![]() |
প্রতিমা পূজারীদের নিকট ৩১ টি প্রশ্ন |
ও৩ম্
প্রতিমা পূজারীদের নিকট ৩১টি প্রশ্ন
ভূমিকা
আমি কিংবা আমরা মূর্তিপূজারিকে ঘৃণ্যতার দৃষ্টিতে দেখি না। তবে মূর্তির উপাসনা করা অনুচিৎ তা অবশ্যই বলি । এখন প্রশ্ন আসবে কেন বলেন? উত্তরে প্রথমে বলবো - মুনি,ঋষি,যোগী, মহাপুরুষ সকলে বলেছেন যে বেদ হচ্ছে প্রামাণ্য গ্রন্থ, বেদ দ্বারাই অন্য স্মৃতি কিংবা অন্যান্য শাস্ত্রের প্রামাণিকতা যাচাই করবে। আর সেই বেদে বলা হয়েছে- কেবল পরমাত্মার উপাসনা করো, দ্বিতীয় কোন বস্তু কিংবা ব্যক্তির উপাসনা করিওনা, দ্বিতীয় কোন কিছুর উপাসনা করে হানি প্রাপ্ত হয়োনা। দ্বিতীয়ত বলবো- মূর্তি পূজা করে সনাতন ধর্মের মনুষ্যগনের উন্নতি নয় বরং অবনতি হচ্ছে। একদিকে অর্থ বিনষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে সনাতনীরা এটা ভেবে নিচ্ছে যে মূর্তি পূজা করলেই উদ্ধার হয়ে যাবে, ওরা না পড়ে কোন শাস্ত্র আর না শিখে শস্ত্র শিক্ষা। শস্ত্র শিক্ষা সম্পর্কে অবতগত না হওয়ার কারন- শ্রী কৃষ্ণের দেহের নাম করে, মনগড়া রূপ দিয়ে, মূর্তি বানিয়ে পূজা করে যাতে তিনি অবতার হয়ে এসে উদ্ধার করেন। মহাভারত পড়লে দেখা যায় তিনিও পরমাত্মার উপাসনা করেছেন। অপরদিকে দেখুন লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি টাকা মূর্তি বানানো এবং ডিজে লাইটিং, গান বাজনার জন্য খরচ করে অথচ ধর্মীয় শিক্ষার জন্য কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে না, এর কথা চিন্তাও করে না। অযথা মূর্তি পূজা করে অযথা অর্থ নষ্ট না করে যদি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উন্নয়নের কাজে ব্যাবহার করা হতো তাহলে আজ অনেক এগিয়ে যেতো আমাদের সমাজ। পৌরাণিক পোপগন মূর্তি পূজার স্বপক্ষে অনেক কথন বলে থাকেন সেই পৌরাণিক বিদ্বানদের নিকট ৩১ টি প্রশ্ন নিয়েই নির্মিত এই লঘু পুস্তিকা। আশা করি পৌরাণিক বিদ্বানগন এই প্রশ্নগুলোর জবাব দিবেন।
আর্যসমাজের বিদ্বান্ ব্যক্তি ড. শ্রীরাম আর্যের লিখিত হিন্দি পুস্তক "মূর্ত্তি পূজা পর ৩১প্রশ্ন" পুস্তকের অনুবাদ সহ সামান্য অংশ অন্যপুস্তক কিংবা নিজ হইতে যুক্ত করা হয়েছে।
প্রশ্ন-১. মাটি, পাথর, ধাতু আদির মূর্তিকে পূজা দ্বারা মূর্তি প্রসন্ন হয় না কি ঈশ্বর খুশি হন? পরমেশ্বরের যখন মূর্তিই নেই (যজু. ৩২/৩) তাহলে জন্ম নিয়ে যাহারা মৃত্যুবরণ করেছে তাদের শরীরকে নকল করে মূর্তি তৈরি করে সেই মূর্তিকে পরমেশ্বর মেনে নাকি পরমেশ্বরের মূর্তি মেনে পৌরাণিক মন্দিরে সাজিয়ে রাখেন?
