অবতারবাদ কিভাবে মানব সমাজকে বিভক্ত করে ?

সাত রং
0

                       


অবতারবাদ কিভাবে মানব সমাজকে বিভক্ত করে ?

প্রথমতঅবতারবাদ মানে বিচ্ছিন্নতাবাদ। মানুষ ভিন্ন ভিন্ন অবতার বানিয়ে নিজের অবতারকে শ্রেষ্ঠ অন্যের অবতারকে নিকৃষ্ট মনে করে। পরস্পরের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি করে দূরত্ব তৈরি করে।


দ্বিতীয়ত যে কোন মানুষ সে নিজেকে অবতার রূপে ঘোষণা করে, মানুষকে বোকা বানাতে পারে তার ফলে বহু সম্প্রদায়ের তৈরি হয়। আজ দেশের মধ্যে যে বহু সম্প্রদায় দেখা যাচ্ছে তা অবতারবাদ দ্বারা তৈরি হয়েছে। শিবকে অবতার ভেবে শৈব সম্প্রদায় তৈরি হয়, বিষ্ণুকে অবতার ভেবে বৈষ্ণব সম্প্রদায় তৈরি হয়। বর্তমানে আশারাম বাপুকে অবতার ভেবে লোক তার পূজা করেছিল। গুরমিত রাম রহিমকেও অবতার ভেবে তার পূজা করেছিল। অনুকূল বাবাকে অবতার ভেবে মানুষ পূজা করছে। ফলে বহু মতের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যের গুরুকে নিচু দৃষ্টিতে দেখে। ফলে নিজের নিজের গুরুর প্রশংসা করতে কেউ পিছপা হয় না। আজ তো সমাজের মধ্যে কতো যে অবতারের নাম শোনা যায় তার ইয়ত্তা নেই। যুগাবতার জ্ঞানানন্দ, যুগাবতার রামকৃষ্ণ, যুগাবতার যুক্তেশ্বর গিরি, পরমবতার গিরিজানন্দ ইত্যাদি। এদের তালিকা এতই বড় যে সকলের নাম উল্লেখ করতে গেলে একটি বই তৈরি হয়ে যাবে।

গুরুকে অবতার সিদ্ধ করার শ্লোক হল,----

  • গুরুর্ব্রহ্মাগুরুর্বিষ্ণু: গুরুর্দেবোমহেশ্বরঃ

  • গুরুঃসাক্ষাত্পরব্রহ্মতস্মৈশ্রীর্গুরবেনমঃ।

----- গুরুকে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, দেব, মহেশ্বর, সাক্ষাত্ পরব্রহ্ম বলা হয়েছে। এগুলো সব অতিশয়োক্তি করে বলা হয়েছে। বাস্তবে এগুলি সব ঈশ্বরের গৌনিক নাম যা অল্পজ্ঞ অল্প সামর্থ্যবান একজন গুরুর মধ্যে হওয়া কখনো সম্ভব নয়

  অবতারবাদের উৎপত্তি কোথা থেকে হল???

এটা আমরা জানি যে বেদাদি শাস্ত্রে অবতারবাদের কোন স্থান নেই। শরীর ধারনের কোনো প্রয়োজন সম্ভাব্য কারণ না থাকায় ঈশ্বরের অবতার হওয়ার কোন দরকার নেই। এখন প্রশ্ন হয় এই অবতারবাদ যদি বেদ অনুমোদিত নয় তবে এর উৎপত্তি কোথা থেকে হল??

মহাভারতের মূল অংশে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতার তত্তের কোন অনুসঙ্গ পাওয়া যায় নাতবে হরিবংশ নামক প্রক্ষিপ্তাংশেই সর্ব প্রথম শ্রীকৃষ্ণের অতিমানবীয় রূপের বর্নণা পাওয়া যায়যাহা অপেক্ষাকৃত আধুনিক বলে কথিত আছেতাছাড়া শ্রীকৃষ্ণের জন্ম সম্পর্কিত কোন বিবরণ মহাভারতে উল্লেখ না থাকায়, এই দুর্বল সড়ক ধরে পুরাণ প্রণেতারা নিজ নিজ সম্প্রদায়ের ইচ্ছার অনুকুলে বেদবাহ্য যুক্তিহীন নানা কুরুচিকর পুস্তক লিখে ব্যাস দেবের নামে প্রচার করেছেনযাহা মূলতঃ বৈদিক পরবর্তী সময়ের শীর্ণয়মান মানষীকতার রুগ্ন অভিব্যক্তি 

