বা মহান্) কিছু অথবা অধিক ধন লেনা-দেনা (সঃ তাবত্) সে অবশ্যই (বিক্রয়ঃ এব) বিক্রয়ের মতোই হয়ে যায়।

এখানে মেয়েদের দাসী কিংবা বেচাকেনার কথা দূরে থাক বরং যৌতুক নেওয়ার জন্য নিষেধ করা হয়েছে।

কালেহদাতা পিতা বাচ্যো বাচ্যশ্চানুপয়ন্ পতিঃ।
মৃতে ভর্তরি পুত্রস্তু বাচ্যো মাতুররক্ষিতা।। 
(মনুস্মৃতি- ৯/৪)

মানবেন্দুকৃত ভাষ্যানুবাদ - বিবাহযোগ্য সময়ে অর্থাৎ ঋতুদর্শনের আগে পিতা যদি কন্যাকে পাত্রস্থ না করেন, তাহ'লে তিনি লোকমধ্যে নিন্দনীয় হন; স্বামী যদি ঋতুকালে পত্নীর সাথে সঙ্গম না করেন, তবে তিনি লোকসমাজে নিন্দার ভাজন হন। এবং স্বামী মারা গেলে পুত্রেরা যদি তাদের মাতার রক্ষণাবেক্ষণ না করে, তাহলে তারাও অত্যন্ত নিন্দাভাজন হয়।

এতেও বলা হয়নি যে,মেয়েকে দাসী বানায় বিক্রি বাধ্যতামূলক। 

আর্য ভাষ্য দেখা যাক -

পদার্থ+ ভাবার্থঃ- (কালে) বিবাহযোগ্য অবস্থায় (অদাতা) কন্যাকে যিনি দেয় না অর্থাৎ বিবাহ দেয় না সে (পিতা বাচ্যঃ) পিতা নিন্দনীয় হয় (চ) আর (অনুপয়ন্ পতিঃ) [বিবাহ-পশ্চাৎ ঋতুদিনের অনন্তর] যে পতি স্ত্রীর সহিত সঙ্গম করে না সে নিন্দনীয় হয় (ভর্তরি মৃতে) পতির মৃত্যুর পর (মাতুঃ+অরক্ষিতা পুত্রঃ বাচ্যঃ) যে পুত্র মায়ের [ভরণপোষণ আদি দ্বারা] রক্ষা করে না সে নিন্দনীয় হয়।

ত্রীণি বর্ষাণ্যুদীক্ষেত কুমার্য্যৃতুমতী সতী।
ঊদ্ধন্ত কালাদেতস্মাদ্বিন্দেত সদৃশং পতিম্।। 
(মনুস্মৃতি- ৯/৯০)

মানবেন্দুকৃত ভাষ্যানুবাদ – কুমারী কন্যা ঋতুমতী হ'লেও তিন বৎসর পর্যন্ত গুণবান্ বরের অপেক্ষা করবে; ঐ সময় অতিক্রান্ত হলে অর্থাৎ ঐ সময়ের মধ্যে পিতা যদি তার বিবাহ না দেয়, তাহলে ঐ পরিমাণ কাল অপেক্ষার পর কন্যা নিজসদৃশ পতি নিজেই মনোনীত করে নেবে।

আর্য ভাষ্য -

পদার্থ+ভাবার্থঃ- (কুমারী) কন্যা (ঋতুমতী সতী) ঋতুস্রাবের পর (এতস্মাত্ কালাত্+ঊর্ধ্বম্) এই সময়ের পরে (ত্রীণি বর্ষাণি+উদীক্ষেত) তিন বর্ষ পর্যন্ত বিবাহের প্রতিক্ষা করে, তদনন্তর (সদৃশং পতি বিন্দেত) নিজ যোগ্য পতি বরণ করবে।

এই শ্লোকেও মেয়েদের বেচাকেনা কিংবা দাসী বানানোর কথা নেই বরং মেয়েদেরকে বলা হচ্ছে নিজ যোগ্য পতি বরণ করার জন্য।

