দৈবী এবং আসুরী সম্পদ

1

দৈবী এবং আসুরী সম্পদ

 যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ দ্বারা দেওয়া গীতার উত্তম উপদেশ।

দৈবী এবং আসুরী সম্পদ---

দৈবী সম্পদ্ বিমোক্ষায় নিবন্ধায়াসুরী মতা ।
মা শুচং সম্পদং দৈবীমভিজাতোSসি পাণ্ডব ॥
( গীতা ১৬/৫ )

মোক্ষ সকলেই চায় এবং বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে কেউ চায় না; শুধু মনুষ্য নয় পশু-পক্ষী এবং কীট-পতঙ্গও মোক্ষ প্রাপ্তির ইচ্ছুক।এরদ্বারা সিদ্ধ হয় যে মোক্ষ জীবের জন্মসিদ্ধ তো নয় আপিতু নৈসর্গিক অধিকার। পরন্তু অধিকার বিনা কর্তব্যে এই প্রকার যেমন ভিত্তি ছাড়া ভবন। এই জন্য আমাদের শাস্ত্র মোক্ষ কে পুরুষার্থ এর চতুর্থ স্থান দিয়েছে। ধর্ম,অর্থ,কর্ম এবং মোক্ষ এই চারটিকে আবশ্যক পদার্থ মানা হয়। আমাদের জীবন ধর্ম অর্থাৎ কর্তব্য থেকে আরম্ভ হয় এবং মোক্ষ এর অন্তিম শ্রেণী, বা বলা উচিত যে বৃক্ষের মূল হলো 'ধর্ম ' তার ' ফল ' হলো মোক্ষ। কর্তব্য (ধর্ম) থেকেই অর্থের প্রাপ্তি হতে পারে এবং অর্থের প্রাপ্তি থেকেই কর্ম অর্থাৎ সমীচীন ভোগ হতে পারে। যদি এই তিন দরজা পার করা হয় তাহলে মোক্ষ অনায়াসে এসে যাবে।
 গাছে সেচ দেওয়া মানে ফল পাওয়া। এর চেয়ে বেশি ফল পাওয়ার চেষ্টা করা বৃথা, কারণ আপনি ফল পাবেন না। আর গাছের গোড়ায় যদি সেচ দেওয়া হয়, তাহলে ফল নিয়ে চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই, কারণ ফল নিজেই আসবে। আমাদের আধুনিক জীবনে চার পদার্থের স্থানে দুটি রয়ে গেছে অর্থাৎ অর্থ ও কর্ম। সুখের সামগ্রী জোগাড় করো এবং সুখ ভোগ করো। এর পরিণাম এই যে না তো সুখের সামগ্রী জোগাড় হবে, আর না সুখ প্রাপ্তি হবে।গীতা একেই আসুরী সম্পদ বলেছেন। এইসবের ফল গীতার শব্দ অনুযায়ী বন্ধ,মোক্ষ নয়। মোক্ষের জন্য দৈবী সম্পদের প্রয়োজন। দৈবী সম্পদের নামই হলো ধর্ম। দৈবী সম্পদ ছাড়া মোক্ষ প্রাপ্তি সম্ভব নয় বরং বন্ধনে আরো বেশি জড়ানো হবে। আপনি যতই অস্বীকার করুন,এই সমস্যার সমাধান হবে না। স্বতন্ত্রতা সমস্তই চান,সমস্ত ফলও ভক্ষণ করতে চান। কিন্তু দৈবী সম্পদ্ এর প্রতি করো খেয়াল নেই,না আছে তার উপরে আমাদের শ্রদ্ধা। 

আচ্ছা, বিচার করে দেখুন! ব্যক্তিগত জীবনে, সামাজিক জীবনে, নৈতিক জীবনে, রাষ্ট্রীয় এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় জীবনে, কোথাও না কোথাও দৈবী সম্পদের অভাব আছে। অতঃ না তো আমাদের ব্যক্তিগত মোক্ষ লাভ হবে,না আর্থিক,না সামাজিক এবং না রাষ্ট্রীয়।একটি বন্ধন কেটে গেলে,নতুন আরো দশটি সৃষ্টি হয়ে যায়।

আসুরী সম্পদ কি? গীতার ভাষায় শুনুন —

দম্ভো দর্পোSভিমানশ্চ , ক্রোধঃ পারুষ্যমেব চ ।
অজ্ঞানং চাভিজাতস্য পার্থ ! সম্পদমাসুরীম্ ॥
( গীতা ১৬/৪ )