অবতারবাদের প্রচারক হলো মুখ্যতঃ পুরাণ। ক্ষুদ্রাশয় মানুষের দ্বারা রচিত এই পুরানগুলি মহাপুরুষদেরকে অবতার রূপে কল্পনা করেছে। যেমন বিষ্ণুপুরাণ বিষ্ণু অবতারের, শিব পুরাণ শিব অবতারের, ব্রহ্মপুরাণ ব্রহ্মা অবতারের উল্লেখ করেছে। এইরকম প্রায় 18 টি পুরান অবতার গুলির কথা বলছে।

       

ভাগবত পুরাণ মতে বিষ্ণুর অবতার
ভাগবত পুরাণ-এর প্রথম স্কন্দে সংখ্যাক্রম অনুসারে বিষ্ণুর যে বাইশ অবতারের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা নিম্নরূপ ক্রমিক নাম বিরবণ
১. চতুর্সন [ভাগবত ১/৩/৬] ব্রহ্মার চার পুত্র
২. বরাহ [ভাগবত ১/৩/৭] বন্য শূকর
৩. নারদ [ভাগবত ১/৩/৮] ভ্রাম্যমাণ ঋষি
৪. নর-নারায়ণ [ভাগবত ১/৩/৯] যমজ
৫. কপিল [ভাগবত ১/৩/১০] দার্শনিক
৬. দত্তাত্রেয় [ভাগবত ১/৩/১১] ত্রিমূর্তির যুগ্ম অবতার
৭. যজ্ঞ [ভাগবত ১/৩/১২] সাময়িকভাবে ইন্দ্রের ভূমিকা গ্রহণ করা বিষ্ণু
৮. ঋষভ [ভাগবত ১/৩/১৩] রাজা ভরত ও বাহুবলীর পিতা
৯. পৃথু [ভাগবত ১/৩/১৪] যে রাজা পৃথিবীকে সুন্দর ও আর্কষণীয় করে তুলেছিলেন
১০. মৎস [ভাগবত ১/৩/১৫] মাছ
১১. কূর্ম [ভাগবত ১/৩/১৬] কচ্ছপ
১২. ধন্বন্তরী [ভাগবত ১/৩/১৭] আয়ুর্বেদের জনক
১৩. মোহিনী [ভাগবত ১/৩/১৭] সুন্দরী নারী
১৪. নৃসিংহ [ভাগবত ১/৩/১৮] নর-সিংহ
১৫. বামন [ভাগবত ১/৩/১৯] খর্বকায়
১৬. পরশুরাম [ভাগবত ১/৩/২০] পরশু অর্থাৎ কুঠার সহ রাম
১৭. ব্যাসদেব [ভাগবত ১/৩/২১] বেদ সংকলক
১৮. রাম [ভাগবত ১/৩/২২] অযোধ্যার রাজা
১৯. বলরাম [ভাগবত ১/৩/২৩] কৃষ্ণের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা
২০. কৃষ্ণ [ভাগবত ১/৩/২৩] রাখাল বা স্বয়ং ভগবান
২১. বুদ্ধ [ভাগবত ১/৩/২৪] জ্ঞানী
২২. কল্কি [ভাগবত ১/৩/২৫] ধ্বংসকারী

        
এই বাইশ অবতার ছাড়াও উক্ত গ্রন্থেও পরবর্তী অংশে আরও তিন অবতারের কথা আছে
১ প্রশ্নিগর্ভ [ভাগবত ১/৩/৪১] (প্রশ্নির সন্তান)
২ হয়গ্রীব [ভাগবত ২/৭/১১] (অশ্ব)
৩ হংস [ভাগবত ১১/১৩/১৯] (রাজহংস)

