বৈদিক উপাসনা পদ্ধতি

0

বৈদিক উপাসনা পদ্ধতি

বৈদিক উপাসনা পদ্ধতি - পন্ডিত দীনবন্ধু বেদশাস্ত্রী দ্বারা প্রণীত


[বি.দ্র. আপনাদের সুবিধার জন্য কিছু বাক্য ও শব্দ চলিত ভাষায ব্যবহার করা হয়েছে]

সময়ক্ষন- বৈদিক উপাসনার অপর নাম সান্ধ্যোপাসনা অর্থাৎ যা দিন এবং রাত্রির সন্ধিকালে করতে হয়। তাই প্রত্যুষে অর্থাৎ সূর্যোদয়ের এক ঘণ্টা পূর্ব হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত এবং অপরাহ্ন অর্থাৎ সূর্যাস্তের পরবর্তী সময় পর্যন্ত অর্থাৎ যে পর্যন্ত না আকাশের নক্ষত্র দেখা যায় সেই পর্যন্ত উপাসনা করতে হয়।
এই বিষয়ে প্রমাণ-
পূর্বাং সন্ধ্যাং জপংস্তিষ্ঠেৎ সাবিত্রীমার্কদর্শনাৎ।
পশ্চিমাং তু সমাসীনঃ সম্যগৃক্ষবিভাবনাৎ।। মনু~২/১০১
অর্থ- প্রাতঃসন্ধ্যাকালে, সূর্যোদয় দর্শন পর্যন্ত সাবিত্রী অর্থাৎ গায়ত্রী জপ করতে করতে আসনে একই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকবে এবং যে পর্যন্ত,আকাশের তারা ভালোভাবে না দেখা যায় ততক্ষণ আসনে বসে থেকে সায়ংসন্ধ্যার উপাসনা করবে।

প্রথমে, কমপক্ষে অন্ততঃ তিনবার প্রাণায়াম করতে হবে।
প্রাণায়াম বিধি~ শরীরের ভিতরের বায়ুকে নাক দিয়ে জোরে বার করে দিয়ে যতক্ষণ সম্ভব বাইরে রাখতে হবে। ইহার নাম রেচক। পরে বায়ুকে ধীরে ধীরে গ্রহণ করবে ইহার নাম পূরক। এবার বায়ুকে কিছু সময় ভিতরেই রাখব যতক্ষণ সম্ভব। এর নাম কুম্ভকরেচক, পূরক ও কুম্ভক এইরূপ একবার করিলে একবার প্রাণায়াম হয়। এইভাবে অন্ততঃ তিনবার প্রাণায়াম করতে হবে। প্রাণায়ামে মন শান্ত হয়।

মাথার চুল খোলা থাকলে তা বাঁধতে হবে, কারণ তাহলে মনোসংযোগের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

উপাসনার পদ্ধতি যথাক্রমে- আচমন, ইন্দ্রিয়স্পর্শ, মার্জন, প্রানায়াম, অঘমর্ষন, মনসা পরিক্রমা, উপস্থান, গায়ত্রী জপ, ধ্যান সমর্পণম্  এবং নমস্কার।

-শিখা বন্ধন-

ও৩ম্ ভূর্ভুবঃ স্বঃ 
তৎসবিতুর্বরেণ্যং 
ভর্গোদেবস্য ধীমহি। 
ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।। 
(ঋগ্বেদ-৩/৬২/১০, যজুর্বেদ-৩/৩৫ ও ৩০/২ এবং সামবেদ উত্তরার্চ্চিক-৬/৩/১০) 

ভাবার্থ: ও৩ম্ (পরমাত্মা), ভূঃ (প্রাণস্বরূপ), ভুবঃ (দুঃখনাশক), স্বঃ (আনন্দস্বরূপ), সবিতু (জগতের উৎপাদক), দেবস্য (দিব্য গুণযুক্ত পরমাত্নার), তৎ(সেই) বরেণ্যম্ (বরণীয়), ভর্গঃ (পাপনাশক শুদ্ধস্বরূপকে), ধীমহি (ধ্যান করি), যঃ (যিনি), নঃ (আমাদের), ধিয় (নির্মল বুদ্ধির), প্রচোদয়াৎ (প্রেরণা দান করেন)। বঙ্গানুবাদঃ- পরমাত্মা প্রাণস্বরুপ, দুঃখনাশক ও সুখ স্বরুপ। তিনি আমাদের বুদ্ধিকে শুভ গুণ, কর্ম ও স্বভাবের দিকে চালনা করেন। সেই জগদুৎপাদক ও ঐশ্বর্যপ্রদাতা পরমাত্মার বরণযোগ্য পাপ-বিনাশক তেজকে আমরা ধারণ করি।

