বর্ণাশ্রম (চাতুর্বর্ণ্য)
"চত্বারো বর্ণা ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বৈশ্যসশূদ্রাঃ"(বসিষ্ঠ স্মৃতি- ২/১)।
যথা- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র।
জন্মের সময় সকলেই শূদ্র হয় "জন্মনা জায়তে শূদ্রঃ" কেননা বর্ণ গুণ ও কর্মভেদে হয়। প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় জন্মসূত্রেই ব্রাহ্মণ পরিচয়ে পরিচিত হয়। পূর্ব পুরুষ ব্রাহ্মণ হলে তাঁর বংশধর সকলে ব্রাহ্মণ এবং অন্যান্য বর্ণের ক্ষেত্রে তাহাই মানা হয়ে থাকে। প্রথমত ইহা আদৌতে পূর্বপুরুষ অনুযায়ী হয়না, যদি পূর্ব পুরুষই ধরা হয় তাহলে আমাদের সকলের পূর্বপুরুষই ঋষি ছিল সেই অনুযায়ী সকলেই ব্রাহ্মণ হতো। শাস্ত্রে সরাসরি বলা হয়েছে-
তজাত্যাব্রাহ্মণশ্রাত্রক্ষত্রিয়োবৈশ্যএবন।
নশূদ্রোনর্চবম্লেচ্ছোভেদিতাগুণকর্মভিঃ॥শুক্রনীতি (১/৪/৩৮)
অনুবাদঃ- এই জগতে জন্মদ্বারা ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য-শূদ্র-ম্লেচ্ছ হয় না, কিন্তু গুণ এবং কর্মভেদে হয়।
কে কোন বর্ণের হবে সেটা যার যার ইচ্ছা এবং গুণ-কর্মের উপর নির্ভর করে "বর্ণো বৃণোতেঃ" (নি০ ২/৩)" নিজ ইচ্ছানুযায়ী যেরূপ বর্ণ বরণ করে নেওয়া হয় সেরূপ গুণ ও কর্মভেদে বর্ণ পরিবর্তিতও হয়ে যায়–
শূদ্রো ব্রাহ্মণতামেতি ব্রাহ্মণশ্চৈতি শূদ্রতাম্।
ক্ষত্রিয়াজ্জাতমেবং তু বিদ্যাদ্বৈশ্যাত্তথৈব চ।। (মনু০ ১০/৬৫)
ভাষ্যঃ- (শূদ্রঃ ব্রাহ্মণতাম্ + এতি) শূদ্র ব্রাহ্মণ (চ) আর (ব্রাহ্মণঃ শূদ্রতাম্ + এতি) ব্রাহ্মণ শূদ্র হয়ে যায় অর্থাৎ গুণ কর্ম অনুসারে যদি ব্রাহ্মণ হয় তো ব্রাহ্মণ থাকে তথা যে ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্রের গুণ ধারণ করে সে ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র হয়ে যায়। তেমনি শূদ্রও যদি মূঢ় হয় তো সে শূদ্রই রয় যদি উত্তম গুণযুক্ত হয় তো যথাযোগ্য ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য হয়ে যায়।
(ক্ষত্রিয়াত্ জানম্ + এবং তু তথৈব বৈশ্যাত্ বিদ্যাত্) তেমনিই ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যের বিষয়কেও জেনো।
ধর্মচর্যয়া জঘন্যো বর্ণঃ পূর্বং পূর্বং
বর্ণমাপদ্যতে জাতিপরিবৃত্তৌ ॥১॥
অধর্মচর্য্যয়া পূর্বোবর্ণো জঘন্যং জঘন্যং
বর্ণমাপদ্যতে জাতিপরিবৃত্তৌ ॥২॥
ইহা আপস্তম্ব [ধর্মসূত্রের] সূত্র [প্রশ্ন ২/প০ ৫/কং০ ১১/সূত্র ১০-১১]
অর্থ – ধর্মাচরণ দ্বারা নিকৃষ্ট বর্ণ স্ববর্ণ অপেক্ষা উচ্চ বর্ণ প্রাপ্ত হয় এবং যে যে বর্ণের উপযুক্ত সে, সেই বর্ণে গণ্য হইবে ॥১॥ সেইরূপ অধর্মাচরণ দ্বারা পূর্ব পূর্ব অর্থাৎ উচ্চবর্ণের মনুষ্য নিজ বর্ণ অপেক্ষা নিম্ন বর্ণ প্রাপ্ত হয় এবং সে সেই বর্ণে গণ্য হইবে।
