জন্মদিবস পালন করার বৈদিক রীতি

প্রিয়রত্ন বিদ্যার্থী
0

জন্মদিবস পালন করার বৈদিক রীতি

পাশ্চাত্য কালচার অনুসারে মোমবাতি  জ্বালিয়ে তৎপশ্চাৎ তা ফু দিয়ে নিভিয়ে এবং কেক কাটার মাধ্যমে জন্মদিবস পালন করা অনার্য রীতি। আর্যদের রীতি "তমসো মা জ্যোতির্গময়" অর্থাৎ অন্ধকার হইতে প্রকাশের দিকে যাওয়া, অগ্নি নিভিয়ে দেওয়া নয় – "সূর্যমগন্ম জ্যোতিরুত্তমম্"। অতঃ উচিৎ যে যদি সামর্থ্য হয় তো জন্মদিবসের দিন যজ্ঞবেদির নিকট ঘৃতদীপ প্রজ্বলিত করবে।


এরূপ যদি পরিপক্ব বয়সী কেহ নিজ জন্মদিবস পালন করতে চায়, তাহলে সেইদিন সে বিগত জীবনকাল দৃষ্টিপাত করে, নিজ গুণ-অবগুণ ও উপলব্ধি-অনুপলব্ধি [হানি-লাভ] নিয়ে মনন-চিন্তন করবে এবং ভবিষ্যতে অভ্যুদয় প্রাপ্তির জন্য সংকল্প করে, উন্নায়ক পরমাত্মার নিকট 'শ্রদ্ধা, মেধা, যশ, প্রজ্ঞা, শ্রীঃ, আয়ু এবং বল' প্রাপ্তির প্রার্থনা করবে। এর দ্বারা  বৈয়ক্তিক জীবন নতুন উৎসাহে পুরিত হবে এবং সামাজিক জীবনেও পারস্পরিক-সম্বন্ধ মধুর হবে।


যেইদিন সন্তানের বা নিজের জন্ম হয়েছিলো, সেইদিন সন্তানের পিতা যজ্ঞ বেদীতে পূর্বাভিমুখী বসে ডানপাশে পত্নীকে বসিয়ে, পত্নীর দক্ষিণে সন্তানকে বসাবে। নিজ জন্মদিবস হলেও পত্নীকে দক্ষিণে উপবেশন করিবে। বৃহৎ যজ্ঞের সমস্ত ক্রিয়া করে (পূর্ণাহুতি প্রকরণ ব্যতীত) তারপর এই মন্ত্র দ্বারা প্রথমে পরমেশ্বরের উপস্থান করবে।


ও৩ম্ উপ প্রিয়ং পনিপ্নতং যুবানমাহুতীবৃধম্। 

অগন্ম বিভ্রতো নমো দীর্ঘমায়ুঃ কৃণোতু মে॥ (অথর্ববেদ-৭/৩২/১)


ও৩ম্ বিশ্বে মে দে॒বাঃ শান্তিঃ সর্বে মে দেবাঃ শান্তিঃ॥ (অথর্ববেদ-১৯/৯/১৪)


ও৩ম্ সং মায়মগ্নিঃ সিঞ্চতু প্রজয়া চ ধনেন চ দীর্ঘমায়ুঃ কৃণোতু মে॥ (অথর্ববেদ-৭/৩৩/১)

                       মুখ্য হোম মন্ত্রাঃ

তৎপশ্চাৎ নিম্ন মন্ত্র দ্বারা ঘৃত ও হবন সামগ্রী আহুতি দিবে–


ও৩ম্ আ নো ভদ্রাঃ ক্রতবো যন্তু বিশ্বতোঽদব্ধাসোঽঅপরীতাসঽউদ্ভিদঃ। দেবা নো যথা সদমিদ্বৃধেঽঅসন্নপ্রায়ুবো রক্ষিতারো দিবেদিবে স্বাহা ॥ (যজুর্বেদ-২৫/১৪)


ও৩ম্ দেবানাম্ভদ্রা সুমতিরৃজূয়তাং দেবানাᳬं রাতিরভি নো নি বর্ততাম্ । দেবানাᳬं সখ্যমুপসেদিমা বয়ন্দেবা নঽআয়ুঃ প্রতিরন্তু জীবসে স্বাহা॥ (যজুর্বেদ-২৫/১৫)


ও৩ম্ ভদ্রঙ্কর্ণেভিঃ শৃণুয়াম দেবা ভদ্রম্পশ্যেমাক্ষভির্যজত্রাঃ । স্থিরৈরঙ্গৈস্তুষ্টুবাᳬंসস্তনূভির্ব্যশেমহি দেবহিতঁয়দায়ুঃ স্বাহা॥(যজুর্বেদ-২৫/২১)


ও৩ম্ তচ্চক্ষুর্দেবহিতম্পুরস্তাচ্ছুক্রমুচ্চরৎ । পশ্যেম শরদঃ শতঞ্জীবেম শরদঃ শতঁ শৃণুয়াম শরদঃ শতম্প্র ব্রবাম শরদঃ শতমদীনাঃ স্যাম শরদঃ শতম্ভূয়শ্চ শরদঃ শতাৎ স্বাহা॥(যজুর্বেদ-৩৬/২৪)