প্রশ্ন-২. পৌরাণিক মন্দিরে স্থিত মূর্তির কি দেখার, শুনার, বলার, বুঝার, বুঝানোর, স্পর্শানুভব করার শক্তি আছে না কি নেই? যদি থাকে তো প্রত্যক্ষ সিদ্ধ করো। যদি না থাকে তো এই জড় বস্তুর সামনে হাত জোর করা, প্রার্থনা করা, বিভিন্ন কিছু চাওয়া, সেটাকে বস্ত্রভূষণ পরিধান করানো, তার চরণ স্পর্শ করা আদি কর্ম নিরর্থক এবং ব্যর্থ নয় কি? এই মূর্তির কি ঠাণ্ডা,গরম,ক্ষুধা,তৃষ্ণা লাগে?
প্রশ্ন-৩. মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করার পর মূর্তি চৈতন্য হয়ে যায় কি? এবং বিসর্জন করার পর মূর্তির মৃত্যু হয় কি? যদি উত্তরে বলেন হ্যাঁ, তো কোন মৃত মৌমাছিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে জীবিত করতে পারবেন কি? যদি এটাও না করতে পারেন তো মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করার পুরো ক্রিয়াই ভণ্ডামি মানেন কি?
প্রশ্ন-৪. নিদ্রা যাওয়া, জেগে ওঠা, হাসি-খুশি থাকা, কান্না করা এই সকল চৈতন্য জীবের ধর্ম না কি মূর্তির? পরমেশ্বর যিনি হলেন নির্বিকার তিনিও কি শয়ন করা, জেগে ওঠা, হাসি-কান্না আদি বিকার যুক্ত হয়ে বিকারী? যদি উত্তর না হয় তো পূজারিদের এই বাক্যের - ভগবানকে ঘুম পাড়িয়ে দাও, ভগবানকে ভোগ লাগাও, ভগবানকে বাতাশ করো, এর মানে কি?
প্রশ্ন-৫. বরাহ (শুকর) অবতারের মূর্তির সামনে বরাহের (শুকরের) স্বাভাবিক এবং পরম প্রিয় ভোজন বিষ্ঠা দিয়ে কেন ভোগ লাগান না? ক্ষীর, মণ্ডামিঠাই, ফল-ফলাদি ভোগ দিয়ে বরাহকে (শুকরকে) কেন অপমান করেন? বরাহ অবতারকে যথাযথ ভোগ লাগিয়ে পূজা শেষে আপনারা কেন সেই ভোগ আহার করেন না?
প্রশ্ন-৬. পরমাত্মা যদি সাকার হয় তো সর্বব্যাপক বা অনন্ত থাকবে না, যদি নিরাকার হয় তো তাঁহার আকৃতি কল্পিত হয়ে যাবে, মিথ্যা হয়ে যাবে কেননা আকৃতি,সাকার একদেশীয় ভৌতিক পদার্থের হয়। যখন সর্বব্যাপক নিরাকারের আকৃতিই হয়না তখন নিরাকার, অনন্ত সর্বব্যাপক পরমেশ্বরের মিথ্যা আকৃতি কল্পনা করে মূর্তি তৈরি করে তাহার প্রতিষ্ঠা, পূজা আদি করাও মিথ্যা কেন নয়?
প্রশ্ন-৭. জড় পূজা তথা প্রকৃতির কার্য রূপের উপাসনা মানুষকে ঘোড় অন্ধকার বা দুঃখ প্রাপ্তির কথন বেদ বলে।যেখানে স্পষ্টই বলেছে যে -
ততো ভূয় ইব তে তমো য উ সম্ভুতাংরতাঃ।
অর্থাৎ - যে মানুষ পরমেশ্বর কে ছেড়ে ( অসম্ভূতিম্) অনাদি, অনুৎপন্ন সত্ত্ব, রজ, তমগুণরূপ অব্যাক্ত প্রকৃতির (উপাসতে) উপাসনা করে (তে) তারা ( অন্ধম্) অজ্ঞানরূপ (তমঃ) অন্ধাকারে (প্রবিশন্তি)প্রবেশ করে ( যে) যারা ( সম্ভূ্যাম্) সৃষ্ট ব্যাক্ত প্রকৃতির উপাসনা ( রতাঃ) রত ( তে) তারা ( উ) নিঃসন্দেহে ( ততঃ)তা থেকেও ( ভূয় ইব) অধিকতর ( তমঃ) অবিদ্যারূপ অন্ধকারে ( প্রবিশন্তি) প্রবেশ করেন।
তাহলে এমন বেদ বিরোধী মূর্তি পূজা করা পৌরাণিকদের অধর্ম কার্য্য বলা যায় নয় কি?কারণ,শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণ(৬/১/৪০) এ বলা হয়েছে-
বেদপ্রণিহিতো ধর্মো হ্যধর্মস্তদ্বিপর্যয়ঃ।
অর্থাৎ যা বেদবিহিত, তাই ধর্ম আর যা বেদনিষিদ্ধ তাই অধর্ম। বেদ স্বয়ং ভগবানের স্বরূপ। বেদ তাঁর স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস এবং স্বয়ংপ্রকাশ জ্ঞান- আমরা এরকমই শুনেছি।
প্রশ্ন-৮. পরমেশ্বর ক্লেশ যুক্ত না কি ক্লেশ রহিত? যদি ক্লেশ যুক্ত হয় তো তাঁহাকে ক্লেশ থেকে কে কিভাবে মুক্ত করবে? যদি ক্লেশ মুক্ত হয় তো, তাঁহার ক্ষুদা, তৃষ্ণা লাগবে না, আর যদি ক্ষুদা তৃষ্ণা না লাগে তো তাঁহাকে ভোজন আদি করিয়ে সুখী কিংবা আনন্দিত করার জন্য পাখণ্ডতা কেন করেন?
