পৌরাণিক কল্পভেদ মত সমীক্ষা
কোনপ্রকার ভূমিকা ছাড়া, সরাসরি পৌরাণিক ভ্রাতার লেখা দিয়েই শুরু করছি –
পৌরাণিক–
🟥পুরাণ সংখ্যা কয়টি? আমরা সকলেই জানি মহাপুরাণ ১৮ টি। পুরাণ গুলোতো এদের নাম উল্লেখ পাওয়া যায়। যথা:-
আদ্যং সর্বপুরাণানাং পুরাণং ব্রাহ্মমুচ্যতে ।
অষ্টাদশ পুরাণানি পুরাণজ্ঞাঃ প্ৰচক্ষতে ॥
ব্রাহ্মং পাদ্মং বৈষ্ণবঞ্চ শৈবং ভাগবতং তথা ।
অথান্যন্নারদীয়ঞ্চ মার্কণ্ডেয়ঞ্চ সপ্তমম্।
আগ্নেয়মষ্টমঞ্চৈব ভবিষ্যং নবমং তথা ॥
দশমং ব্রহ্মবৈবর্ত্তং লৈঙ্গমেকাদশং স্মৃতম্ ।
বারাহং দ্বাদশঞ্চৈব স্কান্দঞ্চাত্র ত্ৰয়োদশম্ ॥
চতুৰ্দ্দশং বামনঞ্চ কৌৰ্মং পঞ্চদশং স্মৃতম্ ।
মাৎস্যঞ্চ গারুড়ঞ্চৈব ব্রহ্মাণ্ডঞ্চ ততঃ পরম্ ॥
(বিষ্ণুপুরাণ:৩.৬.২১-২৫)
অনুবাদ:- ব্রাহ্মপুরাণ সমুদয় পুরাণের আদি বলে কীর্ত্তিত৷ পুরাণবিৎ ব্যক্তিরা বলেন,— পুরাণসকল অষ্টাদশ সংখ্যায় বিভক্ত। তন্মধ্যে প্রথম ব্রাহ্মপুরাণ, দ্বিতীয় পদ্মপুরাণ, তৃতীয় বিষ্ণুপুরাণ, চতুর্থ শিবপুরাণ, পঞ্চম ভাগবতপুরাণ, ষষ্ঠ নারদীয়পুরাণ, সপ্তম মার্কণ্ডেয় পুরাণ, অষ্টম অগ্নিপুরাণ, নবম ভবিষ্যপুরাণ, দশম ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণ, একাদশ লিঙ্গপুরাণ, দ্বাদশ বরাহপুরাণ, ত্রয়োদশ স্কন্দপুরাণ, চতুর্দশ বামনপুরাণ, পঞ্চদশ কূর্মপূরাণ, ষোড়শ মৎস্যপুরাণ, সপ্তদশ গরুড়পুরাণ এবং অষ্টাদশ ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ।
👉একই পুরাণের নাম ভাগবতেও পাওয়া যায়। যথা:-
ব্রাহ্মং পাদ্ম্যং বৈষ্ণবং চ শৈব লৈঙ্গং সগারুড়ম্।
নারদীয় ভাগবতমাগ্নেয়ং স্কান্দসংজ্ঞিতম্ ।।২৩
ভবিষ্যং ব্রহ্মবৈবর্তং মার্কেন্ডেয়ং সবামনম্ ।
বরাহাং মাৎস্যং কৌর্মং চ ব্রহ্মাণ্ডখ্যমিতি ত্রিষট্।।২৪
(শ্রীমদ্ভাগবত ১২ স্কন্দ, ৭ম অধ্যায়, ২৩-২৪শ্লোক)
অনুবাদ: ব্রহ্মপুরাণ, পদ্মপুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ, শিব পুরাণ, লিঙ্গ পুরাণ, গড়ুর পুরাণ, নারদ পুরাণ, ভাগবত পুরাণ, অগ্নি পুরাণ, স্কন্দপুরাণ, ভবিষ্য পুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, মার্কেন্ডেয় পুরাণ, বামন পুরাণ, বরাহ পুরান, মৎস পুরাণ, কূর্ম পুরাণ এবং ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ।
🪷এছাড়াও, শিব পুরাণ শিব পুরান, বায়বীয় সংহিতা, প্রথম অধ্যায়ের ৩৯-৪০ শ্লোকে এবং পদ্ম পুরাণ উত্তরখণ্ডের ২৩৬ অধ্যায়ের ১৪-১৭ শ্লোকে এই একই ১৮ পুরাণের লিস্ট পাওয়া যায়।
✅সমীক্ষা–
দাবী করেছেন বিষ্ণুপুররাণোক্ত তালিকা শ্রীমদ্ভাগবত, শিবপুরাণ এবং পদ্মপুরাণেও আছে। কিন্তু তিনি জেনে বুঝে এই মিথ্যার আশ্রয় নিলেন নাকি ভুল করেছেন তা তিনিই ভালো জানেন।
কি মিথ্যা বললো বা ভুল হলো?
দেখুন তিনার দেওয়া বিষ্ণুপুরাণের তালিকায় বলা হয়েছে– পঞ্চম ভাগবতপুরাণ, এইদিকে দেবীভাগবত বলছে 'তত্র ভাগবতং পুণ্যং পঞ্চমং..'(শ্রীমদ্দেবী ভাগবত-১/১/১৬)। অর্থাৎ দেবীভাগবত হচ্ছে পঞ্চম ভাগবত পুরাণ।
এখানে প্রশ্ন হলো- ভাগবত তো একাধিক। দুটি বেশি আলোচিত - শ্রীমদ্ভাগবত ও শ্রীমদ্দেবীভাগবত। দুটোই নিজেকে মহাপুরাণ দাবী করে, কিন্তু এক্ষেত্রে কোনটি মহাপুরাণ হিসেবে মাননীয়? তিনি যে রেফারেন্স দিয়েছেন তার মধ্যে শ্রীমদ্ভাগবত ছাড়া বাকি সকল তালিকায় পঞ্চম নাম্বারে ভাগবতের নাম দেওয়া হয়েছে সুতরাং বুঝাই যায় দেবীভাগবতকে গণনা করা হয়েছে। তাহলে শ্রীমদ্ভাগবতেও একই তালিকা কিভাবে ভাই? সেখানে তো অষ্টমে ভাগবতের নাম দেওয়া। তাছাড়া ক্রমান্বয়ে কত অমিল একটার সাথে আরেকটার।
পৌরাণিক–
🟥পুরাণ যে অষ্টাদশ সংখ্যক এ কথা মহাভারতেও পাওয়া যায়। যথা:-
#অষ্টাদশপুরাণানি ধর্ম্মশাস্ত্রাণি সর্বশ: ।
বেদা: সাঙ্গাস্তথৈকত্র ভারতং চৈকত: স্থিতম্ ।। ৪৫।।
(শ্লোক নং ৪৫, অধ্যায় ০৫, স্বর্গারোহণ পর্ব, মহাভারত)
অনুবাদ: #অষ্টাদশ পুরাণ, সমস্ত ধর্মশাস্ত্র এবং অঙ্গশাস্ত্রের সহিত চারটি বেদ তুলাদণ্ডলম্বিত একপাত্রে ছিলো আর এই মহাভারত তাহারই অন্য পাত্রে বহিয়াছিলো (তখন মহাভারতের ভারই অধিক হইয়াছিলো।
#অষ্টাদশপুরাণানাং শ্রবণাদ্যৎ ফলং ভবেৎ।
তৎ ফলং সমবাপ্নোতি বৈষ্ণবো নাত্র সংশয়ঃ।।
(মহাভারত/স্বর্গারোহণ পর্ব/ ৫ম অধ্যায়/১৬৮শ্লোক)
অনুবাদ:- #অষ্টাদশ পুরাণ শ্রবণ করায় মানুষের যে ফল হয়, বিষ্ণুপরায়ণ মানুষ এক মহাভারত শ্রবণ করিয়াই সেই ফল লাভ করতে পারে।
✅সমীক্ষা–
এখানে মহাভারত থেকে অষ্টাদশ পুরাণের কথন দেখালেন কিন্তু কোন অষ্টাদশ পুরাণ? মহাপুরাণ নাকি উপপুরাণ? উপপুরাণেও ব্যাসদেবপ্রণীত লিখা হয়। আর এই অধ্যায় আপনারা যে কেহ পড়ুন বুঝে যাবেন অযৌক্তিক ও অবৈদিক কথোপকথনে ভরপুর। তিনি যে রেফারেন্স দিলেন সেই অংশেই দেখুন–
