সনাতন ধর্ম মতে প্রানীজ আমিষ আহার কি বৈধ?
প্রশ্নঃ রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী সমর্পনানন্দজীর বক্তব্য হলো যারা সাত্ত্বিক আহারী তথাকথিত নিরামিষ ভোজন করে তারা মুর্খ, উনার মতে বেদ, মহাভারত ও রামায়ণে কোথাও নিরামিষ আহার এর কথা নেই, আসলেই কি তিনি সত্য প্রকাশ করে অন্যেকে মূর্খ বলে কটাক্ষ করেছেন? না তিনি নিজেই দাম্ভিকতা প্রকাশ করেছেন?
প্রশ্নঃ ১০০০ বছর মোগল, পাঠান, ব্রিটিশ দখলদার লোটেরারাই ভারত বর্ষ লুঠপাট, হত্যা, ধর্ষণ, ধর্মান্তরের স্ট্রিম রোলার চালিয়েছিল, তখন এই দেশের দালাল হিন্দুরাই তাদের সহযোগিতা করেছিল এবং তারা ঐ দস্যুদের সাথে তাল মিলিয়ে গরুর মাংস ভক্ষণ করছিল এটাও কি মিথ্যা? তারা তাদের গরু ভক্ষণের বৈধতার জন্য বেদ ও বিভিন্ন গ্রন্থে মাছ মাংস ভক্ষণের তথ্য যুক্ত করেছে এটাও কি মিথ্যা?
ইদাংনি দুইটি পক্ষের মধ্যে ধর্মীয় মতাদর্শের তুমুল লড়াই চলছে- এদের একটি পক্ষ সাত্ত্বিক আহারীদের কটাক্ষ করে চলছে, কেউ কেউ শাক সবজি খাওয়াও জীব হত্যা বলে প্রমান করতে চাইছে। কেননা গাছেরও প্রাণ আছে, আবার এও সত্য উদ্ভিজ আত্মা পূর্ব জন্মের কর্মফল প্রাপ্তির একটি অংশ।
আজ আমাদের শাস্ত্রীয় রেফারেন্সের মাধ্যমে প্রমাণ করব শাক সবজি খাওয়া জীব হত্যার পর্যায়ে পরে নাকি দর্শন শাস্ত্রের ও বেদের আলোকে।
আবার সনাতন ধর্ম মতে মাছ মাংস ভক্ষণ বৈধ নয়।
প্রথমে প্রণেতা মহর্ষী কপিল এর সাংখ্য দর্শন থেকে দেখি-
বাহ্য বুদ্ধির দ্বারা বৃক্ষাদির ভোগ দেখা যায় তবে স্থাবর জন্ম কেন বলা হয় ?
ন বাহ্যবুদ্ধিনিয়মো বৃক্ষগুল্মলতৌষধিবনস্পতিতৃণবীরূধাদীনা
-মপিভোক্তৃভোগায়তনত্বং পূর্ববৎ ।।
(সাংখ্য দর্শন-৫ম অধ্যায়ে-১২১)
সরলার্থ-বাহ্য বুদ্ধিতেও স্থাবর জন্মের ভোগের কোন নিয়ম পাওয়া যায় না। বৃক্ষাদির শরীরে সুষুপ্তির মত কোন অনুভূতি নাই। একপ্রকার জড়তাপূর্ণ অবস্থা। বৃক্ষ যথা আম্রাদি, গুল্মযথা শর আদি, লতা-গোলঞ্চাদি, বনস্পতি জঙ্গলীবৃক্ষ এবং বীরুধ অর্থাৎ কেবল ফুলযুক্ত লতাদিতে ভোগের সাধন নাই। আপাতঃ দৃষ্টিতে উহাদের ভোগ শরীর বলিয়া বোধ হয়। কিন্তু উহাদের ভোগ শরীর নহে-যেমন সুষুপ্ত অবস্থায় ভোগ হয় না সেইরূপ বৃক্ষাদির শরীরেও কোন ভোগ হয় না। উহাদের স্থাবর অবস্থার মত এক প্রকার জড়তার অবস্থা। লজ্জাবতী লতা আদি স্পর্শ করিলে যে ভোগের প্রতীতি হয় উহা স্পর্শজনিত উষ্ণতা হেতু জড়ের বিকার মাত্র অনুভূতির জন্য নহে।
সং–বৃক্ষাদির গণনা উক্ত তিন দেহের মধ্যে নাই তবে বৃক্ষের ভোগাদিকে কোন যোনির মধ্যে ধরিব ?
সরলার্থ:- বৃক্ষাদি জন্মকে অনুশয়ী জন্ম কহে, পাষাণ কল্প স্থাবর জন্ম। ইহাও পরমাত্মার সৃষ্টির অদ্ভূত নিয়ম। যেমন কোন জমি সম্পূর্ণ উর্বরতা শক্তি শুন্য হইলে তাহাতে পুনঃ পুনঃ সারাদি দেওয়া সত্বেও কৃষক কোন ফসল উৎপন্ন করিতে না পারায় তাহাকে কিছু কাল যাবৎ পতিত অবস্থায় রাখে এবং তারপর বায়ু, রৌদ্র, বৃষ্টির জলকণা ও চন্দ্রের জ্যোৎস্না প্রভৃতির সংযোগে তাহার পুনরায় উর্বরতা শক্তি লাভ হয় ও তাহা চাষাবাদের উপযোগী হইয়া ফসল উৎপন্ন করে সেইরূপ যখন মনুষ্য অত্যধিক অন্যায় কর্ম–বিশেষ করিয়া বুদ্ধি মন ও ইন্দ্রিয়াদি সূক্ষ্ম করণের দ্বারা ও শারীরিক যন্ত্রদ্বারা অত্যধিক অন্যায় কর্ম করিয়া তাহার স্থূল ও সূক্ষ্ম সমস্ত ভোগের করণাদি অকর্মণ্য করিয়া ফেলে তখন পতিত জমির মত তাহাকে নিস্ক্রিয় অবস্থায় ফেলিয়া রাখিবার প্রযোজন হয় বলিয়া পরম কারুণিক পরমেশ্বর তাহার শোধনার্থ তাহাকে ভোগের ইন্দ্রিয়াদি ও শারীরিক করণাদি অর্থাৎ স্থূল ও সূক্ষ্ম যন্ত্রাদি হইতে বঞ্চিত করিয়া পাষাণকল্প স্থাবর জন্ম দান করিয়া থাকেন। উক্ত জীবাত্মা বহুকালাবধি ইন্দ্রিয়াদি বিবর্জিত অবস্থায় ভোগ হইতে বঞ্চিত থাকিবার কারণ তাহার সেই জগণ্য ভোগস্পৃহা ক্ষীণ হইয়া যায় এবং ঐ সমস্ত কুসংস্কার চাপা পড়িলে তাহার পূর্ব পূর্ব অন্যান্য কর্মসংস্কার প্রাদুর্ভূত হইয়া থাকে এবং জীবাত্মা সেই সমস্ত কর্ম সংস্কার অনুযায়ী শরীর লাভ করিয়া পুনরায় কর্ম করিবার ও ভোগ করিবার শক্তি লাভ করে। সেইজন্য স্থাবর জন্ম বা বৃক্ষ জন্মের প্রয়োজন হইয়া থাকে।
ইহা দ্বারা মনুষ্যের অহিংসালব্ধ অদুষ্ট সাত্ত্বিক আহারেরও সিদ্ধি হইয়া থাকে এবং বৃক্ষস্থ জীবের অজ্ঞাতে তাহার স্থাবর শরীরের দ্বারা মনুষ্যের প্রয়োজন সিদ্ধ হইয়া থাকে।
এখন জীব বিজ্ঞানের ধারনাতে দেখি উদ্ভিদের অনুভুতি আছে কিনা-
যেহেতু গাছে কোন স্নায়ুতন্ত্র নেই, তাই উদ্ভিদের যন্ত্রণা অনুভব করার জন্য কোনও ব্যাবস্থা নেই। মস্তিষ্ক বা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম বা এমন কোন অরগান নেই যার দ্বারা গাছ মানুষের মত করে বা অন্য কোন প্রানীর মত করে তার আবেগ প্রকাশ করতে পারে।
এই কারণে উদ্ভিদকে কাটলেও ব্যাথা পায় না। সে জন্য ঈশ্বর এমন ইকো সিস্টেমের নির্মাণ করেছেন যেখানে প্রাণী জীবন্ত উদ্ভিদকে চিবিয়ে খায় তথাপি পুনঃ উদ্ভিদ জীবিত হয়ে যায় এবং জীবের ন্যায় ব্যাথ্যা বেদনা পায় না, কারণ উদ্ভিদ পঞ্চ ইন্দ্রিয় বিবর্জিত।
