[ঈশ্বর অসংখ্য মনুষ্য সৃষ্টির আদিতে যুবাবস্থায় উৎপন্ন করেন]
উপো রুরুচে যুবতির্ন য়োষা বিশ্ব জীবং প্রসুবংতী চরায়ৈ ।
অভূদগ্নিঃ সমিধে মানুষাণামকজ্যোতির্বাধমানা সমাংসি।।১।। ঋগ্বেদ ৭/৭৭১
পদার্থঃ (তমাংসি) অজ্ঞানরূপ তমকে (বাধমানা) নাশ করিয়া (অগ্নিঃ জ্যোতিঃ) প্রকাশ-স্বরূপ জ্যোতি (মানুষাণাং, সমিধে, অকঃ) মনুষ্যের সম্বন্ধে প্রকট হয়ে যিনিই (প্রসুবংতী) প্রসুতাবস্থাতে (বিশ্বং চরায়ৈ, জীবং) বিশ্বের চরাচর জীবকে (অভূত্) প্রকট করেন, সেই জ্যোতি (উপো) এই সংসারে (য়ুবতিঃ) যুবাবস্থাশীল (রুরুচে)
প্রকাশিত হয় (ন য়োষা) স্ত্রীর সমান নয়।।
ভাবার্থঃ এই মন্ত্রে পরমাত্মার জ্যোতিরূপে বর্ণন করিয়াছেন অর্থাৎ জগজ্জননী জ্যোতিরূপ পরমাত্মা যে জীব-মাত্রের জন্মদাতা। তিনিই সৃষ্টির আদিতে বিশ্বের চরাচর জীবের যুবাবস্থাতে প্রকট করেন, আর সেই পরমাত্মারূপ শক্তিও যুবাবস্থাতে প্রকট হয়, স্ত্রীর সমান নয় [স্ত্রীরা যেভাবে প্রসব করেন, এরূপ ঈশ্বর প্রকট হয় না, যুবকের শক্তির সমান ঈশ্বরের শক্তি প্রকট হইয়াছিল]।।১।।
" শ্রুতি স্মৃতি বিরোধে তু শ্রুতিরেব গরীয়সী "
( জাবাল)
শ্রুতি এবং স্মৃতির মধ্যে যদি কোন বিরোধ হয়, তখন বেদই হবে মান্য।
প্রশ্নঃ মনুষ্য কি সৃষ্টির আদি থেকেই ছিল? বা বানর থেকে মনুষ্য হয়ে যায়?
আমাদের মধ্যে অনেকেই ডারউইনের ক্রমবিকাশ বাদ পড়েছেন। এই ক্রমবিকাশ বাদকে যদি মেনে নেওয়া হয় তবে ঈশ্বরের অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যায়। সাধারণ দৃষ্টিতে তো এটি সত্য বলে মনে হয় কিন্তু গভীরভাবে বিচার করলে এটি একদম অন্তঃসারশূন্য বলে মনে হবে। ক্রমবিকাশবাদ অনুসার জীবনের উৎপত্তি জল থেকে উদ্ভিদ রূপে হয়। প্রথমে জল, মাটি, বায়ু আদির সংযোগ দ্বারা একপ্রকারের শ্যাওলা (অ্যামিবা) উৎপন্ন হয়। সেখান থেকে ঘাস, বিরুধ, লতা, গুল্ম, ওষধি, বনস্পতি, বিভিন্ন প্রকারের বৃক্ষের ক্রমশ বিকাশ হয়। কালান্তরে এই মূল জীব-বীজ থেকে সর্বপ্রথম জলেই এক অন্য জীবনের উৎপত্তি হয়। আরম্ভে অ্যামিবার মতো সূক্ষ্ম জলজন্তু হয়। ধীরে ধীরে জলীয় কিট, মাছ, ব্যাঙ, কচ্ছপ, শুকর, ভালুক, বানর ও বনমানুষ আদি বিভিন্ন প্রাণী স্তরকে পার করে বিকশিত হয়ে মানুষ তৈরি হয়।
ক্রমবিকাশ বাদীদের মান্যতা হল যে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখতে আকৃতি পরিবর্তন করে জীব এক নতুন জাতিকে উৎপন্ন করে। স্বভাব থেকেই জীব বাঁচতে চায়। প্রাণ রক্ষার তাগিদে যে অঙ্গের অভ্যাস হয় তা দৃঢ় হয়ে যায়। আর যার কোনো অভ্যাস হয় না তা দুর্বল হয়ে লুপ্ত হয়ে যায়। এই ভাবে নতুন আকৃতির জীবের উৎপন্ন হয়।
ক্রমবিকাশ বাদীদের এই মত অন্তঃসার শূন্য বলে মনে হবে। আমরা দেখেছি, যেমন ছাগল গাছের নিচের পাতা খায়; তেমনি সামনের দুটো পা গাছে রেখে উপরের পাতা খায়। লক্ষ লক্ষ বছর থেকে এই ভাবেই সে পেট ভরে। কিন্তু আজ পর্যন্ত না তার গলা লম্বা হয়েছে; না তার আগের দুটি পা লম্বা হয়েছে; না তার জন্য ঘাসের অভাব হয়েছে। এখানে এটিও বিচারণীয় যে, গলা লম্বা না হয়ে জিরাফের মধ্যে বাঁদরের মতো গাছে ওঠার সামর্থ্য কেন বিকশিত হলো না? না জানি কবে থেকে মানুষ উত্তর ধ্রুব গ্রীনল্যান্ডের মতো