নিয়োগ বিধির ভ্রান্তিনিবারণ

0

 --নিয়োগ বিধির ভ্রান্তিনিবারণ--




কর্মকে তিন ভাগে বিভক্ত করলে, যা হয় তাহলো -
১. 'ধর্ম' = সেই কর্মের নাম 'ধর্ম' যা করলে পূণ্য হয় আর না করলে পাপ হয়।
২. 'অধর্ম' = সেই কর্মকে 'অধর্ম' বলা হয় যা করলে পাপ হয়, না করলে পূণ্য হয়।
৩. 'আপদ্ধর্ম' = যে কর্ম করলে পাপ কিংবা পূণ্য কিছুই হয়না তাকে আপদ্ধর্ম বলা হয়।
যেমন-
১. সন্ধ্যা, অগ্নিহোত্র আদি পঞ্চ যজ্ঞ করা ধর্ম।
২.মদ্যপান, পশু হত্যা, চোরি ডাকাতি করা অধর্ম।
৩.ব্যাধির চিকিৎসা, প্রাণ রক্ষার্থে যুদ্ধ, নিযোগ (নিয়োগ) আদি আপদ্ধর্ম।
❏ সংস্কৃত 'য' শব্দটি 'য়' এর ন্যায় উচ্চারণ করা হয় = সেই অনুযায়ী নিযোগ এর উচ্চারণ নিয়োগ এর ন্যায় হয়।
'নিযোগ' শব্দটি 'নি' উপসর্গ এবং 'যোগ' শব্দ মিলে নিযোগ শব্দটি হয়েছে। উপসর্গ অনেকার্থ হওয়ায় 'নি' এখানে বিশিষ্ট অর্থবাচী; 'যোগ' শব্দের অর্থ সংযোগ, সম্বন্ধ অথবা মিলিত হওয়া। এর দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে নিযোগ শব্দের অর্থ বিশেষ প্রকার সম্বন্ধ, বিশেষ প্রকার সংযোগ অথবা বিশেষ প্রকার মিলন। অর্থাৎ বিবাহের অনন্তর আপৎকাল অবস্থায় বিধবা, অথবা স্বামীর নপুংসকতা আদি সমস্যা হলে, বিশেষ প্রকার সন্তানার্থের জন্য, নিয়মানুসারে, বেদানুকূল যে সংযোগ বা সম্বন্ধ হয় তাহাই 'নিযোগ' শব্দের অভিপ্রায়।
❏ যেমন- কোন বই পূর্ণ রচনার পশ্চাৎ কোন ত্রুটি পতীত হলে পুস্তক নষ্ট করা হয়না, কিন্তু পুস্তকটিকে উপযোগী বানানোর জন্য একটি পরিশিষ্ট ভাগ যুক্ত করার নিয়ম রয়েছে, তেমনই পূর্ণ রীতিতে বিবাহ সমাপ্ত হওয়ার পর যদি স্বামীর মৃত্যু অথবা স্বামীর নপুংসকতা আদি ত্রুটি পতিত হয়, সেজন্যই 'নিযোগ' রূপী পরিশিষ্ট ভাগ রাখা হয়েছে। যেমন ইহা আবশ্যতা নেই যে প্রত্যেক পুস্তকেই পরিশিষ্ট ভাগ যুক্ত করতেই হবে, পরন্তু আবশ্যকতা হলে যুক্ত করা খারাপ বা অন্যায় নয়,বহু সমস্যার সমাধানও হয় ; তেমনই ইহা আবশ্যক নয় যে প্রত্যেক বিবাহিত স্ত্রীকে পরিশিষ্ট ভাগ রূপ বিশেষ সম্বন্ধ 'নিয়োগ' বিধি করতে হবে। পরন্তু আবশ্যকতা হলেও 'নিযোগ' দ্বারা সন্তান লাভ করলে কোন খারাপ বা অন্যায় নয়। আবার অনেক সমস্যার সমাধানও হয়।
❏ বিবাহ পশ্চাৎ যদি স্বামীর নপুংসকতা আদি সমস্যা হয় অথবা সন্তানাদি প্রাপ্ত হওয়ার পূর্বেই স্বামীর মৃত্যু হয়, ইহার কারণে যদি আপৎকাল উপস্থিত হয় তাহলে স্ত্রী যদি স্বামীর উত্তরাধিকারী হিসেবে কাউকে চায় অথবা সন্তানলাভ করতে চায় তাহলে কাউকে পালক নিতে পারে অথবা অভিবাবক আদি গুরুজনদের আজ্ঞা ও মত নিয়ে নিয়োগ দ্বারা সন্তান লাভ করতে পারবে।

