"উত্তরকাণ্ড" কি মূল বাল্মিকী রামায়ণেরই অংশ?

0

"উত্তরকাণ্ড" কি মূল বাল্মিকী রামায়ণেরই অংশ?

 নমস্তে সকলকে

সনাতন ধর্মের ইতিহাস গ্রন্থের মধ্যে "রামায়ণ" অন্যতম।যাতে ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের জীবন দর্শন পাওয়া যায়।এই রামায়ণ নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে বিগত কালে,এখনো হচ্ছে।এই বিতর্ক ধর্মীয়ভাবে,প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে এবং ঐতিহাসিকভাবেও হয়েছে।আজকে কিন্তু আমরা ঐতিহাসিক বা প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার বিষয়ে যাব না।আজকে আমরা জানার চেষ্টা করবো রামায়ণের বিতর্কিত "উত্তরকান্ড" নিয়ে।

"উত্তরকান্ড" কি মূল বাল্মিকী রামায়ণেরই অংশ?

তুলনামূলক বিচার করা যাক!

বর্তমান রামায়ণের এমন কিছু বিষয় আছে যা বিতর্ক এবং স্ববিরোধ তৈরী করে।তার কিছু নমুনা আজকে জানার চেষ্টা করবো।

অনুরোধঃলেখাটি সম্পূর্ণ পড়ুন!

১ঃ

ঋতুকালম্ প্রতীক্ষন্তে নাথিনঃ সুসমাহিতে।
সঙ্গমম্ ত্বহমিচ্ছামি ত্বয়া সহ সুমধ্যমে ॥ ১৮ ॥
মুনিবেষং সহস্রাক্ষং বিশায় রঘুনন্দন ।
মতি চকার দুর্মেধা দেবরাজকুতূহলাৎ ॥ ১৯ ॥
আদিকাণ্ড(৪৮/১৮-১৯),গীতাপ্রেস

অর্থঃ- সর্বদা সাবধানতা অবলম্বনকারী সুন্দরী! রতির ইচ্ছে প্রার্থনাকারী পুরুষরা ঋতুর জন্য অপেক্ষা করেন না।সুন্দর কটিপ্রদেশের সুন্দরী! আমি (ইন্দ্র) তোমার সাথে সমাগম করতে চাই।।১৮।।

অর্থঃ-রঘুনন্দন ! মহর্ষি গৌতমের ছদ্মবেশে এসেছিলেন ইন্দ্র,তাকে চিনতে পেরেও সেই মূর্খ মহিলা বললেন, 'আসুন!দেবরাজ ইন্দ্র আমাকে তার সাথে চাই' সেই কৌতূহলবশত উনার সাথে সমাগম করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন। ১৯

ভিন্নতাঃ–

সা ত্বয়া ধর্ষিতা শক্র কামার্তেন সমন্যুনা ।
দৃষ্টস্ত্বং স তদা তেন আশ্রমে পরমর্ষিণা ॥ ৩০ ॥
উত্তরকান্ড(৩০/৩০)

অর্থঃ ইন্দ্র!তুমি অহংকার এবং কামে আসক্ত হয়ে তাকে ধর্ষণ করেছিলে।মহর্ষিগণ আশ্রম থেকে তাহা দেখেছিলেন।

বিচারঃ– আদিকাণ্ড বা বালকাণ্ড বলা হল নিজ ইচ্ছায় পরস্পর সমাগম করতে রাজী হয়েছিল কিন্তু উত্তরকান্ডে গিয়ে তা ধর্ষণে পরিণত হয়েছে।এমন পরিবর্তন হল কেন?

২ঃ

মহাপার্শ্ব নিবোধ ত্বং রহস্যং কিঞ্চিদাত্মনঃ ।
চিরবৃত্তং তদাখ্যাস্যে যদবাপ্তং পুরা ময়া ॥ 
পিতামহস্য ভবনং গচ্ছন্তীং পুঞ্জিকস্থলাম্ ।
চঞ্চর্যমাণামদ্রাক্ষমাকাশেঽগ্নিশিখামিব।।
সা প্রসহ্য ময়া ভুক্তা কৃতা বিবসনা ততঃ ।
স্বয়ম্ভূভবনং প্রাপ্তা লোলিতা নলিনী যথা ॥
তচ তস্য তথা মন্যে জ্ঞাতমাসীন্মহাত্মনঃ ।
অথ সঙ্কুপিতো বেধা মামিদং বাক্যমব্রবীৎ ॥
অদ্যপ্রভৃতি যামন্যাং বলান্নারী গমিষ্যসি ।
তদা তে শতধা মূর্ধা ফলিষ্যতি ন সংশয়ঃ ॥
ইত্যহং তস্য শাপস্য ভীতঃ প্রসভমেব তাম্।
নারোহয়ে বলাৎ সীতাং বৈদেহীং শয়নে শুভে ॥
যুদ্ধকাণ্ড(১৩/১০-১৫),গীতাপ্রেস