শীতপ্রধান দেশগুলিতে বসবাস করছে। কিন্তু শীত থেকে বাঁচার জন্য তাদের গায়ে ভালুকের মতো লোম কেন জন্মায়নি? আমরা দেখি রাজস্থানের মরুভূমিতে থাকা ভেড়ার গায়ে যেমন লম্বা চুল হয়, তেমনি হিমালয়ের শীতপ্রধান দেশের ভেড়ার গায়েও হয়। আফ্রিকার অতি উষ্ণ প্রদেশে দীর্ঘ লোমযুক্ত ভালুক ও লোমরহিত গন্ডার এক সঙ্গেই থাকে। নিজের দেশেই গরু-মহিষের বিপরীত বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। মহিষের চামড়া পাতলা, মসৃন এবং ছোট লোম যুক্ত হয়; গরুর চামড়া অপেক্ষাকৃত মোটা, কঠোর ও ঘন লোমযুক্ত হয়। কেন এত ভিন্নতা? প্রকৃতির সাথে খাপ খাওয়াতে দুটির একই বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত ছিল। ক্রমবিকাশ বাদীদের অনুসার আত্মরক্ষার জন্য হরিণ নীলগাইয়ের মত অনেক প্রকারের জংলি পশুদের মধ্যে নরের সিং হয় অথচ মাধির সিং নেই। আত্মরক্ষার প্রয়োজন কি শুধু নরের হয়, মাধির হয় না? জঙ্গলের থাকা পশুদের অপেক্ষায় গৃহপালিত পশুদের বিপদ কম হয়। তবে কোন প্রয়োজনে দুটির সিং হয়? আবার কোকিলের মধুর কন্ঠ, ময়ূরের সুন্দর পেখমের প্রাণরক্ষার সঙ্গে কি বা সম্বন্ধ? কাককে কি তার কা কা শব্দ ভালো লাগে, আর ময়ূরের সুন্দর পেখম দেখে ময়ূরীর মনে কি ঈর্ষা হয় না?
ভাই আর বোন একই পরিস্থিতিতে উৎপন্ন হয় ও বেড়ে ওঠে কিন্তু বোনের মুখে দাড়ি মুছের কোনো চিহ্ন নেই। হাতি ও হাতিনী একই পরিস্থিতিতে থাকে। কিন্তু হাতিনীর সামনে বড় বড় দাঁত হয় না কেন? আত্মরক্ষা কি কেবল হাতি করে, হাতিনী নয়? আত্মরক্ষার জন্য যদি পশুদের কান বড় হয় তবে মানুষের কেন হয় নি?? মানুষের আত্মরক্ষার কি কোনো দরকার নেই??
ভারতে বাঘ, সিংহ, হাতি হয়। কিন্তু ইংল্যান্ড আদি অন্য দেশে হয় না। আফ্রিকায় জিরাফ, অস্ট্রেলিয়ায় ক্যাঙারু, ভারতে ময়ূর হয়। ইউরোপীয়দের পৌঁছানোর আগেই অস্ট্রেলিয়ায় খরগোশ হতো না। এর দ্বারা স্পষ্ট যে, কোন প্রাণী কোথাও যদি না পৌঁছায় এবং তার সন্তান সন্ততির বিস্তার যদি না হয় তবে সেখানে কোন প্রাণী এমনি জন্মে যায় না।
মানুষের চুলের রঙ্ বদলায় কিন্তু পশুদের চুলের রঙ কোনদিনও বদলায় না। ক্রমবিকাশ বাদীদের অনুসার যদি বানর থেকে মানুষ হয় তবে বানরের বাচ্চা জন্ম থেকে সাঁতার জানে কিন্তু মানুষের তা জানে না কেন? মানুষকে তো তা শিখতে হয়। একে কি তবে বিকাশ বলবো বা অধঃপতন বলবো? রাজস্থানের মরুভূমিতে জন্মানো মানব শিশুটিকে যেমন সাঁতার শিখতে হয়, তেমনি বাংলাদেশের জলাদেশের মানব শিশুটিকেও সাঁতার শিখতে হয়। প্রাণ রক্ষার তাগিদে জঙ্গলি মানুষের না সিং গজায়; না নদীর তীরে থাকা মানুষ জন্ম থেকে স্বতঃ সাঁতার জানে।
অনাদিকাল থেকে কচ্ছপের নিচে নরম ওপরে কঠোর। অথচ কচ্ছপের ওপরের ভাগ একদিনও মাটিতে ঘর্ষণ পায়নি। ক্রমবিকাশবাদীদের মতানুসারে কচ্ছপের গঠন তার বিপরীত হওয়া উচিত ছিল। প্রাণী মাত্রেরই আত্মরক্ষার প্রবৃত্তি স্বাভাবিক হয়। এই প্রবৃত্তি কীটপতঙ্গের মধ্যেও তো হওয়া উচিত। প্রদীপের অগ্নিশিখায় পতঙ্গ পুড়ে মারা যায়। আর এই প্রক্রিয়া আদিকাল থেকে চলে এসেছে। কিন্তু পতঙ্গ কখনো বাঁচার চেষ্টা করেনি। এর জন্য কোন বড় চেষ্টা তাকে করতে হত না। কেবল প্রদীপের শিখা থেকে তাকে দূরে থাকার অভ্যাস মাত্র করতে হতো। কিন্তু লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি বছর থেকে সে এটাই করে যাচ্ছে।