প্রথম ক্রিয়া -আচমন -
ডানহাতের তালুতে,জল নিয়ে তিনবার আচমন করতে হবে। আচমন,কন্ঠের সিগ্ধতা প্রদান করে। জলের অভাবে মন্ত্র পাঠ করা যেতে পারে। প্রতিবারই নীচে লেখা মন্ত্র পাঠ করতে হবে।

ও৩ম্ শন্নো দেবীরভিষ্টয় আপো ভবন্তু পীতয়ে।
শংযোরভি স্রবন্তু নঃ।
(ঋগ্বেদ- ১০/৯/৪, যজুর্বেদ- ৩৬/১২, অথর্ববেদ-১/৬/১)
ভাবার্থ: সর্বপ্রকাশক, আনন্দদাতা,সর্বব্যাপক পরমেশ্বর আমার মনোবাঞ্ছিত ফল ও পূর্ণ আনন্দ দানের জন্য কল্যাণকারী হন ও আমার উপরে সর্বপ্রকারে সুখ বর্ষণ করুন।

দ্বিতীয় ক্রিয়া- ইন্দ্রিয় স্পর্শ -
নীচে লেখা মন্ত্র ঈশ্বরের নিকটে প্রার্থনা করে যথাক্রমে মুখ, নাক, চোখ, কান, নাভি, কন্ঠ, মাথা, দুইহাত, করতল বা হাতের তালু এবং করপৃষ্ঠ স্পর্শ করিবে ।
ও৩ম্ বাক্ বাক্।।                       [মুখের ডান পাশ ও পরে বাম পাশ]
ও৩ম্ প্রাণঃ প্রাণঃ।।                    [নাকের ডান পাশ ও বাম পাশ]
ও৩ম্ চক্ষুঃ চক্ষুঃ।।                  [চোখের ডান পাশ ও বাম পাশ]
ও৩ম্ শ্রোত্রং শ্রোত্রম্।।              [কানের ডান পাশ ও বাম পাশ]
ও৩ম্ নাভিঃ।।       [নাভিতে ]
ও৩ম্ হৃদয়ম্।।      [হৃদয়ে]
ও৩ম্ কন্ঠঃ।।         [কন্ঠে]
ও৩ম্ শিরঃ।।             [মাথায়]
ও৩ম্ বাহুভ্যাং যশোবলম্।। [ডান বাহু ও বাম বাহু]
ও৩ম্ করতলকরপৃষ্ঠে।। [হাতের নিচে ও উপরে]
ভাবার্থ: হে,পরমাত্না! আমার বাকশক্তি ও রসনেন্দ্রিয় সবল হোক। আমার শ্বাস প্রশ্বাসের শক্তি ও ঘ্রাণেন্দ্রিয় সবল হোক। আমার স্থুল চোখ ও জ্ঞানের চোখ সবল হোক। আমার স্থুল কান ও বিবেকবাণী শুনিবার জ্ঞানশ্রুতি সবল হোক।আমার নাভিকেন্দ্র সবল হোক। আমার হৃদয় সবল হোক।আমার কন্ঠ সবল হোক। আমার মাথা সবল হোক। আমার দুই হাত শক্তিশালী ও যশোযুক্ত হোক। আমার করতল ও করপৃষ্ঠ ধর্মযুক্ত কাজ করুক।