অষ্টাদশপুরাণানি ধর্ম্মশাস্ত্রাণি সর্বশ: ।
বেদা: সাঙ্গাস্তথৈকত্র ভারতং চৈকত: স্থিতম্ ॥৪৫
শ্রূযতাং সিংহনাদোঽয়মৃষেস্তস্য মহাত্মনঃ।
অষ্টাদশপুরাণানাং কর্ত্তুর্বেদমহোদধেঃ॥৪৬
অষ্টাদশ পুরাণ রচয়িতা ও বেদের মহাসাগর সেই মহাত্মা বেদব্যাসের এই সিংহনাদ শ্রবণ করুন। তিনি বলেন–
অষ্টাদশ পুরাণ, সমস্ত ধর্মশাস্ত্র এবং অঙ্গশাস্ত্রের সহিত চারিটী বেদ একদিকে তথা কেবল মহাভারত অন্যদিকে। মহাভারত একাই সেই সকলের সমান।
মহাভারতের মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে অন্যান্য শাস্ত্রের সাথে বেদকেও একদিকে রেখে মহাভারতকে সমমান বলা হচ্ছে তদুপরান্তুও কি এই শ্লোকাবলি অপ্রামাণিক বোধ হয়না? তাছাড়া লক্ষ্য করুন এই শ্লোকগুলো ব্যাসদেব নয় অন্য কেহ বলছেন ব্যাসদেবের নাম করে, অতঃ বুঝা যায় ইহা ব্যাস প্রণীত মহাভারতের অংশ নয়।
পরের যে রেফারেন্স দিয়েছে তা গীতাপ্রেসের অনুবাদে খুঁজতে গিয়ে দেখি এই অধ্যায়ে শুধু ৬৮টি শ্লোকের পরেই 'স্বর্গারোহণ পর্ব সসম্পূর্ণম্' লেখা অর্থাৎ এই পর্যন্তই সমাপ্ত আর নেই। বিশ্ববাণী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বাংলা অনুবাদে অবশ্য আছে কিন্তু ঐ একই অত্যুক্তি। ১৬৭ নং শ্লোকে বলছে–
মানুষ দেহ, মন ও বাক্য দ্বারা যে পাপ অর্জ্জন করে, এই মহাভারত অধ্যয়ন করিলে সূর্যোদয়ে অন্ধকারের ন্যায় সে সমস্ত পাপই বিনষ্ট হয়।
১৬৮নং শ্লোকে তাহাই বলা হয়েছে–
অষ্টাদশ পুরাণ শ্রবণ করায় মানুষের যে ফল হয়, বিষ্ণুপরায়ণ মানুষ এক মহাভারত শ্রবণ করিয়াই সেই ফল পায়...।
কোথাও বলা হচ্ছে মহাভারত নাম নিলেই অনেক অমুক তমুক অনেক পাপ বিনষ্ট হয়। এসব তথ্য দেওয়া মানে তো পুরাণের বিরোধ করা কেননা পুরাণে বলা হয়েছে–
কর্মফল অবশ্যই ভোগ করতে হয়–
মা ভুক্তং ক্ষীয়তে কৰ্ম্ম কল্পকোটিশতৈরপি।
অবশ্যমেব ভোক্তব্যং কৃতং কৰ্ম্ম শুভাশুভম্॥
(ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণ,প্রকৃতিখণ্ড-২৬/৭১)
শতকোটি কল্পেও অভুক্ত কর্মের ক্ষয় হয় না, অবশ্যই শুভাশুভ কর্মের ফল ভোগ করিতে হইবে।
একটায় ১৬৮এর অধিক আছে আরেকটায় নাই সেটারও সমাধান প্রয়োজন।
পৌরাণিক–
🟥আমরা আগের পর্বে দেখিয়েছি, পুরাণ সৃষ্টির শুরুতে ভগবানের থেকে উৎপন্ন হয়। এই পুরাণ ভগবান নারায়ণের অবতার ব্যাসদেব প্রতি দ্বাপরযুগে এসে তা ১৮ ভাগে লিপিবদ্ধ করেন। যথা:-
ব্যাসরূপমহং কৃত্বা সংহরামি যুগে যুগে।
চতুর্লক্ষপ্রমাণেন দ্বাপরে দ্বাপরে সদা।।
তথাঽষ্টাদশধা কৃত্বা ভূর্লোকেঽন্মিন্প্রকাশ্যতে।
(মৎস পুরাণ: ১/৫৩/৯-১০)
অনুবাদ:- (মৎসরূপধারী ভগবান নারায়ণ বলছেন) ব্যাসরূপে আমি অবতীর্ণ হয়ে যুগে যুগে এই পুরাণের সংরক্ষণ করি। আমি প্রতি দ্বাপর যুগে আমি চারলক্ষ শ্লোক বিশিষ্ট পুরাণ লিপিবদ্ধ করি এবং তাদেরকে ১৮ ভাগে ভাগ করি।
✅সমীক্ষা–
এখানে তো ৪লক্ষ শ্লোকের রেফারেন্স দিলেন কিন্তু কিভাবে সেই চার লক্ষ হয় তা দিলে ভালো হতো। তাহলে পুরাণ থেকে দেখানো যেত এ নিয়ে। পুরাণ কিন্তু এও বলছে–
সর্বাণ্যেব পুরাণানি সজ্ঞেয়ানি নরর্ষভ।
দ্বাদশৈব সহস্ত্রাণি প্রোজানীহ মনীষিভিঃ ॥১০৩৷৷
পুনবৃদ্ধি গতানীহ আখ্যানৈবিবিধৈনূপ ॥১০৪॥
(ভবিষ্যপুরাণ, ব্রাহ্মপূর্ব, প্রথম অধ্যায়)
সমস্ত পুরাণকে পণ্ডিতগণ ১২সহস্রের বলেন, কিন্তু পরবর্তীতে বিবিধ আখ্যানসমূহ মিলানোতে উক্ত সংখ্যায় বহু বৃদ্ধি হয়।
বৃদ্ধি কে করলো ব্যাসদেব নাকি উনার পরে অন্যরা? তাছাড়া কূর্মপুরাণের যে অধ্যায়ের শ্লোক তিনি দিলেন সেই অধ্যায়ে এই শ্লোকের পরেই ১৮ পুরাণের নাম এবং শ্লোকসংখ্যাও দেওয়া হয়েছে। যা যোগ করলে হয় – ৪লক্ষ, ৩হাজার, ৮শত। আর সেই তালিকা কিন্তু বিষ্ণুপুরাণোক্ত তালিকা থেকে ভিন্ন।
পৌরাণিক
🟥অর্থাৎ ব্যাসদেব ১৮ টি পুরাণই মূলতলিপিবদ্ধ করেন প্রতি দ্বাপরযুগে। কিন্তু ব্যাসদেবের এই পুরাণ শুনে শুনে পরবর্তীতে অনেকে আরও বিভিন্ন পুরাণ রচনা করে থাকেন। যাদেরকে উপপুরাণ বলা হয়।যথা:-
অন্যান্যুপপুরাণানি মুনিভিঃ কথিতানি তু।
অষ্টাদশ পুরাণানি শ্রুত্বা সংক্ষেপতো দ্বিজাঃ।।
আদ্যং সনৎকুমারোক্তং নারসিংহমতঃ পরম্।
তৃতীয়ং স্কান্দর্মুদ্দিষ্টং কুমারেণ তু ভাষিতম্ ॥
চতুর্থং শিবধর্মাখ্যাং সাক্ষান্নন্দীশ-ভাষিতম্।
দুর্বাসসোত্তমাশ্চর্যং নারদীয়মতঃপরম্৷৷
কাপিলং বামনঞ্চৈব তথৈবোশনসেরিতম্।
ব্রহ্মাণ্ডং বারুণঞ্চৈব কালিকাখ্যমেব চ।
মাহেশ্বরং তথা সাম্বং সৌরং সর্বার্থসঞ্চয়ম্।
পরাশারোক্তং মারীচং তথৈব ভার্গবাহ্বয়ম্ ৷৷
(কূর্মপুরাণ: পূর্বভাগ, ১.১৬-২০)