ক্রমবিকাশের ধাপের শেষ প্রাণী যদি মানুষ হয়; তবে মানুষের তুলনায় পিঁপড়ে ও কুত্তার মধ্যে ভূকম্পের পূর্বানুমান কি করে হয়ে যায়? প্রতিটি প্রাণী বেশি থেকে বেশি সময় বাঁচতে চায়। তবে মানুষের থেকে সাপ, কচ্ছপ দীর্ঘজীবী কেন? অধিক দূরত্ব কম সময়ে যেতে মানুষ কেন বা যন্ত্রের বিকাশ করছে? সে নিজে হরিণ ও চিতাবাঘের গতিকে কখন ছাড়লো? কুকুরের তীব্র ঘ্রাণশক্তি ও শকুনির দূরদৃষ্টি শক্তিকে জেনে-বুঝে মানুষ কখনো ছাড়বে না হয়তো। অনুপযোগী ভেবে কুকুরের ঘ্রাণশক্তিকে মানুষ যদি উপেক্ষা করেছিল; তবে আজ অপরাধীদের ধরার জন্য কুকুরের সাহায্য কেন নিত?
ছোট্ট বাবুই পাখি সুন্দর ঘর বানাতে পারে, কিন্তু মানুষের এক পুরুষ নিচে থাকা বানর তা বানাতে পারেনা। মৌমাছি চাক বানায় ও ফুলের মধু নিয়ে সঞ্চয় করে। কিন্তু এই কলাকৃতি ও কারিগরিতা তাদের নিজেদের আবিষ্কার নয়। তারা তা অন্য প্রাণীদেরকেও শেখায় নি। যার যা ছিল তা আজও পর্যন্ত সেই রূপেই করে আসছে।
ল্যামার্ক নামক বৈজ্ঞানিক ইঁদুরের অনেক বংশ পর্যন্ত লেজ কেটে বিনা লেজের ইঁদুর বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু সে তা করতে পারেনি। হিন্দুদের ছেলেমেয়ে অনেকদিন থেকেই "কর্নভেদ" অর্থাৎ কান ছেদ করে আসছে; মুসলমান ও ইহুদিরা হযরত ইব্রাহিমের সময় থেকে খতনা করে আসছে; চীনের মহিলারা কি জানি কত বছর থেকে তাদের পা ছোট করার চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু না হিন্দুদের কানছেদা সন্তান জন্মায়; না মুসলমানদের খতনা করা সন্তান জন্মায়; আর না চিনাদের ঘরে ছোটো পা সন্তান জন্মায়।
এইভাবে ক্রমবিকাশ বাদিদের বিরুদ্ধে অনেক উদাহরন দেওয়া যেতে পারে। বাস্তবে যে জীব সৃষ্টিতে যেমন ভাবে বানানো হয়েছে তেমন ভাবেই আছে ও ভবিষ্যতে তেমনভাবেই থাকবে। প্রয়োজনীয়তা, ইচ্ছা, অভ্যাস, এবং পরিস্থিতির কারণে প্রাণীদের মধ্যে কোন পরিবর্তন সম্ভব নয়। অত্যন্ত প্রতিকূলতায় জাতিগুলি লুপ্ত হতে পারে। কিন্তু তাদের নৈসর্গিক গুণ, বৈশিষ্ট্য ও গঠন কোনোদিন বদলায় না। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে প্রাণী থেকে বিকশিত হয়ে মানুষ তৈরি হয়নি। বরং ঈশ্বরের বিশেষ রচনা দ্বারা অন্যান্য প্রাণীদের সাথে মনুষ্য সৃষ্টি হয়েছে। যে মানুষ আজকের উত্তম মস্তিষ্কের তুলনায় অনেক গুণ অধিক উন্নত ও বিকশিত ছিল। বেদের সেই উত্তম বিদ্যা ও শিক্ষাগুলির দ্বারা আমরা জানতে পারি যে মানুষ কত বুদ্ধিমান ছিল।
বিজ্ঞান বলে যে সর্বপ্রথম এক কোষ উৎপন্ন হয়। কিন্তু এক কোষ কোথা থেকে হয় তার সমাধান আজ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকরা করতে পারেনি। অ্যামিবা হল এককোষী দেহ। অনেকগুলি এককোষী মিলিত হয়ে বহুকোষী প্রাণী উৎপন্ন হয়-- এটা বিজ্ঞানের মত। যদি এককোষী প্রাণী নিজে নিজেই উৎপন্ন হতে পারে; তবে মনুষ্য কেন নিজে নিজে উৎপন্ন হতে পারে না? না হলে যে অন্তব্যপ্ত শক্তির সাহায্যে একটি কোষ উৎপন্ন হতে পারে সেই শক্তির সাহায্যে মানুষের শরীরের রচনা কেন সম্ভব নয়??