        গরুড় পুরাণ অনুসারে বিষ্ণুর দশ অবতার হলেন ক্রমিক নং নাম বিবরণ
১. মৎস মাছের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ হন
২. কূর্ম কচ্ছপের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ হন
৩. বরাহ শূকরের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ হন
৪. নৃসিংহ অর্ধ নর ও অর্ধ সিংহ রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ হন
৫. বামন বামনের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ হন
৬. পরশুরাম পরশু অর্থাৎ কুঠারধারী রামের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ হন
৭. রাম রামচন্দ্র, অযোধ্যার রাজপুত্রের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ হন
৮. কৃষ্ণ দ্বাপরযুগে ভ্রাতা বলরামের সঙ্গে অবতীর্ণ হন
৯. বুদ্ধ কলিযুগে অবতীর্ণ হন
১০. কল্কি সর্বশেষ অবতারহিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী,
কলিযুগের অন্তে তাঁর আবির্ভাব ঘটবে 

আলোচ্য ব্যাখ্যাঃ অবতারবাদকে সমাজ ও জাতির কাঁধের উপর চাঁপানের নিমিত্তেসত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি এই চারিযুগের সৃষ্টিএকযুগ থেকে অন্যযুগেরসময়ের ব্যবধান চার লক্ষ বত্রিশ হাজার বছর, আট লক্ষ চৌষট্টি হাজার বছর, বারোলক্ষ ছিয়ানব্বই হাজার বছর, সতের লক্ষ আঠাশ হাজার বছরএগুলো সবই পুরানেরকথাছক আকারে দেখা যাক পৌরানিক অবস্থা যুগ সময়সীমা অবতার

সত্য যুগ ১৭,২৮,০০০ বৎসর,
মৎস,কূর্ম,বরাহ,নৃসিংহ-পন্থা ঃ ভগবানের রূপে ধ্যান

ত্রেতা যুগ ১২,৯৬,০০০ বৎসর বামন,পরশুরাম,রাম-পন্থাঃভগবানের উদ্দেশ্যে যজ্ঞ নিবেদন

দ্বাপর যুগ ৮,৬৪,০০০ বৎসর বলরাম,কৃষ্ণ,বুদ্ধ-প্রন্থঃ ভগবানের শ্রীবিগ্রহের অর্চনা

কলি যুগ ৪,৩২,০০০ বৎসর কল্কি-এই ভবিষ্যৎ অবতার কলিযুগের শেষ পর্বে অবতীর্ণ হবেন বলে হিন্দুরা মনে করেনউনি ঘোড়ায় চড়ে ও তলোয়ার নিয়ে আসবে ধর্ম সংস্থাপন করার জন্যকল্কি- এখনো আসেনি তবে আসবেপৌরানিক উর্বর মস্তিষ্কের লেখা , তখন গদা, চক্র, তলোয়ার ইত্যাদি ছিল অস্ত্র আর এখন পিস্তল, গুলি , হাইড্রোজেন বোমার যুদ্ধ পৌরানিক লেখক ভাইদের মাথায় আজকের আধুনিক অস্ত্রের কথা মনে পড়েনি

  • পাঠকের জন্য ব্যাখ্যাঃ সত্য যুগসত্য যুগে চারভাগ সত্য বা শতভাগ পূণ্য ছিলগীতার ভাষ্য অনুযায়ী অন্যায়ের হাত থেকে পরিত্রানের জন্য অবতার জন্মগ্রহণ করেনসত্য যুগে যেহেতু শতভাগ পূণ্য ছিল সেহেতু মৎস, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ এই চার অবতারের প্রয়োজন ছিল? আবার বলা হয় সত্য যুগে ছিলেন হরি? এই হরিটা কে? এরপর দেখুন এই পূণ্য যুগের অবতার তথা মাছ, কচ্ছপ, শুকর এদের নামে কোন মঠ, মন্দির বা তীর্থ পীঠ নাইএদের নামে কোন গান, বাদ্য , লীলা, পালা কীর্তন, যুগল মিলন সমাজে প্রচলিত না অবতারবাদীরা এদের বংশ বিস্তার না করে ধরে ধরে খেয়ে ফেলছেভারতবর্ষ কেন পৃথিবীর কোথাও কোন হিন্দু মাছ, কচ্ছপ এবং শূকরদের পূজা করেন না এবং এই তিন অবতারের নামে কেউ কোন নাম কীর্ত্তন বা পদাবলীও গায় না আর অন্যটি নৃসিংহএকমাত্র ভাগবতে নর এবং সিংহ দ্বারা পাওয়া যায় নৃসিংহঅবতারঅর্ধেক মানুষ অর্ধেক সিংহ এমন জানোয়ার প্রজাতির কোন কিছূ পৃথিবীতে কখনও ছিল কি না তা কোন গবেষণায় পাওয়া যায় নানৃসিংহঅবতার হচ্ছে ভাগবত নামক পুস্তকের প্যাঁচালভাগবতকার এবং পুরাণকারদের উর্বর মস্তিষ্কের এসব বিকার গ্রস্থ কল্পনা এবং বাতুলতা