অদীয়মানা ভর্তারমধিগচ্ছেদ্ যদি স্বয়ম্।
নৈনঃ কিঞ্চিদবাপ্নোতি ন চ যং সাধিগচ্ছতি।। 
(মনুস্মৃতি- ৯/৯১)

মানবেন্দুকৃত ভাষ্যানুবাদ - ঋতুমতী হওয়ার তিন বৎসর পরেও যদি ঐ কন্যাকে পাত্রস্থ করা না হয়, তাহলে সে যদি নিজেই পতি বরণ করে নেয়, তার জন্য সে কোনও পাপের ভাগী হবে না। কিংবা যাকে সে বরণ করে, তারও কোনও পাপ বা দোষ হবে না।

আর্য ভাষ্য -

পদার্থ ও ভাবার্থঃ- (অদীয়মানা) পিতা আদি অভিভাবক দ্বারা বিবাহ না করে (যদি স্বয়ম্ ভর্তারম্+ অধিগচ্ছেদ্) কন্যা যদি স্বয়ং পতিকে বরণ করে নেয় তাহলে (কিচিত্ এনঃ ন অবাপ্নোতি) সেই কন্যা কোন পাপের ভাগী হয় না (চ) আর (ন সা যম্ অধিগচ্ছতি) না তাহার কোন পাপ দোষ হয় যে পতিকে সে বরণ করে।

এখানে মুসলিম, মিথ্যাচারী, মুমিন হুজুর দাস দাসীর এবং মেয়ে বেচা কেনার কি পেলো? এর কিছুই তো নেই।

☞মনুস্মৃতি- ৯/৯২-৯৫ পর্যন্ত প্রক্ষিপ্ত। কিন্তু এই প্রক্ষিপ্ত শ্লোকেও দাস দাসী কিংবা মেয়ে বেচাকেনার কথন নেই। প্রথমে শ্লোকানুবাদ দিচ্ছি তদন্তর প্রক্ষিপ্তের কারণ লিখছি -

অলঙ্কারং নাদদীত পিত্র্যং কন্যা স্বয়ম্বরা।
মাতৃকং ভ্রাতৃদত্তং বা স্তেনা স্যাদ্যদি তং হরেৎ॥ ৯/৯২

অনুবাদ: কন্যা যদি স্বয়ংবরা হয়, তাহ'লে পিতার, মাতার কিংবা ভ্রাতার দ্বারা প্রদত্ত কোনও অলঙ্কারাদি গ্রহণ করা তার পক্ষে উচিত নয়। 

[কন্যা যে স্বয়ংবরা হবে তার এমন অভিপ্রায় না জেনে তার পিতা প্রভৃতিরা তাকে যে অলঙ্কার দিয়েছিল, তা সে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য থাকবে। কিন্তু কন্যার ঐ রকম অভিপ্রায় জেনেই যদি তারা অলঙ্কারাদি দেয়, তাহ'লে সেগুলি ফিরিয়ে দিতে হবে না। অতএব এই পাত্রটির সাথে আমরা কন্যার বিবাহ দেবো' এইরকম অভিপ্রায় নিয়ে যে অলঙ্কার দেওয়া হয়েছিল তার অন্যথা হ'লে তা গ্রহণ করা ঐ কন্যার পক্ষে সঙ্গত হবে না। ]; 

ঐ অলঙ্কারাদি গ্রহণ করলে সেই বর চোর ব'লে গণ্য হবে [ অতএব বিবাহের সময় মেয়েটির গায়ে যেসব অলঙ্কার থাকবে, তা ঐ বর ছাড়িয়ে দেওয়াবে]।

পিত্রে ন দদ্যাচ্ছুল্কং তু কন্যাং ঋতুমতীং হরন্।
স চ স্বাম্যাদতিক্রামেদৃতূনাং প্রতিরোধনাৎ ॥ ৯/৯৩