তৃতীয় ক্রিয়া -মার্জন -
নীচে লেখা মন্ত্রে, ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করে, ডান হাতের মধ্যমা ও অনামিকা আঙ্গুল দিয়ে, একে একে মাথা, দুই চোখ, কন্ঠ, হৃদয়, নাভি, দুই পা, মাথা ও সারা গায়ে জল ছেটাবেন।
ও৩ম্ ভূঃ পুনাতু শিরসি।।                           [পুনরায় মাথায়]
ও৩ম্ ভুবঃ পুনাতু নেত্রয়োঃ।।                     [পুনরায় উভয় চোখে]
ও৩ম্ স্বঃ পুনাতু কন্ঠে।।                              [পুনরায় কন্ঠে]
ও৩ম্ মহঃ পুনাতু হৃদয়ে।।                          [পুনরায় হৃদয়ে]
ও৩ম্ জনঃ পুনাতু নাভ্যাম্।।                       [পুনরায় নাভিতে]
ও৩ম্ তপঃ পুনাতু পাদয়োঃ।।                      [পুনরায় উভয় পায়ে]
ও৩ম্ সত্যম্ পুনাতু পুনঃ শিরসি।।               [পুনরায় মস্তিকে]
ও৩ম্ খং ব্রহ্ম পুনাতু সর্বত্র।।                       [পুনরায় সর্বত্র]

ভাবার্থ: হে প্রানস্বরূপ পরমাত্মা!আমার মাথাকে পবিত্র কর।
হে দুঃখনাশক,আমার চোখদুটোকে পবিত্র কর।
হে আনন্দস্বরূপ,আমার কন্ঠকে পবিত্র কর।
হে সর্বপূজ্য প্রভু,আমার হৃদয়কে পবিত্র কর।
হে সর্বস্রষ্টা,আমার নাভিকে পবিত্র কর।
হে তেজস্বী,আমার পা দুটোকে পবিত্র কর।
হে সত্য স্বরূপ,আমার মাথাকে আবার পবিত্র কর।
হে সর্বব্যাপক পরমাত্মা,আমার ইন্দ্রিয়ের সর্বত্র পবিত্র কর।

চতুর্থ ক্রিয়া -প্রাণায়াম-
নীচের মন্ত্রের অর্থ ভাবতে ভাবতে, পূর্বে দেওয়া বিধি অনুযায়ী, অন্ততঃ তিন বার প্রাণায়াম করুন।
(বেশিও করতে পারেন।)
ও৩ম্ ভূঃ।
ও৩ম্ ভুবঃ।
ও৩ম্ স্বঃ।
ও৩ম মহঃ।
ও৩ম্ জনঃ।
ও৩ম্ তপঃ।
ও৩ম্ সত্যম্।
ভাবার্থ: পরমাত্মা, ভূঃ (প্রাণ-স্বরূপ), ভুবঃ (দুঃখনাশক), স্বঃ (আনন্দস্বরূপ), মহঃ (সর্ব্বপূজ্য), জনঃ (বিশ্বস্রষ্টা), তপঃ (তেজস্বী), সত্যম্ (অবিনশ্বর)। (তৈত্তিরীয় আরণ্য-10/27)

পঞ্চম ক্রিয়া -অঘমর্ষন-
"অঘ" অর্থে "পাপ" "মর্ষন" অর্থে" দুর করা"। নীচে লেখা মন্ত্র তিনটি চিন্তা করতে করতে, পাপ ত্যাগের প্রতিজ্ঞা করবে।
ওম্ ঋতং চ সত্যংচাভীদ্ধাত্তপসোহধ্য- জায়ত।
ততো রাত্র্যজায়ত ততঃ সমুদ্রো অর্ণবঃ।।১।।
ওম্ সমুদ্রাদর্ণবাদধি সংবৎসরো অজায়ত।
অহোরাত্রাণি বিদধদ্বিশ্বস্য মিষতো বশী।।২।।
ওম সূর্যাচন্দ্রমসৌ ধাতা যথাপূর্বমকল্পয়ৎ।
দিবং চ পৃথিবীং চান্তরিক্ষমথো স্বঃ।।৩।।
(ঋগ্বেদ-১/১৯০/১-৩)
ভাবার্থ: নিত্যজ্ঞানময় বেদ এবং প্রকৃতি ঈশ্বরের জ্ঞানময় সামর্থ্য হতে উৎপন্ন হয়েছে। সেই সামর্থ্য হতে জলপূর্ন আকাশ উৎপন্ন হইয়াছে।-১
জলপূর্ণ আকাশের পরে সন্ধিকাল উৎপন্ন হয়েছে। তারপর সকল চেতন জীবের শাসক পরমাত্মা দিন ও রাত্রি রচনা করেছেন।-২
সর্বজগতের ধারণকর্তা পরমাত্মা সূর্য্য ও চন্দ্রকে, জ্যোতির্ময় ও জ্যোতিঃহীন লোককে এবং অন্তরিক্ষ লোককে ও লোক-লোকান্তরকে পূর্ব কল্পের মতোই রচনা করেছেন।-৩