 

পাঠকের জন্য ব্যাখ্যাঃ ত্রেতা যুগত্রেতা যুগে তিনভাগ পূণ্য এবং এক ভাগ পাপতিন অবতার বামন, পরশুরাম ও রামচন্দ্রদুই অবতারের নামে কোন গান-বাদ্য সমাজে প্রচলিত নাইতবে বামন অবতার বেশ্যাগৃহে জন্ম নেন এবং ছলনার আশ্রয় গ্রহণ করে পরম দয়ালু এবং দাতা বলিরাজকে হত্যা করেছিলেনএখানে বামন অবতার পাষন্ড নয় কি? বামন অবতার সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করার প্রয়োজন আছে কি? পরশুরাম অবতার হয়ে নিজ মাতা রেনুকাকে হত্যা করে মাতৃঘাতক হন যে নিজ মাতাকে হত্যা করতে পারে সে আবার অবতার হয় কি করে? শুধু নিজ মাতা রেনুকাকে হত্যা করে সে থেমে থাকেনি এবং একুশবার পৃথিবীর ক্ষত্রিয় সমাজকে কচুকাটা করে হত্যা করেনপরে এই অবতার নাকি অনেক আদি রসের লীলা করেছিলেনবাল্মীকি রামায়ণে প্রমাণ পাওয়া যায় মহাত্মা রামচন্দ্রের কথা রামচন্দ্র মানবীয় গুণাবলীল এক উজ্জল দৃষ্টান্তরামচন্দ্রের দেহ নাকি চার অংশে ভাগ হয়ে অর্ধেক রামচন্দ্র, বাকী অর্ধেকের অর্ধেক ভরত এবং সিকি অংশে লক্ষণ এবং শত্রুঘ্ন হয়ে জন্মেছিলেনরামচন্দ্র এবং সীতাদেবীকে নিয়ে কোন কামজ, যৌনাত্মক রসাল এবং কদর্য গান, কীর্তন এবং পদাবলী রচিত হয় নাইকারণ বাল্মীক মুনির রামায়নের সীতা চরিত্র ভারতীয় আদর্শ নারীর গুণাবলীতে বলিয়ানএই জন্য পুরাণকারেরা সীতাদেবী এবং রামচন্দ্রের চরিত্রে কোন প্রকার কালিমা লেপন করতে সাহসী হয় নাই কৃত্তিবাস ওঝা রচিত বাংলা রামায়ণে মুল বাল্মীকি রামায়ণের ভাবধারা ধ্বংস ও নষ্ট ভ্রষ্ট করেছেসীতাকে হরন করে রাবন নিয়ে যায় অথচ ভগবান হয়ে কিছুই জানে নাগাছের নিকট, পাহাড়ের নিকট ইত্যাদি কাছে জিজ্ঞাসা করে আমার সীতাকে দেখছো নিকি অদ্ভূত ! যেহেতু ত্রেতা যুগ তিনভাগ পূণ্য এক ভাগ পাপ সেহেতু তিন অবতারের প্রয়োজন ছিল কি?

দ্বাপরযুগে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা বলরাম সহ অবতীর্ণভাগবত পুরাণ-অনুসারে দ্বাপরযুগে অনন্ত নাগের অবতার বলরামরূপে কৃষ্ণে সঙ্গে অবতীর্ণ হনঅধিকাংশ বৈষ্ণব শাখা সম্প্রদায় বলরামরূপে কৃষ্ণের সঙ্গে অবতীর্ণ হনবৈষ্ণব শাখা সম্প্রদায় বলরামকে বিষ্ণুর অবতার বলে মনে করেনযে সকল সূত্রে বুদ্ধের কোনো উল্লেখ নেই সেখানে বলরামকে বিষ্ণুর নবম অবতার রূপে দশাবতারের অন্তর্ভূক্ত করা হয় বলরাম-কোনো কোনো মতে বিষ্ণুর নবম অবতার