প্রশ্ন-৯. যদি মূর্তি পূজায় কেবল ভাবনা মাত্র হয় তো বেদ প্রমাণ দ্বারা সিদ্ধ কর যে এই ভাবনা সত্য তথা ভাবনা করলেই কি কোন বস্তুতে যে গুণ নেই সেই গুণ উৎপন্ন হয়ে যায়?
প্রশ্ন-১০. যখন পুরাণেই মূর্তি পূজারীকে 'গাধা' বলে নিন্দা করা হয়েছে তারপরও কেন 'গাধার' কার্য্য করেন? শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ ১০/৮৪/১৩।
প্রশ্ন-১১. পরমাত্মাও কি ঘুমান এবং জাগেন? যদি বলেন "হ্যাঁ" তাহলে তো তিনি বিকারী হয়ে যাবেন।যদি বলেন "না" তাহলে নিম্নের এই শ্লোক আদি বলে কেন মিথ্যা প্রচার করেন, আর পরমাত্মাকে কেন ঘুম পাড়ান তথা জাগ্রত করেন?
উত্তিষ্ঠ কমলাকান্ত মঙ্গলা যতনো হরি।।
আয়তাভ্যাং বিশালাভ্যাং লোচনাভ্যাং দয়ানিধে।
করুণাপূর্ণ নেত্রাধ্যাং কুরু নিদ্রাং জগৎপতে।।
প্রশ্ন-১২. শ্রীমদ্ভাগবত- ৮/৭/২৩ শ্লোকে বলা হয়েছে যে,
অর্থ : হে বিভো, আপনি স্বপ্রকাশ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ। আপনি আপনার স্বশক্তির দ্বারা এই জড় জগৎ সৃষ্টি করেন, এবং ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর নাম ধারণ করে সৃষ্টি, পালন এবং সংহার কার্য সম্পাদন করেন।
এই শ্লোক হতে বোঝা যায় যে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব এই তিন নাম পরমেশ্বরেরই। পরমাত্মা সর্বশক্তিমান, সর্বোপরি একমাত্র স্বামী।তাঁহার কোন কিছুতেই ভয় নেই, না তিনি কোন ত্রিশুল, চক্র, তলোয়ার, গদা আদি ধারণ করেন, যা দ্বারা কাউকে হত্যা করবেন। তো আপনারা ত্রিশুলধারী শিব, চক্রধারী বিষ্ণুর মূর্তিকে পরমাত্মার মূর্তি মানেন কিভাবে? এর দ্বারা তো ঈশ্বর ভীতু সিদ্ধ হয়, যিনি হাতিয়ার সাথে রেখেই চলাফেরা করে, আপনারা এই মূর্তি দ্বারা পরমাত্মাকে হেয় করছেন তাই নয় কি?
প্রশ্ন-১৩. শিবলিঙ্গ শিবের মুত্রেন্দ্রিয় দেবীভাগবত- ৫/১৯/১৯ শ্লোকে বলা হয়েছে, সাথে শিব ও শিব উপাসকদের ঘোড় নিন্দা করা হয়েছে তো আপনারা তাও কেন শিবের পূজা করেন? শিবের হাত, পা, মাথা আদি পুরো শরীর ছেড়ে কেবল লিঙ্গকেই কেন পূজা করেন? না কি শিবের চেহারাই ছিলো লিঙ্গের মতো?