বনস্পতি শাস্ত্রের আন্তর্জাতিক খ্যাতিপ্রাপ্ত বিদ্বান ডাক্তার বীরবল সাহনিকে প্রশ্ন করা হয়-- আপনি তো বলেন আরম্ভে এককোষী জীব ছিল সেখান থেকে তা বিকশিত হয়ে বড় বড় প্রাণী হয়ে গেল। আপনি এটিও বলেন যে আরম্ভে অনেক অল্প জ্ঞান ছিল ধীরে ধীরে উন্নতি হতে হতে তা বর্তমানের বিজ্ঞানের স্টেজে পৌঁছে যায়। তখন আপনি এটি তো বলুন---"Where from did life come in the very beginning and where from did knowledge come in the very beginning?" অর্থাত্ আরম্ভে জীবন কোথা থেকে এলো এবং আরম্ভে জ্ঞান কোথা থেকে এলো?
কেননা জীবন ও জ্ঞান শূন্য থেকে উৎপন্ন হতে পারে না। ডাক্তার সাহনি তার উত্তরে বলেন-- "এর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই যে, আরম্ভে জীবন জ্ঞান কোথা থেকে এলো। আমরা একে স্বীকার করে এসেছি যে আরম্ভে কিছু জীবন ছিল ও কিছু জ্ঞান ছিল।"
এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে বিকাশবাদ যাকে তথাকথিত পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিতরা মেনে এসেছে এবং অন্তিম সিদ্ধান্ত বলে মনে করে, আসলে তা যুক্তির সামনে টিকতে পারবে না। সত্য তো এটি যে জড়বস্তুতে স্বয়ং সঞ্চালন(self-Direction) ও সম্প্রয়োগ(co-ordination)-এর শক্তি হয় না। তাই বিকাশ বাদীদের সিদ্ধান্ত অনুসারে কোটি কোটি বছর থেকে জড় পরমাণুর মধ্য থেকে জীবিত প্রাণীর বিকাশ হতে পারে তা একেবারেই অসম্ভব। এই ভাবেই মানব জ্ঞানের বিকাশ যদিও তার চিন্তা শক্তির দ্বারা হয় তবুও যা কিছু জ্ঞান স্বাভাবিকভাবে প্রাপ্ত হয় তার আদি মূল সে নিজে নয়।।
বৈদিক সিদ্ধান্তের আলোকে কিছু তথ্য উপস্থাপন করা হলো কারন- বেদ হলো স্বতঃ প্রমাণ
" ধর্মং জিজ্ঞাসমানানাং প্রমাণং প্রমং শ্রুতিঃ"
( মনু সংহিতা ২/১৩)
ধর্ম জানার জন্য বেদই হল পরম প্রমাণ।
(ঈশ্বর আদিতে নানা জীব ও মনুষ্যাদির অমৈথুন সৃষ্টি করেন)
উপ সর্প মাতরং ভূমিমেতামুরুব্যচসং পৃথিবীং সুশেবাম্ ।
ঊষদা যুবতিদক্ষিণাবত এষা তা পাতু নির্ঝতেরুপস্থাত্ ।। ঋo ১০.১৮.১০
পদার্থঃ (এতাম্-উরুব্যচসং সুশেবাং ভূমি মাতরম্-উপসর্প) হে জীব! জন্ম ধারণ করিবার জন্য তুমি এই অনেক প্রকারের জীব ব্যক্তির প্রকটকারীর বিস্তৃত আর অনুকূলতার সম্পাদক ভূমি রূপী মাতাকে প্রাপ্ত হও (দক্ষিণাবতে-এযা যুবতিঃ-ঊর্ণম্রদাঃ) স্ব-কর্মফল শরীরে ধারণ যোগ্য জীবের জন্য এই যুবতির যথার্থ অথবা বীজকে নিজের
অন্তর মিশ্রিতকারী কৃষি ভূমিকে যথার্থ (নির্ঝতেঃ-উপস্থাত্ ত্বা পাতু) মৃত্যুরূপ ঘোর আপত্তির অঞ্চল হইতে তোমার রক্ষা করে।।
ভাবার্থঃ ঈশ্বর সৃষ্টিতে সমস্ত জীবের একমাত্র মাতা পৃথিবীই অতএব ওই সময় মনুষ্যেরও অমৈথুন সৃষ্টি হয়। নানা পার্থক্য দ্বারা মনুষ্যাদি শরীরের প্রাদুর্ভাব হয়। সূচনার সৃষ্টিতে পৃথিবী যুবতি যেরূপ অথবা ভূমি এরূপ কোমল হয়।।
[ঈশ্বর মনুষ্য সৃষ্টির জন্য পৃথিবীতে মাতৃ গর্ভ তৈরী করে]
উচ্ছৃঞ্চস্ব পৃথিবী মা নি বাধথাঃ সূপায়নাস্মৈ ভব সূপবঞ্চনা।
মাতা পুত্রং য়থা সিচাভ্যেনং ভূম ঊর্দুহি।। ঋo ১০.১৮.১১