পাঠকের জন্য ব্যাখ্যাঃ দ্বাপর যুগদ্বাপর যুগে অর্ধেক পূর্ণ বাকী অর্ধেক পাপদ্বাপরযুগে ঈশ্বর নাকি বলরাম এবং বুদ্ধদেব হয়ে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন বলরামের পিতা বাসুদেবের দুই জন স্ত্রী ছিল দেবকী এবং রোহিনীরাজা কংস বাসুদেব এবং দেবকীকে কারাগারে বন্দী করে রেখেছিলেন তখন যমুনা নদীর অপর পাড়ে সাত-আট বছর একাকী জীবন যাপনকারী রোহিনী বলরামকে জন্ম দেনবলরাম নাকি কাদম্বরী মদপানে সকল সময় বিভোর থাকতেন এবং হল অর্থাৎ লাঙ্গল দ্বারা যুদ্ধ করতেনএকবার ভেবে দেখুন পাঠক কত অদ্ভুত পুরাণের প্যাঁচাল আর মিথ্যাচার বলরামের নামে হিন্দুরা খূব মাতামাতি করে নাযা কিছু করে অর্থাৎ নাম কীর্ত্তন/পদাবলী কৃষ্ণের নামে কিন্তু ভাগবতে প্রমাণ পাওয়া যায় কৃষ্ণের বাল্য লীলা, কৃষ্ণের নাম দশ অবতারের মধ্যে নেই পুরাণকার এবং ভাগবতকার জোর করে কৃষ্ণকে অবতার করে ছেড়েছেন এবং কামজ লীলা করার জন্য ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে রাধার জন্ম দিয়ে যমুনার জলে খেলা, রাসলীলা, কুব্জাসমাগম, ননী-মাখনচুরি, রাক্ষসবধ, পরকীয়া প্রেম, সখীপ্রেম, বস্ত্রহরণ, গোবর্ধন হস্তে ধারণ, মামী-ভাগিনা প্রেম প্রভৃতি গালগল্প পুরাণের মাধ্যমে কৃষ্ণের জীবনে জুড়ে দিয়ে একদল মানুষ গোঁসাই, বৈরাগী, প্রভুপাদ, মোহন্ত, গোস্বামী এবং স্বামীজী সেজে পরনারীদের সাথে এই সকল অনুষ্ঠানের লীলাখেলা সমানে চালিয়ে যাচ্ছেন বৈষ্ণবরা বলেন কৃষ্ণ আশ্রয়তত্ত্বআর সব অবতার আশ্রিত প্রামাণ্য শাস্ত্র সমূহের কোথাও এটি লিপিবদ্ধ নেইমনগড়া কথা তাঁদের বক্তব্যের মূলধারা হলো অন্ধ বিশ্বাসের আলো-আঁধার
ভাগবত পুরাণে - কৃষ্ণকে প্রায়শই বংশী-বাদনরত এক কিশোরের রূপে র্বণনা করা হয়েছে
ভগবদগীতায় তিনি এক পথপ্রর্দশক এবং সহায়ক তরুণ রাজপুত্র
মহাভারত কাব্যে তিনি একজন কূটনীতিজ্ঞ হিসাবে পান্ডবপক্ষে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন, কুরুক্ষত্রেরে যুদ্ধে র্অজুনের রথের সারথীরূপে অবর্তীন হয়েছেন
হিন্দু দর্শন ও ধর্মতাত্ত্বিক ঐতিহ্যে কৃষ্ণ-সংক্রান্ত উপাখ্যানগুলি বহুধা পরিব্যাপ্ততাঁকে কল্পনা করা হয়ে থাকে বিভিন্ন রূপে: কখনো শিশুদেবতা, কখনো রঙ্গকৌতুকপ্রিয়, কখনো আদর্শ প্রেমিক, কখনো দিব্য নায়ক, আবার কখনো বা সর্বোচ্চ ঈশ্বরকৃষ্ণ-সংক্রান্ত উপাখ্যানগুলি মূলত লিখিত আছে মহাভারত, হরিবংশ, ভাগবত পুরান ও বিষ্ণু পুরাণ গ্রন্থে