মুনিরা এই অষ্টাদশপুরাণ শ্রবণ করে সংক্ষেপে অন্যান্য উপপুরাণ লিখেছেন। সনৎকুমারোক্ত আদিপুরাণ, এরপর নরসিংহপুরাণ, তৃতীয় স্কন্দপুরাণ, চতুর্থ শিবধর্মপুরাণ সাক্ষাৎ নন্দীশ্বর কর্তৃক উক্ত হয়েছে। অতঃপর দুর্বাসা মুনি প্রোক্ত আশ্চর্য পুরাণ পঞ্চম। নারদীয় পুরাণ ষষ্ঠ। পরে কপিল এবং বামনপুরাণ; উশনাকর্তৃক নবম পুরাণ উক্ত হয়েছে; এরপর ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ, বরুণপুরাণ, কালিকাপুরাণ, মহেশ্বর পুরাণ, শাম্বপুরাণ, সর্বার্থপ্রকাশক সৌরপুরাণ, পরাশরপুরাণ, মারীচপুরাণ এবং ভার্গব পুরাণ ; উপপুরাণ এই অষ্টাদশসংখ্যক।
🪷অর্থাৎ, এই উপপুরাণ গুলো ব্যাসদেবের পরে রচিত হয়।
👉এবার সমস্যা হল এই মহাপুরাণ বা ব্যাসদেব লিখিত পুরাণ ও ব্যাসদেবের পরবর্তীতে লিখিত উপপুরাণ গুলোর নামের ক্ষেত্রে বেশ তারতম্য পাওয়া যায় বিভিন্ন পুরাণে। যথা:-
নির্গতং ব্রহ্মণো বক্ত্রাদ্ব্রাহ্মং বৈষ্ণবমেব চ ॥
শৈবং ভাগবতং চৈব ভবিষ্যং নারদীয়কম্ ॥ ৫ ॥
মার্কণ্ডেয়মথাগ্নেয়ং ব্রহ্মবৈবর্তমেব চ ॥
লৈঙ্গং তথা চ বারাহং স্কান্দং বামনমেব চ ॥ ৬ ॥
কৌর্ম্যং মাৎস্যং গারুড়ং চ বায়বীয়মনন্তরম্ ॥
অষ্টাদশং সমুদ্দিষ্টং সর্বপাতকনাশনম্ ॥ ॥ ৭ ॥
(স্কন্দপুরাণ প্রভাস খণ্ড প্রভাসক্ষেত্র মাহাত্ম্য ২।৫-৭)
ব্রাহ্ম , বৈষ্ণব , শৈব , ভাগবত , ভবিষ্য , নারদীয় , মার্কণ্ডেয় আগ্নেয় , ব্রহ্মবৈবর্ত্ত , লৈঙ্গ , বারাহ, স্কান্দ , বামন , কৌৰ্ম্ম , মাৎস্য , গাড়ুর , বায়বীয় ও ব্ৰহ্মাণ্ড ; এই অষ্টাদশ মহাপুরাণ সর্ব্বপাতক - নাশন ।
🚫 লেখার শুরুতে আমরা যে বিষ্ণু ও ভাগবত পুরাণ থেকে ১৮ পুরাণের লিস্ট দেখলাম তার সাথে এই স্কন্দ পুরাণের লিস্টের বেশ কিছু তারতম্য বিদ্যমান। এখানে পদ্ম পুরাণের কথা উল্লেখ নাই। এখানে আবার বায়বীয় পুরাণের কথা উল্লেখ আছে, যার উল্লেখ আবার ভাগবত ও বিষ্ণু পুরাণে নাই। আবার মৎসপুরাণের ৫৩ অধ্যায়ে যে ১৮ পুরাণের লিস্ট পাওয়া যায় সেখানে শিব পুরাণের কথা উল্লেখ নেই। সেখানে শিব পুরাণের স্থলে বায়ু পুরাণের উল্লেখ আছে। এক্ষেত্রে অনেকে বলেন যে, বায়ু পুরাণই মূলত শিব পুরাণ। কিন্তু এ যুক্তি মূলত খাটে না। কেননা উপরোক্ত স্কন্দ পুরাণে বায়ু পুরাণ ও শিব পুরাণ দুইটা আলাদা ভাবেই ১৮ পুরাণের অংশ বলা হয়েছে। এমনকি চৌখম্বা সহ বিভিন্ন ভারতীয় প্রামাণিক প্রেস গুলো থেকে বায়ু পুরাণ ও শিব পুরাণ নামে দুইটি ভিন্ন পুরাণই প্রিন্ট করা হয়েছে।এমনকি বাংলায় নবভারত পাবলিশার্স থেকে এই দুই পুরাণকে আলাদা ভাবেই পাবলিশ করা হয়েছে। তাই বায়ু পুরাণ ও শিব পুরাণ উভয়ই শিব মাহাত্ম্য প্রাধান্যসূচক হলেও দুইটি ভিন্ন পুরাণ।
🚫আাবার গড়ুর পুরাণের ব্রহ্মখণ্ডের ১ম অধ্যায়ে ৪৩-৫৬ শ্লোকে ভিন্ন রকমের পুরাণের লিস্ট পাওয়া যায়। এমনকি এই অধ্যায়ের ৫৭- ৬৩ শ্লোকে ভিন্ন ধরনের উপপুরাণের লিস্ট পাওয়া যায়। যথা:-
১৮ টি মহা পুরাণ:-
ভাগবত, বিষ্ণু, গড়ুর, বায়ু, মৎস, কূর্ম, পদ্ম, বামন, বরাহ, অগ্নি, ভবিষ্য, ব্রহ্ম, ব্রহ্মাণ্ড, ব্রহ্মবৈবর্ত, লিঙ্গ, মার্কণ্ডেয়।
১৮ উপপুরাণ:-
বিষ্ণুধর্মোত্তর, ভাগবত, তত্ত্বসার, নৃসিংহ, বায়ু, হংস, ভবিষ্য, ব্রহ্মনারদ, লঘুনারদ, কার্তিক (স্কন্দ), বৃহৎব্রহ্মাণ্ড, ভগাবত, শিব, নন্দী, পাশুপত, রেণুকা, ভৈরব।
(উক্ত অধ্যায়ের পুরাণ গুলোর বর্ণনা অতিশয় বিশাল বলে এখানে সংক্ষেপে পুরাণ ও উপুরাণের নাম দেওয়া হল আর রেফারেন্স হিসেবে অধ্যায় ও শ্লোক সংখ্যা উল্লেখ করা হল।)
👉এখানে আমরা লক্ষ্য করলে দেখব যে উক্ত গড়ুর পুরাণের মহাপুরাণের লিস্টে শিব পুরাণ ও নারদীয় পুরাণ নাই। এই দুই পুরাণকে গড়ুর পুরাণে উপপুরাণ বলা হয়েছে। আবার আদিত্য পুরাণ বা সৌরপুরাণকে মহাপুরাণ হিসেবে স্থান দেওয়া হয়েছে। অথচ এই সৌর বা আদিত্য পুরাণকে কূর্ম পুরাণে উপপুরাণ বলা হয়েছে।
✅সমীক্ষা–
তিনি স্বীকার করলেন তালিকায় অমিল আছে। বললেন উপপুরাণ ব্যাসদেব প্রণীত নয় কিন্তু যে তালিকা তিনি দিলেন তাতে - নরসিংহ বা নৃসিংহ পুরাণ, বামন পুরাণের নামও দেওয়া আছে আর এই পুরাণ দুটো ব্যাসদেবের নামেই প্রকাশিত হয় এবং ভবিষ্যপুরাণ-৩/২৮/১২ শ্লোকে বলা হয়েছে - বামন এবং নৃসিংহ পুরাণের রচয়িতা ব্যাসদেব। অন্যান্য অনেক উপপুরাণই ব্যাসদেবের নামে প্রকাশিত হয়, যেমন ভাগবতই দেখুন। উপপুরাণের এবং মহাপুরাণের উভয় তালিকায় ভাগবতের নাম আছে। ভাগবত একাধিক পাওয়া যায় তারমধ্যে তিনটি হলো - শ্রীমদ্ভাগবত, শ্রীমদ্দেবীভাগবত, শ্রীমহাভাগবত। তিনটাই প্রকাশিত হয় ব্যাসদেবের নামে। কোনটি মহাপুরাণ, কোনটি উপপুরাণ?

