আজকাল হিন্দুদের মধ্যে এক বিরাট ভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে, বিভিন্ন ভাবে প্রচার প্রসারও চলছে যে ভগবান শ্রী রাম চন্দ্র এবং মাতা সীতার বাল্য বিবাহ হয়েছিলো। সেই সময় ভগবান শ্রী রাম এর বয়স ছিল মাত্র ১৫/১৬ বছর এবং মাতা সীতার বয়স ছিল মাত্র ৬ বছর। এই সমস্ত শঙ্কাগুলো তুলে ধরে প্রচার করার চেষ্টা করে মুখ্য রূপে সেই মানুষগণ যারা আয়শার বিবাহর সময়ের বয়স মাত্র ৬ বছর ছিলো এমন ঘটনাকে মান্যতা দেওয়ার প্রয়াস করে।
আজ আমরা আলোচনা করবো সত্যিই কি শ্রী রাম চন্দ্র এবং মাতা সীতার বাল্য বিবাহ হয়েছিলো?
তো চলুন বাল্মীকি রামায়ণ থেকে সাক্ষ্য তথ্য ও প্রমাণ এর ভিত্তিতে জানার প্রযন্ত করি বিবাহের সময় রাম চন্দ্র ও মাতা সীতার বয়স কতো ছিলো?-
রাম চন্দ্রের বয়স
যখন মহর্ষি বিশ্বামিত্র শ্রীরাম ও লক্ষ্মণ এর সাথে গমন শুরু করে তখন রাস্তায় রাজা সুমতির ওখানে থাকার প্রযত্ন করে। সেই সময় রাজা সুমতি বিশ্বামিত্র জী এর কাছে শ্রী রাম এবং লক্ষ্মণ এর বিষয়ে জানতে চায় এবং জিজ্ঞাসার করার সময় তাদেরকে যুবক অবস্থায় প্রাপ্ত করে।
এই প্রকার যখন মহর্ষি বিশ্বামিত্র শ্রীরাম এবং লক্ষ্মণ এর সাথে মিথিলা পৌঁছায় তখন রাজা জনক তাদের বিষয়ে জিজ্ঞেস করে, তখনও শ্রী রাম এবং লক্ষণ জীকে যুবকই বলা হয়।
খঙ্গতূণধনুর্ধরী । সমুপস্থিতয়ৌবনৌ ॥ ১৮ ॥
বালকাণ্ড সর্গ ৫০
এখানে দুটি প্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধ হয় যে শ্রী রাম চন্দ্রের বয়স ২৫ বছরের অধিক ছিলো,কারণ পুরুষের যুবক অবস্থা ২৫ বর্ষ থেকে প্রারম্ভ হয়।
মাতা সীতার বয়স
মাতা সীতা অনুসূয়া জী কে বলেন যে বিবাহের সময় আমার বয়স পতিসংয়োগসুলভা অবস্থা অর্থাৎ বিবাহ যোগ্য অবস্থা ছিলো।
যখন পিতা দেখেন আমার বয়স বিবাহ যোগ্য হয়েছে, তখন তিনি বড় চিন্তায় পরে। যেমনটা কষ্টে আয় করা ধন নাশ হওয়ায় নির্ধন মানুষের দুঃখ হয়, তেমন প্রকার তিনি আমার বিবাহের চিন্তায় দুঃখী ।।৩৪।।
অয়োধ্যাকাণ্ডে যখন ভগবান শ্রী রাম এর রাজ্যাভিষেক হওয়ার সময় হয় তখন রাম জীকে বনবাস দেওয়া হয়। তখন শ্রী রাম তার মাতার কাছে আজ্ঞা নিতে যায়, সেই প্রসঙ্গে কৌশল্যা জী বলেন-
'ঘুনন্দন! তুমি উপনয়নরূপ দ্বিতীয় জন্ম নিয়েছো ১৭ বর্ষ অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে (অর্থাৎ তুমি এখন ২৭ বছরের হয়েছো) এত দিন আমি আশায় ছিলাম এখন আমার দুঃখ ঘুচে যাবে ।।৪৫।।
অয়োধ্যাকাণ্ড সর্গ ২০
পশ্চিমোত্তর সংস্করণে এই প্রকার আসে-
এখানে "তে" শব্দের প্রয়োগ করা হয়েছে, সংস্কৃতে "তে" শব্দ সঃ এর বহুবচন। "তে" শব্দের অর্থ হলো তারা সকলে। অতঃ কৌশল্যা জী এখানে বলেন তারা সবাই (তিন জন) তরুণ অবস্থায় ছিলেন।
এখানে কৌশল্যা জী বলেন শ্রী রাম চন্দ্রের উপনয়ন ১৭ বৎসর পূর্বে হয়েছিলো। তথা পশ্চিমোত্তর এবং বঙ্গাল সংস্করণ এর অনুসারে ১৮ বৎসর পূর্বে হয়েছিলো। সেখানে একটি শ্লোক এই প্রকার-
কিছু মানুষের আক্ষেপ থাকতে যে এখানে জন্মের কথা বলা হয়েছে। এখানে দ্বিতীয় জন্ম অর্থাৎ দ্বিজ শব্দ গ্রহণ করা হয়েছে। যা জন্ম থেকে শুরু করে যজ্ঞোপবীত পর্যন্ত রূপকে দ্বিতীয় জন্ম মানা হয়।
যখন শ্রী রাম বনে চলে যায় তখন কৌশল্যা জী কান্না পূর্বক মহারাজ দশরথ উপালম্ভ দেয়। তার মধ্যে একটি শ্লোক এই প্রকার-
এখানে কৌশল্যা জী সীতা জী কে তরূণী বলছেন। তরূণীর অর্থ যুবাবস্থাকে প্রাপ্ত মহিলা ।
[ বি. দ্র. ঋষি দয়ানন্দ জী সংস্কার বিধি তে আশ্বলায়ন গৃহ্যসূত্র এর প্রমাণ দিয়ে লিখেছেন ক্ষত্রিয়ের উপনয়ন সংস্কার ১১ বৎসরে হওয়া উচিত। ]
বাল্মীকি রামায়ণ অনুযায়ী রাবণ যখন ছদ্মবেশে মাতা সীতার জির কাছে এসে তার পরিচয় জানতে চায় তখন মাতা সীতা তার পরিচয়ে বলেন-
বন গমনের সময় আমার মহাতেজস্বী স্বামীর (ভগবান শ্রী রাম) বয়স ২৫ বছরের উপরে ছিলো এবং আমার বয়স (মাতা সীতা) ১৮ বছর ছিলো।
অতএব,উপরোক্ত সমস্ত প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার করলে দেখা যায় মাতা সীতা এবং ভগবান শ্রী রাম চন্দ্রের বাল্য বিবাহ হয় নি।তাদের প্রাপ্ত বয়সেই বিবাহ হয়েছিলো।