স্বামী স্বতন্ত্রানন্দ জী সরস্বতী

0

 


লৌহ পুরুষ স্বামী স্বতন্ত্রানন্দ জী সরস্বতী

আর্য সমাজের তেজস্বী এবং বিদ্বান্ সন্যাসী স্বামী স্বতন্ত্রানন্দজীর জন্ম- পৌষ পূর্ণিমা সংবৎ ১৯৩৪ বি. তথা ১৮৭৭ সনের ১১ই জানুযারি, লুধিয়ানা জেলার মোহী গ্রামে এক শিখ পরিবারে হয়। তাঁহার পিতা শ্রীভগবানসিংহ বড়ৌদা রাজ্যে উচ্চ অধিকারী সেনাসদস্য ছিলেন। স্বামীজীর বাল্যনাম কেহরসিংহ। বালক কেহরসিংহজীর প্রারম্ভিক শিক্ষা উর্দু ভাষায় স্বগ্রাম মোহীতেই প্রাপ্ত হন। তৎপশ্চাৎ তিনি এন.ডী. বিক্টর হাইস্কুল জালন্ধর ছাউনিতে প্রবিষ্ট হন। সেখানে পড়ার পর নিজ পিতার নিকট চলে যান। অল্প বয়য়েই স্বামীজীর বিবাহ হয়ে যায় কিন্তু স্বামীজীর বিবাহের কিছুকাল পরেই তিনার পত্নীর দেহান্ত হয়ে যায়। পরন্তু কেহরসিংহজীর মধ্যে ধর্ম, প্রেম, বৈরাগ্য ও ঈশ্বরভক্তি সংস্কার ছিল অতঃ তিনি একদিন গৃহত্যাগ করেন। ১৯৫৭ বি. তিনি ফিরোজপুরের এক গ্রামে স্বামী পূর্ণানন্দজীর নিকট সন্যাস দীক্ষা প্রাপ্ত হন এবং প্রাণপুরী নামে বিখ্যাত হন। 


তখন পর্যন্তও তিনি উদাসী সাধুদের প্রভাবের মধ্যে ছিলেন। সেই সম্প্রদায়েরই বিশনদাস নামে এক সাধু প্রাণপুরীকে অমৃতসর গিয়ে সংস্কৃত অধ্যয়ন করার প্রেরণা দেন। অতঃ তিনি সেখান যান এবং উদাসী বিদ্বান্ সাধু স্বরূপদাসের নিকট ন্যায় এবং বেদান্তদর্শনের অধ্যয়ন করেন। রায়কোটের এক হাকীম আব্দুল হকের নিকট ইউনানী চিকিৎসা বিষয়েও অধ্যয়ন করেন, কালান্তরে তিনি আয়ুর্বেদের শিক্ষাও প্রাপ্ত করেন। তদন্তর তিনি ঘুরতে-ঘুরতে কুরুক্ষেত্রে পৌঁছেন। তিনি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাধুদের সহিত দেশের বিবিধ স্থানে ভ্রমণ করেন।


১৯৬৩ বি. তিনি প্রয়াগের কুম্ভমেলায় যান। সেখান থেকে ফেরার সময় দিল্লির ঐতিহাসিক স্থানেও ভ্রমণ করেন। পণ্ডিত বিশনদাস জীই প্রাণপুরীজীকে আর্য সমাজের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে পরিচিত করান। তৎপশ্চাৎ তিনি আর্য সমাজের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং স্বামী স্বতন্ত্রানন্দ নাম ধারণ করেন। সর্বপ্রথম তিনি ভটিণ্ডা জেলার রামাং মণ্ডী নামক স্থানে থেকে আর্যসমাজী বিদ্বানের গ্রন্থাদি অধ্যয়ন করেন। তখন আর্যসমাজের ধর্ম প্রচারার্থেও যোগদান করতেন। সংবৎ ১৯৬৭ বি. স্বামীজীর মহাশয় কৃষ্ণজীর সহিত পরিচয় হয়, কৃষ্ণজীর প্রেরণায় আর্য প্রতিনিধি সভা পাঞ্জাবে থেকে ধর্ম প্রচার শুরু করেন।


১৯০১ সনে স্বামীজী প্রথমবার বিদেশ যাত্রা করেন, কোলকাতা হইতে পেনাং দ্বীপ দিয়ে মলায়া (বর্তমান মালেশিয়া) যান। পুনঃ লঙ্কা, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন হয়ে হংকং যান, এবং সিঙ্গাপুর হয়ে ভারতে ফিরে আসেন। এর পরেও তিনি একাধিকার বিদেশে গিয়েছিলেন। ১৯১৪ সনে তিনি মরিশাস গিয়েছেন, ১৯২০ সনে ব্রহ্মদেশ যান এবং ১৯২১ সনে ব্রিটিশ পূর্ব আফ্রিকা ভ্রমণ করেন। 