অনুবাদ: ঋতুমতী কন্যাকে যে বিবাহ করবে সেই ব্যক্তি কন্যার পিতাকে কোন শুল্ক দেবে না। কারণ, সেই পিতা কন্যার ঋতু নষ্ট করছেন বলে কন্যার উপর তার যে অধিকার তা থেকে তিনি বঞ্চিত হয়েছেন। [শুল্ক দিয়ে যেখানে কন্যাকে বিবাহ করা হয় সেরকম স্থানে কন্যা ঋতুমতী হ'লে পতিকে 'আর শুল্ক দিতে হবে না, এই প্রকার নিষেধ জানানো হচ্ছে। তার কারণ কি তাই বলছেন "স স্বাম্যাদতিক্রামেৎ", – সেই পিতা কন্যার উপর যে স্বত্ব ছিল তা থেকে বিচ্যুত হয়ে অন্য বয়স প্রাপ্ত হ'লে তখনও যদি পিতা বিবাহ না দেয়, তা হ'লে তার উপর আর স্বত্ব থাকতে পারে না। যে কন্যা শুল্কদেয়া' তার পক্ষেও ঐ কারণটি সমভাবে প্রয়োজ্য; কাজেই সেরকম স্থানেও পিতা তখন নিজ অধিকার থেকে বিচ্যুত হয়। অপক্রামেত্ - "অপক্রান্ত হয় অর্থাৎ নিবৃত্ত হয়। "প্রতিরোধনাৎ"= অপত্য উৎপাদনের কাজ প্রতিরূন্ধ করায়]।

ত্রিংশদ্বর্ষো বহেৎকন্যাং হৃদ্যাং দ্বাদশবার্ষিকীম্ ।
ত্র্যষ্টবর্ষোঽষ্টবর্ষাং বা ধর্মে সীদতি সত্বরঃ ॥ ৯/৯৪

অনুবাদ: ত্রিশ বৎসর বয়সের পুরুষ বারো বৎসর বয়সের মনোমত কন্যাকে বিবাহ করবে, অথবা, চব্বিশ বছর বয়সের পুরুষ আট বছরের কন্যাকে বিবাহ করবে। এর দ্বারা বিবাহযোগ্য কাল প্রদর্শিত হ'ল মাত্র। তিনগুণের বেশী বয়সের পুরুষ একগুণ বয়স্কা কন্যাকে বিবাহ করবে, এর কমবেশী বয়সে বিবাহ করলে ধর্ম নষ্ট নয়। [ ধর্মে সীদতি সত্বরঃ বাক্যের তাৎপর্য সম্বন্ধে মেধাতিথি বলেন, বিবাহবিষয়ে বরের বয়সের তিন ভাগের একভাগ কন্যার বয়স হতে পারে, যদি ঐ পুরুষ তার ধর্মকর্মে বিঘ্ন আসছে দেখে বিবাহে ত্বরান্বিত হয়। এই শ্লোকটির তাৎপর্য সম্বন্ধে মেধাতিথি বলেন, যে মেয়েটিকে পুরুষ বিবাহ করবে তার তুলনায় মেয়েটির বয়স, উপরি উক্তরকম ভাবে কম হবে, কিন্তু তাই বলে পরস্পরকে যে ঐ বয়সেই বিবাহ করতে হবে এমন নয় এবং উল্লিখিত পরিমাণ বয়সের সংখ্যা ধর্তব্য নয়। কিন্তু নিজের তুলনায় বয়সে বেশ ছোট যে মেয়ে তাকেই বিবাহ করা উচিত, এই অর্থই এখানে সূচিত হচ্ছে। কারণ, এই বচনটি বিবাহ-প্রকরণে অর্থাৎ 'বিবাহ করবে এইরকম বিবাহবিষয়কে বিধি-বাক্যের সাথে পঠিত হচ্ছে না। তা যদি হত, তাহ'লে এই বচনটির দ্বারা ঐ 'ত্রিশ বৎসর' প্রভৃতি কালটি বিবাহ-ক্রিয়ার দ্বারা সংস্কার্য যে স্ত্রী এবং পুরুষ তাদের বিশেষণরূপে গৃহীত হত এবং ঐ কালটি ঐ কিয়ার অঙ্গ হত। ] [মানবেন্দু.....]