তাই ঈশ্বর বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী মনুষ্য জাতির জন্য বেদে শাকারী হবার উপদেশ করেছেন।।
- মনুস্মৃতিতে মাছ মাংস আহারে কি কি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন -
"যো যস্য মাংসমশানি স তন্মাংসাদ উচ্যতে।
মৎস্যাদঃ সর্বমাংসাদস্তস্মান্মৎস্যান বিবকর্জেয়ৎ।।"
(মনুস্মৃতি- ৫/১৫)
অনুবাদঃ যে যার মাংস খায় তাকে সেই মাংসভোজী বলে। কিন্তু যে মৎস্যাদ অথাৎ মৎস্যভোজী তাকে সর্বমাংসভোজী বলা হয়। অতএব মৎস্য ভোজন পরিত্যাগ করবে।
য়োহিংসকানি ভূতানি হিনস্ত্যাত্মসুখেচ্ছয়া ।
স জীবংশ্চ মৃতশ্চৈব ন ক্বচিত্সুখমেধতে।।
(মনুস্মৃতি-৫/৪৫)
অনুবাদঃ ব্যক্তি নিজ সুখের ইচ্ছায় কোন অহিংসক, নিরপরাধ প্রাণীকে হত্যা করে; সে (জীবংশ্চ মৃতঃ) বেঁচে থাকতে ও মরার পরে কখনো সুখী হয় না।
য়ো বন্ধনবধক্লেশান্প্রাণিনাং ন চিকীর্ষতি।
স সর্বস্য হিতপ্রেপ্সুঃ সুখমত্যন্তমশ্নুতে ।।
(মনুস্মৃতি-৫/৪৬)
অনুবাদঃ যে ব্যক্তি প্রাণীদেরকে বেঁধে রাখতে চায় না, বধ করতে চায় না এবং তাদের কোন ভাবে কষ্ট দেওয়ার ইচ্ছা করে না, সেই সব প্রাণীদের হিতৈষী হয়ে অধিক সুখ পায়।
য়দ্ধ্যয়তি য়ত্কুরুতে ধৃতিং বধ্নাতি য়ত্র চ।
তদবাপ্নোত্যয়ত্নেন য়ো হিনস্তি ন কিঞ্চন ।।
(মনুস্মৃতি-৫/৪৭)
অনুবাদঃ যে ব্যক্তি কোন প্রাণীর প্রতি হিংসা করে না, সে যার ধ্যান করে, যে কাজকে করতে চায়, এবং যেখানে ধৈর্য যুক্ত হয়ে মনকে লাগাতে চায়, তাকে সে সহজতাপূর্বক প্রাপ্ত করে নেয়।
নাকৃত্বা প্রাণীনাং হিংসা মাংসমুত্পদ্যতে ক্বচিত্ ।
ন চ প্রাণিবধঃ স্বর্গ্যস্তস্মান্মাংসং বিবর্জয়েত্ ।।
(মনুস্মৃতি-৫/৪৮)
অনুবাদঃ প্রাণীদের প্রতি বিনা হিংসা করে মাংস পাওয়া যায় না। আর জীবের হত্যা করা (ন স্বর্গ্যঃ) সুখদায়ক নয়। এইজন্য মাংস খাওয়া উচিত নয়।
সমুত্পত্তিং চ মাংসস্য বধবন্ধৌ চ দেহিনাম্।
প্রসমীক্ষ্য নিবর্তেত সর্বমাংসস্য ভক্ষণাত্।।
(মনুস্মৃতি-৫/৪৯)
অনুবাদঃ প্রক্রিয়া দ্বারা মাংসের উত্পত্তি হয়, প্রাণীদের হত্যা ও বন্ধনের কষ্টকে (প্রসমীক্ষ্য) দেখে সব প্রকারের মাংস খাওয়া থেকে (নিবর্তেত) দূর থাকুন বা খাওয়া ছেড়ে দিন।
যারা মাংস খায় না তাদের কি কি লাভ হয়?