১৯৮১ বি. যখন মথুরায় স্বামী দয়ানন্দজীর জন্ম শতাব্দী পালন করা হয়েছে এবং তাতে স্বীকৃত প্রস্তাব অনুসারে, আর্যপ্রতিনিধি সভা পাঞ্জাব, দয়ানন্দ উপদেশক বিদ্যালয়ের স্থাপনার নিশ্চয় করা হয় তখন স্বামীজীকে এর আচার্য করা হয়। ১০ বছর পর্যন্ত তিনি এই পদে কার্য্য করেন। এর মধ্যে তিনি আর্যপ্রতিনিধি সভা পাঞ্জাবের, বেদ প্রচার বিভাগের অধিষ্ঠাতাও ছিলেন। স্বামীজীর আচার্য্যকালে এই বিদ্যালয় হইতে উচ্চকোটির স্নাতক হয়েছেন অনেকেই, যারা ধর্মপ্রচার ক্ষেত্রে উল্লেখনীয় কার্য্য করেছেন। বিদ্যালয়ের আচার্য পদ ছাড়ার পর তিনি গুরদাসপুর জেলার দীনানগরে দয়ানন্দ মঠের স্থাপনা করেন। ১৯৩৯ সনে যখন সনাতনীদের নিজ ধার্মিক অধিকার রক্ষার জন্য হায়দ্রাবাদে আর্য সমাজ সত্যাগ্রহ করে তখন স্বামীজীকেও তাহার নেতৃত্ব করার দায়িত্ব দেওয়া হয়, তিনি সেই সত্যাগ্রহে আর্য সমাজের সুগ্রীব কমাণ্ডার (সর্বোচ্চ সেনাপতি) রূপে সত্যাগ্রহ সঞ্চালন করেন। যখন লোহারুর নবাব নিজ রাজ্যে আর্য সমাজের ধর্ম প্রচারের উপর নানাপ্রকার প্রতিবন্ধ লাগিয়েছিলেন তখন স্বামীজী সেখানে গিয়ে নবাবের ক্রুর প্রতিবন্ধাত্মক আদেশর ঘোড় বিরোধ করেন। আর্য সমাজের জুলুসের নেতৃত্ব করার সময় তিনি হিংসার শিকার হন এবং ঘাতকের প্রহার সহ্য করতে হয়। অহিংসক সন্যাসী স্বামীজী অহিংসার সহিত সেই প্রাণাতঙ্ক প্রহার সহ্য করেও কার্য্যক্রম করেছেন।


১৯৪২ সনের আন্দোলনের সময় স্বামীজীকে গ্রেপ্তার করে লাহোরের এক কেল্লায় বন্ধী করে রাখা হয়। দেশ স্বতন্ত্র হওয়ার পর স্বামীজী আর্য সমাজের সর্ববিধ নেতৃত্ব করেন। যখন আর্য সমাজ দ্বারা গোরক্ষা আন্দোলন করা হয় তখন স্বামীজীই তার  সঞ্চালক হন। এই আন্দোলনকে উত্তমপ্রকারে পরিচালনার জন্য তিনি গম্ভীরতাপূর্বক বিচার করার সাথে সাথে গো হত্যার প্রতিরুদ্ধ বা নিষেধাজ্ঞা জারী করার জন্য বিভিন্ন রাজ্য সরকারের নিকট পত্রের মাধ্যমে সংবাদ আদানপ্রদান করছিলেন। এর মধ্যেই তিনি ক্যান্সারগ্রন্থ হয়ে যান। ফলতঃ চৈত্র শুক্লা ১১ সংবৎ ২০১২ বি. তথা ৩ এপ্রিল ১৯৫৫ সনে মুম্বইতে স্বামীজীর দেহান্ত হয়ে যায়। স্বামী স্বতন্ত্রানন্দজী বহু ভাষাবিদ্ ছিলেন। তিনি হিন্দী ও পাঞ্জাবী ভাষায় অনেক গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন।



লে. কা. – 

১.আর্য সিদ্ধান্ত তথা সিখ গুরু (হিন্দী তথা পাঞ্জাবি) 

২.সিখ ঔর যজ্ঞোপবীত

৩.সিখ ঔর গৌ ( পাঞ্জাবি সংস্করণের নাম 'সিখ অতে গঊ')  

৪.বেদ কী ইয়ত্তা অর্থাৎ মন্ত্রসংখ্যা (বেদ মন্ত্রের গণনা সম্বন্ধিত)

৫.আর্যসমাজ কে মহাধন (আর্য সমাজী শহীদদের জীবনবৃত্ত)

৬.মাংস মদিরা নিষেধ


অপ্রকাশিত গ্রন্থ – 

১.চিনগারিয়াঁ (আর্য সমাজের ত্যাগী তপস্বীদের জীবন রেখা)

২.ঋষিবার্তা (পাঞ্জাবি)

৩.মহর্ষি জীবন চরিত (অপূর্ণ)

....... স্বামীজীর প্রায় ১৭টি লঘু গ্রন্থ অপ্রকাশিত কিন্তু সুরক্ষিত আছে

         ©️আর্য প্রতিনিধি সভা বাংলাদেশ

Post a Comment

0Comments

Please Select Embedded Mode To show the Comment System.*