বর্ণব্যবস্থার বিকৃতরূপের কারনে অনেকেই বলে বর্ণ বাদ দেওয়া উচিৎ, কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্রের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য এই বর্ণব্যবস্থা যথাযথ ধারন ও পালন করা উচিৎ, তবে জন্মসূত্রে বর্ণব্যবস্থা অবশ্যই দূর করা উচিত্। মহর্ষি মনু বলিয়াছেন-
লোকানাং তু বিবৃদ্ধ্যর্থং মুখবাহূরুপাদতঃ।
ব্রাহ্মণং ক্ষত্রিয়ং বৈশ্যং শূদ্রং চ নিরবর্তয়ত্।। (মনু০ ১/৩১)
ভাষ্যঃ- [পরমাত্মা] (লোকানাং তু) প্রজাদের অর্থাৎ সমাজের (বিবৃদ্ধ্যর্থম্) বিশেষ বৃদ্ধি = শান্তি সমৃদ্ধি এবং প্রগতির জন্য (মুখবাহু-উরু-পাদতঃ) মুখ, বাহু, উরু আর পায়ের গুণের তুলনা অনুসারে, ক্রমশঃ (ব্রাহ্মণং ক্ষত্রিয়ং বৈশ্যং চ শূদ্রং) ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র বর্ণ কে (নিরবর্তয়ত্) নির্মিত করেছেন। অর্থাৎ চাতুর্বর্ণ্য-ব্যাবস্থার নির্মাণ করেছেন।
সর্বস্যাস্য তু সর্গস্য গুপ্ত্যর্থং স মহাদ্যুতিঃ।
মুখবাহূরুপজ্জানাং পৃথক্ কর্মাণ্যকল্পয়ৎ।। (মনু০ ১/৮৭)
ভাষ্য - (অস্য সর্বস্য সর্গস্য) এই সমস্ত সংসারকে (গুপ্ত্যর্থম্) গুপ্তি অর্থাৎ সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং সমৃদ্ধির জন্য (সঃ মহাদ্যুতিঃ) মহাতেজস্বী পরমাত্মা (মুখ-বাহু-উরু-পদ্-জানাম্) মুখ, বাহু, উরু আর পায়ের তুলনায় নিমিত্ত অর্থাৎ ক্রমশঃ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র বর্ণের (পৃথক্ কর্মাণি + অকল্পয়ৎ) পৃথক পৃথক কর্ম বানিয়েছেন।
ব্রাহ্মণ–
অধ্যাপনমধ্যয়নং য়জনং য়াজনং তথা।
দানং প্রতিগ্রহশ্চৈব ব্রাহ্মণানামকল্পয়ৎ ॥১॥ মনু০ ১/৮৮ শমো দমস্তপঃ শৌচং ক্ষান্তিরার্জবমেব চ। জ্ঞানং বিজ্ঞানমাস্তিক্যং ব্রহ্মকর্ম স্বভাবজম ॥ ২॥ গী০ ১৮/৪২
ব্রাহ্মণের অধ্যয়ন, অধ্যাপনা, যজ্ঞ করা ও করানো, দান দেওয়া এবং দান গ্রহণ করা এই ছয়টি কর্ম। কিন্তু “প্রতিগ্রহঃ প্রত্যবরঃ" (মনু০ ১০/১০৯)। অর্থাৎ প্রতিগ্রহ (গ্রহণ করা) হীন কর্ম ॥১॥ (শম) মনে মনে কুকর্ম করিবার ইচ্ছাও না করা এবং মনকে কখনও অধর্মে প্রবৃত্ত হইতে না দেওয়া। (দম) শোত্র ও চক্ষুরাদি ইন্দ্রিয় সমূহকে অন্যায় আচরণ হইতে নিবৃত্ত করিয়া ধর্মে পরিচালিত করা। (তপ) সর্বদা ব্রহ্মচারী ও জিতেন্দ্রিয় হইয়া ধর্মানুষ্ঠান করা। শৌচ–
অদ্ভির্গাত্রাণি শুধ্যন্তি, মনঃ সত্যেন শুধ্যতি।
বিদ্যাতপোভ্যাং ভূতাত্মা, বুদ্ধির্জ্ঞানেন শুধ্যতি ॥ (মনু০ ৫/১০৯)