এর পর আচমন মন্ত্র পাঠ করে আগের লেখা নিয়ম মতো তিনবার আচমন করবেন

ও৩ম্ শন্নো দেবীরভিষ্টয় আপো ভবন্তু পীতয়ে।
শংযোরভি স্রবন্তু নঃ।
(ঋগ্বেদ- ১০/৯/৪, যজুর্বেদ- ৩৬/১২, অথর্ববেদ-১/৬/১)
ভাবার্থ: সর্বপ্রকাশক, আনন্দদাতা,সর্বব্যাপক পরমেশ্বর আমার মনোবাঞ্ছিত ফল ও পূর্ণ আনন্দ দানের জন্য কল্যাণকারী হন ও আমার উপরে সর্বপ্রকারে সুখ বর্ষণ করুন।

ষষ্ঠ ক্রিয়া -মনসা পরিক্রমা-
নীচে লেখা ছয়টি মন্ত্রে যথাক্রমে পূর্ব, দক্ষিন, পশ্চিম, উত্তর, অধঃ বা নীচে ও উর্দ্ধ বা উপর দিকে পরমাত্মার ব্যপকতা, শক্তি ও দয়া চিন্তা করে প্রার্থনা করতে হবে।

ও৩ম্ প্রাচী দিগগ্নিরধিপতিরসিতো রক্ষিতাদিত্যা ইষবঃ ।
তেভ্যো নমোধিপতিভ্যো নমো রক্ষিতৃভ্যো নম ঈষুভ্যো নম।এভ্যো অস্ত ।
যোহস্মান্ দ্বেষ্টি যং বয়ং দ্বিষ্মস্তং বো জম্ভে দধমঃ ।।(অথর্ববেদ-৩/২৭/১)।।

ভাবার্থ- পূর্ব দিকের অধিপতি,অগ্নি অর্থাৎ জ্ঞান স্বরূপ পরমাত্মা, সূর্যরশ্মি দ্বারা আমাকে অন্ধকার হতে রক্ষা করেন। তাঁকে নমস্কার। অধিপতি কে নমস্কার। রক্ষাকর্তাকে নমস্কার। রক্ষার উপায়ের জন্য তাঁকে নমস্কার। এইসব বিধানের জন্য তাঁর প্রতি বারবার আমি নমস্কার করি। যে আমাকে দ্বেষ করে আমি যাকে দ্বেষ করি আমাদের সকলের সেই দ্বেষভাবকে তোমার পাপ নাশক শক্তিতে স্থাপন করছি।

ও৩ম্ দক্ষিণা দিগিন্দ্রোহ- ধিপতিস্তিরশ্চিরাজী রক্ষিতা পিতর ইষবঃ।
তেভ্যো নমোধিপতিভ্যো নমো রক্ষিতৃভ্যো নম ইষুভ্যো নম এভ্যো অস্তু ।
যোহস্মান্ দ্বেষ্টি যং বয়ং দ্বিষ্মস্তং বো জম্ভে দধমঃ ।।(অথর্ববেদ-৩/২৭/২)।।

ভাবার্থ- দক্ষিণ দিকের অধিপতি ইন্দ্র অর্থাৎ ঐশ্বর্যময় পরমাত্মা তাঁর রক্ষণ শক্তি দ্বারা সাপ ও অন্যান্য বিষধর প্রাণী হতে আমাকে রক্ষা করেন। তাঁকে নমস্কার। অধিপতিকে নমস্কার। রক্ষাকর্তাকে নমস্কার। এইসব বিধানের জন্য তাঁর প্রতি বারবার আমি নমস্কার করছি। যে আমাকে দ্বেষ করে আমি যাকে দ্বেষ করি আমাদের সকলের সেই দ্বেষভাবকে তোমার পাপ নাশক শক্তিতে স্থাপন করছি।