সরলার্থঃ- মহাপার্শ্ব ! অনেক দিন আগে একটি গোপন ঘটনা ঘটেছিল।আমি অভিশাপ প্রাপ্ত হয়েছিলাম.আমার জীবনের সেই গোপন রহস্য আজকে বলছি, শুনুন।।১০

একবার আমি আকাশে অগ্নিশিখার ন্যায় প্রকাশিত পুঞ্জিকস্থলা নামক একজন অপ্সরীকে দেখেছিলাম,সে পিতামহ ব্রহ্মাজীর ভবনের দিকে যাচ্ছিল।সেই অপ্সরা আমার ভয়ে লুকিয়ে-চুপিসারে যেতে লাগল।।১১

আমি বলপূর্বক তার বস্ত্রহরণ করেছিলাম এবং হঠাৎ তাকে উপভোগও করেছিলাম।তারপর সে ব্রহ্মাজীর ভবনে উপনীত হয়েছিল। তার অবস্থা হাতি দ্বারা পিষ্ট কমলিনীর মত হয়ে যাচ্ছিল।১২

আমি বুঝতে পারছিলাম আমার জন্য তার যা দূর্দশা হয়েছিল,তা ব্রহ্মাজীর জানা হয়ে গেছে।এইজন্য তিনি খুবই কঠোর হয়ে উঠলেন এবং আমাকে এটাই বললেন যে-৷। ১৩

আজ থেকে তুই যদি কোন নারীর সাথে বলপূর্বক সমাগম করিস,তাহলে তোর মস্তক ১০০ টুকরা হয়ে যাবে।এতে কোন সংশয় নেই।।১৪

ব্রহ্মাজীর এইপ্রকার অভিশাপের ফলে আমি ভীতগ্রস্থ হয়ে পড়লাম,এই কারণেই আমি উত্তম-বিছানায় বিদেহীকুমারী সীতাকে হঠাৎ করে এবং বলপূর্বক কোন আক্রমন করিনি।।১৫

ভিন্নতাঃ

এবমুক্ত্বা স তাং রক্ষো নিবেশ্য চ শিলাতলে ॥ ৪০ ॥
কামভোগাভিসংরক্তো মৈথুনায়োপচক্রমে ।
উত্তরকাণ্ড,সর্গঃ২৬,গীতাপ্রেস

অনুবাদঃ এটা বলার পর সেই রাক্ষস রম্ভাকে বলপূর্বক উরুর উপর বসিয়ে নিলেন এবং কামবাসনায় আসক্ত হয়ে তার সাথে সমাগম করলেন।৪০

যদা হ্যকামাং কামার্তো ধর্ষয়িষ্যতি যোষিতম্ ॥ ৫৫ ॥
মূর্ধা তু সপ্তধা তস্য শকলীভবিতা তদা ।
উত্তরকাণ্ড,সর্গঃ২৬,গীতাপ্রেস

অনুবাদঃ যদি সে কামপীড়িত হয়ে জোড়পূর্বক(না চাওয়া সত্ত্বেও) যুবতীকে ধর্ষণ করে তাহলে সেই সময়ই তার মস্তক সাত টুকরা হয়ে যাবে।

বিচার– 

যদি যুদ্ধকান্ডের কথা সত্য হয় তবে রম্ভাকে ধর্ষণ করার সাথে সাথে রাবণের মস্তক একশ টুকরা হয়ে যেত কিন্তু উত্তরকাণ্ড(২৬/৪০) এর পরের শ্লোকগুলো পড়লে বোঝা যায় যে তা হয় নি।কিন্তু কেন?তাহলে ব্রহ্মাজীর অভিশাপ কি কাজ করে নি?এমনতো হওয়ার কথা নয়!আবার,উত্তরকাণ্ড(২৬/৫৮) তে পাওয়া যায় যে,"ব্রহ্মা এবং অন্যান্য দেবতারাও এই বিষয়ের কারণে দুঃখবোধ করলেন"!(২৬/৫৯) এ রাবণ এই দুস্কর্ম ত্যাগ করার প্রয়াস করলেন।

বিষয়গুলো সুস্থ মস্তিষ্কে বিচার করলে কেমন জানি মনে হয়!