নিয়োগ সম্পর্কে মনুস্মৃতিতে বলা হয়েছে -

দেবরাদ্বা সপিণ্ডাদ্বা স্ত্রিয়া সম্যক নিযুক্তয়া।
প্রজেপ্সিতাধিগন্তব্যা সন্তানস্য পরিক্ষয়ে।। (৯/৫৯)
অনুবাদঃ- পতি দ্বারা সন্তান উৎপন্ন না হলে অথবা অন্য কোন প্রকারে সন্তানের অভাবে, সন্তান লাভের ইচ্ছা হলে, স্ত্রী উচিৎ নিযোগ বিধি দ্বারা [পরিবার এবং সমাজে বিবাহবৎ প্রসিদ্ধিপূর্বক] দেবর - অন্য সপিণ্ড দ্বারা যথেষ্ট সন্তান প্রাপ্ত হও।
❏ বাংলা ভাষায় দেবর বলতে আমরা কেবল স্বামীর কনিষ্ঠ ভ্রাতাকেই বুঝে থাকি কিন্তু শ্লোকে বাংলা ভাষা ব্যাবহার হয়নি, ব্যাবহার হয়েছে সংস্কৃত ভাষা। সংস্কৃত ভাষায় 'দেবর' শব্দের কি অর্থ হয়? নিরুক্ততে বলা হয়েছে যে -
দেবরঃ কস্মাদ্ দ্বিতীয়ো বর উচ্যতে। (নিরুক্ত-৩/১৫)
অর্থাৎ দেবর তাকে বলা হয়, যে (বিধবার) দ্বিতীয় পতি হয়, সে হোক ছোট ভাই কিংবা বড় ভাই, অথবা নিজ বর্ণ বা নিজ থেকে উত্তম বর্ণের হোক, যার দ্বারা নিযোগ করা হবে সেই দেবর।
❏ কিন্তু আপৎকাল এবং খুব প্রয়োজন না হলে নিযোগ বিধি দ্বারাও এক ভাই অন্য ভাইয়ের স্ত্রীগমন করলে তারা পাপী বলিয়া গণ্য হবে এবং পতিত হবে।
মনুস্মৃতিতে যেরূপ বলা হয়েছে -
জ্যেষ্ঠো যবীয়সো ভার্য্যাং যবীয়ান্ বাগ্রজস্ত্রিয়ম্।
পতিতৌ ভবতো গত্বা নিযুক্তাবপ্যনাপদি।। (৯/৫৮)
অনুবাদঃ- জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা কনিষ্ঠ ভ্রাতার স্ত্রীর সহিত এবং কনিষ্ঠ ভ্রাতা জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার স্ত্রীর সহিত আপৎকাল ব্যতীত যদি নিযোগ বিধি দ্বারাও গমন করে তাহলে পতিত হবে। [+লিখার শেষ অংশে]
❏ নিযোগ বিধি কেবল আপৎকালে সন্তান লাভের বিধি ব্যাবস্থা সুতরাং গর্ভধারণ হয়ে গেলে আর গমন করা নিষিদ্ধ। যদি সেই নিষিদ্ধতা অমান্য করেও গমন করে তাহলে সে পাপী বলিয়া গণ্য হবে। মনুস্মৃতিতে যেরূপ বলা হয়ে -
নিযুক্তৌ যৌ বিধিং হিত্বা বর্ত্তেয়াতাস্ত কামতঃ।
তাবুভৌ পতিতৌ স্ঠাতাং স্নূ ষাগ-গুরুতল্পগৌ।। (৯/৬৩)