তৎপশ্চাৎ অগ্নি, বায়ু, আদিত্য চন্দ্রমা ও বিশ্বেদেবা নামে স্থালীপাক আহুতি দিবে –


ও৩ম্ অগ্নঽআয়ূᳬंষি পবস্বঽআ সুবোর্জমিষঞ্চ নঃ । 

আরে বাধস্ব দুচ্ছুনাম্ স্বাহা॥ (যজুর্বেদ-৩৫/১৬)


ও৩ম্ আয়ুষ্মানগ্নে হবিষা বৃধানো ঘৃতপ্রতীকো ঘৃতয়োনিরেধি । ঘৃতম্পীত্বা মধু চারু গব্যম্পিতেব পুত্রমভিরক্ষতাদিমান্ৎস্বাহা ॥ (যজুর্বেদ-৩৫/১৭)


ও৩ম্ নবোনবো ভবসি জায়মানোঽহ্নাং কেতুরুষসামেষ্যগ্রম্। ভাগং দেবেভ্যো বি দধাস্যায়ন্প্র চন্দ্রমস্তিরসে দীর্ঘমায়ুঃ স্বাহা॥ (অথর্ববেদ-৭/৮১/২)


ও৩ম্ বাত আ বাতু ভেষজং শম্ভু ময়োভু নো হৃদে। 

প্র ণ আয়ূংষি তারিষৎ স্বাহা ॥ (ঋগ্বেদ-১০/১৮৬/১)


ও৩ম্ উত বাত পিতাসি ন উত ভ্রাতোত ন: সখা । স নো জীবাতবে কৃধি স্বাহা॥ (ঋগ্বেদ-১০/১৮৬/২)


ও৩ম্ আয়ুরস্মৈ ধেহি জাতবেদঃ প্রজাং ত্বষ্টরধিনিধেহ্যস্মৈ। রায়স্পোষং সবিতরা সুবাস্মৈ শতং জীবাতি শরদস্তবায়ম্ স্বাহা॥ (অথর্ববেদ-২/২৯/২) 


ও৩ম্ সবিতা পশ্চাতাৎসবিতা পুরস্তাৎসবিতোত্তরাত্তাৎসবিতাধরাত্তাৎ । সবিতা ন: সুবতু সর্বতাতিং সবিতা নো রাসতাং দীর্ঘমায়ু: স্বাহা॥ (ঋগ্বেদ-১০/৩৬/১৪)


যদি বালক/বালিকার জন্ম তিথি নক্ষত্র জানা থাকে তাহলে তিথি ও তিথির দেবতার জন্য, নক্ষত্র ও নক্ষত্রের দেবতার জন্য  চারবার ঘৃত আহুতি দিবে। তিথি নক্ষত্রের দেবতা জানার জন্য সংস্কারবিধি 'নামকরণ সংস্কার' দেখতে পারেন। 


তৎপশ্চাৎ ঘৃত বা শাকল্য আহুতি দিবে –

ও৩ম্ ত্র্যায়ুষঞ্জমদগ্নেঃ কশ্যপস্য ত্র্যায়ুষম্ । 

যদ্দেবেষু ত্র্যায়ুষন্তন্নো অস্তু ত্র্যায়ুষম্ স্বাহা ॥ (যজুর্বেদ-৩/৬২)


ও৩ম্ ত্র্যায়ুষং জমদগ্নেঃ কশ্যপস্য ত্র্যায়ুষম্। 

ত্রেধামৃতস্য চক্ষণং ত্রীণ্যায়ূংষি তেঽকরম্ স্বাহা॥ (অথর্ববেদ-৫/২৮/৭)


ও৩ম্ সং মা সিঞ্চন্তু মরুতঃ সং পূষ সং বৃহস্পতিঃ। 

সং মায়মগ্নিঃ সিঞ্চতু প্রজয়া চ ধনেন চ দীর্ঘমায়ুঃ কৃণোতু মে স্বাহা॥ (অথর্ববেদ-৭/৩৩/১)


ও৩ম্ সং মা সিঞ্চন্ত্বাদিত্যাঃ সং মা সিঞ্চন্ত্বগ্নয়ঃ। ইন্দ্র সমস্মান্ সিঞ্চতু প্রজয়া চ ধনেন চ দীর্ঘমায়ুঃ কৃণোতু মে স্বাহা॥


ও৩ম্ সং মা সিঞ্চন্ত্বরুষঃ সমর্কা ঋষয়শ্চ যে। পূষা সমস্মান্ সিঞ্চতু প্রজয়া ধনেন চ দীর্ঘমায়ুঃ কৃণোতু মে স্বাহা ॥


ও৩ম্ সং মা সিঞ্চতু পৃথিবী সং মা সিঞ্চন্তু যা দিশঃ। অন্তরিক্ষং সমস্মান্ সিঞ্চতু প্রজয়া চ ধনেন চ দীর্ঘমায়ুঃ কৃণোতু মে স্বাহা॥