৩ঃ

 যামেব রাত্রি শত্রুঘ্নঃ পর্ণশালাং সমাবিশৎ ।
তামেব রাত্রি সীতাপি প্রসূতা দারকদ্বয়ম্ ॥ ১
উত্তরকান্ড,সর্গঃ৬৬,গীতাপ্রেস

অনুবাদঃযে রাতে শত্রুঘ্ন পর্নশালায় প্রবেশ করেছিলেন,সেই রাতেই সীতাজী দুই সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন।

ভিন্নতা–

তথা তাং ক্রিয়মাণাং চ বৃদ্ধাভিগোত্রনাম চ ।
সঙ্কীর্তনং চ রামস্য সীতায়াঃ প্রসব শুভৌ ॥ ১১ ॥
অর্ধরাত্রে তু শত্রুঘ্নঃ শুশ্রাব সুমহৎ প্রিয়ম্ ।
পর্ণশালাং ততো গত্বা মাতর্দিষ্টয়েতি চাব্রবীৎ ॥ ১২ ॥
তদা তস্য প্রহৃষ্টস্য শত্রুঘ্নস্য মহাত্মনঃ ।
ব্যতীতা বার্ষিকী রাত্রিঃ শ্রাবণী লঘুবিক্রমা ॥ ১৩
উত্তরকাণ্ড,সর্গঃ৬৬

অনুবাদঃ- যখন বৃদ্ধা স্ত্রীগণ, এই প্রকার রক্ষাকারী ব্যক্তিগণ সেই সময় মধ্যরাতে শ্রীরাম এবং সীতার নাম,গোত্র উচ্চারণের ধ্বনি শত্রুঘ্নের কানে আসে।সাথে সাথে সীতার সুন্দর দুই সন্তান হওয়ার সংবাদ পেয়েছিলেন।তখন সে সীতাজীর পর্ণশালায় গমন করেন এবং বলেন-মাতাজী!এটাতো অনেক বড় সৌভাগ্যের কথা।মহাত্মা শত্রুঘ্ন সেই সময় এতটাই প্রসন্ন ছিলেন যে তারা সেই বর্ষাকালীন শ্রাবণের রাতে কথা বলে বলে রাত কাটিয়েছেন । (১১-১৩)

অবাক করা বিষয়–

তস্য বুদ্ধিঃ সমুৎপন্না নিবেশ্য মধুরাং পুরীম্ ।
রামপাদৌ নিরীক্ষেঽহং বর্ষে দ্বাদশ আগতে ॥ 
উত্তরকাণ্ড,সর্গঃ(৭০/১৬),গীতাপ্রেস

অর্থঃ- মধুরাপুরী বসে তাহার মনে এই বিচার উৎপন্ন হল যে,অযোধ্যা থেকে এলাম বার বছর হয়ে গেল!এখন সেখানে গিয়ে শ্রীরামচন্দ্রজীর চরণ দর্শন করা উচিত।

আবার,

তস্মাৎ ত্বং বস কাকুৎস্থ সপ্তরাত্রং ময়া সহ ।
ঊর্ধ্ব গন্তাসি মধুরাং সভৃত্যবলবাহনঃ ॥ ১৭ ॥
সপ্তরাত্রং চ কাকুৎস্থো রাঘবস্য যথাজ্ঞয়া ।
উষ্য তত্র মহেষ্বাসো গমনায়োপচক্রমে ॥ ১৯ ॥
আমন্ত্র্য তু মহাত্মানং রামং সত্যপরাক্রমম্ ।
ভরতং লক্ষ্মণং চৈব মহারথমুপারুহৎ ॥ ২০ ॥
উত্তরকান্ড,সর্গঃ৭২,গীতাপ্রেস