পৌরাণিক
🟥তাহলে আমরা দেখতে পারছি, একেক পুরাণে মহাপুরাণ ও উপপুরাণ লিস্ট গুলো একেক রকম। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, মূল ব্যাসদেব লিখিত অষ্টাদশ পুরাণ কোনগুলো তাহলে? আর উপপুরাণ গুলোই বা কি কি? আর পুরাণে এরূপ ভিন্ন রকম কথাই বা কেন?
👉এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর পেতে হলে আমাদের পুরাণের কল্প সম্পর্কে বুঝতে হবে। সনাতন ধর্মে সময় আপেক্ষিক। ব্রহ্মার একদিন একটি কল্প এবং এক রাত একটি কল্প। একটি কল্পে ১০০০ চতুর্যুগ অতিবাহিত হয়। অর্থাৎ ব্রহ্মার এক দিনে ১০০০ টি সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি অতিবাহিত হয়। ব্রহ্মার ভিন্ন ভিন্ন দিনে একেকটি পুরাণের জ্ঞান উদ্ভুত হয়। অর্থাৎ একেক কল্পে একেক পুরাণের উদ্ভব এবং ঐ পুরাণে ঐকল্পের কাহিনী এবং ঐ কল্পের জন্য ব্যাস লিখিত ১৮ পুরাণের নাম দেওয়া থাকে। (সত্যযুগে ৪০০০ দিব্য বর্ষে ৮০০ সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ- এইভাবে ৪৮০০ বৎসর ত্রেতাতে ৩০০০-৩৬০০ বৎসর, দ্বাপরে ২৪০০, কলিতে ১২০০ দিব্যবর্ষ। মানুষের এক বৎসর দেবতাদের একদিন, দেবতাদের এক বৎসর মানুষের ৩৬০০ বৎসর। এইভাবে মানবীয় হিসাবে কলিযুগের ৪,৩২,০০০ বৎসর বয়স, এর দ্বিগুণ দ্বাপর, ত্রিগুণ ত্রেতা আর চতুর্গুণ সত্যযুগ।পোস্টের পরিধি বেড়ে যাওয়ার ভয়ে এসব সময়ের আপেক্ষিক হিসাব নিয়ে বিস্তারিততে যাচ্ছি না। এই আপেক্ষিক সময় নিয়ে আলাদা কোনো পোস্টে আলোচনা করব। যাদের এসব সময়ের আপেক্ষিক হিসাব নিয়ে বিস্তারিত জানার ইচ্ছা আছে তার শ্রীমদ্ভাগবতের ৩য় স্কন্দের ১১ অধ্যায় পড়তে পারেন।) বর্তমান কল্পের নাম হচ্ছে বরাহ কল্প। যথা:-
অয়ং তু কথিতঃ কল্পো দ্বিতীয়স্যাপি ভারত"।
বারাহ ইতি বিখ্যাতো যত্রাসীৎ শূকরো হরিঃ।।(শ্রীমদ্ভাগবত/ ৩য় স্কন্দ/ ১১ অধ্যায়/ ৩৬ শ্লোক)
অনুবাদ:- হে বিদুর! বর্তমানে যে কল্প চলছে তাকে দ্বিতীয় পরার্ধের প্রারম্ভ বলা হয়। এই কল্প বারাহকল্প নামে বিখ্যাত, এই কল্পে ভগবান শূকররূপ ধারণ করে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
এবং, এই কল্পের পুরাণ হচ্ছে বিষ্ণু পুরাণ। যথা:-
বারাহকল্পবৃত্তান্তমধিকৃত্য পরাশরঃ।
যৎ প্রাহ ধর্মানখিলাংস্তদ্যুক্তং বৈষ্ণবং বিদুঃ।।
(মৎসপুরাণ/৫৩ অধ্যায়/ ১৬ শ্লোক)
অনুবাদ:- মহর্ষি পরাশর বরাহ কল্পের বৃত্তান্তের আশ্রয় নিয়ে যে সম্পূর্ণ ধর্মের বর্ণন করেছেন সেই পুরাণকে বৈষ্ণব পুরাণ বা বিষ্ণু পুরাণ বলা হয়।
🪷সুতরাং, বর্তমান কল্পের ব্যাসদেব লিখিত অষ্টাদশ মহাপুরাণ সেগুলোই, যেগুলোর নাম বিষ্ণু পুরাণে উল্লেখ আছে। আমরা লেখার শুরুতেই বিষ্ণু পুরাণের যে রেফারেন্সটি ব্যবহার করেছি সেই ১৮ টাই হচ্ছে এই বরাহ কল্পের জন্য ব্যাসদেব লিখিত ১৮ মহাপুরাণ। এবং এই একই লিস্ট ভাগবত পুরাণ, শিব পুরাণ ও পদ্ম পুরাণে পাওয়া যায়। এখন পদ্ম পুরাণ পদ্ম কল্পের পুরাণ (মৎস পুরাণ/৫৩/ ১৪), শিব পুরাণ শ্বেত কল্পের পুরাণ (শিব পুরাণ/ বায়বীয় সংহিতা/ পূর্বভাগ/ ১/ ২৩) এবং ভাগবত পুরাণ সারস্বত কল্পের পুরাণ (মৎস পুরাণ/৫৩/২০-২১)। সুতরাং, বরাহ কল্প ছাড়াও উক্ত কল্প গুলোতেও এই একই ১৮ পুরাণ ব্যাসদেব কর্তৃক লিপিবদ্ধ হয়। আর বাকী অন্যান্য পুরাণে যে লিস্ট পাওয়া যায়, সেগুলো মূলত ঐ ঐ পুরাণের কল্পের পুরাণ। যেমন:- গড়ুর পুরাণ গড়ুর কল্পের পুরাণ (মৎসপুরাণ/৫৩/৫২)। এই গড়ুর পুরাণে যে ১৮ পুরাণের লিস্ট পাওয়া যায় তা সেই গড়ুরকল্পের জন্য ১৮ মহাপুরাণ। এই গড়ুর কল্পে শিব পুরাণ ও নারদ পুরাণকে উপপুরাণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আবার সৌর বা আদিত্য পুরাণ এবং বায়ু পুরাণকে মহাপুরাণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ, কল্পভেদে কখনও কখনও এক কল্পের মহাপুরাণ আরেক কল্পের উপপুরাণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ঠিক একই ভাবে বর্তমান বরাহ কল্পের জন্য এই বিষ্ণু পুরাণ, ভাগবত পুরাণ, পদ্ম পুরাণ ও শিব পুরাণে উল্লিখিত এই ১৮ টি পুরাণ বাদে বাকী যেসব পুরাণ পাওয়া যায় সেই সমস্তই উপপুরাণ হিসেবে বিবেচিত। এবং এসব উপপুরাণ ব্যাসদেব লিখিত নয়। এগুলো ব্যাসদেবের পরবর্তীতে লেখা হয়। তাই উপপুরাণ গুলোর ততটুকু অংশই প্রামাণিক ধরতে হবে যতটুকু অংশ মহাপুরাণের সাথে অবিরোধী।
✅সমীক্ষা–
তিনি কিছুটা সৃষ্টি-প্রলয় বিষয়ক কল্পের হিসাব তুলে ধরলেন, কিন্তু এক পৌরাণিক বিদ্বান লিখেছেন যে, এই কল্পের হিসাব সৃষ্টি প্রলয় সম্পর্কিত ব্রহ্মার দিন-রাত্রি বিষয়ক নয়। তিনি সঠিক লিখেছেন। প্রমাণ–
লিংক–
https://www.facebook.com/share/p/16vZHP8yAp/