অনুবাদঃ- নিযোগের জন্য নিযুক্ত ব্যক্তি যদি নিযোগের বিধি=ব্যাবস্থা [সমাজ বা পরিবারে করা পূর্ব নির্ধারিত ব্যাবস্থা] কে অমান্য করে, কামবশত সঙ্গম করে তাহলে সেই দুজনকে পুত্রবধূগমন এবং গুরুপত্নীগমনের অপরাধী মানা হয়। [+লিখার শেষ অংশে]
❏ পূর্বেই বলা হয়েছে যে -
ভ্রাতুর্জ্যেষ্ঠস্য ভার্য্যা যা গুরুপত্ন্যনুজস্য সা।
যবীয়সস্তু যা ভার্য্যা স্নুষা জ্যেষ্ঠস্য সা স্মৃতা।। (৯/৫৭)
অনুবাদঃ- জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার যে ভার্য্যা হয়, সে কনিষ্ঠ ভ্রাতার গুরুপত্নীর সমান হয়, এবং যে কনিষ্ঠ ভ্রাতার পত্নী হয়, সে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার নিকট পুত্রবধূতুল্যা হয়।
❏ তারপও এও বলা হয়েছে যে -
বিধবায়াং নিযোগার্থে নির্ব্বৃ ত্তে তু যথাবিধি।
গুরুবচ্চ স্ন ষাবচ্চ বর্ত্তেয়াতাং পরস্পরম্।। (৯/৬২)
অনুবাদঃ- বিধি অনুসারে নিয়োগের উদ্দেশ্য (গর্ভধারণ) পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর পুণরায় জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার পত্নী কনিষ্ঠ ভ্রাতার গুরুপত্নী, এবং কনিষ্ঠ ভ্রাতার পত্নী জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার নিকট পুত্রবধূতুল্যা।
❏ বেদে কি নিয়োগ বিষয়ে কিছু বলা হয়েছে?
হ্যাঁ বলা হয়েছে। মহর্ষি মনু বেদের বিধান উল্লঙ্ঘন করে যুক্তিবিরুদ্ধ, পাপযুক্ত কোন বিধান দেননি।
[বর্তমানে বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি ব্যাতীত অন্য সকল মনুস্মৃতিতে অনেকাংশই প্রক্ষিপ্ত যা মনুস্মৃতিতে পরবর্তীতে কেহ যুক্ত করেছে নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য। বিশুদ্ধ মনুস্মৃতিতে কোন শ্লোকটি কেন প্রক্ষিপ্ত তা তুলে ধরা হয়েছে।]
বেদে নিযোগ বিষয়ে বলা হয়েছে যে -
কুহ স্বিদ্ দোষা কুহ বস্তোরশ্বিনা কুহাভিপিত্বং করতঃ কুহোষতুঃ।
কো বাং শয়ুত্রা বিধবেব দেবরং মর্যং যোষা কৃণুতে সধস্থ আ।। (ঋগ্বেদ-১০/৪০/২)

