আর্য কাকে বলে?

আর্য


যদ্যপি সনাতনীরা হিন্দু বলেই পরিচয় দিয়ে থাকে কিন্তু আমাদের পরিচয় মূলত 'আমরা আর্য'। শাস্ত্রাদির কোথাও হিন্দু শব্দ খুঁজে পাওয়া যায়না। দীর্ঘকাল পর্যন্ত হিন্দু পরিচয় বহন করতে-করতে তারা যে আর্য তা প্রায় ভুলেই গেছে। যার ধরুন বিদ্যালয়ের ধর্ম বইয়ে পড়ানো হয় যে আর্যরা ভারতের মূল নিবাসী নয়, বহিরাগত। এটি যে কোন ষড়যন্ত্রের সফলতা তা বুঝাই যায়। নিরুক্তে বলা হয়েছে "আর্য ঈশ্বরপুত্রঃ" (নি০ ৬/২৬), ঈশ্বরের পুত্রই আর্য। চাণক্যনীতিতে বলা হয়েছে "তে পুত্রা য়ে পিতুর্ভক্তাঃ" (২/৪)। পুত্র তাকেই বলা হয় যে পিতার ভক্ত হয়। অর্থাৎ যে ঈশ্বরের যথার্থ পুত্র, ঈশ্বরের আজ্ঞা পালনকারী তিনিই আর্য। বেদ, বেদাঙ্গ, মহাভারত, রামায়ণ, নীতিশাস্ত্রাদিতে আর্য পরিচয়েরই উল্লেখ রয়েছে, হিন্দু নহে। শ্রী রাম, শ্রীকৃষ্ণ এরা সকলেই আর্য ছিলেন। বিভিন্ন শাস্ত্রেই আর্য হতে হলে কি গুণ থাকা প্রয়োজন তা বলা হয়েছে, কেননা "গুণেন জ্ঞায়তে ত্বার্যঃ" (চাণক্যনীতি-৫/৮)। অর্থাৎ সদ্গুণ দ্বারাই আর্য পরিচয় হয়। মহাভারতে বলা হয়েছে-
ন বৈরমুদ্দীপয়তি প্রশান্তং ন দর্পমারোহন্তি নাস্তমেতি। ন দূর্গতোস্মীতি করোত্যকার্যং তমার্যশীলং পরমাহুরার্যাঃ।। (মহাভারত,উদ্যোগ পর্ব-৩৩/১১২)
অনুবাদঃ- যে শান্ত, বৈরতা উদ্দীপ্ত করেনা, গর্ব করেনা, হীনতা দেখায় না তথা 'আমি বিপত্তিতে পরেছি ' এমন ভেবে অনুচিত কর্ম করেনা, সেই উত্তম আচরণকারী ব্যাক্তিকে আর্য অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ বলে।
আর্য শব্দের বিপরীর শব্দ হলো অনার্য। আর্যদের জন্য সেই অনার্যের ন্যায় আচরণ করা নিষিদ্ধ। কুরুক্ষেত্রে অর্জুনের আচরণ দেখে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে "অনার্যজুষ্ট" (গীতা-২/২) বলিয়া ভৎসর্না করেছেন এবং অনার্যতা দূর করার প্রয়াস কয়েছেন। রামায়ণেও মাতা কৈকেয়ী শ্রীরাম কে বনবাস দেওয়ার জন্য বলায়, রাজা দশরথ তাঁকে 'অনার্যা' বলে সম্বোধিত করেছেন (অযোধ্যাকাণ্ড-১৩/৫)। মহর্ষি বাল্মীকিও সেজন্য 'অনার্যা' শব্দ দ্বারা মাতা কৈকেয়ীর নিন্দা করেছেন (অযোধ্যাকাণ্ড-১৯/১৯)। মনুস্মৃতিতেও বলা হয়েছে-
অনার্যতা নিষ্ঠুরতা ক্রূরতা নিষ্ক্রিয়াত্মতা।
পুরুষং ব্যঞ্জয়ন্তীহ লোকে কলুষযোনিজম্।। ১০/৫৮
ভাষ্যঃ- (অনার্যতা) অশ্রেষ্ঠ ব্যবহার (নিষ্ঠুরতা) কঠোরতা স্বভাব (ক্রূরতা) নির্দয়তা (নিষ্ক্রিয়াত্মতা) ধার্মিক ক্রিয়ার [যজ্ঞ আদির] প্রতি উপেক্ষাভাব = না করার ভাবনা, এই লক্ষণ (লোকে) লোকে (পুরুষং কলুষযোনিজম্ ব্যঞ্জয়ন্তীহ) পুরুষকে দুষ্টপ্রভৃতি বা অনার্য হওয়ার ইঙ্গিত করে, কারণ তা আর্য অন্তর্গত নয় ,কেননা এ আর্যদের জন্য নিষিদ্ধ।
বেদে সেই অনার্য কর্মহীন, অবিচারশীল, দুষ্ট কার্য্য করে এমন মানবতাহীন ব্যক্তিদের দস্যু তথা অমানুষ বলা হয়েছে। "অকর্মা দস্যুরভি নো অমন্তুরন্যব্রতো অমানুষঃ" (ঋগ্বেদ-১০/২২/৮)। পূর্বে ভারত বর্ষের নাম 'আর্যাবর্ত' ছিল (মনু০ ২/২২), আর্যদের নিবাস ছিল বলিয়াই এই নাম হইয়াছিল। তৎপশ্চাৎ যেরূপ বাংলাদেশের সকলেই বাংলাদেশী হিসেবে পরিচিত হয় সেরূপ আর্যাবর্তের সকলেই আর্য পরিচয়ে পরিচিত হইতো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন