রামরাজ্য প্রসঙ্গে ভ্রান্তির নিঃসরণ
প্রশ্নঃ ভগবান রামচন্দ্রের শাসনকালে কি শূদ্ররা অনেক নির্যাতিত ছিল? তাদের প্রতি কি অনেক অত্যাচার করা হতো? শূদ্ররা কি প্রসন্নচিত্তে, সুন্দর জীবনযাপন করতে পারত না?
এই জাতীয় প্রশ্নের উত্তরের জবাব নিয়ে আজকে আর্টিক্যাল লিখব,,রামায়ণ থেকে রেফারেন্স দিয়ে।।
যুদ্ধকান্ড, ১২৮ তম স্বর্গ, শ্লোক ৯৮-১০৫-- যুদ্ধকান্ডের এই শ্লোকগুলোতেই ভগবান রামচন্দ্রের শাসনাকলে তার রাজ্যের প্রজাদের জীবনযাপনের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে--
ন পর্যদেবন্ বিধবা ন চ ব্যালকৃতং ভয়ম্।
ন ব্যাধিজং ভয়ং চাসীদ্ রামে রাজ্যং প্রশাসতি।। ৯৮।।
অনুবাদঃ শ্রীরামচন্দ্রের রাজত্বকালে কোনদিন বিধবাদের বিরহ-বিলাপ শোনা যায়নি। সর্পাদি শ্বাপদের ভয় অথবা রোগভয় কখনও প্রাদুর্ভূত হয়নি।।৯৮।।
নির্দস্যুরভবল্লোকো নানর্থং কশ্চিদস্পৃশৎ।
ন চ স্ম বৃদ্ধা বালানাং প্রেতকার্যাণি কুর্বতে।। ৯৯।।
অনুবাদঃ সমগ্র রাজ্যের কোথাও চোর-ডাকাতের নাম পর্যন্ত শোনা যেত না। রাজ্যে কেউ অনর্থকারী কার্যে লিপ্ত হতো না কিংবা বৃদ্ধগণের কদাপি নবীনদের অন্ত্যোষ্টি সৎকার করার প্রয়োজন পড়ত না।।৯৯।।
সর্বং মুদিতমেবাসীৎ সর্বো ধর্মপরোহভবৎ।
রামমেবানুপশ্যন্তো নাভ্যহিংসন পরস্পরম।।১০০।।
অনুবাদঃ সকলে সদা আনন্দে থাকত এবং ধর্মাচরণ করত। শ্রীরামচন্দ্রের শাসনে এক অন্যকে হিংসা করত না।।১০০।।
আসন্ বর্ষসহস্রাণি তথা পুত্রসহস্রিণঃ।
নিরাময়া বিশোকাশ্চ রামে রাজ্যং প্রশাসতি।।১০১।।
অনুবাদঃ শ্রীরামচন্দ্রের শাসনকালে প্রজাগণ সহস্র বৎসর যাবৎ জীবিত থাকত, সহস্র পুত্রের জনক হতো এবং নীরোগ ও শোকশূন্য হয়ে বসবাস করত।।১০১।।
রামো রামো রাম ইতি প্রজানামভবন্ কথাঃ।
রামভূতং জগদভূদ রামে রাজ্যং প্রশাসতি।।১০২।।
অনুবাদঃ রামরাজ্যে প্রজাবর্গের মুখে-মুখে কেবল রাম, রাম নাম এবং রামকথা শোনা যেত। অখিল রাজ্য রামময় হয়ে থাকত।।১০২।।
নিত্যমূলা নিত্যফলাস্তরবস্তত্র পুষ্পিতাঃ।
কামবর্ষী চ পর্জন্যঃ সুখস্পর্শস্চ মারুতঃ।।১০৩।।
অনুবাদঃ তথায় বৃক্ষরাজি সর্বত্র ফল-মূল, পত্র-পুষ্পাদিতে পরিপূর্ণ ছিল। মেঘ প্রয়োজনানুসারে বর্ষিত হতো এবং পবন (বায়ু) সদা সুখকর হয়ে প্রবাহিত হতো।।১০৩।।
ব্রাহ্মণাঃ ক্ষত্রিয়া বৈশ্যাঃ শূদ্রা লোভবিবর্জিতাঃ।
স্বকর্মসু প্রবর্তন্তে তুষ্টাঃ স্বৈরেব কর্মভিঃ।। ১০৪।।
অনুবাদঃ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র চতুর্বর্ণের প্রজাই নির্লোভ ছিলেন। সকলেই স্ব-স্ব বর্ণাশ্রমের কর্তব্যে পালনে সুপ্রসন্ন থাকতেন এবং নিজ-নিজ কর্মে রত থাকতেন।।১০৪।।
আসন্ প্রজা ধর্মপরা রামে শাসতি নানৃতাঃ।
সর্বে লক্ষণসম্পন্নাঃ সর্বে ধর্মপরায়ণাঃ।।১০৫।।
অনুবাদঃ শ্রীরামচন্দ্রের শাসনে সকলে ধর্মাচরণে তৎপর ছিলেন।কেউ কখনও মিথ্যা ভাষণ করতেন না। প্রজাগণ সুলক্ষণসম্পন্ন ছিলেন এবং ধর্মপরায়ণ হয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।।১০৫।।
[ গীতাপ্রেস গোরক্ষপুর রামায়ণ ]
সুতরাং ভগবান রামচন্দ্রের রাজ্যব্যবস্থা কেমন ছিল!! আর ১০৪ নং শ্লোকটি পড়লে বোঝা যায় শূদ্র বর্ণের লোকেরা তখন কতটা সুখে শান্তিতে জীবনযাপন করত।। তো হ্যাঁ আমরা সনাতনীরা সকলেই চাই পৃথিবীর প্রতিটি দেশই রামরাজ্য হয়ে উঠুক যেমনটা ছেয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধীজী যে ভারত হয়ে উঠুক রামরাজ্য।।
[ বিঃদ্রঃ শূদ্র শম্বুকবধ এটি ভিন্ন প্রসঙ্গ এটা নিয়ে অন্য কোনো লেখনীতে আলোচনা করব ]
লেখক :- বাঁধন চক্রবর্তী (সদস্য, অমৃতস্য পুত্রাঃ)
অমৃতস্য পুত্রাঃ