সনাতন ধর্ম নিয়ে হুজুরদের মিথ্যাচার
বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে অনেক হুজুরই সনাতন ধর্ম নিয়ে মিথ্যাচার করে যার কোন বিচার হয়না। কিন্তু সনাতনীরা ইসলাম নিয়ে কিছু বললেই ধর্মঅবমাননার মামলা হয়, মারধর করা হয়, বাড়িঘর মন্দির মূর্তি ভাঙচুর করা হয়,লুটপাট করা হয়। মুসলিমদের অনেকেই তাও হুজুরেরাই যে আমাদের ধর্ম নিয়ে মিথ্যাচার করে তার কিছু ভিডিও সংগ্রহ করবো এখানে। ভিডিও তো অনেক আছে যা সব এখানে দেওয়া সম্ভব না। আবার হুজুর ব্যতিরেক বাকি অন্যদের ভিডিও দিলে তো শত শত হয়ে যাবে। তাই হুজুর বা ওয়াজের বক্তাদের কিছু সংখ্যক ভিডিও দিচ্ছি যা অসংখ্য মুসলিমরা শ্রবণ করেন এবং বাহবা দিয়ে ঐক্যমত পোষণ করেন।
ব্রাদার রাহুল
ব্রাদার রাহুল নামে পরিচিত এক ব্যক্তি যিনি সনাতন ধর্ম নিয়ে কত কত মিথ্যাচার করে তার ইয়ত্তা নাই। যেমন এই ভিডিওটি দেখুন–
তিনি বলছেন - ভাগবতের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৭৬নং শ্লোকে তাদের নবীর কথা বলা হয়েছে। সাধারণত ভাগবত বলতে শ্রীমদ্ভাগবতকে বুঝায়। শ্রীমদ্ভাগবতে ১২টি স্কন্ধ, আর প্রত্যেক স্কন্ধে অসংখ্য অধ্যায় এবং সেই অধ্যায়ে অসংখ্য শ্লোক আছে। তাই রেফারেন্স হয় তিন ধাপে- স্কন্ধ/অধ্যায়/শ্লোক।
সিস্টার রাহুল কোন স্কন্ধ তা বলেনি। আমরা (অমৃতস্য পুত্রাঃ টিম) শ্রীমদ্ভাগবতের প্রত্যেক স্কন্ধের দ্বিতীয় অধ্যায় চেক করলাম কিন্তু কোন দ্বিতীয় অধ্যায়েই ৭৬ শ্লোক পাইনি। যা পেয়েছি তা এরূপ–
- ১.প্রথম স্কন্ধের দ্বিতীয় অধ্যায়ে শ্লোক আছে ৩৪টি।
- ২.দ্বিতীয় স্কন্ধের দ্বিতীয় অধ্যায়ে শ্লোক আছে ৩৭টি।
- ৩.তৃতীয় স্কন্ধের দ্বিতীয় অধ্যায়ে শ্লোক আছে ৩৪টি।
- ৪.চতুর্থস্কন্ধের দ্বিতীয় অধ্যায়ে শ্লোক আছে ৩৫টি।
- ৫.পঞ্চম স্কন্ধের দ্বিতীয় অধ্যায়ে শ্লোক আছে ২৩টি
- ৬.ষষ্ঠ স্কন্ধের দ্বিতীয় অধ্যায়ে শ্লোক আছে ৪৯টি।
- ৭.সপ্তম স্কন্ধের দ্বিতীয় অধ্যায়ে শ্লোক আছে ৬১টি।
- ৮.অষ্টম স্কন্ধের দ্বিতীয় অধ্যায়ে শ্লোক আছে ৩৩টি।
- ৯.নবম স্কন্ধের দ্বিতীয় অধ্যায়ে শ্লোক আছে ৩৬টি।
- ১০.দশম স্কন্ধের দ্বিতীয়অধ্যায়ে শ্লোক আছে ৪২টি।