পদার্থঃ (পৃথিবি) এই ভূমির (উত্ শ্বঞ্চস্ব) উপর দিশাতে উত্তপ্ত হয় (মা) না (নি) পীড়িত করেন (অস্মৈ) এই জীবের জন্য (সূপায়না) উত্তম পরিচর্যা তথা (সৃপবঞ্চনা) অতিশয় সুস্থ (ভব) রাখিয়া (মাতা যথা) মাতার ন্যায় (পুত্রম্) পুত্রকে (সিচা) নিজের আচ্ছাদন দ্বারা (ভূমে) এই ভূমি (অভি উর্ণহি) আচ্ছাদিত করেন।। ১১
ভাবার্থঃ জীবগর্ভ যখন ভূমিতে আসে তখন ভূমির উপর স্থানে উত্তপ্ত হয় যাহাতে সুগমতার সাথে জীব বৃদ্ধি হইতে থাকে আর সে গর্ভের আবশ্যকতার সম্পূর্ণ করেন। গর্ভ পূর্ণ হয়েই তাহার উপর যৌবন উদ্ভূত হইয়া-বাইরে প্রকট করিবার যোগ্য তথা বাইরে প্রকট হইয়া ওষধির দ্বারা তাহারা পোষণ করেন অতএব ওই সময় জীব সমস্ত প্রকার কুশল কুমারাবস্থাতে উৎপন্ন হয়।।
[ঈশ্বর সৃষ্টির আদিতে এই ভূমিতে অসংখ্য জীবের উৎপন্ন করেন]
উচ্ছ্বঞ্চমানা পৃথিবী সু তিষ্ঠতু সহস্ৰং মিত উপ হি শ্ৰয়ন্তাম্ ।
তে গৃহাসো ঘৃতচুতো ভবন্তু বিশ্বাহাস্মৈ শরণাঃ সম্বত্র। ঋগ্বেদ ১০.১৮.১২
পদার্থঃ (পৃথিবী) ভূমির (উচ্ছ্ববঞ্চমানা) উপর দিশাতে উত্তপ্ত হইয়া (সুতিষ্ঠতু) সুস্থ রূপে স্থিত থাকেন (সহস্রম্) সহস্র (মিতঃ) পরিগণিত পার্থিব পরমাণু (হি) নিশ্চয়ই (উপ অথন্তাম্) ইহাতে সংযুক্ত থাকে, (তৈ) ওই পরমাণু (ঘৃত্যুতঃ) ঘৃতের সমান মসৃণ হইয়া (অস্মৈ) এই জীবের জন্য (গৃহাঃ) ঘর (ভবন্তু) নির্মাণ থাকে (অত্র) এই অবস্থাতে এই জীবের জন্য (বিশ্বাহা) আশ্রয় (সন্তু) হইবে।।
ভাবার্থঃ ঈশ্বর জীব সৃষ্টির জন্য পৃথিবীর উপর দিশাতে আর স্থিরচিত্ত কিছু কাল পর্যন্ত বনস্থলীতে থাকেন। পুনঃ তাহাতে অসংখ্য জীব আশ্রিত থাকেন অতএব আজ পর্যন্তও স্ব-স্ব জাতীর সঙ্গে থাকিবার স্বভাব প্রায় সমস্ত জীবে বর্তমান। আত্মার জন্য গর্ভগৃহ স্বাভাবিক রস দানে শরণীয় ৷৷
[ঈশ্বরই আদিতে-পর্বত-ভূমিতে মনুষ্য সৃষ্টি করেছিল]
উত্তে স্তভ্লামি পৃথিবীং ত্বত্পরীমং লোগং নিদধন্মো অহং রিষম্।
এতাং স্থর্ণা পিতরো ধারয়ন্ত তেইত্রা য়মঃ সাদনা তে মিনোতু।৷ ঋo ১০.১৮.১৩
পদার্থঃ (পৃথিবীং তে-উত্ স্তভ্লামি) হে জীব! তোমার জন্য আমি ঈশ্বর, পৃথিবীকে জলমিশ্রিত ভূগোল হইতে উপরে টেনে (ইমং ত্বত্- লোগং পরিনিদধত্-ম-উ-অহং রিষম্) সেখানে তোমার এই গর্ভকোষে রাখিয়াছি। আমি কষ্ট দান করি না (এতাং স্থূনাং পিতরঃ-ধারয়ন্ত) ইহার উপরে উঠে পৃথিবীকে সূর্য-কিরণে ধারণ করাইয়া
(তত্র য়মঃ-তে সদনা মিনোতু) সূর্য তোমার জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় কোষকে প্রাপ্ত করায়।।
ভাবার্থঃ ঈশ্বর আদিতে জীবসৃষ্টি পৃথিবীর উঁচু স্থানে করিয়াছেন। সেই স্থান জলমিশ্রিত পৃথিবী হইতে পর্বতভূমি রূপ উপর দিকে। যে উত্থিত হইয়া ভূভাগে সূর্যের রশ্মি ধারণ করেন আর সূর্য নিজের রশ্মি দ্বারা জীবাত্মার গর্ভাদিকে প্রাপ্ত করান, অতএব তাহার দ্বিতীয় নাম সবিতা।। ১০।।
মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী তার সত্যার্থ প্রকাশ পুস্তকে প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে উক্ত বিষয়ের যথার্থ ব্যখ্যা করা হয়েছে।
নাসতো বিদ্যতে ভাবো নাভাবো বিদ্যতে সতঃ ।
উভয়োরপি দৃষ্টোऽন্তস্ত্বনয়োস্তত্বদর্শিভিঃ।। ভগবদ্গীতা।।(২।১৯)