জল দ্বারা বহিরঙ্গ, সত্যাচরণ দ্বারা মন, বিদ্যা ও ধর্মানুষ্ঠান দ্বারা জীবাত্মা এবং জ্ঞান দ্বারা বুদ্ধি পবিত্র হয়। আভ্যন্তরীণ রাগদ্বেষাদি দোষ এবং বাহিরের মল দূর করিয়া শুদ্ধ থাকা, অর্থাৎ সত্যাসত্য বিচার করিয়া সত্যগ্রহণ ও অসত্যবর্জন দ্বারা নিশ্চয়ই পবিত্র হওয়া যায় (ক্ষান্তি) অর্থাৎ নিন্দা-স্তুতি, সুখ-দুঃখ, শীত-উষ্ণ, ক্ষুধা-তৃষ্ণা, হানি-লাভ, মান অপমানাদি, হর্ষ-শোক পরিত্যাগ করিয়া ধর্মে দৃঢ়নিশ্চয় থাকা (আর্জব) কোমলতা, নিরভিমানতা, সরলতা ও সরল স্বভাব রাখা এবং কুটিলতাদি দোষ পরিত্যাগ করা (জ্ঞান) সাঙ্গোপাঙ্গ বেদাদি শাস্ত্র অধ্যয়ন করিয়া অধ্যাপনা করিবার সামর্থ্য: 'বিবেক' সত্য নির্ণয় যে বস্তু যেমন, তাহাকে সেইরূপ জানা অর্থাৎ জড়কে জড় এবং চেতনকে চেতন জানা ও স্বীকার করা। (বিজ্ঞান) পৃথিবী হইতে পরমেশ্বর পর্যন্ত যাবতীয় পদার্থকে বিশেষ রূপে জানিয়া ঐ সকলকে যথোচিত কার্য্যে প্রয়োগ করা। (আস্তিক্য) বেদ, ঈশ্বর ও মুক্তিতে বিশ্বাস; পূর্ব পরজন্ম স্বীকার করা; ধর্ম, বিদ্যা ও সৎসঙ্গ, এবং মাতৃ পিতৃ ও অতিথি সেবাকে কখনও পরিত্যাগ না করা এবং কখনও নিন্দা না করা এই পঞ্চদশ কর্ম ও গুণ ব্রাহ্মণ বর্ণস্থ মনুষ্যের মধ্যে অবশ্যই থাকা উচিত ॥২॥
ক্ষত্রিয়–
প্রজানাং রক্ষণং দানমিজ্যাধ্যয়নমেব চ।
বিষয়েষ্বপ্রসক্তি ক্ষত্ৰিয়স্য সমাসতঃ ॥১॥ মনু০ ১/৮৯
শৌর্য়ং তেজো ধৃতিদাক্ষ্যং যুদ্ধে চাপ্যপলায়নম্ ।
দানমীশ্বরভাবশ্চ ক্ষাত্রং কর্ম স্বভাবজম্ ॥২॥ গী০ ১৮/৪৩
(প্রজা০) ন্যায়ানুসারে 'প্রজারক্ষা' অর্থাৎ পক্ষপাত পরিত্যাগ পূর্বক শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের সম্মান এবং দুষ্ট ব্যক্তিদের তিরস্কার করা; সর্বপ্রকারে সকলকে পালন করা, (দান) বিদ্যাধর্মে প্রবৃদ্ধি সুপাত্রের সেবায় ধনাদি সামগ্রী ব্যয় করা। (ঈজ্যা) অগ্নিহোত্রাদি যজ্ঞ করা ও করানো। (অধ্যয়ন) বেদাদি শাস্ত্র সমূহের অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা ; (বিষয়েষ্ব প্রসক্তি) বিষয়সমূহে আসক্ত না হইয়া সর্বদা জিতেন্দ্রিয় এবং শরীর ও আত্মায় বলবান্ থাকা ॥১॥
(শৌর্য্য) একাকী শত সহস্রের সঙ্গেও যুদ্ধ করিতে ভীত না হওয়া (তেজঃ) সর্বদা তেজস্বী অর্থাৎ দীনতাশূণ্য প্রগল্ভ এবং দৃঢ় থাকা। (ধৃতি) ধৈর্য্যবান হওয়া। (দাক্ষ্য) রাজা-প্রজা বিষয়ক ব্যবহার এবং সকল শাস্ত্রে অতিশয় নিপুণ হওয়া (যুদ্ধে) যুদ্ধে দৃঢ় ও নিঃশঙ্ক থাকিয়া, কখনও তাহাতে পরান্মুখ না হওয়া ও পলায়ন না করা; অর্থাৎ এইরূপ যুদ্ধ করা যাহাতে নিশ্চিতরূপে বিজয় হইবে এবং আত্মরক্ষা করিবে। যদি পলায়ন বা শত্রু প্রতারণা করিলে বিজয় লাভ হয়, তবে তাহাও করা। (দান) দানশীল থাকা (ঈশ্বরভাব) পক্ষপাতশূন্য হইয়া সকলের সহিত যথাযোগ্য ব্যবহার করা, বিচারপূর্বক দান করা, প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করা এবং কখনও প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ না হইতে দেওয়া। এই একাদশটি ক্ষত্রিয়বর্ণের কর্ম এবং গুণ ॥২॥
