গোমেধ যজ্ঞ বলতে কি বোঝায়?
বেদ সংহিতায় ২০০০০-এর অধিক (২০৩৭৯) মন্ত্র আছে, কিন্তু কোথাও গোমেধ শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়না। অবশ্য কর্মকাণ্ডের যজ্ঞ বিধানসমূহের মধ্যে। গোমেধ এবং অশ্বমেধের বর্ণনা পাওয়া যায়। অশ্বমেধ এবং গোমেধ এদুটি এমন যজ্ঞ যে, যার সঙ্গে পশুহত্যার বিষয়কে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। কোন রাজা অথবা ঋষি গোমেধ যজ্ঞ করেছেন এমন কোন প্রমাণ রামায়ণ-মহাভারত আদি ইতিহাস গ্রন্থে কিংবা রঘুবংশ ইত্যাদি ঐতিহাসিক কাব্যেও পরিলক্ষিত হয়না। অবশ্য প্রাচীনকালে প্রসিদ্ধ ও প্রতিষ্ঠিত রাজা অশ্বমেধ যজ্ঞ করতেন। মধ্যকালে বেদজ্ঞানে অজ্ঞ কর্মকাণ্ডী সাম্প্রদায়িগণ অশ্বমেধ-এর সঙ্গে পশুবধ যুক্ত করেছেন এবং এ বিষয়ে তারা মহীধরাচার্যের ন্যায় তান্ত্রিক বামমার্গী আচার্যের সাহায্য পেয়েছিলেন। রামায়ণ থেকে শুরু করে মহাভারত পর্যন্ত অনেক অশ্বমেধ যজ্ঞের বর্ণনা পাওয়া যায়, কিন্তু যজ্ঞ কুণ্ডে কোন ঘোড়ার আহুতি প্রদান কোন আর্য রাজার দ্বারা সম্পাদিত হয়নি। রাক্ষসদের কথা অবশ্য ভিন্ন ছিল। মাংস ভক্ষণ এবং চর্বির আহুতি প্রদান করা ছিল রাক্ষসী আচরণ।
অশ্বমেধ যজ্ঞতো রাষ্ট্রের সংগঠন। শতপথ ব্রাহ্মণে অশ্বমেধের ব্যাখ্যা নিম্নরূপ :
(১) রাষ্ট্রং বা অশ্বমেধঃ (শ.ব্রা.১৩/১/৬/৩) = রাষ্ট্রই [রাষ্ট্রের গঠন] অশ্বমেধ।
(২) তস্মাদ্ রাষ্ট্রয় অশ্বমেধেন যজেত (শ.ব্রা.১৩/১/৬/৩) = অতএব রাষ্ট্রবাদীর অশ্বমেধ যজ্ঞ করা উচিৎ।
(৩) 'অশ্বমেধ যাজী সর্বা দিশো অভি জয়ন্তি (শ.ব্রা.১৩/১/২/৩) = অশ্বমেধকারী সকল দিক জয় করেন।
শ্রীরামের পূর্বজ রঘু অশ্বমেধ করেন। শ্রীরামও অশ্বমেধ করেন, যুধিষ্ঠিরও করেছিলেন। যে কোন চক্রবর্ত্তী সম্রাট যিনি রাষ্ট্রের সংগঠন করেছেন, তিনিই অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পাদন করেছেন। রাজার ঐশ্বর্য ও বর্চস্বের প্রতীক ঘোড়া সকল দিকে পরিক্রমা করে আসত। ঐ ঘোড়াকে হত্যা করে টুকরো করে কখনও তো কেউ আহুতি দেয়নি। মহীধরাচার্য একজন তান্ত্রিক আচার্য ছিলেন। তিনি বেদমন্ত্রকে ভেঙ্গে চুরে অন্যরূপ দেবার চেষ্টা করেছিলেন। সায়নাচার্য মহীধরাচার্য এরা ঋষি যুগের কয়েক হাজার বৎসর পূর্বে আবির্ভূত হন। ততক্ষণে বিদেশী সংস্কৃতি-সমূহের মিল-মিশ হওয়ার অনেক সুযোগ এসে গেছে। পশু হিংসা বিদেশী সংস্কৃতির মিশ্রণের ফল। যা বেদ ব্যতীত অন্য শাস্ত্রের মধ্যে বিদেশী শাস্ত্রের মিশ্রণ পরিলক্ষিত হয়। বেদ যজ্ঞকে অধ্বর বলে অভিহিত করে ["যজ্ঞমধ্বরম্"(ঋগ্বেদ-১/১/৪)]। নিরুক্তের সর্বমান্য আচার্য যাস্ক অধ্বরের ব্যাখ্যা করেছেন—"অধ্বর ইতি যজ্ঞনাম ধ্বরতির্হিংসাকর্মা তৎপ্রতিষেধঃ"(নিরুক্ত-১/৮)। হিংসার ত্যাগ হলো অধ্বর।