প্রশ্ন-১৪. দেবীভাগবত পুরাণ-৫ম স্কন্ধ /১৯তম অধ্যায়ে বিষ্ণু, শিব, ব্রহ্মা, ইন্দ্র, অগ্নি আদির উপাসকদের ঘোড় নিন্দা করা হয়েছে এবং ৪র্থ স্কন্ধ /১৩তম অধ্যায়েও ব্রহ্মা,বিষ্ণু,ইন্দ্র, মহাদেব আদিকে সুখ-দুঃখের বশিভূত বলা হয়েছে এবং এদের নিন্দাসূচক কর্মের কথন করা হয়েছে তারপরও কেন তাদের মূর্তি বানিয়ে পূজা করেন?
প্রশ্ন-১৫. যখন পরমাত্মা সর্বব্যাপক, সমস্ত বিন্দু কণাতেও আছেন, তাহলে আপনি নিজে শরীরের বাহিরের পদার্থে কেন খুঁজেন, এটা কি অজ্ঞানতা নয়?
প্রশ্ন-১৬. আত্মা এবং পরমাত্মার মধ্যে কি প্রকার দূরত্ব রয়েছে? কেননা দূরত্ব তিন প্রকার হয়ে থাকে যথা- ক. দেশের দূরত্ব, খ. কাল /সময়ের দূরত্ব গ.অজ্ঞানতার দূরত্ব। এর মধ্যে প্রথম দূরত্ব পরমাত্মার জন্য প্রযোজ্য নয়,কারণ পরমাত্মা সর্বব্যাপক অর্থাৎ সর্বত্র উপস্থিত। দ্বিতীয়টিও প্রযোজ্য হবে না কেননা পরমাত্মা সম্পর্কে এমন কথন হয়না যে তিনি প্রথমে /পূর্বে ছিলেন বা ভবিষ্যতে হবেন/থাকবেন বা বর্তমানে নেই। পরমাত্মা নিত্য, তৃতীয় রইল অজ্ঞানতার জন্য দূরত্ব, তিনি সর্বব্যাপক, সকল বিন্দু কণাতেও বিরাজমান হওয়া সত্ত্বেও অজ্ঞানতার কারণে নিজের মধ্যে অনুভব হয় না বা করতে পারা যায় না। এই অজ্ঞানতার দূরত্বটা সমাধান হলেই প্রত্যেকে নিজ আত্মায় পরমাত্মাকে অনুভব করতে পারবে। এইজন্য নিজের বাহিরে তাঁহাকে খুঁজে ফেরা অজ্ঞানতা নয় কি?
প্রশ্ন-১৭. আপনারা মানেন যে, পরমাত্মা সর্বব্যাপক হওয়ায় মূর্তিতেও ব্যাপ্ত রয়েছে, কিন্তু উপাসকের আত্মা মূর্তিতে প্রবেশ করে পরমাত্মাকে দর্শন কিংবা পরমাত্মা সহিত মিলিত হতে পারবে না। মিলন সেখানেই হবে যেখানে আত্মা-পরমাত্মা দুইই উপস্থিত হবে আর এমন স্থান স্বয়ং উপাসকের অন্তঃকরণ, যেথায় আত্মা পরমাত্মা উভয়ই বিদ্যমান রয়। ধ্যানাবস্থিত হলে পরে দুইয়ের সাক্ষাৎকার সেই স্থানেই সম্ভব, তাহলে মূর্তি পূজা তো পরমাত্মা ও জীবাত্মার মিলনের মধ্যে বাধক স্বতঃ সিদ্ধ, তারপরও আপনারা এই ব্যার্থ কর্মকে কেন করেন?
প্রশ্ন-১৮. পরমাত্মা দর্শন কোন বস্তু নয় কেননা তিনি নেত্র ইন্দ্রিয়ের বিষয় নহে, তিনি বধির নয় যে, ঘন্টা আদি বাজিয়ে অথবা উচ্চ স্বরে ভজন করে ডাকবে, সমস্ত বাহ্য জগৎ থেকে ইন্দ্রিয়কে অন্তর্মুখী প্রবৃত্তি করে ধ্যান করা হয় পরমাত্মাকে অনুভব করার জন্য ,আর ধ্যান করার সময় চোখ বন্ধ করে নিতে হয়, যেন চিত্ত একাগ্র হয়। তো মূর্তিকে নিরূপযোগিতা স্বতঃ কেন মানেন না?