কদাপি ‘অসৎ’ এর ভাব বর্ত্তমান, এবং ‘সৎ’ এর অভাব অবর্তমান হয় না। তত্ত্বদর্শিগণ এই উভয়ের তত্ত্ব নির্ণয় করিয়াছেন। পক্ষপাতী, দুরাগ্রাহী, মলিনাত্মা, বিদ্যাহীন লোকেরা কীরূপে ইহা সহজে জানিতে পারিবে? যে ব্যক্তি বিদ্বান্ ও সৎসঙ্গপরায়ণ হইয়া সম্পূর্ণরূপে বিচার করে না, সে সর্বদা ভ্রমজালে জড়াইয়া থাকে। যাঁহারা সকল বিদ্যার সিদ্ধান্ত জানেন, জানিবার জন্য পরিশ্রম করেন এবং জানিবার পর অকপটভাবে অপরকে জানান, তাঁহারা ধন্য। সুতরাং যে ব্যক্তি কারণ ব্যতীত সৃষ্টি মানে, সে কিছুই জানে না। সৃষ্টির সময় উপস্থিত হইলে পরমাত্মা পূর্বোক্ত পরমসূক্ষ্ম পদার্থ সমূহকে সম্মিলিত করেন। ঐ সকলের প্রথম অবস্থায় পরমসূক্ষ্ম প্রকৃতিরূপে কারণ অপেক্ষা যাহা কিঞ্চিৎ স্থূল তাহার নাম মহত্তত্ত্ব। যাহা মহত্তত্ত্ব অপেক্ষা কিঞ্চিৎ স্থূল তাহার নাম অহঙ্কার। অহঙ্কার হইতে ভিন্ন ভিন্ন পাঁচ সূক্ষ্মভূত শ্রোত্র, ত্বক, নেত্র, জিহ্বা এবং ঘ্রাণ—এই পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয়ের এবং বাক্, হস্ত, পাদ, উপস্থ ও মলদ্বার—এই পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয় এবং একাদশ মন অপেক্ষাকৃত স্থূলরূপে উৎপন্ন হয়। উক্ত পঞ্চতন্মাত্রা হইতে অনেক স্থূলাবস্থা প্রাপ্ত হইয়া ক্রমে ক্রমে যে পঞ্চস্থূলভূত উৎপন্ন হয়, আমরা ঐ সকলকে প্রত্যক্ষ করি। তাহা হইতে নানাবিধ ওষুধি এবং বৃক্ষাদি উৎপন্ন হয়। ওষধি এবং বৃক্ষাদি হইতে অন্ন, অন্ন হইতে বীর্য্য এবং বীর্য্য হইতে শরীর উৎপন্ন হয়। কিন্তু আদিতে মৈথুনী সৃষ্টি হয় না । পরমাত্মা স্ত্রীপুরুষের শরীর সৃষ্টি করিয়া তাঁহাতে জীবসংযোগ করিয়া দিলে মৈথুনী সৃষ্টি চলিতে থাকে। দেখ ! শরীর রচনার মধ্যে কীরূপ সৃষ্টিবিদ্যার পরিচয় পাওয়া যায়। পণ্ডিতগণ তাহা দেখিয়া আশ্চর্যান্বিত হইয়া থাকেন। ভিতরে অস্থিযোজনা, নাড়ীবন্ধন, মাংস লেপন, চর্মাচ্ছাদন, প্লীহা-যকৃৎ, ক্ষুদ্রপাখার ন্যায় ফুসফুস স্থাপন, রুধিরশোধন, সঞ্চালন, বিদ্যুতের স্থাপন, জীব সংযোজন, শিরোরূপ মূলরচনা, লোম-নখাদি স্থাপন, তারের ন্যায় চক্ষুর অতীব সূক্ষ্ম শিরা রচনা, ইন্দ্রিয়মার্গ প্রকাশ, জীবের জাগ্রত স্বপ্ন-সুষুপ্তি অবস্থায় ভোগের জন্য বিশেষ স্থানের নির্মাণ, সকল ধাতুর বিভাগ, কলাকৌশল স্থাপন প্রভৃতি অদ্ভূত সৃষ্টি পরমেশ্বর ব্যতীত অপর কে করিতে পারে? এতদ্ব্যতীত ধাতুপূর্ণ ভূমি, বট প্রভৃতি বৃক্ষাদি বীজের মধ্যে অতি সূক্ষ্ম রচনা, অসংখ্য হরিৎ,শ্বেত, পীত, কৃষ্ণ, চিত্ৰবিচিত্র ও মিশ্রিত বর্ণের পত্র পুষ্প এবং ফল-মূল নির্মাণ; মিষ্ট, ক্ষার,কটু, কসায়, তিক্ত, অম্ল প্রভৃতি বিবিধ রস, সুগন্ধাদিযুক্ত পত্র, পুষ্প, ফল, অম্ল এবং কন্দ মূল প্রভৃতি রচনা, কোটি কোটি পৃথিবী ও চন্দ্র সূৰ্য্যাদি লোকের সৃষ্টি, ধারণ, ভ্রমণ করান এবং নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি পরমেশ্বর ব্যতীত কেহই করিতে পারে না। যখন কেহ কোন পদার্থ দেখে, তখন তাহার দ্বিবিধ জ্ঞান উৎপন্ন হয়—প্রথমতঃ পদার্থের জ্ঞান, দ্বিতীয়তঃ পদার্থের রচনা দেখিয়া রচয়িতা কর্ত্রার জ্ঞান। উদাহরণস্বরূপ—কোন ব্যক্তি বনে একখানি সুন্দর অলঙ্কার পাইয়া মনে করিল যে, উহা সুবর্ণ নির্মিত এবং কোন চতুর স্বর্ণকার উহা নির্মাণ করিয়াছে। সেইরূপ নানাবিধ সৃষ্টির রচনা দ্বারা সৃষ্টিকর্ত্তা পরমেশ্বরের প্রতিপাদন হইয়া থাকে।
প্রশ্ন – মানুষের সৃষ্টি কি প্রথমে হইয়াছিল, অথবা পৃথিব্যাদির ?