ও৩ম প্রতীচী দিগ্বরুণোহধিপতিঃ পৃদাকুঃ রক্ষিতান্নমিষবঃ।
তেভ্যো নমোধিপতিভ্যো নমো রক্ষিতৃভ্যো নমো ইষুভ্যো নমো এভ্যো অস্তু।
যোস্মান দ্বেষ্টি যং বয়ং দ্বিষ্মস্তং বো জম্ভে দধমঃ।।(অথর্ববেদ-৩/২৭/৩)।।

ভাবার্থ- পশ্চিম দিকের অধিপতি বরুণ অর্থাৎ বরণীয় পরমাত্মা খাদ্য শক্তির দ্বারা বিষাক্ত জীব হতে আমাকে রক্ষা করেন। তাঁকে নমস্কার।অধিপতিকে নমস্কার।রক্ষাকর্তাকে নমস্কার। রক্ষার উপায়ের জন্য তাঁকে নমস্কার। এইসব বিধানের জন্য তাঁর প্রতি বারবার আমি নমস্কার করি। যে আমাকে দ্বেষ করে আমি যাকে দ্বেষ করি আমাদের সকলের সেই দ্বেষভাবকে তোমার পাপ নাশক শক্তিতে স্থাপন করছি।

ও৩ম্ উদীচী দিক্ সোমোহধিপতিঃ স্বজো রক্ষিতাশনিরিষবঃ ।
তেভ্যো নমোধিপতিভ্যো নমো রক্ষিতৃভ্যো নম ইষুভ্যো নম।
এভো অস্তু যোহস্মান দ্বেষ্টি যং বয়ং দ্বিষ্মন্তং বো জম্ভে দধমঃ।।(অথর্ববেদ-৩/২৭/৪)।।

ভাবার্থ- উত্তর দিকের অধিপতি সোম অর্থাৎ শান্তিরূপ পরমাত্মা,বিদ্যুৎ দ্বারা সহজাত কীটপতঙ্গাদি হতে রক্ষা করেন তাঁকে নমস্কার। অধিপতিকে নমস্কার। রক্ষাকর্তাকে নমস্কার। রক্ষার উপায়ের জন্য তাঁকে নমস্কার। এইসব বিধানের জন্য তাঁর প্রতি বারবার আমি নমস্কার করি। যে আমাকে দ্বেষ করে আমি যাকে দ্বেষ করি, আমাদের সকলের সেই দ্বেষভাবকে তোমার পাপ নাশক শক্তিতে স্থাপন করছি।

ও৩ম ধ্রুবা দিগ্বিষ্ণুরধিপতিঃ কল্মাষগ্রীবো রক্ষিতা বীরুধ ইষবঃ ।
তেভ্যো নমোহধিপতিভ্যো নমো রক্ষিতৃভ্যো নম ইষুভ্যো নম এভ্যো অস্তু।
যোহস্মান দ্বেষ্টি যং বয়ং দ্বিষ্মস্তং বো জম্ভে দধমঃ ।।(অথর্ববেদ-৩/২৭/৫)।।

ভাবার্থ- নিম্ন দিকের অধিপতি বিষ্ণু অর্থাৎ ব্যাপক পরমাত্মা গাছের দ্বারা কৃষ্ণবর্ণ স্কন্ধ বিশিষ্ট বিষাক্ত বায়ু গ্ৰহণ করিয়ে রক্ষা করেন। তাঁকে নমস্কার। অধিপতিকে নমস্কার। রক্ষাকর্তাকে নমস্কার। রক্ষার উপায়ের জন্য তাঁকে নমস্কার। এইসব বিধানের জন্য তাঁর প্রতি বারবার আমি নমস্কার করি। যে আমাকে দ্বেষ করে আমি যাকে দ্বেষ করি আমাদের সকলের সেই দ্বেষভাবকে তোমার পাপ নাশক শক্তিতে স্থাপন করছি।

ও৩ম্ উর্ধ্বাদিগ্ বৃহস্পতিরধিপতিঃ শ্বিত্রো রক্ষিতা বর্ষমিষবঃ।
তেভ্যো নমোধিপতিভ্যো নমো রক্ষিতৃভ্যো নম ইষুভ্যো নম এভ্যো অস্তু।
যোহস্মান দ্বেষ্টি যং বয়ং দ্বিষ্মস্তং বো জম্ভে দধমঃ ।।(অথর্ববেদ-৩/২৭/৬)।।