প্রশ্ন-১৯.মূর্তি পূজাকে পরমাত্মার উপাসনার মধ্যে সিঁড়ি বলাও বুদ্ধি বিরুদ্ধ কথন, কেননা সিঁড়ি সদৈব সেখানেই ব্যাবহার করা হয়, যে স্থানে লক্ষ্য এবং উপযোগকর্তার মধ্যে দেশ তথা জায়গার দূরত্ব হয়। এজেন্ট বা দালাল সেইখানেই প্রয়োজন যেখানে দুইয়ের মধ্যে দেশ তথা জায়গার দূরত্ব থাকে। উপাসক ও উপাস্য পরমাত্মার মধ্যে দেশের তথা জায়গার দূরত্ব নেই, আর এ না হওয়ায় মূর্তিপূজা নামক সিঁড়ি বা মধ্যস্থতার কোন আবশ্যতা নেই। এমন মান্য করা ঘোড় অজ্ঞানতা নয় কি?
প্রশ্ন-২০. মূর্তিতে না কেহ প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে আর না ওতে কোন শক্তি হয়। ইতিহাস সাক্ষী যবনরা লাখো মন্দির ভেঙ্গে দিয়েছিলো, মূর্তি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিয়েছিলো। বর্তমান সময়েও এমন হয়, পূজারি মূর্তিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য তালা বদ্ধ করে রাখে। তো এমন দশাতেও মূর্তিকে পরমাত্মা মেনে পূজা করা, এর দ্বারা নিজ জীবন বরবাদ করা বা অযথা সময় ও অর্থ নষ্ট করা আপনার অজ্ঞানতা নয় কি? আপনি নিজে দেখেও মূর্তি যে যোগ্যতাহীন তা বুঝতে পারেন না?
প্রশ্ন-২১. মূর্তির লক্ষণ হলো যে, যার অবয়ব জড়, তো চৈতন্য জ্ঞানবান, শক্তিসম্পন্ন অমৃতের পুত্র হয়েও যে ব্যক্তি - জড় মূর্তি তথা পাথরের, মাটির মূর্তিকে পূজা করে তাকে ভ্রান্ত- ঘোড় অজ্ঞানি মানাই যুক্তি যুক্ত নয় কি?
প্রশ্ন- ২২. অন্য ধর্মাবলম্বীরা (মতবাদীরা) তাঁদের ঈশ্বরকে উপাসনা করতে পারে মূর্তি ছাড়াই এবং করেও থাকে৷ তো আপনাদের কেন "পরমাত্মার" উপাসনা করতে পাথর,মাটির মূর্তির প্রয়োজন হয়? আপনাদের কি তাদের মতো জ্ঞান, বুদ্ধি নেই - সোজা পরমাত্মার উপাসনা করার মতো?
প্রশ্ন-২৩. যখন বেদ ই 'ন তস্য প্রতিমা অস্তি' বলে ঘোষণা করেছেন যে পরমেশ্বরের কোন প্রতিমা/প্রতিকৃতি, উপমা দেওয়ার মতো কোন মূর্তি বা অন্য জড় বস্তু নেই কেননা তিনি অনন্ত, অনাদি, নিরাকার , তাহলে তাঁহার মূর্তি নিজ কল্পনা দ্বারা নির্মাতা আপনারা বেদ বিরোধী নাস্তিক নয় কি?
প্রশ্ন-২৪.নিত্য সর্বব্যাপক পরমাত্মার অবতরণ হতে পারে না, অবতরণ বা আরোহণ একদেশীয় সত্ত্বার হয়ে থাকে, তো কৃষ্ণাদিকে পরমাত্মার অবতারই সিদ্ধ হয় কিভাবে? যদি সিদ্ধই না হয় তাহলে তাঁহার শরীরের আকৃতির মূর্তি তৈরি করে পূজা দ্বারা পরমাত্মার কোন সম্বন্ধও সিদ্ধ হয় না। রাম এবং কৃষ্ণ ও অন্যান্য আপ্ত পুরুষগন পরমাত্মার ভক্ত ছিলেন নাকি পরমাত্মা ছিলেন, যাঁদের শরীরের মূর্তি তৈরি করে পূজা করেন?