চতুর্থ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকেই বাসুদেব, কৃষ্ণ ও গোপাল প্রভৃতি কৃষ্ণের নানা রূপের পূজাকারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অস্তিত্বের কথা জানা যায় খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দীতে দক্ষিণ ভারতে কৃষ্ণভক্তি আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েউত্তর ভারতে কৃষ্ণধর্ম সম্প্রদায়গুলি সুপ্রতিষ্ঠিত হয় মোটামুটি একাদশ শতাব্দী নাগাদদশম শতাব্দী থেকেই ভক্তি আন্দোলনের ক্রমবিস্তারের ফলে কৃষ্ণ শিল্পকলার এক মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠেনওড়িশায় জগন্নাথ, মাহরাষ্ট্রে বিঠোবা, রাজস্থানে শ্রীনাথজি প্রভৃতি কৃষ্ণের রূপগুলিকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক ভক্তিসংস্কৃতিও বিকাশলাভ করে

এরপর গৌতমবুদ্ধসনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু জাতির ক্ষত্রিয়ের সন্তান হয়েও কিভাবে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক হলেন? আর বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক হওয়ার পরে কিভাবে তিনি হিন্দুদের নবম অবতার হলেন? গৌতম বুদ্ধ মুলতঃ নাস্তিকাবতার অর্থাৎ তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্বই মানতেন না ঈশ্বর নাকি বুদ্ধ অবতার হয়ে পাষন্ড বেশ ধরে অসভ্য মানুষগুলোকে বা অসুরদিগকে ধর্মের নানা উপদেশ দেন। (ভাগবত ২ স্কন্ধ ৭ অধ্যায়) ভাগবতকার বুদ্ধকে জোর করে অবতার বানিয়ে ছেড়েছেন

ভাগবতকারগন ক্ষত্রিয় রাজপুত্র মানবপ্রেমিক গৌতমবুদ্ধ ও বৌদ্ধ ধর্মকে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়েছেনবৌদ্ধালয়ং বিশেষজ্ঞ মহাপদ্যপি বৈদ্বজতস্যচ নিস্কৃতি নাস্তি প্রায়শ্চিত্ত শতেরপিনারদপুরাণ ১/১/১৫/৫০ অর্থাৎ মহা বিপদেও যদি কোন দ্বিজ বৌদ্ধ গৃহে প্রবেশ করে তবে শত শত প্রায়শ্চিত্তেও তাঁর নিষ্কৃতি নাইএত ভীতি দেখানেরার পরেও যখন কোন ফল হলো না, যখন সমগ্র ভারত ও বহির্ভারতকে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রাস করে ফেলল তখন নিরুপায় হয়ে হিন্দু সমাজ বৌদ্ধসমাজের সাথে আপোষ করলবুদ্ধকে তখন নবম অবতার করা হলধ্যান স্তিমিত বুদ্ধ মূর্তিতে সর্প জড়িয়ে বাঘের চামড়া পরিয়ে কানে ধূতরার ফুল গুঁজে শিবঠাকুর করা হল বৌদ্ধের পঞ্চশিলার মূর্তিকে পঞ্চ দেবতা করা হলবৌদ্ধের সংঘ-বুদ্ধ-ধর্ম এই তিন শরনোক্তিকে শ্রীক্ষেত্রের বৌদ্ধ মন্দিরে কৃষ্ণ-বলরাম-সুভদ্রামূর্তিতে স্থাপন করা হলবৌদ্ধ উৎসব, স্নান যাত্রা, রথযাত্রা ও চৈত্র সংক্রান্তিকে হিন্দু পর্বে পরিনত করা হলএই হলো আমার ধর্মের নবম অবতারের আবির্ভাব ও জীবোদ্ধারের কাহিনী

 

