সনাতন ধর্মে বিবাহ বিচ্ছেদ প্রথা নেই |
---Vedas Not In Favour Of Divorce---
তথা কথিত ধর্ম বা মহজব এর মতো আমাদের বৈদিক ধর্ম তথা সনাতন ধর্মে তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ (Divorce) প্রথা নেই। বর-বধূর উচিৎ বিবাহের পূর্বে পরস্পরকে ভালোভাবে দেখে যাচাই করে জীবন সঙ্গী নির্বাচন করা।
বিবাহের পর দুজনের উচিৎ প্রেম এবং সহিষ্ণুতা পূর্বক গৃহস্থ থাকা। এক পুরুষের একটি স্ত্রী এবং একটি নারীর একটি স্বামী হওয়া উচিত তথা বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর কখনো বিচ্ছেদ হওয়া উচিত নয়। এই বিষয়ে বেদে থেকে কিছু মন্ত্র উদ্ধত করা হলো –
» অথর্ববেদ (৭.৩৭.১) পতিকে পত্নী বলছে -
য॒ক্ষ্যো॑ নো॒ মধু॒সঙ্কাশে॒ অনী॑কং নৌ স॒মজ॑নম্ ।
অ॒ন্তঃ কৃণুষ্ব মাং হৃদি মন॒ ইন্নো॑ স॒হাস॑তি ॥
বঙ্গানুবাদ:- হে পতি তুমি আমারই থাকো, কখনো অন্য নারীর চিন্তন করো না।
» অথর্ববেদ (২.৩০.২) এ পতি পত্নীকে বলছে -
সং॑ বা॒ ভগা॑সো অ॒গ্মত॒ সং চিতানি॒ সম॑ ব্র॒তা ॥
বঙ্গানুবাদ:- হে পত্নী! তুমি আমাকেই ভালোবাসো, তুমি আমার থেকে কখনো আলাদা হয়োনা।
» অথর্ববেদ এর চতুর্দশ কান্ড এবং ঋগ্বেদ এর দশম মণ্ডলের ৮৫ তম সূক্তে বিবাহের সময় নব বর-বধূ কে উপদেশ দিয়েছে -
তোমরা দু জন পতি-পত্নী সম্পূর্ণ আয়ুকাল এই বিবাহ বন্ধনে স্থির থাকো,তোমরা কখনো এক জন অন্য জনের থেকে বিচ্ছেদ হইয়ো না।
» অথর্ববেদের চতুর্দশ কাণ্ডে(১৪.২.৬৪) তম মন্ত্রে বলা হয়েছে -
इ॒हेमावि॑न्द्र॒सं नु॑द चक्रवा॒केव॒ दम्प॑ती।
प्र॒जयै॑नौ स्वस्त॒कौ विश्व॒मायु॒र्व्यश्नुताम्॥
ইহেমাবিন্দ্ৰ সং নুদ চক্রবাকেব দম্পতী
প্রজয়ৈনৌ স্বস্তকৌ বিশ্বমায়ুর্ব্যশুতাম্।।
বঙ্গানুবাদ:- হে নব বিবাহিত পতি-পত্নী সম্পূর্ণ আয়ু ভর একে অপরের সাথে এই প্রকার একত্রিত হয়ে থেকো যে প্রকার চক্রবাক ও চক্রবাকীর ন্যায় সদা একত্রিত হয়ে থাকে।
» ঋগ্বেদ (১০.৮৫.৪৭) তম মন্ত্রে বিবাহের সময় বর-বধূ নিজেদের কে পূর্ণ রূপে একে অপরের মাঝে একত্রিত করার সংকল্প করে বলে –
सम॑ञ्जन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वाः समापो॒ हृद॑यानि नौ ।
सं मा॑त॒रिश्वा॒ सं धा॒ता समु॒ देष्ट्री॑ दधातु नौ ॥
সমস্তু বিশ্বে দেবাঃ সমাপো হৃদয়ানি নৌ ।
মাতরিশ্বা সাংধাতা সমু দেষ্ট্ৰো ধতাতু নৌ ॥
বঙ্গানুবাদ:- হে বিদ্বানগণ! আপনারা জানিয়া রাখুন, আমাদের স্বামী স্ত্রী উভয়ের হৃদয় জলের ন্যায় পরস্পর মিলিত থাকিবে। যেমন প্রাণবায়ু আমাদের নিকট প্রিয়, পরমাত্মা যেমন সকলের প্রিয়, উপদেষ্টা যেমন শ্রোতাদের নিকট প্রিয় আমাদের একের আত্মা অন্যের প্রতি সেইরূপ প্রিয় হইবে।
» অথর্ববেদ (১৪.১.৫০) তম মন্ত্রে স্বামী তার স্ত্রীকে সম্বোধন করে বলছে -
गृ॒ह्णामि॑ तेसौभग॒त्वाय॒ हस्तं॒ मया॒ पत्या॑ ज॒रद॑ष्टि॒र्यथासः॑।
भगो॑ अर्य॒मा स॑वि॒तापुर॑न्धि॒र्मह्यं॑ त्वादु॒र्गार्ह॑पत्याय दे॒वाः॥
ভগো অর্যমা সবিতা পরন্ধিমহ্যং ত্বাদুর্গার্হপত্যায় দেবাঃ।।
বঙ্গানুবাদ:- হে বরাননে! আমি ঐশ্বর্য বৃদ্ধির জন্য তোমার পাণি গ্রহণ করিতেছি। আমি পতি - আমার সহিত তুমি বৃদ্ধাবস্থা পর্যন্ত সুখে বাস কর। মঙ্গলময়, ন্যায়কারী,জগৎ স্রষ্টা পরমাত্মা এবং বিদ্বানেরা তোমাকে আমার নিকট সমর্পণ করিতেছেন।
ममे॒यम॑स्तु॒पोष्या॒ मह्यं॑ त्वादा॒द्बृह॒स्पतिः॑।
मया॒ पत्या॑ प्रजावति॒ सं जी॑व श॒रदः॑श॒तम्॥
মমেয়মস্তু পোষ্যা মহ্যং ত্বদাদ্ধৃহস্পিতিঃ।
ময়া পত্যা প্রজাবতি সংজীব শরদঃ শতম্ ॥
বঙ্গানুবাদ:- এই পত্নীর আমিই ভরণপোষণ করি। পরমাত্মা তোমাকে আমার হাতে দিয়াছেন। হে সন্তানবতী! আমি তোমার পতি, আমার সহিত শতবর্ষ শান্তিতে জীবিত থাকো।
(অথর্ববেদ ১৪.১.৫২)
সনাতন ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ বেদে এমন অনেক স্থানে স্পষ্ট রূপে প্রতিপাদন করা হয়েছে যে আদর্শ স্থিতি হলো তা যে এক পুরুষের একটি স্ত্রী এবং একটি নারীর একটি স্বামী থাকা উচিত তথা তাদের মধ্যে কখনো বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া উচিত নয়।
বিবাহ বাস্তবে সেই দিব্য সমন্ধ যার মধ্যে দুটি ব্যক্তি নিজেদের হৃদয় একজন অপরজনকে প্রদান করে। হৃদয় একবার এবং একজন ব্যক্তিকে দেওয়া যায়। একবার দেওয়া হৃদয় পরবর্তীতে ফেরত নেওয়া যায় না। এই জন্য বেদ এক পতি এবং এক পত্নী ব্রতের বিধান করে তথা বিবাহ বিচ্ছেদ করতে নিষেধ করে।
🖋️ বিশাল আর্য।