☞এখানে শ্লোকানুবাদ ভিন্ন অনুবাদকদের নিজস্ব লেখনী যুক্ত আছে তা জ্ঞানীমাত্রই বুঝবে।

প্রক্ষিপ্তানুশীলন – মনুস্মৃতি-৯২-৯৫ নং শ্লোক নিম্নলিখিত আধারের অনুসারে প্রক্ষিপ্ত–

১.অন্তর্বিরোধ- (১) বর্ণক্রম দ্বারা বিবাহ আদর-সৎকার, দায়ভাগবিভাজন আদি কথন মহর্ষি মনুর মান্যতা বিরুদ্ধ, কেননা মহর্ষি মনু সবর্ণা স্ত্রীকে বিবাহের বিধান করেছেন [৩/৪, ৭/৭০]। (২) যদি গন্ধর্ব বিধিতে অন্য বর্ণেও বিবাহ হয় তাহলে সেই বিবাহও মান্য বিবাহে পরিগণিত, তখনও আদর-সৎকারে বর্ণানুক্রম হইতে ভিন্নতার প্রশ্নই আসেনা। (৩) এই প্রকারই ৯২-৯৩ শ্লোক ৯০-৯১ শ্লোকের এবং ৯৪-৯৫ শ্লোক ৩/১-৫ শ্লোকের বিরোধ রয়েছে। সেখানে স্ত্রীদের যুবাবস্থায় বিবাহের বিধান রয়েছে। 

২.বিষয়বিরোধ- বিষয়সংকেতক শ্লোক [৯/১,১০৩] অনুসারে এই বিষয় স্ত্রীদের আপৎকালিন ধর্মের কথন। স্বয়ংবর বিবাহিত কন্যার পৈত্রিক ধনে অধিকার [৯২], বিবাহ অবস্থা [৯৩-৯৪], আদি কথন বিষয় হইতে ভিন্ন বর্ণন, অতঃ এই শ্লোকদ্বয় বিষয়বিরুদ্ধ। এই আধারে ৯২-৯৫ শ্লোক প্রক্ষিপ্ত।

☞ "অমৃতস্য পুত্রাঃ" ব্লগে মনুস্মৃতির কোন কোন শ্লোক প্রক্ষিপ্ত সেই সকল রেফারেন্স একত্রে প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে দেখে নিতে পারেন। 

লিংক - https://aryapsbd.blogspot.com/2023/01/blog-post_22.html

➡৬.(গীতা-১৮/৪১-৪৪, ১৮/৪৭, ৩/৩৫)

ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বিশাং শূদ্রাণাং চ পরন্তপ।
কর্মাণি প্রবিভক্তানি স্বভাবপ্রভবৈর্গুণৈ॥ 
(গীতা-১৮/৪১)

পদার্থ: হে পরন্তপ (ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বিশাং শূদ্রাণাং চ) ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্রগণের (কর্মাণি) কর্মসমূহ (স্বভাবপ্রভবৈঃ গুণৈঃ) স্বভাবজাত গুণানুসারে (প্রবিভক্তানি) বিভক্ত হইয়াছে।

সরলার্থ: হে পরন্তপ, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রদিগের কর্মসকল স্বভাবজাত গুণানুসারে পৃথক্ পৃথক্ বিভক্ত হইয়াছে।

শমো দমস্তপঃ শৌচং ক্ষান্তিরার্জবমেব চ। 

জ্ঞানং বিজ্ঞানমাস্তিক্যং ব্রহ্মকর্ম স্বভাবজম্॥  (গীতা-১৮/৪২)