পদার্থ: (অশ্বিনা) হে বিবাহিত স্ত্রী-পুরুষ! তোমরা দুজন (কুহ দোষা) কোন স্থানে রাত্রিতে (কুহ বস্তো) আর কোন স্থানে দিনে (কুহ অভিপিত্বং করতঃ) কোথায় ভোজনাদির অভিপ্রাপ্তি কর (কুহ ঊষতুঃ) কোথায় নিবাস কর (বাং শয়ুত্রা কঃ) তোমাদের দুজনের শয়নাশ্রম কেমন (বিধবা ইব দেবরম্) যেরূপ বিধবা এবং দেবরের নিযোগ পশ্চাৎ ব্যাবহার হয় (মর্যং যোষা সধস্থ কৃণুতে) যেরূপভাবে বরের প্রতি বধূ সহস্থান বানায়, তেমনই বিবাহিত স্ত্রী-পুরুষ! তোমাদের ব্যাবহার হোক।

ভাবার্থ: গৃহস্থ স্ত্রী-পুরুষ [স্বামী-স্ত্রী] সদা প্রেমের সহিত থাকা উচিৎ। যেরূপ বিবাহ কালে বর-বধূ স্নেহ করে সেইরূপ স্নেহময় হওয়া উচিৎ। কদাচিৎ মৃত্যু আদি কারণ বশত যদি দুজনের বিয়োগ হয়ে যায় তাহলে সন্তান লাভের ইচ্ছা হলে নিযোগ দ্বারা সন্তানলাভ করতে পারবে।

❏ তবে স্বামীর মৃত্যু ব্যতীত নপুংসকতা আদি দোষযুক্ত হলে। অর্থাৎ স্বামীর জীবিত থেকে সন্তান উৎপন্ন করতে অসক্ষম হলে- স্ত্রী যদি নিযোগ দ্বারা সন্তান লাভ করতে চায় তাহলে, স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। বেদে যেরূপ বলা হয়েছে -
অন্যমিচ্ছস্ব সুভগে পতিং মত্।। (ঋগ্বেদ-১০/১০/১০)
অর্থাৎ যখন স্বামী- সন্তান উৎপন্ন করতে ব্যার্থ হবে তখন নিজ স্ত্রীকে আজ্ঞা দিবে যে, হে সুভগে! সৌভাগ্যের ইচ্ছাকারী স্ত্রী তুমি (মত্) আমা হইতে (অন্যম্) অন্য পতির (ইচ্ছস্ব) ইচ্ছা করো, কেননা আমার দ্বারা সন্তান উৎপন্ন হবে না।
পূর্বেই বলা হয়েছে যে অভিভাবক আদি গুরুজনদের আজ্ঞা নিয়ে বিবাহবৎ প্রসিদ্ধিপূর্বক নিযোগ করতে হবে। স্বয়ং স্ত্রীর ইচ্ছা থাকতে হবে, যেরূপ ইচ্ছা থাকা আবশ্যক বিয়ে করার সময়।