এখানে আমরা গোমেধ যজ্ঞের বিষয়ে আলোচনা করছি। 'গোমেধ যজ্ঞ' তিনটি শব্দের দ্বারা সম্পূর্ণ হয়। (১) গো, (২) মেধ ও (৩) যজ্ঞ। এই তিন শব্দের প্রথম শব্দের বিবেচনা করা উচিত।
গো : গরু চতুষ্পদ দুগ্ধ-প্রদানকারী পশু। কিন্তু সংস্কৃত সাহিত্যে “গো”-এর অনেক অর্থ হয় এবং সকল প্রকার অর্থই সাহিত্যে এবং সমাজের মধ্যে সুলভ প্রয়োগ পাওয়া যায়। হলাযুধ সংস্কৃত কোষে একটি শ্লোক পাওয়া যায়—
অর্থাৎ—বিদ্বানগণ গো শব্দের দশ প্রকার অর্থ করেন। ১) দিশা, ২) দৃষ্টি, ৩) দীধিতি কিরণ, ৪) স্বর্গ, ৫) বজ্র, ৬) বাক্ বাণী, ৭) বাণ - তীর, ৮) বারি - জল, ৯) ভূমি, ১০) পশু (গো নামক পশু)। গোমেধ যজ্ঞে বাক্ - বাণী এবং ভূমি পৃথিবীর পরম্পরা অনুযায়ী = প্রয়োগ পাওয়া যায়। অন্য প্রয়োগও হতে পারে।
(ক) যদ্ দূরংগতা ভবতি = পৃথিবী দূর পর্যন্ত বিস্তৃত তাই গৌ (পৃথু বিস্তারে)
(খ) যচ্চাস্যাং ভূতানি গচ্ছন্তি = এর উপর আরূঢ় হয়ে প্রাণী
অনেকদূর পর্যন্ত গমন করে।
২) 'গৌঃ মাধ্যমিকা বাণী–শাস্ত্রে বাণীর ভেদ চার প্রকার, (১) পরা, (২) পশ্যন্তি, (৩) মধ্যমা, (৪) বৈখরী। এর মধ্যে মধ্যমা বাণীর নাম গৌ।
ক) “গৌঃ এতস্যা মাধ্যমিকায়াঃ বাচঃ” (নিরুক্ত-৬/২)
(খ) 'গৌঃ বাগেষা মাধ্যমিকা” (নিরুক্ত-১১/৪২)
সুতরাং গো-এর দুটি অর্থ আমরা গ্রহণ করছি।
(১) গো = পৃথিবী, এবং (২) গো = বাণী ।
১) মেধ থেকে মেধা, মেধাবিন, "যাং মেধাং দেবগণাঃ পিতরশ্চোপাসতে (যজুর্বেদ-৩২/১৪)। এস্থানে মেধা = বুদ্ধি জ্ঞান ইত্যাদি।
২) মেধ শব্দের সংগমন, সমন্বয়, সংগতিকরণ আদি অর্থও হয়।
৩) মেধ শব্দের অর্থ হিংসাও হয় কিন্তু এর প্রয়োগ বিরল, হিংসা অর্থে প্রয়োগ অত্যন্ত কম।
১) দেবপূজা (পূজনন্নাম সৎকারঃ)।
২) সংগতিকরণ অর্থাৎ কোন বস্তুর সমন্বয় সামঞ্জস্য সংস্কার দ্বারা তাকে অধিক উপযোগী করা।
৩) দান করা।
শতপথ ব্রাহ্মণ গ্রন্থে “অন্নং হি গৌঃ" (শ.ব্রা.৪/৩/৪/২৫) লিখিত আছে। আজ থেকে প্রায় সোয়া শত বৎসর পূর্বে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী মহারাজ নিজ অদ্বিতীয় ধর্ম-মীমাংসার গ্রন্থ সত্যার্থপ্রকাশে সর্বপ্রথম উক্ত পাঠের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করান। সুতরাং খড়কুটোর বেড়ার আড়ালে থাকা পর্বত প্রকাশ্যে এলো। এখন গো+মেধ+যজ্ঞ এই তিন শব্দ একত্রিত করলে বিষয়টা সহজ বোধগম্য হয় যে, "পৃথিবীকে উর্বর করে অন্নউৎপন্ন করা গোমেধ যজ্ঞ"। ভারতীয় পরম্পরায় গোদান এবং গোচারণ ভূমির দান বহুবার একই সঙ্গে সম্পাদিত হত। শ্রী রঘুনন্দন শর্মা তার নিজ প্রসিদ্ধ গ্রন্থ বৈদিক সম্পত্তিতে লিখেছেন (বৈদিক সম্পত্তি পৃ.৩৪৫)–