অনুবাদঃ অতএব কাকুতস্থ!সাতদিন তো তুমি আমার সাথে ছিলে।তারপর সেবক,সেনাগণকে সাথে নিয়ে তুমি মধুরাপুরী চলে যাও।১৭

অনুবাদঃ- শ্রীরঘুনন্দজীর আদেশে সাতদিন অযোধ্যায় বাস করে মহাধনুর্ধর ককুতস্থকূলভূষণ শত্রুঘ্ন সেখান থেকে প্রস্থানের উদ্দেশ্যে তৈরী হলেন।১৯

অনুবাদঃ সত্যপরাক্রমী শ্রীরাম,ভরত এবং লক্ষণের থেকে বিদায় নিয়ে শত্রুঘ্ন একটি বিশাল রথের উপর আরোপিত হলেন।২০

বিচার–

১২ বছর মধুরাতে ছিলেন শত্রুঘ্ন ৭০তম সর্গ অনুসারে,৭২তম সর্গে পাওয়া যায় তিনি অযোধ্যা ত্যাগ করলেন।কিন্তু ১২ বছর এর মধ্যে তিনি ভগবান শ্রীরামের পিতা হওয়ার সংবাদই পান নি।শুধু তাই নয় ৭ দিন অযোধ্যায় অবস্থান কালেও এমন কথা শ্রীরামচন্দ্র,ভরত আর লক্ষণ কেহই উনাকে বলেন নি।তাহলে উত্তরকাণ্ড(৬৬/১ এবং ১১-১৩) এই শ্লোকগুলো কি প্রশ্নবিদ্ধ হয় না?

৪ঃ

বিমানং পুষ্পকং দিব্যং সঙ্গৃহীতং তু রক্ষসা |
অগমদ্ ধনদং বেগাদ্ রামবাক্যপ্রচোদিতম্ ॥ ৬৩ ॥
যুদ্ধকাণ্ড,সর্গঃ১২৭,গীতাপ্রেস

অনুবাদঃ রাক্ষস রাবণ যে পুষ্পক বিমানের উপর বলপূর্বক অধিকার স্থাপন করেছিল সেটি এখন শ্রীরামচন্দ্রের আজ্ঞা অনুসারে প্রেরিত হয়ে বেগপূর্বক কুবেরের সেবাতেই চলে গেল।

ভিন্নতা–

সোঽহং শাসনমাজ্ঞায় ধনদস্য মহাত্মনঃ।
ত্বৎসকাশমনুপ্রাপ্তো নির্বিশঙ্কঃ প্রতীচ্ছ মাম্ ॥ ৯ ॥
উত্তরকাণ্ড,সর্গঃ৪১,গীতাপ্রেস

অনুবাদঃ- এই প্রকারে মহর্ষি কুবেরের আদেশ পেয়েই আপনার কাছে আসলাম,অতএব আপনি সংশয়হীন হয়ে আমাকে গ্রহণ করুন।

বিচার–

যুদ্ধকান্ডে ভগবান শ্রীরাম কুবেরকে পুষ্পক বিমানটি দিয়েছিলেন!আবার উত্তরকান্ডে কুবেরের আদেশে সেই বিমান আবার শ্রীরামের কাছে আসে।অরণ্যকান্ড,যুদ্ধকান্ডের শ্রীরামচন্দ্র এর সাথে উত্তরকান্ডের শ্রীরামের মধ্যে অনেক পার্থক্য দেখা যায়।

৫ঃ

আয়ুষ্যমারোগ্যকরং যশস্যং
সৌভ্রাতৃকং বুদ্ধিকরং শুভং চ ।
শ্রোতব্যমেতন্নিয়মেন সদ্ভি-
রাখ্যানমোজস্করমৃদ্ধিকামৈঃ।।
যুদ্ধকান্ড(১২৮/১২৫),গীতাপ্রেস

অনুবাদঃ এই কাব্য আয়ু,আরোগ্য,যশ এবং ভ্রাতৃপ্রেম বৃদ্ধি করে।এটি উত্তম বুদ্ধি প্রদান করে এবং মঙ্গলময়।অতএব,সমৃদ্ধিতে ইচ্ছা পোষণকারী সপ্তপুরুষগণকে উৎসাহের সহিত ইতিহাস নিয়মপূর্বক শ্রবণ করা উচিত।