লেখক মহোদয় দাবী করেছেন যে প্রত্যেক কল্পে অর্থাৎ সৃষ্টিতে এক একটি পুরাণের জ্ঞান উদ্ভূত হয়। অর্থাৎ ভিন্ন-ভিন্ন কল্পে ভিন্ন-ভিন্ন পুরাণ উদ্ভব হয়। এখানে আমি সেই কল্পগুলোর তালিকা প্রস্তুত করছি–
মৎসপুরাণ-২৯০/৩-১১–
১. শ্বেত, ২. নীললোহিত, ৩. বামদেব, ৪. রথন্তর, ৫. রৌরব, ৬. দেব, ৭. বৃহৎ, ৮. কন্দর্প, ৯. সদ্যঃ, ১০. ঈশান, ১১. তমঃ, ১২. সারস্বত, ১৩. উদান, ১৪. গারুড, ১৫. কৌর্ম ১৬. নারসিংহ, ১৭. সমান, ১৮. আগ্নেয়, ১৯. সোম, ২০. মানব, ২১. তৎপুমান্, ২২. বৈকুণ্ঠ, ২৩. লক্ষ্মী, ২৪. সাবিত্রী, ২৫. ঘোর, ২৬. বারাহ, ২৭. বৈরাজ, ২৮. গৌরী, ২৯. মাহেশ্বর, ৩০. পিতৃ।
এই ৩০ কল্প ব্রহ্মার ১মাস।
শ্রীমদ্ভাগবত-২/১০/৪৬ শ্লোকের তাৎপর্যে প্রভুপাদের উদ্ধৃত তালিকা–
১) শ্বেতকল্প, (২) নীললোহিত, (৩) বামদেব, (৪) গাথান্তর, (৫) রৌরব, (৬) প্রাণ, (৭) বৃহৎকল্প, (৮) কন্দর্প, (৯) সদ্যোথ (১০) ঈশান, (১১) ধ্যান, (১২) সারস্বত, (১৩) উদান, (১৪) গরুড়, (১৫) কৌর্ম, (১৬) নারসিংহ, (১৭) সমাধি, (১৮) আগ্নেয়, (১৯) বিষ্ণুজ, (২০) সৌর, (২১) সোমকল্প, (২২) ভাবন, (২৩) সুপুম, (২৪) বৈকুণ্ঠ, (২৫) অর্চিষ, (২৬) বলীকল্প, (২৭) বৈরাজ, (২৮) গৌরীকল্প, (২৯) মাহেশ্বর, (৩০) পৈতৃকল্প।
এখানে অনেক্ষেত্রে নামের অমিল আছে, সেটা না হয় বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে এদিক সেদিক করবেন কিন্তু সিরিয়ালের যে পার্থক্য তা? যেমন মৎসপুরাণে বলা হচ্ছে ২২নং কল্প হচ্ছে বৈকুণ্ঠ কিন্তু প্রভুপাদ স্কন্ধপুরাণের নাম উদ্ধৃত করে যে তালিকা দিলেন সেখানে বলা হচ্ছে ২৪নং কল্প হচ্ছে বৈকুণ্ঠ, কোনটা সঠিক?
তারপর–
বায়ু পুরাণের তালিকা–
(বায়ু০ পু০ পূর্বার্দ্ধ- ২১-২৩ অধ্যায়)
(১) ভব কল্প (২) ভুব কল্প (৩)তপঃ কল্প (৪) ভব কল্প (৫)রম্ভ কল্প (৬)ঋতু কল্প (৭)ক্রতু কল্প (৮)বহ্নি কল্প (৯)হব্য বাহন কল্প (১০)সাবিত্র কল্প (১১)ভুবঃ কল্প (১২)উশিক কল্প (১৩)কুশিক কল্প (১৪)গান্ধার কল্প (১৫)ঋষভ কল্প (১৬)ষড্জ কল্প (১৭)মার্জালীয় কল্প (১৮)মধ্যম কল্প (১৯)বৈরাজক কল্প (২০)নিষাদ কল্প (২১) পঞ্চম কল্প (২২)মেঘ বাহন কল্প (২৩)চিন্তক কল্প (২৪)আকূতি কল্প (২৫)বিজ্ঞাতি কল্প (২৬)মন কল্প (২৭)ভাব কল্প (২৮)বৃহৎ কল্প (২৯)শ্বেত লোহিত কল্প (৩০)রক্ত কল্প (৩১)পীতবাশা কল্প (৩২) সিত/কৃষ্ণ কল্প (৩৩)বিশ্ব রুপ কল্প.......।
এখানে নামাদি ভিন্নতার সাথে সাথে সংখ্যাও দেখা যাচ্ছে ৩০এর অধিক।
কল্প যেহেতু আমরা ৩০ বা তার অধিক পাচ্ছি সেহেতু তার দাবী অনুযায়ী প্রত্যেক কল্পের জন্য আলাদা মহাপুরাণের নাম উল্লেখ করা আবশ্যক ছিলো। সেদিক দেখলে ১৮মহাপুরাণ কোনগুলো তার সমাধানের পরিবর্তে এখানে ৩০ এর অধিক মহাপুরাণের নাম আসার কথা, তা আসুক তবুও সেই ৩০ কিংবা তার অধিক মহাপুরাণের নাম পুরাণের রেফারেন্স সহ চাই।
আবার দেখুন সে শিবপুরাণের রেফারেন্স দিয়ে বলছে (শিব পুরাণ/ বায়বীয় সংহিতা/পূর্বভাগ/১/২৩) শিব পুরাণ শ্বেত কল্পের পুরাণ। কিন্তু বৃহন্নারদীয় পুরাণে বলা হয়েছে– শ্বেতকল্পপ্রসঙ্গেন ধর্মানত্রাহ মারুত। (বৃহন্নারদীয় পুরাণ-৯৫/২)
বায়ুপুরাণে শ্বেতকল্প সন্দর্ভে ধর্মের উপদেশ করা হয়েছে।
এখানে আবার সেই যুক্তি কিন্তু আনা প্রাসঙ্গিক নয় যে, শিবপুরাণের বায়বীয় সংহিতাই বায়ুপুরাণ বা শিবপুরাণ বায়ু পুরাণ একই, কেননা তিনি নিজেই কিন্তু বলেছে দুটো আলাদা এবং দুটো আলাদাই প্রিন্ট হয়।
তাছাড়াও কোথাও কি বলা হয়েছে কোন কোন কল্পের জন্য কোন পুরাণ প্রামাণিক? যদি বলে থাকে তো প্রমাণ তো দেওয়া উচিৎ ছিলো। আমি অনেক পুরাণেই পড়েছি যে বিভিন্ন পুরাণে বিভিন্ন কল্পবিষয়ক বা কল্পের আশ্রয় নিয়ে উপদেশ করার কথা বলা হয়েছে। যেমন যে বিষ্ণুপুরাণের প্রামাণিকতা দেখাচ্ছেন সেটা নিয়ে বলা হচ্ছে– বরাহকল্পবৃত্তান্তং ব্যাসেন কথিতং ত্বিহ। (বৃহন্নারদীয় পুরাণ-৯৪/২১)
ব্যাসজী এতে (বিষ্ণুপুরাণে) বারাহ কল্প বৃত্তান্তও বলেছেন।
তাছাড়া–
যত্রাহ নারদো ধর্মান্ বৃহৎকল্পাশ্রয়াণি চ। (মৎপুরাণ-৫৩/২৩)
যে পুরাণে বৃহৎ কল্পের আশ্রয় নিয়ে দেবর্ষি নারদ ধর্মের উপদেশ করেছে তাকে নারদীয় (নারদ) পুরাণ বলা হয়।
এমন অনেক পুরাণ নিয়েই বলা হয়েছে। আবার দেখুন তিনি প্রমাণ দিলেন– মহর্ষি পরাশর বরাহ কল্পের বৃত্তান্তের আশ্রয় নিয়ে যে সম্পূর্ণ ধর্মের বর্ণন করেছেন সেই পুরাণকে বৈষ্ণব পুরাণ বা বিষ্ণু পুরাণ বলা হয়।
এখানে প্রশ্ন হলো একেকজন ব্যাসদেব তো একেক দ্বাপরে আসে তা পরাশরজী আর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস তো একই দ্বাপরে হয়ে গেল। আপনি যে প্রমাণ দিলেন 'দ্বাপরে দ্বাপরে সদা' তা মিথ্যা হয়ে গেলনা?