প্রশ্ন-২৫. আপনি মূর্তি পূজা করেন না কি সর্বব্যাপী পরমেশ্বরের? যদি মূর্তিকে করেন তো মূর্তির হাত,পা, নাক আদি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর কেন পূজা করেন না? যদি সর্বব্যাপী পরমেশ্বর এর পূজা করেন তো - সেই মূর্তি যে পদার্থ দিয়ে তৈরি করা হয় তাতেও ঈশ্বর ব্যাপক তথা বিশ্বের সমস্ত পদার্থেই ঈশ্বর ব্যাপক তাহলে সেই পদার্থগুলোর পূজা কেন করেন না? কোন এক নির্দিষ্ট সময়ে মূর্তির নিকটে গিয়ে মূর্তির পূজা কেন করেন? এই নির্দিষ্ট সময়ে মূর্তির পূজা করেন নাকি ঈশ্বরের?
প্রশ্ন-২৬. যখন পরমাত্মাকে কেহ চোখ দ্বারা দেখেইনি আর তিনি অগোচর হওয়ায় ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য নয়, তো আপনি কিভাবে নিশ্চিত করতে পারেন যে আপনার কল্পিত মূর্তি পরমাত্মার চেহারার মতো হয়? আপনাদের তৈরি বিভিন্ন প্রকার চেহারার মূর্তিই সিদ্ধ করে যে পরমাত্মার আকৃতি সম্পর্কে আপনাদের জ্ঞান নেই।
প্রশ্ন-২৭. মূর্তিতে যেমন ঈশ্বর ব্যাপক তেমনি ফুলেও ঈশ্বর ব্যাপক। তাহলে আপনি ফুলের মালা কেন মূর্তিতে পড়ান?
প্রশ্ন-২৮. যে পরমাত্মা- সূর্য, চন্দ্রমা, বিদ্যুতের মতো প্রকাশমান লোক বা তত্ত্বকে নির্মাণ করেছেন, যিনি বিশ্বের সকলকে ভোজন প্রদান করেন, সেই পরমাত্মাকেই ভোগ দিয়ে বা দেওয়ার চেষ্টা করে অপমান করেন কেন?
প্রশ্ন-২৯. প্রত্যেক জীবের শরীরে বিদ্যমান একদেশীয় নিরাকার জীবাত্মারও মূর্তি আপনি বানাতে পারবেন না, তো বিশ্বব্যাপী অনন্ত পরমেশ্বরের মূর্তি তৈরির পাখণ্ডতা আপনার ঘোড় অজ্ঞানতা নয় কি?
প্রশ্ন-৩০. সাকারে যদি মন স্থির হয়! তাহলে জগতে মনুষ্য, স্ত্রী, পুত্র, ধন এবং মিত্র প্রভৃতি সাকার পদার্থ এবং সাকার পদার্থে আবদ্ধ হওয়া সত্বেও কেন মন স্থির হয় না? কেন নিরাকারে যুক্ত হয়েই সকলের মন স্থির হয়?
প্রশ্ন-৩১. যদি এমন বলেন যে মূর্তি পূজা চিত্ত একাগ্র করার সাধনা তাহলেও ঠিক নয় কেননা মূর্তির আরতি করা, ঘণ্টি বাজানো, মূর্তির সামনে হাত জোড় করা, শষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ করা আদি বিভিন্ন ক্রিয়া একাগ্রতায় বাধা হয়, তো কিভাবে এই কথা সিদ্ধ করবেন? মূর্তি পূজা একাগ্রতায় সাধন কিভাবে?
পদার্থঃ- (যঃ) যে মনুষ্য (আর্ষং চ ধর্মোপদেশম্) বেদ এবং ঋষিবিহিত ধর্মোপদেশ অর্থাৎ ধর্মশাস্ত্রের (বেদশাস্ত্র-অবিরোধিনা তর্কেণ অনুসন্ধত্তে) বেদশাস্ত্রের অনুকূল তর্কের দ্বারা অনুসন্ধান করে (সঃ ধর্মং বেদ ন + ইতরঃ) সে ই ধর্মের তত্ত্বকে জানতে পারে অন্য কেহ নহে।
অনুবাদঃ- যে মনুষ্য ঋষিবিহিত ধর্মোপদেশ অর্থাৎ ধর্মশাস্ত্রকে বেদ শাস্ত্রের অনুকূল তর্কের দ্বারা অনুসন্ধান করে, সেই ধর্মকে জানতে পারে অন্য কেহ নয়।।
কোন পৌরাণিক ব্যক্তি রাগ করবেন না,আশা করি বিবেক দ্বারাই বিবেচনা করবেন।