উত্তর – পৃথিব্যাদির (সৃষ্টি প্রথমে হইয়াছিল) কারণ পৃথিব্যাদি ব্যতীত মনুষ্যের স্থিতি ও
পালন হইতে পারে না।
প্রশ্ন – সৃষ্টির আদিতে কি এক অথবা বহু মানুষের উৎপত্তি হইয়াছিল?
-
উত্তর – বহু। কারণ যে সকল জীবের কর্ম ঐশী সৃষ্টিতে উৎপন্ন হইবার উপযুক্ত, ঈশ্বর সৃষ্টির আদিতে তাহাদের জন্ম দিয়া থাকেন। যজুর্বেদে লিখিত আছে, ‘মনুষ্যা ঋষয়শ্চ য়ে, ততো মনুষ্যা অজায়ন্ত’ । এই প্রমাণ দ্বারা নিশ্চিতরূপে জানা যাইতেছে যে, আদিতে অনেক অর্থাৎ শত শত, সহস্ৰ মনুষ্য উৎপন্ন হইয়াছিল। সৃষ্টি দেখিলেও জানা যায় যে, মনুষ্য জাতি বহু মাতাপিতার সন্তান।
প্রশ্ন- আদি সৃষ্টিতে কি মনুষ্যাদি বাল্য, যৌবন বা বৃদ্ধাবস্থায় জন্ম হইয়াছিল? না তিন অবস্থাতেই হইয়াছিল?
উত্তর – যৌবন অবস্থায়। কেননা, শৈশব অবস্থায় উৎপন্ন করিলে তাহাদের প্রতিপালনের জন্য অন্য মনুষ্যাদির প্রয়োজন হইত। আবার বৃদ্ধাবস্থায় সৃষ্টি করিলে মৈথুনী সৃষ্টি হইত না।
সুতরাং যুবাবস্থাতেই সৃষ্টি হইয়াছিল।
প্রশ্ন – সৃষ্টির আরম্ভ আছে না নাই।
উত্তর – নাই। যেরূপ দিনের পূর্বে রাত্রি, রাত্রির পূর্বে দিন, দিনের পর রাত্রি, রাত্রির পর দিন, এইরূপে চলিয়া আসিতেছে, সেইরূপ সৃষ্টির পূর্বে প্রলয়, প্রলয়ের পূর্বে সৃষ্টি, সৃষ্টির পরে প্রলয়, প্রলয়ের পরে সৃষ্টি, চক্রবৎ অনাদিকাল হইতে এইরূপ চলিয়া আসিতেছে। সৃষ্টির আদি অথবা অন্ত নাই। কিন্তু যেমন দিন বা রাত্রির আরম্ভ ও অন্ত দেখিতে পাওয়া যায়, সেইরূপ সৃষ্টি এবং প্রলয়ের আদি অন্ত হইয়া থাকে। কেননা, যেরূপ পরমাত্মা,জীব ও জগতের কারণ – এই তিন স্বরূপতঃ অনাদি, সেইরূপ জগতের সৃষ্টি ও স্থিতি এবং প্রলয় প্রবাহরূপে অনাদি।
যেরূপ নদীর প্রবাহ কখনও শুষ্ক,কখনও অদৃশ্য এইরূপ দৃষ্টিগোচর হয়, আবার বর্ষাকালে দৃশ্য ও গ্রীষ্মকালে অদৃশ্য হয়, সেইরূপ জগদ্ব্যাপার সমূহকে প্রবাহরূপে জানা উচিত। যেরূপ পরমেশ্বরের গুণ-কর্ম-স্বভাব অনাদি, তাঁহার জগতের সৃষ্টি-স্থিতি প্রলয় করাও সেইরূপ অনাদি। ঈশ্বরের গুণ-কর্ম-স্বভাবের যেমন আরম্ভ ও অন্ত নাই, সেইরূপ তাঁহার কর্ত্তব্য কর্মের আরম্ভ ও অন্ত নাই।
প্রশ্ন-পরমেশ্বর কোন কোন জীবকে মনুষ্য জন্ম, কোন জীবকে সিংহাদি ক্রুর জন্ম,কোনো কোনো জীবকে হরিণ ও গবাদি পশু জন্ম, কোন কোন জীবকে বৃক্ষ-কৃমি পতঙ্গ প্রভৃতিজন্ম দিয়াছেন। ইহাতে পরমাত্মার পক্ষপাত ঘটিতেছে।
উত্তর-পক্ষপাত ঘটিতেছে না। কারণ পূর্ব সৃষ্টিতে জীবের কৃত ঐ সকল কর্মানুসারে ব্যবস্থা করা হইয়াছে। কর্ম ব্যতীত জন্ম ব্যবস্থা করিলে পক্ষপাত করা হইত।
প্রশ্ন – মনুষ্যের আদি সৃষ্টি কোথায় হইয়াছিল?