- ১১.একাদশ স্কন্ধের দ্বিতীয় অধ্যায়ে শ্লোক আছে ৫৫টি।
- ১২.দ্বাদশ স্কন্ধের দ্বিতীয় অধ্যায়ে শ্লোক আছে ৪৪টি।
সে মিথ্যাচার করছে তা তো বুঝলাম কিন্তু সে তার নবীর নামের সাথে 'কারিণী, নাশিনী' শব্দ ব্যবহার করে কি বুঝালেন 💃? কোন কোন সংস্করণে মাহাত্ম্য বলে একটা অংশ যুক্ত আছে যা মূল ভাগবতের অংশ নয়। যদি মাহাত্ম্যের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৭৬ শ্লোক দেখি তা এরূপ–
ভাগ্যোদয়েন বহুজন্মসমর্জিতেন
সৎসঙ্গমং চ লভতে পুরুষো যদা বৈ। অজ্ঞানহেতুকৃতমোহমদান্ধকার-নাশং
বিধায় হি তদোদয়তে বিবেকঃ।। ৭৬
বহুজন্মের অর্জিত পুণ্যের উদয় হলে মানুষের যখন সৎসঙ্গ লাভ হয়, তখন তার অজ্ঞানজনিত মোহ ও মদ (গর্ব)-রূপ অন্ধকার নাশ হয়ে বিবেক জাগ্রত হয়। ৭৬॥
এখানে মোহাম্মদ নয় অজ্ঞানজনিত মোহ ও মদের কথা বলা হয়েছে, এই মোহ ও মদকে নবী বলা মানে তো নবীকে অবমাননা করা হলো, এক্ষেত্রে রাহুলের বিরুদ্ধে কোন মিছিল হবে কি?
গীতা নিয়ে রাহুল বলেছে
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা - অধ্যায় নাম্বার ৪ শ্লোক নাম্বার ৭ আর ৮ দুটো মন্ত্রে স্পষ্টভাবে বলছে হিন্দু ধর্মটি সারা বিশ্বের জন্য নয়। প্রমাণ মন্ত্র -
অদা অদাহি ধর্মাস্যে গ্নানাতি ভাবাতি ভারাতা অভ্যুরথানম ধর্মস্যে তদে আত্মানম স্রুজামিহম পরিত্রাণায় সাধুনং বিনাশ্বা চয় দুষ্ক্রিতম ধর্ম সংস্থাপর্থানায়ে সমভাবমি ওগে ওগে।
পাগল এবং মাতালের ন্যায় ভুল কথন করে তিনি বলেছেন এই শ্লোকে বুঝানো হয়েছে যখন ধর্মের মধ্যে অধর্ম নেমে আসে সেই সময় ঈশ্বর একজন পাঠায় অথবা নিজেই আসে ভারতে... বুঝা গেল হিন্দু ধর্ম কেবল ভারতের জন্য। ↓তার পুরো ফোকাস শ্লোকে থাকা ভারত শব্দের উপর। বিচারহীন জ্ঞানহীন রাহুলের দ্বারা গীতা বুঝা অসম্ভব তিনি তা প্রমাণ করে দিয়েছেন। শ্লোকে ভারত শব্দ দ্বারা ভারত দেশ বুঝায়নি, ভারত নামে অর্জুনকে সম্বোধন করেছেন। কেবল গীতা-৪/৭ শ্লোকেই অর্জুনকে ভারত বলে সম্বোধন করেনি, অন্য অসংখ্য শ্লোকেই অর্জুনকে ভারত নামে সম্বোধন করা হয়েছে বা ডাকা হয়েছে। যেমন - গীতা-২/১৪, ২/১৮, ২/২৮, ২/৩০ গীতা-৩/৫, গীতা-১৮/৬২...