পদার্থ: (শমঃ) মনঃসংযম (দমঃ) ইন্দ্রিয়-সংযম (তপঃ, শৌচং ক্ষান্তিঃ) তপঃ, শৌচ, ক্ষমা (আর্জবং) সরলতা, কৌটিল্যহীনতা (জ্ঞানং) শাস্ত্রপাণ্ডিত্য (বিজ্ঞানম্) শাস্ত্রার্থতত্ত্বনিশ্চয়, আত্মতত্ত্বানুভব (আস্তিক্যম্ এব চ) এবং সাত্ত্বিকী শ্রদ্ধা, পরলোকাদিতে বিশ্বাস (স্বভাবজম্ ব্রহ্মকর্ম) ব্রাহ্মণের স্বভাবজাত কর্ম।

সরলার্থ: শম, দম, তপঃ, শৌচ, ক্ষমা, সরলতা, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও সাত্ত্বিকী শ্রদ্ধা–এই সমস্ত ব্রাহ্মণের স্বভাবজাত কর্ম (লক্ষণ)।

শৌর্যং তেজো ধৃতির্দাক্ষ্যং যুদ্ধে চাপ্যপলায়নম্।
দানমীশ্বরভাবশ্চ ক্ষাত্রং কর্ম স্বভাবজম্॥
(গীতা-১৮/৪৩)

পদার্থ: (শৌর্যং) পরাক্রম (তেজঃ) বীর্য (ধৃতিঃ) ধৈর্য (দাক্ষ্যং) কার্যদক্ষতা (যুদ্ধে অপি অপলায়নংচ) যুদ্ধে অপরাঙ্মুখতা (দানম্) মুক্তহস্ততা, ঔদার্য (ঈশ্বরভাঃ চ) শাসনক্ষমতা (স্বভাজং ক্ষাত্রং কর্ম) ক্ষত্রিয়ের স্বভাবজাত কর্ম।

সরলার্থ: পরাক্রম, তেজ, ধৈর্য, কার্যকুশলতা, যুদ্ধে অপরাঙ্মুখতা, দানে মুক্তহস্ততা, শাসন-ক্ষমতা, এইগুলি ক্ষত্রিয়ের স্বভাবজাত কর্ম (লক্ষণ)।

কৃষিগোরক্ষ্যবাণিজ্যং বৈশ্যকর্ম স্বভাবজম্।
পরিচর্যাত্মকং কর্ম শূদ্রস্যাপি স্বভাবজম্॥ 
(গীতা-১৮/৪৪)

পদার্থ: (কৃষিগৌরক্ষ্যবাণিজ্যং) কৃষি, গোরক্ষা ও বাণিজ্য (স্বভাবজং বৈশ্যকর্ম) বৈশ্যের স্বভাবজাত কর্ম (পরিচর্যাত্মকং কর্ম) সেবাত্মক কর্ম (শূদ্রস্য অপি স্বভাবজম্) শূদ্রের স্বভাবসিদ্ধ।

সরলার্থ: কৃষি, গোরক্ষা ও বাণিজ্য বৈশ্যদিগের এবং সেবাত্মক কর্ম শূদ্রদিগের স্বভাবজাত।

শ্রেয়ান্ স্বধর্মো বিগুণ পরধর্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাৎ।
স্বভাবনিয়তং কর্ম কুর্বন্নাপ্নোতি কিল্বিষম্॥ 
(গীতা-১৮/৪৭)

পদার্থ: (বিগুণঃ [অপি]) দোষবিশিষ্ট হইলেও (স্বধর্মঃ সু-অনুষ্ঠিতাৎ) উত্তমরূপে অনুষ্ঠিত (পরধর্মাৎ) পরের ধর্ম হইতে (শ্রেয়ান্) শ্রেষ্ঠ (স্বভাবনিয়তং) স্বাভাবিক গুণানুগত (কর্ম কুর্বন্) কর্ম করিলে [মনুষ্যঃ] (কিল্বিষং) পাপ (নাপ্নোতি) প্রাপ্ত হয়না।

সরলার্থ: স্বধর্ম দোষ-বিশিষ্ট হইলেও সম্যক্ অনুষ্ঠিত পরধর্ম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। স্বভাব-নির্দিষ্ট কর্ম করিয়া লোকে পাপভাগী হয়না।