গোমেধ যজ্ঞ ব্যবস্থায় ধার্মিক কর্মকাণ্ড একটি শব্দ রূপে পরিগণিত হতে শুরু করে। বর্তমান অর্থশাস্ত্রের ভাষায় Land Reclamation ভূমিকে কৃষিযোগ্য করে গড়ে তোলা বোঝায়। স্বামী দয়ানন্দজী তো সোয়াশত বৎসর পূর্বেই গোমেধ শব্দের প্রতি ভ্রান্ত ধারণা দূরীভূত করেছিলেন। তিনি “অন্নং হি গৌঃ” শতপথ ব্রাহ্মণের প্রমাণের উদ্ধৃতি দিয়ে এর সম্বন্ধ কৃষি ও অন্ন উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। এদিকে পারসীদের পবিত্র পুস্তক সমূহের অধ্যয়নের মাধ্যমে ডাঃ মার্টিন হাগ বলেন যে, গোমেধ-এর অর্থ গোবধ নয়। পক্ষান্তরে, এর অর্থ—ভূমিকে উর্বর করে বনস্পতি উৎপন্নযোগ্য করা। তিনি এ ধরণের কল্পনাই শুধু করেন নি, পরন্তু আবেস্তা ভাষা দ্বারা গোমেধ-এর অপভ্রংশ "গোমেজ" (Gomez) শব্দ অন্বেষণ করে উপস্থিত করেন। এই শব্দের দ্বারা “গোমেধ” শব্দের উপর অত্যন্ত উত্তম প্রভাব বিস্তার করে।
ডাঃ হাগ লিখছেন, "পারসী ধর্মে কৃষিকার্য ধর্ম বলে মনে করা হয়। অতএব কৃষি-ধর্মের সঙ্গে সম্বন্ধ রক্ষাকারী সমস্ত ক্রিয়াকলাপের নাম 'গোমেজ'— "The Parsi religion enjoins agriculture as religious duty and this is the whole meaning of Gomez" (From Essays on the Sacred Language-Writings and Religion) (বেদোঁ কা যথার্থ স্বরূপ - আচার্য ধর্মদের বিদ্যামার্তণ্ড পৃ-২৯২)
আমরা সংস্কৃতের হলায়ুধ কোষ এবং যাস্কাচার্যের নিরুক্ত প্রমাণের মাধ্যমে এটাই দেখিয়েছি যে গো শব্দের অনেক অর্থের মধে বাণীও একটি অর্থ। কয়েকজন আচার্য মধ্যমাবাণীর সংজ্ঞা গোশব্দ রূপে বর্ণনা করেছেন। মেধের অর্থ সংগমন এবং যজ্ঞের অর্থ সংগতিকরণই হয়। সুতরাং 'গোমেধ-এর অর্থ হবে বাণীর অর্থ ও ভাবের সঙ্গে সংগমন- সংগতিকরণ। আত্মা থেকে 'পরা' বাণী মনের সংকল্পের দ্বারা 'পশ্যন্তী' রূপ নিয়ে উচ্চারণের পূর্বে 'মধ্যমা' রূপ দ্বারা বৈখরী বাণীকে প্রস্ফুটিত করে। এই সামঞ্জস্য, সংগতিকরণ ভাষাকে, বাণীকে প্রভাবশালী করে তোলে।
মহর্ষি গার্গ্য্যায়ণ কৃত প্রণববাদে গোমেধ যজ্ঞের ব্যাখ্যা নিম্নরূপে পাওয়া যায় -
“গোমেধস্তাবচ্ছব্দমেধ (শব্দ+মেধ) ইত্যবগম্যতে, গাং বাণীং মেধয়া সংয়োজনমিতি তদর্থাৎ। শব্দশাস্ত্র জ্ঞানমাত্রস্য সর্বেভ্যঃ প্রদানমেব গোমেধো যজ্ঞঃ” (প্রণববাদ-প্রকরণ ৩, তরঙ্গ ৬) অর্থাৎ বাণীকে মেধার সঙ্গে সংযুক্ত করা, অন্য সকল ব্যক্তিকে শব্দ শাস্ত্রের শিক্ষা দেওয়া, অর্থাৎ ব্যাকরণ পড়ানো = গোমেধ যজ্ঞ করা।
বেদ শাস্ত্র, ঋষি পরম্পরায় সত্যনিষ্ঠা দ্বারা বিচার করা হলে মাংস, মদ্য গোবধ ইত্যাদির কোন প্রকার রূপ পাওয়া যায় না। ঠিক এই কারণবশতঃ আজও আর্য হিন্দুদের মধ্যে এই সকল বিষয় ঘৃণার বস্তু এবং কদাচার হিসেবে পরিগণিত হয়।
