স্ত্রীদের কি গায়েত্রী মন্ত্র জপ করার অধিকার আছে? |
» এটা আমাদের শাস্ত্র বিরুদ্ধ। প্রাচীন কালে সকল স্ত্রী-পুরুষ গায়েত্রী মন্ত্রের উপসনা করতেন পরন্তু বর্তমানে এইসব আর হয় না। আজকাল পৌরাণিক গুরুগণ তাদের শিষ্যদের (স্ত্রী-পুরুষ) নতুন নতুন মন্ত্র প্রদান করে। কেউ 'রাম রামায় নমঃ' কেউ 'নমো নারায়ণ:' ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে প্রসিদ্ধ মন্ত্র হলো-
'ওম নমো ভগবতে বাসুদেবায়'।
এই মন্ত্র সমন্ধে প্রথম কথা হলো এটা কোনো মন্ত্রই নয়।কোনো ব্যক্তি এই মন্ত্রকে বেদের কোনো স্থানে দেখাতে পারবে না। দ্বিতীয় কথা হলো এটি দ্বিজদের জন্য নয়।এই কথা পুরাণ থেকেও সিদ্ধ হয়। পুরাণে বলা হয়েছে–
দ্বাদশাক্ষরকং মন্ত্রং স্ত্রীশূদ্রেষু বিধীয়তে।
-বিষ্ণুধর্মো০ প্রথম খণ্ড ১৫৫/২৮
অর্থাৎ দ্বাদশ অক্ষর এর মন্ত্র স্ত্রী এবং শূদ্রের জন্য।
» যখন স্ত্রীদের বেদাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে তখন 'ওম নমো ভগবতে বাসুদেবায়' আদি মন্ত্র তৈরি করা হয়েছে। কোনো পৌরাণিক তার শিষ্যকে গায়েত্রী মন্ত্র জপ করতে বলে না,বরং বলে গায়েত্রী মন্ত্র জপ করার স্ত্রীদের অধিকার নেই।
এর সমাধান করা আবশ্যক
» বেদ থেকে শুরু করে পুরাণ এবং স্মৃতি পর্যন্ত সমস্ত গ্রন্থেই বেদ পাঠে নারীর অধিকার তথা গায়েত্রী মন্ত্র জপ করার অধিকার দিয়েছে। যখন বেদ মন্ত্রের দ্রষ্টা কিছু ঋষিকাও হয়েছে।পুরাণেও স্ত্রীদের বেদ মন্ত্র গ্রহণ করার অধিকার দিয়েছে। 'ভবিষ্যপুরাণ' এর উত্তরপর্ব ৪/১৩ এ বলা হয়েছে–
যা স্ত্রী ভর্ত্রা বিয়ুক্তাপি ত্বাচারে সংয়ুতা শুভা।
সা চ মন্ত্রান্ প্র গৃহ্ণাতু সভর্ত্রা স্বনুজ্ঞয়া॥
অর্থাৎ উত্তম আচরণকারী বিধবা স্ত্রী বেদ মন্ত্র সমূহকে গ্রহণ এবং সধবা স্ত্রী তার স্বামীর অনুমতিতে বেদ মন্ত্র গ্রহণ করুক।
» ভবিষ্যপুরাণ এ বলা হয়েছে-
বৃথা জাপ্যমবৈদিকম্।
- ভবি০ উত্তর০ ১২২/৯
অর্থাৎ অবৈদিক মন্ত্র জপ করা নিরর্থক।
» এখন আমরা দেখে নেবো বেদের আলোকে নারীদের গায়েত্রী মন্ত্র জপ তথা বেদ পাঠের অধিকার।
ও৩ম্ যথেমাং বাচং কল্যানীমাবদানিজনেভ্যঃ।
ব্রহ্ম রাজান্যাভ্যাং শূদ্রায়চার্যায় চ স্বায় চারণায়।
প্রিয়ো দেবানংদক্ষিণায়ৈ দাতুরিহ ভুয়াসময়ং
মে কামংসমৃধ্যতামুপ মাদো নমতু।।
(যজুর্বেদ ২৬.২)
অনুবাদ: হে মনুষ্যগণ! আমি যেরূপে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র, স্ত্রী-পুরুষ এবং অন্যান্য সমস্ত জনগনকে এইকল্যানদায়িনী পবিত্র বেদবানী বলিতেছি, তোমরাও সেই রূপ কর। যেমন বেদবানীর উপদেশ করিয়া আমি বিদ্বানদের প্রিয় হয়েছি, তোমরাও সেরুপ হও। আমার ইচ্ছা বেদ বিদ্যা প্রচার হোক। এর দ্বারা সকলে মোক্ষ এবং সুখ লাভ করুক।
▪️এই মন্ত্র থেকে আমরা স্পষ্ট বলতে পারি বেদ পাঠের অধিকার নারী-পুরুষ উভয়ের রয়েছে।
ও৩ম্ শুদ্ধ পুত যোসিত যজ্ঞিয়াইমা ব্রাহ্মনম হস্তেষু প্রপ্রতক সদায়মি।
যত্কামা ইদমাভিসিন্চমি বোহামিন্দ্রো মরুত্বন্স দদাতু তন্বে।। ওঁ
অথর্ববেদ ৬.১২২.৫
অনুবাদ-আমার সকল কন্যাগন পবিত্র, ধর্মনিষ্ঠ, সকল ধর্মানুষ্ঠান (যজ্ঞাদি) পালনে যোগ্য। তাঁরা সকলে পবিত্র বেদ মন্ত্র নিষ্ঠার সহিত পাঠ করবে।তাঁদের সকলে বিদ্বান গুরুর নিকট বিদ্যালাভ করবে। ঈশ্বর তাদের নৈবেদ্য গ্রহন করবেন।
এমন অনেক প্রমাণ আছে যার দ্বারা সিদ্ধ হয় গায়েত্রী মন্ত্র জপ তথা বেদ পাঠের অধিকার নারীদের রয়েছে।
🖋️বিশাল আর্য
আর্য প্রতিনিধি সভা বাংলাদেশ