মনুস্মৃতি-৯/৫৮ এবং ৯/৬৩ শ্লোকে বলা হয়েছে যে, আপৎকাল ব্যাতীত যদি নিযোগ করে তাহলে পতিত হয় এবং নিযোগ বিধির উল্লঙ্ঘন করিয়া কামবশত মিলিত হলে পতিত হয়। কেন পতিত হয়? কারণ তাহা করলে পাপ হয়। কিরকম পাপ হয়? ব্যাভিচারের ন্যায় পাপ হয়। ব্যাভিচারের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুদণ্ডের বিধান। যেরূপ বিধান রয়েছে -
❏ দম্ভক পূর্বক ব্যভিচারে প্রবৃত্ত হলে স্ত্রী (নারীদের) দণ্ডঃ—
ভর্তারং লঙ্ঘয়েদ্যা তু স্ত্রী জ্ঞাতিগুণদর্পিতা।
তাং শ্বভিঃ খাদয়েদ্রাজা সংস্থানে বহুসংস্থিতে।।
(বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি-৮/৩৭১)
পদার্থঃ- (যা তু স্ত্রী) যে স্ত্রী (জ্ঞাতি-গুণ-দর্পিতা) নিজ জাতি, গুণ কে, দাম্ভিকতা করে (ভর্তারং লঙ্ঘয়েত্) পতি কে ছেড়ে ব্যভিচার করে (তাম) তাকে (বহুসংস্থিতে সংস্থানে শ্বভিঃ রাজা খাদয়েত্) বহু স্ত্রী এবং পুরুষদের সামনে রাজা সেই ব্যভিচারিকে বিজয়ী কুকুরের কামড়ের দ্বারা হত্যা করবে।
অনুবাদঃ- যে স্ত্রী নিজ জাতি, গুণ কে, দাম্ভিকতা করে পতি কে ছেড়ে ব্যভিচার করে তাকে বহু স্ত্রী এবং পুরুষদের সামনে রাজা সেই ব্যভিচারিকে বিজয়ী (বলিষ্ঠ) কুকুরের কামড়ের দ্বারা হত্যা করবে।
❏ দম্ভক পূর্বক ব্যভিচারে প্রবৃত্ত হলে পুরুষদের দণ্ডঃ—
পুমাংসং দাহয়েৎ পাপং শয়নে তপ্ত আয়সে।
অভ্যাদধ্যুশ্চ কাষ্ঠানি তত্র দহ্যেত পাপকৃত্।।
(বিশুদ্ধ, মনুস্মৃতি- ৮/৩৭২)
পদার্থঃ- (পাপং পুমাংসম্) নিজ স্ত্রীকে ছেড়ে পরস্ত্রী বা বেশ্যাগমন করে সেই পাপী কে (আয়সে তপ্ত শয়নে) উত্তপ্ত লোহার পালঙ্কে শায়িত করে (চ) আর (কাষ্ঠানি অভ্যাদধ্যুঃ) তার উপর লাকড়ি রেখে (তত্র পাপকৃত্ দহ্যেত) বহু পুরুষের সম্মুখে ভস্ম করে দেবে।
অনুবাদঃ- নিজ স্ত্রীকে ছেড়ে পরস্ত্রী বা বেশ্যাগমন করে সেই পাপীকে উত্তপ্ত লোহার পালঙ্কে শায়িত করে আর তার উপর লাকড়ি রেখে বহু পুরুষের সম্মুখে ভস্ম করে দেবে অর্থাৎ অগ্নি দ্বারা পুড়িয়ে মারবে।