পাখন্ড,অহংকার,অভিমান,ক্রোধ,কঠোরতা তথা অজ্ঞান। এখন এই মানদণ্ডে আপনার জীবনের অভ্যন্তরীণ অবস্থা পরীক্ষা করুন! গীতার পাঠক তো অনেক আছে। গীতার বই দমনকারী, গীতার গল্পকারী ,গীতা শ্রবণকারী,গীতা পাঠকারী,গীতা প্রচার কারী, গীতার বই ছাপা, বিক্রি করা এবং বিতরণ করা, গীতার তাবিজ তৈরি করে গলায় ঝুলিয়ে রাখাকারী।পরন্তু গীতার শ্লোকের উপর বিশ্বাসকারী এবং নিজের জীবনে ধারণ কারী খুবই কম। যিনি অসুরী সম্পদকে ত্যাগ করেনি তার বেড়ি ও হাতকড়া দিন-প্রতিদিন শক্ত হতে থাকবে।

» সংসারে প্রত্যেকটা বিভাগে কতটা পাখন্ড আছে?
»যাকে আমার ধার্মিক জীবন বলি তার মধ্যে তো পাখন্ড সীমার উলঙ্ঘন করে ফেলেছে।
» পাখণ্ড দোকানদার কি দোকান থেকে অর্থ প্রাপ্তি করতে পারে?
» পাখন্ড রাজা কি রাজকার্য পরিচালনা করতে পারে?
»পাখন্ডি ব্রাহ্মণ কি আত্মিক উন্নতি করতে পারে?
পরন্তু আমাদের বৈশ্য, শূদ্র, ক্ষত্রিয়, ব্রাহ্মণরা কি আমাদের অসুরী সম্পদের বিকার নয়?  
»আমাদের অনেক সংস্কারক ও উপদেষ্টা আছে তারা কি অসুরী সম্পদের অভিবর্ধক নয়?  
»যদি হয় তা হলে মুক্তির প্রশ্ন কি?

দৈবী সম্পদ কী ? একেও গীতার ভাষায় শুনুন —

অভয়ং সত্তবসংশুদ্ধির্জ্ঞানয়োগ – ব্যবস্থিতিঃ ।
দানং দমশ্চ যজ্ঞশ্চ স্বাধ্যায়স্তপ আর্জবম্ ॥
অহিংসা সত্যমক্রোধস্ত্যাগঃ শান্তিরপৈশুনম্ ।
দয়া ভূতেষ্বালোলুপ্তবং মার্দবং হ্রীরচাপলম্ ॥
তেজঃ ক্ষমা ধৃতিঃ শৌচমদ্রোহো নাতিমানিতা ।
ভবন্তি সম্পদং দৈবীমভিজাতস্য ভারত ॥
( গীতা ১৬/১-৩ )

অভয় , অন্তঃকরণ এর শুদ্ধি , জ্ঞান , যোগ , দান , দম , যজ্ঞ , স্বাধ্যায় , তপ , সোজা , অহিংসা , সত্য , অক্রোধ , ত্যাগ , শান্তি , পরচর্চা না করা , প্রাণিদের প্রতি দয়া , পেটুকতার অভাব , কোমলতা , লজ্জাশীলতা , তৎপরতার অভাব , তেজ , ক্ষমা , ধৃতি , শৌচ , অদ্রোহ এবং নিরভিমান । গীতার এই বচন মনুর ধর্মের দশ লক্ষ্মণের সাথে মেলান এবং ভাবুন যে বিনা দৈবী সম্পদে আমরা ধর্মের কোনো বিভাগে উন্নতি করতে পারবো?

আমাদের উচিৎ দৈবী সম্পদকে ধারণ করা এবং আসুরী সম্পদ থেকে বাঁচার প্রযত্ন করা।

শ্রীকৃষ্ণ মহারাজ এর এই শ্লোকের উপর যদি আমরা বিচার করি তাহলে আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে। 

লেখক — পণ্ডিত গঙ্গাপ্রসাদ উপাধ্যায়।
অনুবাদক— বিশাল আর্য।

© আর্য প্রতিনিধি সভা বাংলাদেশ।


Post a Comment

1Comments

Please Select Embedded Mode To show the Comment System.*