পৌরাণিক
🟥🟥এবার পুরাণের সাত্ত্বিকাদি বিভাগ নিয়ে আলচনা করব। এই ১৮ পুরাণ মূখ্যত সাত্ত্বিক, রাজসিক, তামসিক এবং সঙ্কীর্ণ ভাগে বিভক্ত। যে পুরাণে বিষ্ণু মাহাত্ম্য অধিক তা সাত্ত্বিক পুরাণ, যে পুরাণে ব্রহ্মাদি দেবতার মাহাত্ম্য বেশি তা রাজসিক পুরাণ, যে পুরাণে শিব মাহাত্ম্য বেশি তাকে তামসিক এবং যে পুরাণে সরস্বতী ইত্যাদি দেবী ও পিতৃদেবের মাহাত্ম্য বেশি তাকে সঙ্কীর্ণ পুরাণ বিভাগে ফেলা হয়। যথা:-
সাত্ত্বিকেষু পুরাণেষু মাহাত্ম্যমধিকং হরেঃ।
রাজসেষু চ মাহাত্ম্যমধিকং ব্রহ্মণো বিদুঃ। ৬৭
তদ্বদয়েশ্চ মাহাত্ম্যং তামসেষু শিবস্থ্য চ।
সঙ্কীর্ণেষু সরস্বত্যাঃ পিতৃণাঞ্চ নিগদ্যতে। ৬৮
( মৎস্যপুরাণ : ৫৩ : ৬৭- ৬৮ )
অনুবাদ : পুরাণ মধ্যে যে সকল সাত্ত্বিক পুরাণ, সে সমুদায়ে হরির মাহাত্ম্যই অধিক। রাজস পুরাণে ব্রহ্মার ও অগ্নির মাহাত্ম্য এবং যে সকল তামস পুরাণ আছে, তাহাতে শিবের মাহাত্ম্যই সমধিক। সঙ্কীর্ণ কল্পে সরস্বতী ও পতৃগণের মাহাত্ম্যই অধিক।
সাত্ত্বিকেষথ কল্পেষু মাহাত্মামধিকাং হরেঃ।
তামসেষু হরস্যোক্তং রাজসেষু প্রজাপতেঃ ॥
(কূর্মপুরাণ : ৪৩ : ৫১)
সাত্ত্বিক কল্পে বিষ্ণু-মাহাত্ম্য অধিক, তামস কল্পে অধিকাংশ শিব-মাহাত্ম্য এবং রাজস কল্পে ব্রহ্মা মাহাত্ম্য অধিক ।
সাত্ত্বিকেষু চ কল্পেষু মাহাত্ম্যধিকং হরেঃ।
রাজসেষু চ মাহাত্ম্যমদিকং ব্রহ্মণো বিদুঃ।।
তস্মতগ্রেচ মাহাত্ম্যং তামসেষু শিবস্য হি।
সঙ্কীর্ণে চ সরস্বত্যাঃ পিতৃণাং চ নিগদ্যতে।।
(স্কন্দ পুরাণ/ প্রভাসখণ্ড/ প্রভাসক্ষেত্রমাহাত্ম্যম্/ ২য় অধ্যায়/ ৮৭-৮৮ শ্লোক)
অনুবাদ:- সাত্ত্বিক কল্পের পুরাণ সমূহে হরি মাহাত্ম্যই অধিক। রাজসিক কল্পের পুরাণ সমূহে ব্রহ্মার মাহাত্ম্য অধিক। তামসিক কল্পের পুরাণ সমূহে শিব মাহাত্ম্য অধিক। আর সঙ্কীর্ণ কল্পের পুরাণে সরস্বতী ও পিতৃগণের মাহাত্ম্য অধিক।
🚫এখানে অনেকে আবার প্রশ্ন তোলে, স্কন্দ পুরাণের শঙ্কর সংহিতায় যে বিষ্ণু পুরাণ গুলোকে তামসিক ও শিব পুরাণ গুলোকে সাত্ত্বিক বলা হয় সে বিষয়ে কি বলবেন?
👉প্রথমত, এর উত্তর এই যে, মূল স্কন্দ মহাপুরাণ খণ্ডে রচিত। সংহিতায় নয়। সংহিতায় রচিত যে স্কন্দ পুরাণ পাওয়া যায় সেটা উপপুরাণ। পূর্বে উল্লিখিত কূর্ম ও গঠুর পুরাণে যে উপপুরাণের নাম কথিত হয়েছে সেখানে স্কন্দ উপপুরাণের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই স্কন্দ উপপুরাণই হচ্ছে সংহিতা যুক্ত উপপুরাণ। আমরা পূর্বেই দেখিয়েছি মহাপুরাণ গুলোই শুধুমাত্র ব্যাসদেব লিখিত। ১৮ টি মহাপুরাণই মূল পুরাণ, যা স্বয়ং ঈশ্বর থেকে জাত। পরবর্তীতে বিভিন্ন জনে বিভিন্ন উপপুরাণ রচনা করে। এসব উপপুরাণ স্বয়ং ঈশ্বর প্রদত্ত শাস্ত্র নয়। এসব উপপুরাণের ততটুকুই গ্রহনীয় যতটুকু মহাপুরাণের অবিরোধী। দক্ষিণ ভারতে কিছু শৈব সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত এই সংহিতাত্মক স্কন্দ উপপুরাণ সরাসরি স্কন্দ মহাপুরাণ সহ মৎস, কূর্ম, পদ্ম ও গড়ুর চারটি মহাপুরাণ বিরোধী বাক্য বলছে। তাই এই উপপুরাণের বাক্য কখনোই গ্রহনযোগ্য নয়।
দ্বিতীয়ত, আর তাছাড়া এই উপপুরাণের যে অংশে এই ভুয়া পুরাণ বিভাগ পাওয়া যায় তা হচ্ছে "শঙ্কর সংহিতা"। এই শঙ্কর সংহিতার প্রামাণিকতা নিয়েও রয়েছে নানান সন্দেহ। এই শঙ্কর সংহিতা কোনো প্রামাণিক সংস্করণে পাওয়া যায়না। তামিল একটা এডিশন বার করেছে তারা কেবল শঙ্কর সংহিতা বার করেছে। ভারতের সবচেয়ে প্রামাণিক কিছু প্রেস যেমন,
আনন্দ আশ্রম, বেঙ্কটেশ্বর প্রেস, নির্ণয় সাগর প্রেস, প্রয়াগ হিন্দী সাহিত্য সম্মেলন, চৌখম্বা প্রেস সহ অন্যান্য প্রচলিত কোনো প্রেসেই পাওয়া যায় না শঙ্কর সংহিতা নামে কিছু। এই প্রামাণিক প্রেসেগুলোর কারোর সংস্করণে এই শঙ্কর সংহিতার কোনো শ্লোকই নেই।
উপরোক্ত এই বক্তব্যকে ছেড়ে দিচ্ছি যেন মূল বিষয়টা সংক্ষেপে লেখা যায়। লিখলে অনেক কিছুই লেখা যাবে এ নিয়েও।
পৌরাণিক
🟥👉তাহলে কোনগুলো সাত্ত্বিক ও কোন গুলো রাজসিক পুরাণ?