বর্তমান সময়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি সাধন হয়েছে ফলে গর্ভধারণের জটিলতা বা Infertility এর সমাধানের বেশকিছু পদ্ধতি প্রচলন হয়েছে। এসব পদ্ধতির মধ্যে GIFT (Gamete intrafallopian transfer), ZIFT (Zygote intrafallopian transfer), Enter IVF (In Vitro Fertilization), ICSI (Intracytoplasmic sperm injection)- বেশ জনপ্রিয় যাকে টেস্টটিউব-বেবি পদ্ধতিও বলে। 

(1) https://www.logintohealth.com/blog/bn/womens-health/ivf-in-vitro-fertilization-in-bengali/ 

(2) https://reuniterx.com/fertility-articles/gift-zift-ivf-icsi-understanding-the-abcs-of- infertility/

পুরুষ কিংবা স্ত্রীর গর্ভধারণ জনিত কোন সমস্যা (Infertility) থাকলে এই সমস্ত পদ্ধতিতে স্ত্রী কিংবা অন্য দাত্রীর ডিম্বাণু ও স্বামী কিংবা অন্য দাতা পুরুষের শুক্রাণু কে কৃত্রিম পদ্ধতিতে ল্যাবরেটরিতে নিষিক্ত করা হয় এবং নিষিক্ত ডিম্বাণু কে নির্দিষ্ট সময় পর স্ত্রী কিংবা অন্য কোন গ্রহীতার (যিনি Infertility জনিত কারণে স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণ করতে পারেন না) জরায়ুতে স্থানান্তর করা হয়। উপরে যে পদ্ধতিগুলোর উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে ICSI এখন পর্যন্ত সর্বাধুনিক ও একমাত্র Direct Approach পদ্ধতি। অর্থাৎ এই পদ্ধতিতে ডিম্বাণু কে সরাসরি বিশেষ ইনজেকশনের মাধ্যমে একটিমাত্র শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত করা হয়। এবং এই একটিমাত্র পদ্ধতিতে Infertile পুরুষও প্রকৃত পিতৃত্বের (Biological Father) স্বাদ উপভোগ করতে পারে। বাকী পদ্ধতিগুলোতে ডিম্বাণু কে ল্যাবরেটরিতে কালচার পাত্রে রেখে বীর্যের মাধ্যমে কিছুটা স্বতঃফূর্তভাবে নিষিক্ত হতে দেওয়া হয়। আর আমরা জানি যে বীর্যের মধ্যে কয়েক মিলিয়ন শুক্রাণু থাকতে পারে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে যদি পুরুষের বীর্যে সমস্যা থাকে অর্থাৎ তার যদি Infertility জনিত কোন সমস্যা থাকে যার জন্য তার বীর্য দ্বারা ডিম্বাণু নিষিক্তকরণ সম্ভব নয় এমন হলে দাতা পুরুষের বীর্য সংগ্রহ করা একমাত্র উপায়। এক্ষণে আপনাদের মনে হয়তো বলিউডের সিনেমা 'Vicky Donor' এর দৃশ্য ভেসে উঠার কথা। এই সিনেমায় আয়ুষ্মান খোরনা অভিনীত "ভিকি" চরিত্রের মত বাস্তবেও বহু sperm donor আছেন। তাছাড়া, একেবারেই বন্ধ্যা পুরুষদের মত যেসকল মহিলাদের ডিম্বাণু উৎপাদন কিংবা গর্ভাশয় জনিত কোন সমস্যা আছে তারা অন্য Donor স্ত্রীলোকের কাছ থেকে Egg সংগ্রহ করে থাকে যাতে করে তারাও মাতৃত্বের স্বাদ থেকে বঞ্চিত না হন। এমনকি সন্তান ধারণ জনিত সমস্যার জন্য অনেকে মাতৃগর্ভ ভাড়াও নিয়ে থাকে। বিশ্বের প্রথম টেস্টটিউব বেবির (IVF পদ্ধতি ব্যবহারে) নাম লুইস ব্রাইনের জন্ম হয় ১৯৭৮ সালে ইংল্যান্ডের ওল্ডহ্যামে। Prof. Robert G Edwards এই গবেষণার নেতৃত্ব দেন এবং ২০১০ সালে তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারে ঘোষিত করা হয়।

[https://en.m.wikipedia.org/wiki/In_vitro_fertilisation

হিমায়তিত ভ্রূণ (Embryo cryopreservation):

গর্ভধারণে অক্ষম দম্পতির সন্তান প্রাপ্তির আরেকটি কৃত্রিম(বিশেষ) উপায় হিমায়িত ভ্রুণ প্রতিস্থাপন। আগের পদ্ধতিগুলোর সাথে এর বিশেষ পার্থক্য হলো এ পদ্ধতিতে গর্ভধারণে অক্ষম দম্পতিকে পুরো IVF এর মত পদ্ধতির মধ্য দিয়ে না গিয়ে আগে থেকে IVF এর মাধ্যমে উৎপাদিত ও বিশেষ উপায়ে হিমায়িত ভ্রুণ অথবা স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণকৃত স্ত্রীর থেকে নিষিক্ত ভ্রুণ সংগ্রহ করে ও হিমায়িত করে সংরক্ষণকৃত ভ্রুণ গ্রহীতার গর্ভাশয়ে প্রতিস্থাপন করা হয় ।ethylene Glycol Freeze Media তে sub-zero তাপমাত্রায় ভ্রুণ সংরক্ষণ করা হয়। বিশ্বে প্রথম সফলভাবে সরাসরি হিমায়িত ভ্রুণ প্রতিস্থাপন করা হয় ২৩জুন ১৯৯৬ সালে কেরালা লাইভস্টক ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের বিজ্ঞানী ড. বিনয় এস ভেট্টিকালের নেতৃত্বে একটি বাছুরের।

[https://en.m.wikipedia.org/wiki/Embryo_cryopreservation

সুতরাং উপরিউক্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিরিখে আমরা বলতে পারি যে এই সকল গর্ভধারণের কৃত্রিম পদ্ধতিকে আধুনিক যুগের নিয়োগ বললে হয়তো কোনো ভুল হবেনা।

লেখস্বত্ত্ব: আর্য প্রতিনিধি সভা বাংলাদেশ



Post a Comment

0Comments

Please Select Embedded Mode To show the Comment System.*