ভাবার্থ- ঊর্ধ্ব দিকের অধিপতি বৃহস্পতি অর্থাৎ বেদরক্ষক মহান পরমাত্মা বৃষ্টির জলের দ্বারা শ্বেতি ও অন্য চামড়ার রোগ হতে রক্ষা করেন। তাঁকে নমস্কার। অধিপতিকে নমস্কার। রক্ষাকর্তাকে নমস্কার। রক্ষার উপায়ের জন্য তাঁকে নমস্কার। এইসব বিধানের জন্য তাঁর প্রতি বারবার আমি নমস্কার করি। যে আমাকে দ্বেষ করে, আমি যাকে দ্বেষ করি, আমাদের সকলের সেই দ্বেষভাবকে, তোমার পাপ নাশক শক্তিতে স্থাপন করছি।

সপ্তম ক্রিয়া -উপস্থান -

"উপ" শব্দের অর্থ হল "নিকটে" এবং "স্থান" অর্থ হল "অবস্থান" করা। উপস্থান অর্থে এখানে ঈশ্বরের গুণ, কর্ম ও স্বভাবের ধ্যানে মগ্ন হয়ে তাঁর নিকটবর্তী হওয়া । নীচে লেখা চারটি মন্ত্রে পরমাত্মার স্তুতি ও প্রার্থনা করিয়া তাঁর স্বরূপ ধ্যান করতে হবে ।
ও৩ম্ উদ্বয়ং তমসস্পরি স্বঃ পশ্যন্ত উত্তরম্ ।
দেবং দেবত্রা সূর্যমগন্ম জ্যোতিরুত্তমম্ ।।
(ঋগ্বেদ- ১/৫০/১০, যর্জুবেদ-৩৫/১৪)
ভাবার্থ: আমরা অন্ধকার রহিত,আনন্দস্বরূপ, প্রলয়ের পরেও বিদ্যমান দিব্যগুণ যুক্ত, সর্বোত্তম জ্যোতিঃস্বরূপ চরাচর জগতের আত্মা পরমাত্মদেবকে জ্ঞাননেত্রে দর্শন করে, তাঁকে লাভ করব।

ও৩ম্ উদুত্যং জাতবেদসং দেবং বহন্তি কেতবঃ ।
দৃশে বিশ্বায় সূর্য্যম্ ।।
(ঋগ্বেদ- ১/৫০/১, যর্জুবেদ- ৩৩/৩১)
ভাবার্থ : পরমাত্না বেদের দ্বারা জ্ঞান ও সূর্যের আলোর দ্বারা এই বিশ্বকে প্রকাশিত করেন।

ও৩ম চিত্রং দেবানামুদগাদনীকং চক্ষুর্মিত্রস্য বরুণস্যাগ্নেঃ ।
আ প্রা দ্যাবাপৃথিবী অন্তরীক্ষং সূর্য্য আত্মা জগতস্তস্থুষশ্চ স্বাহা ।।
(ঋগ্বেদ- ১/১১৫/১, যজুর্বেদ- ৭/৪২)
ভাবার্থ: সেই প্রেরনাদাতা পরমেশ্বর,চর ও অচল প্রানীদের আত্মাস্বরূপ। দ্যুলোক, ভূলোক ও অন্তরীক্ষলোককে তিনি ধারণ ও রক্ষা করছেন। দ্রোহরহিত, শ্রেষ্ঠকর্মা ও অগ্রগামী ব্যক্তির তিনি চক্ষুস্বরূপ জ্ঞানের দাতা। তিনি বিদ্বানদের হৃদয়ে বিচিত্র বলরূপে প্রকাশিত হন। তাঁহাতে আত্নাহূতি দান করি।