এই প্রসঙ্গে আরও একটি আলোচ্য বিষয় আছে যে, সংস্কৃত ভাষায় লিখিত সব কিছুই প্রমাণ নয়। সত্যযুগের সময়ে সঠিকভাবে নিরূপণ করা সম্ভব না হলেও, ত্রেতায় বিশেষভাবে মহারাজ রঘুর সময় থেকে আসুরী সংস্কৃতির আদান প্রদান সম্বন্ধে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। রাবণ অহিরাবণ আদির পূর্বেও আসুরিক আচার বিচারের মিশ্রণ হতে থাকে। অসুরদের যাগ যজ্ঞে রক্ত মাংসের প্রচলন তো ছিলই উপরন্তু যখন আসুরিক সংস্কৃতিতে প্রভাবান্বিত আচার্য্যগণ গভীর ভাবে মিশ্রণের প্রভাবকে গ্রহণ করতে শুরু করেন তখন মহর্ষি ব্যাস, পিতামহ ভীষ্ম প্রভৃতি প্রতিটি মানুষকে সাবধান করানোর বিষয়টি অনুভব করেন যে, বেদে মাংস ভক্ষণ ও মদ্যপানের উল্লেখ নেই।
অর্থাৎ মদ, মাংস, মৎস ইত্যাদি যজ্ঞে প্রদান করার প্রচলন ধূর্তগণের প্রচার, এই প্রকার বিধান বেদের কোথাও পাওয়া যায়না। বিপরীতভাবে মুসলমানযুগে আজ থেকে প্রায় ৭০০ বৎসর পূর্বে এবং ঋষি-মুনিদের পরম্পরা সমাপ্ত হবার বহু পরে সায়ণাচার্য ঊটাচার্য, মহীধরের বেদ ভাষ্য রচিত হয়, যার মধ্যে বেদ এবং ঋষি পরম্পরার বিরুদ্ধে পশুবধ আদির বর্ণনা পাওয়া যায়, যদ্যপি ঋষি-পরম্পরার মধ্যে এসকল প্রমাণ নেই। দ্বাপরের শেষকালে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়ে। জরাসন্ধের জামাতা কংস বেদ ব্রাহ্মণ, গাভী, যজ্ঞ এদের সকলকে নষ্ট করার পরিকল্পনা করেছিলেন। এ বিষয়ে শ্রীমদ্ভাগবৎ-এর একটি শ্লোক বিচার্য—
উপস্থিনো যজ্ঞশীলান্ গাশ্চ হন্মে হবিদুমা।।
(দশম-৪-৪০)
কংসকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যে বেদপাঠী, বেদোপদেশক, যজ্ঞের যাচক যজমান, তপস্বী-ব্রাহ্মণ এবং যজ্ঞের জন্য প্রয়োজনীয় দুগ্ধ-ঘৃত প্রদানকারী গাভীগণের হত্যা করার জন্য সম্পূর্ণ চেষ্টা করা হোক। মহাভারতের পরবর্তী সময়ে বেদ-বাণী, বেদ প্রচারক ব্রাহ্মণগণের অভাব পরিলক্ষিত হয়। এবং পশ্চিমের আসুরী সংস্কৃতির মিশ্রণ হতে থাকে। মুসলমান যুগে বৈদিক গ্রন্থ নষ্ট করা হয় এবং তীব্রভাবে ইসলামী মিশ্রণ করা হয়। অল্লোপনিষদ্ রচিত হল এবং এটি অথর্ববেদের শাখা বলে বর্ণনা করা হল। সেখানে আল্লাকে পরমেশ্বর রূপে প্রার্থনা করার শিক্ষা দেওয়া হল।
অল্লো রসুল মহামদঃ অকবরস্য অল্লো অল্লাম্ ॥৩॥
অল্লা ঋষীণাং সর্ব দিব্যাং............................ ॥৬॥
ওম্ অল্লা ইল্লাল্লা অনাদি স্বরূপায় অথর্ব০ ॥
...........................অদৃষ্টং কুরু কুরু ফট্ ॥৯॥
.........অল্লো রসুল মহমদ অকবরস্য অল্লো অল্লাম্ ইল্লল্লেতি ইলল্লাঃ ॥১০॥
যখন স্বামী দয়ানন্দজী এই ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে অথর্ববেদে কোথায় এর বর্ণনা আছে একথা জানতে চেয়ে শাস্ত্রার্থে আহ্বান করলেন তখন এই প্রকার ষড়যন্ত্রে ইতি পড়ল। পীর পয়গম্বর দরবেশ, মাজার, গাজী মিঞার চোগা-চাপকান ইত্যাদির পূজা শুরু হল এবং আর্য সমাজ জাতি ধর্ম জাগরণের জন্য এর বিরোধ করল, ফলস্বরূপ আর্য সমাজকে সাম্প্রদায়িক, দ্বন্দ্বপ্রিয় অসহিষ্ণু এবং আরও অনেক কিছু বলা হতে লাগল। কিন্তু–
জ্যোঁ শ্বান ভূকতে হ্যায় খড়ে, হাতি জাতা হ্যায় চলা,
ক্যা মশকোঁ কী হুংকার সে, খগপতি ভরতা হ্যায় ভলা?