শ্রেয়ান্ স্বধর্মো বিগুণঃ পরধর্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাৎ। 
স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধর্মো ভয়াবহঃ॥ 
(গীতা-৩/৩৫)

পদার্থ: (স্বানুষ্ঠিতাৎ) উত্তমরূপে অনুষ্ঠিত (পরধর্মাৎ) পরধর্ম হইতে (বিগুণঃ) কিঞ্চিৎ দোষবিশিষ্ট (স্বধর্ম) স্বীয় ধর্ম, স্বকর্ম (শ্রেয়ান্) শ্রেষ্ঠ (স্বধর্মে) স্বধর্মে (নিধনং) নিধন (শ্রেয়ঃ) কল্যাণকর (পরধর্মো) পরের ধর্ম (ভয়াবহঃ) ভয়ঙ্কর, অনিষ্টকর।

সরলার্থ: স্বধর্ম কিঞ্চিদ্দোষবিশিষ্ট হইলেও উহা উত্তমরূপে অনুষ্ঠিত পরধর্ম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। স্বধর্মে নিধনও কল্যাণকর কিন্তু পরধর্ম গ্রহণ করা বিপজ্জনক।

[গীতাশাস্ত্রী জগদীশচন্দ্র ঘোষ বি.এ. সম্পাদিত]

এখানে কোথাও মিথ্যাচারী হুজুরের বলা - মেয়েকে দাসী বানায় বিক্রি বাধ্যতামূলক, এরূপ কিছু পেলাম না কিন্তু ইসলামে ঠিকই এইসব আছে। নবী ও তাহার সঙ্গীরা মেয়েদের ও তাদের সন্তানদের বন্ধী করে দাসী বানাতেন বা বিক্রি করে দিয়েছিলেন দাসী বানানোর জন্য (সীরাতে ইবনে হিশাম, পৃষ্ঠা-২২৭, বা.ই.সে.) তাছাড়া আপনারা হয়তো জানেনই গণিমতের মাল হিসেবে মেয়েদেরকে, নারীদেরকে কি বানায় এবং কি করে। তাছাড়াও-

☞ইসলামের দৃষ্টিতে : 

১। নারীরা হচ্ছে ইহজীবনের ভোগ্যবস্তু (কোরআন-৩/১৪)।

২। নবী বলেছেন - দুনিয়ার উত্তম উপভোগ্য উপকরণ নারী (সহীহ মুসলিম-৩৫/১২, ই.ফা.)। 

৩। নারীরা শস্যক্ষেত্র, যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করার জন্য (কোরআন-২/২২৩)।

৪। নারীরা অশুভ  অপয়া, কুলক্ষণা (বুখারী.-৪৭২২-২৪, ই.ফা.)। 

৫।নারীরা সর্বাধিক বিপর্যয়কর (সুনানে ইবনে মাজাহ-৩৯৯৮, তা.পা.)

পছন্দ অনুযায়ী ৪টি ভোগ্যবস্তু অর্থাৎ নারী বিয়ে করার বিধান রয়েছে ইসলামে (কোরআন-৪/৩) ভোগ করার আগে বা পরে যদি ইচ্ছা হয় স্ত্রী পরিবর্তন করে অন্যগুলো বিয়ে করে নিবেন তাহলে তাহাই করার বিধান রয়েছে (কোরআন-৪/২০)........।

বিদ্রঃ ইসলাম মতবাদ নিয়ে এমনিতে লিখার কোন ইচ্ছা আমাদের নেই, কিন্তু হুজুর বা কোন মুসলিম আমাদের ধর্ম নিয়ে অপপ্রচার করলে তার জবাব তো দিতেই হয়,তাই এই লিখনী। তথাপি অপপ্রচারকারী হুজুর যদি ক্ষমাপ্রার্থনা করে তাহলে আর্টিকেল ডিলেট করা হবে। 

 

Post a Comment

0Comments

Please Select Embedded Mode To show the Comment System.*