ধর্মের পরিভাষা কী? |
১. ধর্ম সংস্কৃত ভাষার শব্দ যা ধারণকারী 'ধৃ' ধাতু থেকে তৈরি হয়েছে।“ধার্যতে ইতি ধর্ম:” অর্থাৎ যা ধারণ করা হয় তাই ধর্ম।অর্থাৎ লোক পরলোকের সুখ সিদ্ধির হেতু সার্বজনীক পবিত্র গুন এবং কর্মকে ধারণ বা সেবন করাই ধর্ম।অন্যান্য শব্দে এই ভাবেও বলা যায় মনুষ্য জীবনকে উচ্চ ও পবিত্র তৈরিকারী জ্ঞানানুকুল যা শুদ্ধ সর্বজনীক মর্যাদা পদ্যাতি তাই ধর্ম।
২. জৈমিনী মুনির মীমাংসা দর্শনের দ্বিতীয় সূত্রে ধর্মের লক্ষণ হলো লোক পরলোকের সুখ সিদ্ধির হেতু গুন এবং কর্মের প্রবৃত্তির প্রেরণাকে ধর্মের লক্ষণ বলা হয়েছে।
৩. বৈদিক সাহিত্যে ধর্ম বস্তুর স্বাভাবিক গুন তথা কর্তব্যের অর্থেও আসে।যেমন জ্বলা এবং প্রকাশিত হওয়া অগ্নির ধর্ম এবং প্রজাদের পালন এবং রক্ষণ করা রাজার ধর্ম।
৪. মনুস্মৃতি অনুযায়ী ধর্মের পরিভাষা—
» অর্থাৎ ধৈর্য,ক্ষমা,মন কে প্রকৃতিক প্রলোভনের ক্ষপরে পরা থেকে আটকানো,চুরি না করা,শৌচ, ইন্দ্রিয় নিগ্রহ,বুদ্ধি অথবা জ্ঞান, বিদ্যা,সত্য এবং আক্রোধ হলো ধর্মের দশ লক্ষণ।
দ্বিতীয় স্থানে বলা হয়েছে–
"আচারঃ পরমো ধর্মঃ"! ১/১০৮
অর্থাৎ সদাচার পরম ধর্ম।
৫. মহাভারতে লেখা আছে–
» অর্থাৎ যা ধারণ করা যায় এবং যার দ্বারা প্রজাদের ধারণ করা হয়। তাই ধর্ম।
৬. বৈশেষিক দর্শনের কর্তা মহা মুনি কণাদ ধর্মের লক্ষণ বলেছেন–
যতোঅভয়ুদ্য নিশ্রেয়স সিদ্ধি: স ধর্ম:
» অর্থাৎ যার দ্বারা অভ্যুদয় (লোকোন্নতি) এবং নিশ্রেয়স (মোক্ষ) সিদ্ধ হয়,তাই ধর্ম।
৭. স্বামী দয়ানন্দ জীর অনুসারে ধর্মের পরিভাষা–
»যা পক্ষপাত রহিত ন্যায় সত্যকে গ্রহণ,অসত্যকে সর্বথা পরিত্যাগ রূপ আচার।তার নামই ধর্ম এবং এর বিপরীত অধর্ম।
-সত্যার্থ প্রকাশ তৃতীয় সম্মুলাস
» পক্ষপাত রহিত ন্যায় আচরণ সত্য ভাষণ আদি যুক্ত যা ঈশ্বর আজ্ঞা বেদের অবিরুদ্ধ,তাকেই ধর্ম মানি।
– সত্যার্থ প্রকাশ মন্তব্য
» এই কাজে যতই দুঃখ প্রাপ্তি হোক,যদি প্রাণও চলে যায়,পরন্তু এই মনুষ্য ধর্ম থেকে পৃথক কখনো হবো না।
-- সত্যার্থ প্রকাশ
ধর্ম মনুষ্য উন্নতির জন্য আবশ্যক অথবা বর্ধিত মূলক। একে জানার জন্য আমাদের সর্ব প্রথম ধর্ম এবং মজহব এর মধ্যে পার্থক্যকে বুঝতে হবে। কার্ল মার্ক্স যাকে ধর্মের নামে অফীম বলে নিষ্কাশন করে দিয়েছিলো তা ধর্ম নয় আপিতু মজ়হব ছিলো।কার্ল মার্ক্স ধর্মের নামে করা রক্তপাত,অন্ধবিশ্বাস,বুদ্ধির বিপরীতে করা পাখন্ড আদিকে ধর্মের সংজ্ঞা দিয়েছেন। কিন্তু এটি ধর্ম নয় আপিতু মজহব এর স্বরূপ ছিলো।
লেখক:- ডা.বিবেক আর্য।
অনুবাদক:- বিশাল আর্য।