বৈশ্য–
পশুনাং রক্ষণং দানমিজ্যাধ্যয়নমেব চ।
বণিক্পথং কুসীদং চ বৈশ্যস্য কৃষিমেব চ॥ মনু০ ১/৯০
(পশুরক্ষা) গবাদি পশুর পালন এবং বৃদ্ধি করা। (দান) বিদ্যা ও ধর্মের বৃদ্ধি করিতে ও করাইতে ধনসম্পত্তি ব্যয় করা। (ইজ্যা) অগ্নিহোত্রাদি যজ্ঞ করা। (অধ্যয়ন) বেদাদি শাস্ত্রের অধ্যয়ন করা। (বণিকপথ) সর্বপ্রকার বাণিজ্য করা। (কুসীদ) শতকরা চারি আনা, ছয় আনা, আট আনা, বার আনা, ষোল আনা, বা বিশ আনার অধিক সুদ গ্রহণ না করা এবং মূলধনের দ্বিগুণের অধিক অর্থাৎ এক টাকা দিয়া একশত বৎসরের দুই টাকার অধিক গ্রহণ না করা ও না দেওয়া। (কৃষি) কৃষিকার্য্য করা। এই [সাতটি] বৈশ্যের গুণ ও কর্ম।
শূদ্র–
একমের তূ শূদ্রস্য প্রভুঃ কর্ম সমাদিশৎ।
এতেষামেব বর্ণনাং শুশ্রূষামনসূয়য়া ॥ মনু০ ১/৯১
নিন্দা, ঈর্ষা এবং অভিমানাদি দোষ পরিত্যাগ করিয়া ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, এবং বৈশ্যদিগকে যথোচিত সেবা করা শূদ্রের কর্তব্য এবং তদ্দ্বারাই জীবন যাত্রা নির্বাহ করা। ইহাই একমাত্র শূদ্রের গুণ এবং কর্ম ॥
সংক্ষেপে এই সব বর্ণ সমূহের গুণ এবং কর্মবিষয়ে লিখিত হইল। যে যে ব্যক্তির মধ্যে যে যে বর্ণের গুণ-কর্ম থাকিবে সেই সেই ব্যক্তিকে সেই সেই বর্ণের অধিকার দান করিবে। এইরূপ ব্যবস্থা রাখিলে সব মনুষ্য উন্নতিশীল হয়। কারণ উত্তম বর্ণের ভয় হইবে যে, তাহার সন্তান মূর্খতাদি দোষ যুক্ত হইলে শূদ্র বলিয়া গণ্য হইবে। সন্তানদের ভয় থাকিবে যে, তাহারা পূর্বোক্ত আচার-ব্যবহার ও বিদ্যাসম্পন্ন না হইলে তাহাদের শূদ্র হইতে হইবে। আর সকলেই বিদ্যালাভের জন্য উৎসাহী হইবে।
বিদ্যা এবং ধর্ম প্রচারের অধিকার ব্রাহ্মণকে দিবে। কারণ, তাঁহারা পূর্ণ বিদ্বান এবং ধার্মিক বলিয়া সেই কাৰ্য্য যথোচিত রূপে সম্পাদন করিতে পারেন। ক্ষত্রিয়কে রাজাধিকার দান করিলে রাজ্যের কখনও হানি অথবা বিঘ্ন হয় না।
পশুপালন প্রভৃতি অধিকার বৈশ্যকেই দান করা উচিত। কারণ তাঁহারা এ কার্য্য উত্তমরূপে করিতে পারে।
গুণানুযায়ী শূদ্রকে সেবাধিকার দানের কারণ এই যে সে প্রায় বিদ্যাহীন বলিয়া বিজ্ঞান সম্বন্ধীয় কাৰ্য্য কিছুই করিতে পারে না কিন্তু সে শারীরিক কার্য্য সবই করিতে পারে। এইরূপ সকল বর্ণকে স্ব স্ব অধিকারে প্রবৃত্ত করা রাজাদির কর্তব্য।
পরবর্তী পর্বে আশ্রম নিয়ে....
©️অমৃতস্য পুত্রাঃ
Tags:
বর্ণাশ্রম