গান্ধীজী একদা আর্যসমাজের আলোচনা করায় সকলে অবাক হয়েছিলেন কিন্তু দেশজাতীর রক্ষক ঐ পক্ষপাতদুষ্ট আলোচনায় নিরুৎসাহী হননি।
ইসলামী যুগ ছিল বর্বর নিষ্ঠুর। পরিচ্ছন্ন কায়দায় রাষ্ট্রদ্রোহী খৃষ্টানগণ সভ্যতার জামা পরে উপস্থিত হন। ভারতীয় বিচার ও চিন্তাধারায় মিশনারীগণ আক্রমণ করেন। বিদ্যা, ইতিহাস ও মান্যতার ক্ষেত্রে ছল কপটতা চলতে থাকে। পুরা বিদ্যা, ভারতীয় বিদ্যা, ঐতিহাসিক তথ্য সমূহকে খৃষ্টানগণ ভেঙ্গে চুরে পরিবর্তন ঘটাতে শুরু করেন। তারা বলতে শুরু করেন, আর্যগণ আক্রমণকারী, সিন্ধু সভ্যতা অনার্যদের, হিন্দু দ্রাবিড়, ভিন্ন। ভারতীয় পরম্পরার ইতিহাসের উপেক্ষা, মিথ্যা প্রতিপন্ন করা, সংস্কৃত বিদ্যার রূপ বিকৃত করা ইত্যাদি ষড়যন্ত্র শুরু হয়। ইংরেজদের দ্বারা নতুন ভাবে ইতিহাস লেখানো হয! নতুন নতুন অভারতীয় মান্যতার সংযোজন হয়। ওদের সঙ্গে যুক্ত হয় সমাজবাদী। সাম্যবাদী ইত্যাদি বরুবাদী। ভারতীয় পরম্পরার বিদ্বানগণের উপেক্ষা এবং ইংরেজ মনোভাবাপন্ন দাসেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিক পদে নিযুক্ত করা হয়। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও পরম্পরা প্রাপ্ত ভারতীয়তা বিরোধী কার্যের গড় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদ্বান নির্মাণ কাৰ্য্য চলতে থাকল।
যে যত উগ্রতার মাধ্যমে ভারতীয়তার বিরোধ করতে সক্ষম তাকে ততই উচ্চ আসন এবং সারস্বত পুরস্কার প্রদান করা হত। ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদ রক্ষা করাই ছিল ইংরেজদের স্বার্থ। খৃষ্ট ও খৃষ্টীয়তা ছিল একমাত্র হাতিয়ার
“নরকুল কুলযঘ্নো মোক্ষদঃ প্রেম মূর্তিঃ ।
বিজিত নরক রাজ্যঃ স্বর্গরাজ্যৈক মার্গঃ।।
সকল ভুবন ভৰ্ত্তা পাতু নঃ খ্রীষ্টযীশুঃ।।”
এ সকল হিন্দুদের খৃষ্টান করার নীতি ছিল। যীশুকে পরমেশ্বরের রূপে সংস্কৃত ভাষায় শ্লোকের মাধ্যমে স্তুতি প্রার্থনা করা থেকে অন্তর্নিহিত উদ্দ্যেশ্য সুস্পষ্টরূপে প্রকাশিত হয়।
মূল লেখক : প্রো. উমাকান্ত উপাধ্যায়
অনুবাদক : পণ্ডিত নচিকেতা ভট্টাচার্য্য
সামান্য কিছু রেফারেন্স সংযোগ : অমৃতস্য পুত্রাঃ
©️অমৃতস্য পুত্রাঃ