এর উত্তর আছে পদ্ম পুরাণে। যথা:-
মাৎস্যং কৌর্মং তথা লৈঙ্গং শৈবং স্কান্দং তথৈবচ।
আগ্নেয়ং চ ষড়েতানি তামসানি নিবোধ মে।।
বৈষ্ণবং নারদীয়ং চ তথা ভাগবতং শুভম্।
গারুড়ম্ চ তথা পাদ্মং বারাহং শুভদর্শনে।
সাত্ত্বিকানি পুরাণান্ বিজ্ঞেয়ান্ শুভানি বৈ।।
ব্রহ্মাণ্ডং ব্রহ্মবৈবর্তং মার্কণ্ডেয়ং তথৈব চ।
ভবিষ্যং বামনং ব্রাহ্মং রাজসান্ নিবোধ মে।।
সাত্ত্বিকাঃ মোক্ষদাঃ প্রোক্তা রাজসা স্বর্গদা শুভাঃ।
তথৈব তামসা দেবি নিরয়প্রাপ্তি হেতবঃ।।
(পদ্মপুরাণ/ উত্তর খণ্ড/২৬৩ অধ্যায়/২১ শ্লোক)
- শ্রীশিব দেবী দুর্গাকে বলছেন : মৎস্য,কূর্ম, লিঙ্গ,শৈব,স্কন্দ অগ্নি এই ছয়টি পুরাণ তামসিক। বিষ্ণু, নারদীয়, শ্রীমদ্ভাগবতম্, গরুড়, পদ্ম, বরাহ এই ছয়টি পুরাণ সাত্ত্বিক।
ব্রহ্মাণ্ড, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, মার্কণ্ডেয়, ভবিষ্য, বামন, ব্রহ্ম এই ছয়টী পুরাণ রাজসিক। সাত্ত্বিক পুরাণ মোক্ষ, রাজসিক পুরাণ স্বর্গ ও তামসিক পুরাণ নরক প্রাপ্তির কারণ হয়।
✅সমীক্ষা–
এর উত্তর আছে বলে পদ্মপুরাণের রেফারেন্স দিয়ে তালিকা দিলেন, তা ভবিষ্যপুরাণের তালিকা কি দোষ করলো? সেখানের তালিকা এরূপ–
ভিন্নতা, অমিল আছে বলে কি? তা দুটার মধ্যে কোন তালিকা কেন সঠিক তার সমাধান তো দেওয়া উচিৎ ছিল।
পৌরাণিক
🟥👉এখানে প্রশ্ন ওঠে রাজসিক তামসিক পুরাণ গুলোও তো পুরাণই, এগুলো পাঠ করলেও যদি মানুষকে নরকে যেতে হয় বা পতিত হতে হয় তাহলে তো নাস্তিক হওয়াই ভাল।
এর উত্তর এই যে, এখানে তামসিক পুরাণকে নরক প্রাপ্তি কারণ বলতে, ঐ পুরাণ পড়লে কেও নরক যাবে এমন বুঝানো হয় নাই। তাহলে সেটা কখন নরকের হেতু হতে পারে? যখন কেও এই তামসিক পুরাণের আপাতদৃষ্টিতে শিব মাহাত্ম্যের উপর নির্ভর করে বিষ্ণুতত্ত্বকে ছোট করে বা বিষ্ণু নিন্দা করে তখন সে নরকগামী হয়, অর্থাৎ, এই পুরাণই তখন তার নরকের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ সম্পর্কে পদ্ম পুরাণের উত্তর খণ্ডের ১২৯ তম অধ্যায়েই স্পষ্ট করা আছে। যথা:-
বিষ্ণুং নিন্দন্তি বেদাংশ্চ তপো নিন্দন্তি সদ্বিজান্।
তেন তে নরকং যান্তি হ্যসচ্ছাস্ত্রনিষেবণাৎ।।
(পদ্মপুরাণ/উত্তরখণ্ড/ ১২৯ অধ্যায়/ ৫৮ শ্লোক)
অনুবাদ:- তাহার বিষ্ণুনিন্দা, বেদনিন্দা, তপস্যার নিন্দা ও দ্বিজ নিন্দা করিয়া থাকে। এই পাপের ফলেই অসৎভাবে শাস্ত্র সেবনে তাহারা নিরয়গামী হয়।
👉তাই সাত্ত্বিক পুরাণ অনুসরণই সর্বোত্তম। ইহা মোক্ষপ্রদ। রাজসিক পুরাণ অনুসরণে স্বর্গ লাভ হয়। কিন্তু পুণ্যফল ভোগের পর স্বর্গ থেকে ফিরে আসতে হয়। আবার এই জগতে সুখ দুঃখ ভোগ করতে হয়। আবার তামসিক পুরাণ অনুসরণ করলে, অনেক সময় বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ে হরিবিদ্বেষের আশঙ্কা থাকে। যার ফলে নরক প্রাপ্তি হয়। তাই তামসিক পুরাণের অর্থ উদ্ধারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সাত্ত্বিক পুরাণের সহায়তা নিতে হবে। তামসিক পুরাণের অর্থ সাত্ত্বিক পুরাণের বিরোধ যখনই হয় তখনই বুঝতে হবে এখানে অর্থগত কোনো সমস্যা আছে অথবা এর কোনো গভীর তাৎপর্য আছে।
✅সমীক্ষা–
প্রথমথ আপনার অনুবাদে গড়মিল আছে, আপনি যে সংস্করণ থেকে রেফারেন্স (পদ্মপুরাণ/উত্তরখণ্ড/ ১২৯ অধ্যায়/ ৫৮ শ্লোক) দিয়েছেন সেই সংস্করণে অনুবাদ এমন আছে–
অসৎভাবে শাস্ত্র সেবন আর অসৎশাস্ত্র সেবন এক নয়। সৎশাস্ত্রও অসৎভাবে সেবন করা যায়, কিন্তু তাতে তা অসৎশাস্ত্র হয়ে যায়না। আর অসৎ তো অসৎই।
আর বলা হয়েছে– (শিব বলেন) তেষাং স্মরণমাত্রেণ মোহঃ স্যাজ জ্ঞানিনামপি। (পদ্ম০, উ০ ২৩৬/২)
অর্থাৎ এইসকল (তামস) শাস্ত্রের স্মরণমাত্রেই জ্ঞানীগণেরও মোহ হয়।
পৌরাণিক–
🟥এক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি রাজসিক তামসিক পুরাণ বর্জন করতে হবে? না, তা মোটেই নয়। রাজসিক তামসিক পুরাণেও অনেক বিধি, নিয়ম, তথ্য বিদ্যমান যা অন্যান্য পুরাণে নাই। তাই সেগুলোও অবশ্যই প্রয়োজনীয়। তবে প্রথম প্রথম ধর্মপথে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে সাত্ত্বিক পুরাণ অনুসারী হওয়াই ভাল। পূর্ণ ধর্মজ্ঞ হয়ে গেলে তখন সকল পুরাণের মূলতত্ত্ব শ্রীহরি শ্রীমন্নারায়ণ এই তত্ত্ব স্পষ্ট হয়ে যায়। তখন তামসিক রাজসিক কোনো পুরাণ অনুসরণেই আর সমস্যা থাকে না। তাই প্রকৃত ধর্মজ্ঞের কাছে পুরাণ বচনের অর্থ শ্রী বিষ্ণু পারম্যবাদী। হৃদয়ে প্রকৃতজ্ঞান থাকলে তামসিক পুরাণেও বিষ্ণু পারম্য প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু যাদের প্রকৃত জ্ঞান নেই, তাদের ক্ষেত্রে তামসিক পুরাণে আপাতদৃষ্টিতে শিব পারম্য অনুসরণ করে বিষ্ণু বিদ্বেষী হতে পারে, ফলে নরকগামী হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই সাধারণ সনাতনীদের তামসিক রাজসিক পুরাণ থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখাই উচিত। সাত্ত্বিক পুরাণ গুলো অনুসরণ করা উচিত। সর্বদা মনে রাখতে হবে তামসিক পুরাণের অর্থ সাত্ত্বিক পুরাণ কেন্দ্রিক হতে হবে।