একই বিষয় লক্ষ্যণীয়ঃ

এবমেতৎ পুরাবৃত্তমাখ্যানং ভদ্রমস্তু বঃ ।
প্রব্যাহরত বিস্রব্ধং বলং বিষ্ণোঃ প্রবর্ধতাম ॥ ২৫ ॥
উত্তরকাণ্ড,সর্গঃ১১১

অনুবাদঃ- এই প্রকার আখ্যানকে আপনারা বিশ্বাসপূর্বক পাঠ করুন।আপনার মঙ্গল হোক এবং ভগবান বিষ্ণুর বলের জয় হোক।

বিচার–

কোন গ্রন্থ শেষে সেই গ্রন্থ পাঠের ফল উল্লেখ করা হয়।যেমনঃমহাভারত,স্বর্গারোহন পর্বের ৫ নং অধ্যায়ের শেষ শ্লোকেই মহাভারত পাঠের ফল বর্ণিত হয়েছে।কিন্তু অবাক হলেও সত্য যে,রামায়ণের দুই জায়গায় এমন বিষয় পাওয়া যায়!কিন্তু কেন?

উপরোক্ত বিচারগুলোকে যদি আমরা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি তাহলে আমরা দেখতে পাই রামায়ণের অনেক স্থলে স্ববিরুদ্ধ কথা,অশ্লীল বর্ণনা ইত্যাদি পাওয়া যায়।কিন্তু রামায়ণের গাণিতিক বিষয়গুলো দেখলে বোঝা যায় বর্তমান রামায়ণে অতিরিক্ত অনেক শ্লোক যুক্ত করা হয়েছে।কি অবাক হলেন?চলুন এখন সেটাই দেখা যাক-

চতুর্বিংশৎসহস্রাণি শ্লোকানামুক্তবানৃষিঃ ।
তথা সর্গশতান্ পঞ্চ ষট্কাণ্ডানি তথোত্তরম্ ॥ ২ ॥
কৃত্বা তু তন্মহাপ্রাশঃ সভবিষ্যং সহোত্তরম্ ।
চিন্তয়ামাস কো ন্বেতৎ প্রয়ুঞ্জীয়াদিতি প্রভুঃ ॥ ৩ ॥
বালকাণ্ড,সর্গঃ৪

অনুবাদঃ- এখানে মহর্ষি চব্বিশ হাজার শ্লোক,পাঁচশত সর্গ এবং উত্তরসহিত সাত কান্ড প্রতিপাদন করেছিলেন।২

অনুবাদঃ ভবিষ্যৎ এবং উত্তরকান্ডসহিত সমস্ত রামায়ণ পূর্ণ করার পরে সামর্থ্যশালী,মহাজ্ঞানী মহর্ষি চিন্তা করলেন যে,কে এমন শক্তিশালী পুরুষ হবে যে এই মহাকাব্য পড়ে জনগণের কাছে শোনাতে পারবে।৩

এবার উত্তরকাণ্ড দেখা যাক–

সংনিবদ্ধং হি শ্লোকানাং চতুর্বিংশৎসহস্রকম্ ।
উপাখ্যানশতং চৈব ভার্গবেণ তপখিনা ॥ ২৬ ॥
আদিপ্রভৃতি বৈ রাজন্ পঞ্চসর্গশতানি চ ।
কাণ্ডানি ষট্কৃতানীহ সোত্তরাণি মহাত্মনা ॥ ২৭ ॥
উত্তরকাণ্ড,সর্গঃ৯৪

অনুবাদঃ- সেই তপস্বী কবি এই মহাকাব্য রচনা করেছেন।যাতে আছে চব্বিশ হাজার শ্লোক এবং একশত উপাখ্যান।২৬

অনুবাদঃ রাজন!সেই মহর্ষি প্রথম হইতে শেষ অবধি পাঁচশ সর্গ এবং ছয় কান্ড নির্মাণ করেছিলেন।তাহার পশ্চাৎ তিনি উত্তরকান্ডও রচনা করেন।

বিচারঃ– বালকাণ্ড এবং উত্তরকাণ্ড হতে পাই,রামায়ণ রচনা করা হয়েছিল চব্বিশ হাজার শ্লোক,পাঁচশত সর্গ এবং প্রথমে ছয় কান্ড,পরে উত্তরকাণ্ডও।তাহলে রামায়ণে আলাদাভাবে উত্তরকাণ্ডর কথা কেন আসলো।ধরা যাক ঋষি বাল্মিকী উত্তরকাণ্ড পরে রচনা করেছেন তাহলেও প্রশ্ন আসে যে বালকান্ডে যেহেতু লিখায় হয়েছে যে উত্তরকান্ড সহ,তাহলে উত্তরকান্ডে এসে এটা আবার বলার আবশ্যকতা কি?