উত্তর – ত্রিবিষ্টপ অর্থাৎ যাহাকে তিব্বত বলে (সেই দেশে)।
প্রশ্ন – আদি সৃষ্টিতে কি এক জাতি ছিল অথবা অনেক জাতি ছিল ?
উত্তর – এক মানব জাতি ছিল। পরে ‘বিজানীহ্যায়ন্ যে চ দস্যবঃ’ইহা ঋগ্বেদের বচন। শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের ‘আর্য্য’ বিদ্বান্ এবং ‘দেব’ নাম এবং দুষ্টদের ‘দস্যু’ অর্থাৎ ডাকাইত ও মূর্খ নাম—এইরূপ আর্য্য ও দস্যু এই দুই নাম হইল। “উত শূদ্র উতা’ ঋগ্বেদের বচন। আর্য্যদের মধ্যে পূর্বোক্তরূপে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র— এই চার বিভাগ করা হইল। দ্বিজ বিদ্বান্দিগের নাম ‘আর্য্য’ এবং মূর্খদেব নাম ‘শূদ্র ও অনাৰ্য্য’ অর্থাৎ ‘অনাড়ী’ হইল ৷
প্রশ্ন – তৎপর তাঁহারা এদেশে কীরূপে আসিলেন?
উত্তর – যখন আর্য্য ও দস্যু, অর্থাৎ বিদ্বান্ দেব ও অবিদ্বান্ অসুরের মধ্যে কলহ বিবাদ বশতঃ নানা উপদ্রব হইতে লাগিল তখন আর্য্যগণ সমস্ত পৃথিবীর মধ্যে এই ভূখণ্ডকে সর্বোৎকৃষ্ট জানিয়া এদেশেই আসিয়া বসবাস করিতে লাগিলেন। এই জন্য এই দেশের নাম ‘আর্য্যাবর্ত্ত’ হইল।
প্রশ্ন আর্য্যাবর্ভের সীমা কতদূর পর্য্যন্ত?
উত্তর – আসমুদ্রাত্তু বৈ পূৰ্বাদাসমুদ্ৰাত্তু পশ্চিমাৎ।
তয়োরেবান্তরং গিয়োৱাৰ্য্যাবৰ্ত্তং বিদুৰ্ব্বধাঃ।।
সরস্বতীদৃষদ্বত্যোর্দে বনদ্যোয়দত্তরম্।
তং দেবনির্মিতং দেশমাৰ্য্যাবৰ্ত্তং প্ৰচক্ষতে।। ২।।।মনু০।২।(২২,১৭)
উত্তরে হিমালয়, দক্ষিণে বিন্ধ্যাচল, পূর্বে ও পশ্চিমে সমুদ্ৰ।।১।।
পশ্চিমে সরস্বতী অর্থাৎ অটক নদী এবং পূর্বদিকে দৃষদ্বতী নদী। উহা নেপালের পূর্বভাগের পর্বতশ্রেণী হইতে উৎপন্ন হইয়া বঙ্গ-আসামের পূর্ব এবং ব্রহ্মদেশের পশ্চিম দিয়া দক্ষিণের সমুদ্রে পতিত হইয়াছে। ইহার নাম ব্রহ্মপুত্র। আর সে উত্তরস্থ পর্বতশ্রেণী হইতে নির্গত হইয়া দক্ষিণের উপসাগরে মিলিত হইয়াছে। উত্তরে হিমালয়ের মধ্যরেখা, দক্ষিণে পর্বত পর্যন্ত ও বিন্ধ্যাচল হইতে রামেশ্বর পর্য্যন্ত—এই সব অঞ্চলের অন্তবর্তী দেশগুলিকে ‘আৰ্য্যাবর্ত্ত এই জন্য বলা হয়, কেননা এই আৰ্যাবৰ্ত্তে দেব অর্থাৎ বিদ্বাগণ বসতি স্থাপন করিয়াছিলেন এবং
আর্য্যগণের এইদেশে বসবাস করায় আর্য্যাবৰ্ত্ত নামে প্রসিদ্ধ। (২)