মোছলেহ উদ্দিন আজাদি উলীপুরী
তিনি বলেন ঋগ্বেদের ২০তম অধ্যায়ের কূন্তাপ সূক্তে গৌতম মুনি নাকি নবীর কথা বলেছেন। ভিডিওটি দেখুন–
মম গুরুজনং তব সেবনং তুলসীপাতা পুষ্ণ গঙ্গাজলং তব স্বর্গ বৎসনং পূজনং কঙ্গ মদ বদিতাং দেবান ধরাকান্তে প্রদীতাং বিশ্বং ভক্ষয় সদা সরধার্য্যনং ধ্যাননং পর্বতং গুহা লা ইলাহা হরতি পাপম ইল্ল ইলাহা পরম পদম জন্ম বৈকুণ্ঠপর অপ ইনতি তনাম জপং মহাম্মদং।
ঋগ্বেদের ২০তম অধ্যায় এভাবে রেফারেন্স হয়না, আর কোন বেদের কোথাও এইসব হাবিজাবি কিছুই নেই। তিনি এত বড় মিথ্যাচার করলেন তারপরেও কোন শাস্তিভোগ করতে হচ্ছেনা তাকে।
আব্দুর রহমান জামী
তিনি বলেন যে বেদে নাকি ইসলামকে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে, এবং মন্ত্রের নামে কিছু হাবিজাবি বলেন। উনার বক্তব্যের ভুলগুলো ভিডিওতেও টাইপ করে দেওয়া হয়েছে। ভিডিওটি দেখুন–
হুজুর বলছেন তিনি হিন্দু থেকে মুসলিম হয়েছেন। আর তাই তিনি ওয়াজ মাহফিলে বেদের নামে মিথ্যাচার করে বলেনে যে, বেদে বলা হয়েছে–
ইদং ইসলানাং কস্যাং ইল্লাল
এর অনুবাদ করে বলেন–
ইদং - দ্বীন বা জীবন বিধান ❌
ইদং - ইহা/এটি✅
ইসলানাং - ইসলাম ❌
(এটি সংস্কৃত শব্দই নয়)
কস্যাং - পছন্দ করা বা মনোনীত হওয়া❌
(এটি সংস্কৃত শব্দ নয়)
ইল্লাল - সৃষ্টিকর্তা ❌
(এটিও সংস্কৃত শব্দ নয়)
তারপর সমষ্টিগত অনুবাদ বলেন– সৃষ্টিকর্তার পছন্দ করা জীবন বিধানের নাম ইসলাম।❌
(চারো বেদের কোথাও এমন কিছু নাই)
এখানে হুজুর যা বলেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, গুজব, মনগড়া বানানো শব্দগুচ্ছ। এখানে কেবল একটাই সংস্কৃত শব্দ বলতে পেরেছে, তার অর্থ আবার ভুল বলেছে, বাকিগুলো কোন ভাষার সেটা কেবল হুজুর মহাশয় জানেন। তিনি হিন্দু ছিলো কিনা, আর থাকলেও কোন জ্ঞান নিয়ে তা ত্যাগ করেছে আর কি বুঝার বাকি আছে? মূল কথা হলো তিনি যে সনাতন ধর্ম নিয়ে মিথ্যাচার করলে তার বিচার কি কেহ করবে?
মাহমুদুল হাসান গুনভী
তিনি দুটি রেফারেন্স দিয়ে দাবী করেছেন বেদে উপনিষদে নাকি আল্লার কথা আছে। ভিডিওটি দেখুন, ভিডিওতেই সেই মন্ত্র এবং শ্লোক দিয়ে দেওয়া হয়েছে–
এসব বিকৃতকারীদের কি বিচার হয়েছে বা হবে? আরো কত কি মিথ্যা বলেছে জানতে চাইলে দেখতে পারেন সম্পূর্ণ ভিডিওটি –
উনি যদি দাবী করেন যে উনি সত্য বলছেন এখানে তাহলে উনাকে যা বলছেন তা নিয়েই শাস্ত্রার্থের আহ্বান 'অমৃতস্য পুত্রাঃ টিমের পক্ষ থেকে' শর্তশাপেক্ষে।
মিজানুর রহমান আজহারী
মিজানুর রহমান বলছেন হিন্দুধর্মে নাকি একটা নিয়ম আছে শুধু ব্রাহ্মণরাই বেদ ধরতে পারবে, নিম্নবর্ণের হিন্দুরা ধরতে পারবেনা। ভিডিওটি দেখুন–
ভিডিওতেই যজুর্বেদ-২৬/২ মন্ত্রার্থ দেওয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে বেদ সকলের জন্য। হিন্দু কে কি বললো তাতে কি আসে যায়? শাস্ত্র কি বলে তাহাই মান্য, তাহাই সঠিক, তাহাই প্রচারযোগ্য। মিজানুর রহমান যদি কে কি বলে তাহাই মান্য মনে তাহলে এটা কি মানেন– আমির হামজার কথানুযায়ী করোনা ধরলে কি কুরান মিথ্যা? করোনা তো ঠিকই ধরেছে এমন অনেককে, তাহলে?