মাংস খাওয়ার প্রসঙ্গে আট প্রকারের পাপীদের গননা মহর্ষি মনু করেছেন। তারা হল-
অনুমন্তা বিশসিতা নিহন্তা ক্রয়বিক্রয়ী।
সংস্কর্তা চোপহর্তা চ খাদকশ্চেতি ঘাতকাঃ।।
(মনুস্মৃতি ৫/৫১)
অনুবাদঃ পশু বধ করার জন্য যিনি আজ্ঞা করেন, যিনি মাংস কর্তন করেন, যিনি পশু বধ তথা হত্যা করেন, যিনি মাংস ক্রয় করেন এবং যিনি বিক্রয় করেন, যিনি মাংস রন্ধন করেন, যিনি মাংস পরিবেশন করেন এবং যিনি ভোজন করেন, তাহারা ঘাতক অর্থাৎ হত্যাকারী আর পাপী।
-ঈশোপনিষদ এর একটি রেফারেন্স প্রদান করা হলো-
ঈশা বাস্যমিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ।
তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্যস্বিদ্ ধনম্।। ঈশোপনিষদ-১॥
মূলানুবাদ: ব্রহ্মাণ্ডে যাহা কিছু অনিত্য শরীর সমূহ আছে, এই সমস্তই পরমেশ্বরের দ্বারা আচ্ছাদন মনে করিবে। সেই হেতু ত্যাগের দ্বারা আত্মাকে পালন করিবে। এবং কাহারও ধন আকাঙ্ক্ষা করিবে না।।
এখন দেখি বেদ মাছ মাংস খাওয়াকে বৈধ না অবৈধ বলা হয়েছে?
व्री॒हिम॑त्तं॒ यव॑मत्त॒मथो॒ माष॒मथो॒ तिल॑म्।
ए॒ष वां॑ भा॒गो निहि॑तो रत्न॒धेया॑य दन्तौ॒ मा हिं॑सिष्टं पि॒तरं॑ मा॒तरं॑ च ॥
"ব্রী॒হিম॑ত্তং॒ যব॑মত্ত॒মথো॒ মাষ॒মথো॒ তিল॑ম্।
এ॒ষ বাং॑ ভা॒গো নিহি॑তো রত্ন॒ধেয়া॑য় দন্তৌ॒ মা হিং॑সিষ্টং পি॒তরং॑ মা॒তরং॑ চ॥"
(অথর্ব-৬/১৪০/২)
অনুবাদ: চাউল, যব, মাষ এবং তিল ভক্ষণ কর। রমণীয়তার জন্য ইহাই তোমাদের জন্য বিহিত হইয়াছে! পালক ও রক্ষককে ভক্ষণ করিও না।
"পুষ্টিং পশুনাং পরি জগ্রভাহং চতুষ্পদাং দ্বিপদাং যচ্চ ধান্যম্ ।
পয়ঃ পশুনাংরসমোষ ধীনাং বৃহস্পতিঃ সরিতা যে নি য়চ্ছাৎ"
(অথর্ব-১৯/৩১/৫)
অনুবাদ: চতুস্পদ পশু, দ্বিপদ পশু এবং ধান্য হইতে আমরা পুষ্টি গ্রহণ করি। এজন্য সৃষ্টি কৰ্ত্তা পরমেশ্বর আমাদিগকে পশু দুগ্ধ ও ঔষধির রস প্রদান করিয়াছেন ।
यः पौरु॑षेयेण क्र॒विषा॑ सम॒ङ्क्ते यो अश्व्ये॑न प॒शुना॑ यातु॒धानः॑।
यो अ॒घ्न्याया॒ भर॑ति क्षी॒रम॑ग्ने॒ तेषां॑ शी॒र्षाणि॒ हर॒सापि॑ वृश्च॥
(अथर्ववेद» काण्ड:8» सूक्त:3» मन्त्र:15)
"যঃ পৌরষেযেণ ক্রবিষাং সমঙ্কতে যো অশ্বয়েন পশুনাং যতুধান।
যো অগ্ন্যায় ভরতি ক্ষীরমগ্নে তেষাং শীর্ষাণি হরসাপি বৃশ্চ।।"
(অথর্ব ৮/৩/১৫)
অনুবাদ: যে সকল মনুষ্য বধকৃত পশুর মাংস দ্বারা যে দেহ পুষ্ট করে, ঘোড়া ও দুগ্ধ প্রদানকারী গাভী সহ অন্যন পশুদের হত্যা করে, সে রাজ্যের রাজার উচিত তাহার শির ছিন্ন করা।
"গোঘাতম্ ক্ষেধে যঃ গাম্ বিকৃন্তন্তম"
(যজুর্বেদ ৩০/১৮)
অনুবাদ: ক্ষুধা নিবৃত্তে পশু হত্যাকারীকে দূর করো।
"অদিতিম মা হিংসী" (যজুর্বেদ ১৩।৪৯)
অনুবাদ: প্রাণী হিংসার অযোগ্য
"নিরপরাধ গাভী ও পশুকে হত্যা করো না" (ঋগ্বেদ ৮/১০১/১৫)