ও৩ম্ তচ্চক্ষুর্দেবহিতং পুরস্তাচ্ছুক্রমুচ্চরৎ।
পশ্যেম শরদঃ শতং জীবেম শরদঃ শতং শৃনুয়াম শরদঃ শতং
প্রব্রবাম শরদঃ শতমদীনাঃ স্যাম শরদঃ শতং ভূয়শ্চ শরদঃ শতাৎ।।
(যজুর্বেদ- ৩৬/২৪)
ভাবার্থ: সেই পরমাত্মা সর্বদ্রষ্টা, উপাসকদের কল্যাণদাতা ও পবিত্র। সৃষ্টির পূর্ব হতেই তিনি সর্বব্যাপকরূপে বর্তমান আছেন। তাঁর কৃপায় আমি যেন শতবছর বাঁচি, শতবছর চোখে দেখতে পাই, শতবছর কানে শুনতে পাই, শতবছর কথা বলতে পারি, শতবছর আত্মনির্ভরশীল হয়ে থাকতে পারি এবংশতবছরেরও বেশি যেন এইভাবে বাঁচতে পারি।

অষ্টম ক্রিয়া -গায়ত্রী মন্ত্র বা গুরু মন্ত্র ধ্যান-

যে কোন সনাতন ধর্মালম্বীরই প্রতিদিন উপাসনায় গায়ত্রী মন্ত্র পাঠ আবশ্যক ।

ॐ भूर्भुवः स्वः 
तत्सवितुर्वरेण्यं 
भर्गो देवस्य धीमहि 
धियो यो नः प्रचोदयात्। 

ও৩ম্ ভূর্ভুবঃ স্বঃ 
তৎসবিতুর্বরেণ্যং 
ভর্গোদেবস্য ধীমহি। 
ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।। 
(ঋগ্বেদ-৩/৬২/১০, যজুর্বেদ-৩/৩৫ ও ৩০/২ এবং সামবেদ উত্তরার্চ্চিক-৬/৩/১০) 

ভাবার্থ: ও৩ম্ (পরমাত্মা), ভূঃ (প্রাণস্বরূপ), ভুবঃ (দুঃখনাশক), স্বঃ (আনন্দস্বরূপ), সবিতু (জগতের উৎপাদক), দেবস্য (দিব্য গুণযুক্ত পরমাত্নার), তৎ(সেই) বরেণ্যম্ (বরণীয়), ভর্গঃ (পাপনাশক শুদ্ধস্বরূপকে), ধীমহি (ধ্যান করি), যঃ (যিনি), নঃ (আমাদের), ধিয় (নির্মল বুদ্ধির), প্রচোদয়াৎ (প্রেরণা দান করেন)।

বঙ্গানুবাদঃ- পরমাত্মা প্রাণস্বরুপ, দুঃখনাশক ও সুখ স্বরুপ। তিনি আমাদের বুদ্ধিকে শুভ গুণ, কর্ম ও স্বভাবের দিকে চালনা করেন। সেই জগদুৎপাদক ও ঐশ্বর্যপ্রদাতা পরমাত্মার বরণযোগ্য পাপ-বিনাশক তেজকে আমরা ধারণ করি। 

।। সমর্পণম্ ।।

হে ঈশ্বর দয়াধে! ভবৎকৃপায়ানেন জপোপাসনাদি কর্মণা ধর্মার্থকামমোক্ষাণাং সদ্যঃ সিদ্ধির্ভবেন্নঃ।

ভাবার্থঃ হে পরমাত্মা তোমার কৃপায় আমি যা ভালো কাজ করি তা তোমাকেই সমর্পণ করছি। জপ, উপাসনাদি কর্ম দ্বারা আমি যেন খুব তাড়াতাড়ি ধর্ম অর্থ কাম ও মোক্ষের বিষয়ে সফল হতে পারি।

নবম ক্রিয়া -নমস্কার-

ও৩ম্ নমঃ শম্ভবায় চ ময়োভবায় চ ।
নমঃ শঙ্করায় চ ময়স্করায় চ
নমঃ শিবায় চ শিবতরায় চ ।।
(যজুর্বেদ- ১৬/৪১)
ভাবার্থ: সুখস্বরূপ, সুখদাতা, কল্যাণকারী কল্যাণদাতা, মঙ্গলস্বরূপ ও মোক্ষদাতা পরমাত্মাকে বারবার নমস্কার করি।


।। ইতি সন্ধ্যোপাসনা বিধি।।

Post a Comment

0Comments

Please Select Embedded Mode To show the Comment System.*