গাণিতিক হিসাবঃ–

আমরা গাণিতিকভাবে কি রামায়ণের বিষয় কখনো চিন্তা করেছি?

চলুন দেখি গাণিতিক হিসাব কি বলে!

বালকাণ্ড(৪/২) এবং উত্তরকাণ্ড(৯৪/২৬-২৭) অনুসারে আমরা রামায়ণের মূল শ্লোক চব্বিশ হাজার,সর্গ পাঁচশত এবং কান্ড ছয়টি +উত্তরকাণ্ড।

বিচারঃ– বর্তমান রামায়ণ (গীতাপ্রেস হিন্দি ভাষ্য) অনুসারে কাণ্ড,সর্গ হিসেব করলে পাওয়া যায় ৭টি কাণ্ড,৬৪৫ টি সর্গ।যা রামায়ণের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধ।কারণ আমরা রামায়ণ,বালকাণ্ড(৪/২) এবং উত্তরকাণ্ড(৯৪/২৬-২৭)দেখেছিলেন যে রামায়ণের কাণ্ড ছয়+উত্তরকাণ্ড,৫০০ সর্গ এবং ২৪,০০০ শ্লোক হওয়ার কথা।যদি আমরা উত্তরকাণ্ডকে বাদও দিই তবে যুদ্ধকাণ্ড পর্যন্ত সর্গ হয় ৫৩৪,আর উত্তরকাণ্ড সহ হয় ৬৪৫। অর্থাৎ ১৪৫ টি সর্গ অতিরিক্ত আছে। সবকিছু বিবেচনা করে আমরা বুঝতে পারি যে বর্তমান রামায়ণে অনেক প্রক্ষীপ্ত শ্লোক আছে। তাই বর্তমানে যে রামায়ণ পাওয়া যায় তার অনেক ঘটনাই বিকৃত!

স্বয়ম্ বিচার করুণ!

সর্বোচ্চ বিচারঃ–

রামায়ণ একটি ঐতিহাসিক মহাকাব্য!যেখানে সমাতন ধর্মের প্রাণ পুরুষ ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের জীবন দর্শন বর্ণিত হয়েছে।তবে বর্তমানে প্রচলিত রামায়ণের অধিকাংশ শ্লোক প্রক্ষীপ্ত, তা আমরা রামায়ণ ভালোভাবে পড়লে বুঝতে পারি। এক এক ভাষ্যকারের রামায়ণে ভিন্ন ভিন্ন শ্লোক পাওয়া যায়। এই সুযোগটাকে কাজে লাগায় ভাগবান শ্রীরামচন্দ্র বিদ্বেষী কিছু ব্যক্তি,যা খুবই দুঃখজনক। যিনি আমাদের ধর্মের পথ দেখিয়েছেন,ভ্রাতৃবোধ শিখিয়েছেন,পিতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মান করানো শিখিয়েছেন,যিনি রাজা হয়েও কখনো অহংকারী ছিলেন না!তাকেই আজ কিছু মানুষ খারাপভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। কিন্তু সত্য তো সত্যই হয়!

বি.দ্রঃ আমরা এই লেখায় গীতাপ্রেসের হিন্দি ভাষ্যটি অনুসরণ করেছি,কেননা তা ভারতবর্ষে অত্যন্ত প্রচলিত।অনেক ভাষ্যকার প্রক্ষীপ্ত শ্লোকগুলো বাদ দিয়ে এবং উত্তরকাণ্ডও বাদ দিয়ে ভাষ্য করেছেন। সবাই সত্যকে প্রচার করুন। সত্যই সুন্দর!
সত্যমেব জয়তে 
জয় শ্রী রাম
🖋️ অরূপ আর্য।

আর্য প্রতিনিধি সভা বাংলাদেশ 

Post a Comment

0Comments

Please Select Embedded Mode To show the Comment System.*