👉❓আবার প্রশ্ন আসে, বেশিরভাগ পুরাণেই তো শুধু বিষ্ণু পারম্য বা শুধু শিব পারম্য নাই। বরং উভয় পারম্যই পাওয়া যায়। তাহলে সে পুরাণ কোন পর্যায়ের পুরাণ। সেক্ষেত্রে পূর্বের সাত্ত্বিকাদি বিভাগের রেফারেন্সে বলাই আছে, সর্বাধিক যে মাহাত্ম্যের থাকে সেই পুরাণের ভাগে পড়ে উক্ত পুরাণটি। অনেক পুরাণে অনেকের মাহাত্ম্য থাকলেও, সকলের মাহাত্ম্য সমান থাকে না। যার মাহাত্ম্য বেশি সেই হিসেবে পুরাণের বিভাগ হবে। যেমন, পদ্ম পুরাণে বিষ্ণু, শিব, ব্রহ্মা সকলের মাহাত্ম্যের কথাই আছে অর্থাৎ সাত্ত্বিক, রাজসিক, তামসিক সকল মাহাত্ম্যই আছে। কিন্তু বেশি পরিমাণে আছে বিষ্ণু মাহাত্ম্য। এজন্য ইহা সাত্ত্বিক পুরাণ হিসেবে মান্য।
প্রশ্ন তো সেই - ভিন্ন ভিন্ন তালিকার কোনটা সঠিক? এরূপ প্রশ্নের উত্তরে কি লিখেছে দেখুন।
পৌরাণিক–
🟥এরপর প্রশ্ন ওঠে, গড়ুর পুরাণেও ১৮ পুরাণের সাত্ত্বিকাদি বিভাগ করা আছে। সেগুলোর সাথে তো পদ্ম পুরাণের বিভাগ মিলে না। তাহলে এই পুরাণের বিভাগ কতটুকু গ্রহনযোগ্য?
👉পুরাণের বিভাগ অবশ্যই গ্রহনযোগ্য। কেননা পূর্বে আমরা মৎস, কূর্ম, পদ্ম, স্কন্দ চারটি পুরাণ থেকে এই বিভাগ দেখিয়েছি। সুতরাং, এই বিভাগকে অমান্য করলে পুরাণের একটা বড় অংশকে অমান্য করা হয়। আর গড়ুর পুরাণে তো ১৮ টি মহাপুরাণ ও উপপুরাণের নামেই ভিন্নতা আছে। পূর্বে আমরা দেখিয়েছি, গড়ুর পুরাণে শিব ও নারদ পুরাণকে উপপুরাণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, আাবার সৌর ও বায়ু পুরাণকে মহাপুরাণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এবং আমরা এও আলোচনা করেছি, এগুলো ঘটে কল্পভেদের কারণে। গড়ুর পুরাণের ঐ পুরাণের লিস্ট গড়ুর কল্পের জন্য, যা আমরা আগে দেখিয়েছি। ঠিক একই ভাবে গড়ুর পুরাণের সাত্ত্বিকাদি বিভাগটিও করা হয়েছে গড়ুর কল্পের পুরাণের বিভাগ অনুসারে। সেখানে বর্তমান কল্প অর্থাৎ বরাহ কল্পের পুরাণ গুলোর বিভাগ পাওয়া য়ায় না। বরাহ কল্পের পুরাণ গুলোর বিভাগ পাওয়া যায় পদ্ম পুরাণে। কেননা পদ্ম পুরাণে উল্লিখিত পুরাণের নাম সমূহ ও বরাহ কল্পের পুরাণ বিষ্ণু পুরাণে পুরাণগুলোর নাম সমূহ হবহু একই। তাই বর্তমান বরাহ কল্পের জন্য পদ্ম পুরাণের বিভাগটিই নির্দিষ্ট করা আছে, গড়ুর পুরাণের বিভাগ টি নয়। গঠুর পুরাণের ঐ বিভাগ গড়ুর কল্পের জন্য নির্দিষ্ট করা। এই কল্পে মুক্তির জন্য আমাদের সর্বোচ্চ স্থান দিতে হবে বিষ্ণু পুরাণকে। কেননা এটা সরাসরি এই কল্পের পুরাণ ও উত্তম সাত্ত্বিক পুরাণ। এবং এর পরই আসে শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ। শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ পড়লে কেও বুঝতে পারবে, এটি সরাসরি বিষ্ণুপুরাণের বর্ধিত পুরাণের মত। যেসব বর্ণনা বিষ্ণুপুরাণে সংক্ষিপ্ত রূপে আছে সেইসব বর্ণনা ভাগবতে বিস্তারিত পাওয়া যায়। তাছাড়া, এই শ্রীমদ্ভাগবত ও বিষ্ণু পুরাণ এমন দুইটি পুরাণ যেগুলো ঐতিহাসিক ভাবেও সংরক্ষিত এবং কোনো রকম বিকৃতির ছোয়া হতে মুক্ত। কেননা এই দুইটা পুরাণকে বৈষ্ণবগণ ও অদ্বৈতবাদীগণ ভাষ্য আাকারে লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষণ করে রেখেছিল। যারফলে এই দুই পুরাণের সকল স্থানে একই সংস্করণ পাওয়া যায়।
✅সমীক্ষা–
পুরাণের বিভাগ অবশ্যই গ্রহনযোগ্য। কেননা পূর্বে আমরা মৎস, কূর্ম, পদ্ম, স্কন্দ চারটি পুরাণ থেকে এই বিভাগ দেখিয়েছি।
এটা কেমন যুক্তি হলো? পূর্বে এই পুরাণ থেকে আপনি বিভাগ দেখালেন বলে গ্রহণীয়, আশ্চর্যজনক যুক্তি। এই বিভাগকে অমান্য করলে পুরাণের একটা বড় অংশকে অমান্য করা হয়।
এতো আরো বড় যুক্তি, এ নিয়ে কি আর বলবো, পাঠক স্বয়ম্ বিচার করুক।
গড়ুর পুরাণে দেওয়া বিভাগ গড়ুর কল্পের জন্য সেজন্য সেটা এই কল্পে গ্রহণীয় নয় তা এই কল্পের বিভাগ কোথায়? পদ্মপুরাণে বরাহ কল্পের জন্য বিভাগ দিয়েছে বললেন, তা পদ্মপুরাণে কোথায় বলা হয়েছে? আপনিই তো বললেন– পদ্ম পুরাণ পদ্ম কল্পের পুরাণ (মৎস পুরাণ/৫৩/ ১৪)। গড়ুর পুরাণের তালিকা নিয়ে কাহিনী তো করলেন কিন্তু ভবিষ্যপুরাণেও তো ভিন্ন তালিকা। তারপর ভাগবতের মহিমা কির্তন করলেন, তা ভাগবতের মতভেদই তো দূর হয়নি। তাছাড়া পুরাণেই বলা হয়েছে ভাগবত ব্যাসদেব প্রণীত নয়।
এ নিয়ে পুরাণ বিমর্শে বিস্তারিত তথ্য সহ দেওয়া আছে।
🖋️প্রিয়রত্ন বিদ্যার্থী
©️অমৃতস্য পুত্রাঃ