সহৃদয়ং সাংমনস্যমবিদ্বেষং কৃণোমি বঃ।
অন্যো অন্যমডি হর্যত বৎসং জাতমিবাসা।।
(অথর্ব্ববেদ- ৩/৩০/১)
পদার্থঃ- (স হৃদম্) সহৃদয়তা (সাংমনস্যম) মনের উত্তম ভাব (অবিদ্বেষ ) নিবৈরতা (বঃ) তোমাদের জন্য (কৃণোমি) করিতেছি (অন্যঃ অন্যম) একে অন্যের প্রতি (অভি হর্ষাত) প্রীতি কর (ইব) যেমন (জাতং বৎসম) নবজাত বৎসকে (অগ্না) গাভী প্রীতি করে।
বঙ্গানুবাদঃ- আমি তোমাদের জন্য সহৃদয়তা, উত্তম মন, নির্বৈরতা প্রদান করিয়াছি। তোমরা একে অন্যের প্রতি গাভী যেমন নবজাত বৎসের মলিন শরীরকে সর্ব্বশ্রেষ্ঠ অঙ্গ জিহ্বা দ্বারা পরিষ্কার করে সেইরূপ প্রেম কর।
"পশুদের রক্ষা করো, পালন করো"- (যজুর্বেদ ৬/১১)
এখন দেখি মহাভারতে এ মাছ মাংস খাওয়াকে বৈধ না অবৈধ বলা হয়েছে? মহাভারতে কি আছে--
"যে ধর্মের মর্যাদা থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে মূর্খ, নাস্তিক তথা যার আত্মা সংশয়যুক্ত এবং যার কোন প্রসিদ্ধি নেই এইরূপ লোকই হিংসাকে সমর্থন করে।"-(মহাঃ শান্তি পর্বঃ ২৬৫, শ্লোক ৪)
"সুরা, মৎস, মধু, মাংস, তালরস, স্বাগু এইসব বস্তুকে ধুর্তেরাই যজ্ঞে প্রচলিত করেছে। বেদে এসব উপযোগের বিধান নেই।"-(মহাঃ শান্তি পর্বঃ ২৬৫, শ্লোক ৯)
অনেকে বলে থাকে দেবদেবীর উদ্দেশ্যে যে বলি হয়, যজ্ঞবেদীতে রক্ত মাংস উৎসর্গ হয় তাহা শাস্ত্র সিদ্ধান্ত। তাহার মাংস প্রসাদ হিসেবে গ্রহণযোগ্য।
অথচ বেদে স্পষ্ট করেই নির্দেশ দিয়েছে-
যজ্ঞ অধ্বর তথা হিংসারহিত।-(ঋগ্বেদ ১/১/৪, ১/১/৮, ১/১৪/২১, ১/১৯/১, ১/২৮/১, ৩/২১/১)
বেদের এই মহৎ নির্দেশের জন্যই সনাতন ধর্ম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম। কারণ লোভ, ভয়, অন্যের সম্পত্তির দখল এবং ভোগের জন্য নীরহ পশু হত্যা ধর্মের অঙ্গ হতে পারে না।
যস্ত্বিহ বা উগ্রঃ পশূণ পক্ষিণো বা প্ৰাণত উপরন্ধয়তি তমপকরুনং
পুরুষাদৈরপি বিগর্হিতমমুত্র যমানুচরা কুম্ভীপাকে তপ্ততৈলে উপরন্ধতি।।
(ভাগবত ৫।২৬।১৩)
অনুবাদঃ যে নিষ্ঠুর ব্যাক্তি অসহায় পশু পাখীদের হত্যা করে তাদের রন্ধন করে ভক্ষণ করে তারা রাক্ষসদের দ্বারাও নিন্দিত।সে নিষ্ঠুর ব্যাক্তিকে যমপুরুষগণ কুম্ভীপাক নরকে তপ্ততৈলে রন্ধন করেন।
তাই বলা চলে বিভিন্ন মতবাদী অনুসারীদের মাছ-মাংস খাওয়ার পক্ষের যুক্তি সনাতন ধর্ম তথা বেদ বিরুদ্ধ।
শাকাহারীদের মুর্খ বলা ব্যক্তিরা কোথাও এমনটা নয় তো সে/তারা নিজেরাই মুর্খ।
শেষ কথা ও পর্যবেক্ষন: ভারতের গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা সহ অনেক রাজ্যের অধিকাংশ সনাতনী হিন্দুরা সাত্ত্বিক আহার গ্রহণ করেন। তাদের শক্তি, বুদ্ধি, জ্ঞান কি কম?
প্রচারে: আর্য প্রতিনিধি সভা বাংলাদেশ।