ও৩ম্ সং মা সিঞ্চন্তু প্রদিশঃ সং মা সিঞ্চন্তু যা দিশঃ। আশাঃ সমস্মান্ সিঞ্চন্তু প্রজয়া চ ধনেন চ দীর্ঘমায়ুঃ কৃণোতু মে স্বাহা॥


ও৩ম্ সং মা সিঞ্চন্তু কৃষ্টয়ঃ সং মা সিঞ্চন্ত্বোষধীঃ । সোম সমস্মান্ সিঞ্চন্তু প্রজয়াচ ধনেন চ দীর্ঘমায়ুঃ কৃণোতু মে স্বাহা॥


ও৩ম্ সং মা সিঞ্চন্তু নদ্যঃ সং মা সিঞ্চন্তু সিন্ধবঃ। সমুদ্র সমস্মান্ সিঞ্চন্তু প্রজয়া চ ধনেন চ দীর্ঘমায়ুঃ কৃণোতু মে স্বাহা॥


ও৩ম্ সং মা সিঞ্চন্ত্বাপঃ সং মা সিঞ্চন্তু কৃষ্টয়ঃ। সত্যং সমস্মান সিঞ্চতু প্রজয়া চ ধনেন চ দীর্ঘমায়ুঃ কৃণোতু মে স্বাহা ॥

– পৈপ্পলাদশাখা০ ৬/১৮/২, ৩, ৫-৯


এরপর পূর্ণাহুতি প্রকরণ পূর্ণ করে মহাবামদেব্য গান করিবে।


বালক/বালিকাকে আশীর্বাদ 

তৎপশ্চাৎ ঋত্বিগ্ কে দক্ষিণা দিয়ে, কার্যার্থে আগত মনুষ্যদের যথাযোগ্য আদর-সৎকার করে বিদায় দিবে। সকলে যাওয়ার সময় নিম্ন মন্ত্র দ্বারা শুভাশীর্বাদ করবে–


ও৩ম্ শতং জীব শরদো বর্ধমানঃ শতং হেমন্তাঞ্ছতমু বসন্তান্ । শতমিন্দ্রাগ্নী সবিতা বৃহস্পতি: শতায়ুষা হবিষেমং পুনর্দুঃ ॥ (ঋগ্বেদ-১০/১৬১/৪)


ও৩ম্ সাগ্রং বর্ষশতং জীব পিব খাদ চ মোদ চ। 

আয়ুর্বলং যশঃ প্রজ্ঞাং প্রাপ্নুয়াঃ শুভসম্পদাম্ ॥২॥

ও৩ম্ এহ্যাশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতু তে তনূঃ।

কৃণ্বন্তু বিশ্বে দেবা আয়ুষ্টে শরদঃ শতম্ ॥৩॥


অথবা –

“হে বালক (নাম) ! ত্বমায়ুষ্মান্ বর্চ্চস্বী তেজস্বী, প্রতাপী, পুরুষার্থী,পরোপকারী, শ্ৰীমান্ সুনামা ভূয়াঃ” 


" হে বালিকা (নাম)! ত্বম্ আয়ুষ্মতী, বর্চস্বিনী, তেজস্বিনী, ধর্মশীলা, পুরুষার্থিনী, প্রতাপী, পরোপকারিণী, শ্রীমতী, সুনাম্নী ভূয়াঃ"


                    প্রৌঢ়দের প্রার্থনা 

তৎপশ্চাৎ যজমান নিম্ন মন্ত্র দ্বারা হাত জোর করে পরমাত্মার উপস্থান করবে–


ও৩ম্ জাতবেদো যশোঽস্মাসু ধেহি প্রজাভিরগ্নে অমৃতবমশ্যাঃ । যস্মৈ ত্বং সুকৃতে জাতবেদ উ লোকমগ্নে কৃণ্বঃ স্যোনম্ ॥ 


ও৩ম্ ইন্দ্র শ্রেষ্ঠানি দ্রবিণানি ধেহি চিত্তিং দক্ষস্য সুভগত্বমস্মে। 

পোষং রয়ীণামরিষ্টিং তনূনাং স্বাদ্মানং বাচঃ সুদিনত্বমহ্নাম্॥ (ঋগ্বেদ- ২/২১/৬)


    প্রৌঢ় ব্যক্তিদের জন্য শুভকামনা 

ও৩ম্ সাস্ত্বাগ্নঽঋতবো বর্ধয়ন্তু সঁবৎসরাঽঋষয়ো যানি সত্যা । 

সন্দিব্যেন দীদিহি রোচনেন বিশ্বাঽআভাহি প্রদিশশ্চতস্রঃ ॥ (যজুর্বেদ-২৩/১)


ও৩ম্ শতং জীব শরদো বর্ধমানঃ শতং হেমন্তান্ছতমু বসন্তান্। 

শতং ত ইন্দ্রো অগ্নিঃ সবিতা বৃহস্পতিঃ শতায়ুষা হবিষাহার্ষমেনম্ ॥ (অথর্ববেদ-৩/১১/৪)


                                 সমাপ্ত


©️আর্য প্রতিনিধি সভা বাংলাদেশ

Post a Comment

0Comments

Please Select Embedded Mode To show the Comment System.*