মিজানুর রহমাম অন্যত্র বলেন হিন্দুধর্মে বিধান আছে - ভালো হিন্দু হতে হলে নাকি গোমূত্র পান করতে হবে, আর ছোট বাচ্চাদের পবিত্র ও মেধাবী করতে চাইলে তাদের গোবরের স্তূপে ফেলে দিতে হবে, পুরো গা গোবর দিয়ে মাখামাখি করতে হবে। ভিডিওটি দেখুন–
তিনি যা বলছেন তা কোন শাস্ত্রেই বলা হয়নিব,তারপরেও এই মিথ্যাচারীর কোন বিচার হয়ান।
তোফাজ্জল হক রাশেদী
তোফাজ্জল হক তো হিন্দুদের মালাউনের বাচ্চা, অভিশপ্ত জাতি, বর্বর জাতি বলছে কিন্তু তাও কোন বিচার নাই, বরং সামনে থেকে ঠিক ঠিক বলে সাপোর্ট করছে অর্থাৎ তারাও এটাই বলছে। ভিডিওটি দেখুন–
এর তো কঠিন বিচার হওয়া উচিৎ, কিন্তু কে করবে, কবে হবে?
নুর হোসাইন নেছারী
নুর হোসাইন দেবী দূর্গা জঘন্যভাবে কটূক্তি করে, তা লিখে বুঝালেও তার মনোভাব তোলে ধরা যাবেনা, তাই ভিডিওটি দেখুন তিনি কিভাবে বলছেন–
তিনি যে এসব নোংরামি করলেন, ধর্মঅবমাননা করলেন তার বিচার হয়নি, হবে বলেও মনে হয়না। আবার সামনে যারা বসে শুনছে তারা উনার বিরোধ না করে মজা নিচ্ছে, ভাবুন কেমন মনমানসিকতা তাদের।সহিদুল ইসলাম
সহিদুল যে পরিমাণ মিথ্যা বলেছে তা লিখতে গেলে অনেক লম্বা হবে, কেননা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মিথ্যা। তাই ভিডিওটি দেখুন, দেখলে হাসি আসবে কিন্তু তিনি যে মিথ্যাচার করছে তা ভুলবেন না যেন।
রেজাউল করিম কাওছারী
রেজাউল হুজুর বলে শ্রীকৃষ্ণ লুচ্চা, হরে অর্থ লুচ্চা, একই কথা তাদের মান্য ব্যক্তিকে নিয়ে বললে তো ধর্ম অবমাননা হয়ে যায় এর প্রতিবাদে কত কি করে ফেলে, কিন্তু ওদের বেলায় কিচ্ছু হয়না। দেখুন ভিডিওটি–
আবার বলিয়েন যে তিনি আমাদের ধর্মগ্রন্থ থেকে বলছেন, যদি ধর্মগ্রন্থ থেকে তিনি সত্য বলে থাকেন তাহলে এ নিয়ে শাস্ত্রার্থের খোলা আহ্বান শর্তশাপেক্ষে।
ওয়াসাক বিল্লাহ নোমানী
ওয়াসাক বিল্লাহ দেবী দূর্গা তথা গণেশ কার্তিল আদি সকলকে নিয়ে অসভ্য ভাষায় কটূক্তি করেছে কিন্তু আজও তার জেল হলোনা, জরিমানা হলোনা, পুলিশের মার খেলোনা। ভিডিও দেখুন–
তাদের এই ধর্ম অবমাননার বিষয় নিয়ে নিউজ চ্যানেলেও একটি প্রতিবেদন করা হয়েছিলো তাও প্রশাসন তাদের শাস্তি দেয়নি, তৌহিদি জনতা প্রতিবাদ করে বলেনি যে তাদের ধর্মে আঘাত দিওনা, অনুভূতিতে আঘাত দিওনা। ভিডিওটি –
আপনাদের জন্য আজ এই পর্যন্ত, আগামী কোন ব্লগে অন্য তথ্যসংগ্রহ করা হবে আপনাদের জন্য।
প্রস্তুতকরণ : অমৃতস্য পুত্রাঃ