কলি

পাঠকের জন্য ব্যাখ্যাঃ কলি যুগপুরাণকাদের বাণী হল ঈশ্বর কল্কী রূপে জন্মে- অশ্বমাশুগমারুহ্য অসিনাহসাধু দমনম অর্থাৎ-কল্কী অবতার খুব দ্রুতগামী ঘোড়ায় চড়ে তরবারী দ্বারা পাপী মানুষদের হত্যা করে লীলা দেখাবেনহিমালয়ের পাদদেশে বিষ্ণুযশা ব্রাহ্মণের ঘরে শম্ভল গ্রামে তিনি জন্ম নেবেনকল্কি অবতার এখনো জন্ম গ্রহণ করেন নাই তবে পুরাণকারেরা কোন যোগাযোগের মাধ্যমে ভগবানের কাছ থেকে কল্কীর আগাম আগমণ বা জন্মের সংবাদ পেলেনপৌরাণিক যুগে যুদ্ধ হতো তরবারী, বর্শা, গদা, তীর, ধনুক,ঘোড়া এবং রথ দ্বারাতাই পুরাণকারেরা লিখেছেন ঘোড়া আর তরবারীর কথা বর্তমানের হাইড্রোজেন বোমা, আনবিক বোমার কথা ক্ষেপনাস্ত্রের কথা এবং কোন শক্তিশালী যুদ্ধাস্ত্রের কথা নেইএই অবতারদের দোহাই দিয়ে বর্তমানে বাংলা এলাকায় অবতার শুধু গজাচ্ছেযেমন বলা যায় শ্রীচৈতন্য গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু চৈতন্য অবতার, ইসকনীরা তাকে কৃষ্ণের অবতার বলে ঘোষনা করেছে এবং তিনি নাকি রাধা-কৃষ্ণের মিলিত তুনুচৈতন্য মহাপ্রভুর মৃত্যুর প্রায় ৮০ বছর পর কৃষ্ণদাস কবিরাজ এই অবতারের আবিস্কারকএখন প্রশ্ন জাগে কিভাবে কল্কী অবতারের আগে চৈতন্য অবতার হলেন? এবং দশ অবতারে তাঁর নাম নেইতারপরও আছে রামকৃষ্ণ, নিগমানন্দ, বালক ব্রহ্মচারী, লোকনাথ, প্রভাতরঞ্জন (আনন্দমার্গী), অনুকুল ঠাকুর (সৎসঙ্গ), হরিচাঁদ ঠাকুর (মতুয়া সম্প্রদায়), জগৎবন্ধু সুন্দর (মহা অবতারী), আনন্দময়ী মা, অরবিন্দ, অচ্যুতানন্দ এবং সতীমা প্রভৃতির কথা বলা যেতে পারে এবং আরো আছে  এই সকল অবতারদের বাণী, কাজ, আচার আচরণ এবং সাধন পদ্ধতি পরস্পর বিরোধীএরা সকলেই অখন্ড আর্য (হিন্দু) জনসমাজের মানুষদের মধ্যে বিভেদ বৈষম্য এবং দল সৃষ্টি করেছেন অবতারবাদ প্রসারের জন্য সাধারণ লোকের অজ্ঞতা কুৎসিত চিন্তা, স্বার্থ বোধ এবং অন্ধ বিশ্বাস কাজ করেছে

 
গৌরাঙ্গ মহাপ্রভূ উনা কৃষ্ণের অবতার বলেনআরো বলেন উনি রাধা ও কৃষ্ণের মিলিত তনুরাধা ও কৃষ্ণের যুগে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু মা-বাবা ছিল কি? প্রায় ৫০০ বছর আগে বিষ্ণু প্রিয়া ও শচী মাতার মাধ্যমে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর জন্ম হয় তাহলে বৈজ্ঞানিকভাবে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু মা-বাবা মিলিত তুন হওয়ার কথা কিন্তু সেখানে কয়েক হাজার বছর আগে রাধা-কৃষ্ণের কাহিনী এবং রাধা ও কৃষ্ণের মিলিত তনু হয় কি করে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুএগুলো হাজারো প্রশ্নের জন্ম দিয়ে চলেছেকিন্তু সমাধান নেইজ্ঞানী পাঠকের কাছে আমার বিনিত জিজ্ঞাসা আমরা সনাতন ধর্মে আছি?

কলিযুগে অবতারের অভাব নেইগেরুয়া কাপড় পড়ে কিছু শ্লোক ও মন্ত্র আওড়াতে পারলেই হলো জীবিত না হলে মৃত অবস্থায় একটা মূর্তি বানিয়ে তাকে অবতার বানিয়ে ছাড়বে

 

নূতন নূতন মত জন্ম নিচ্ছে। নূতন পন্থ এবং প্রস্থের সৃজন হচ্ছে নতুন নূতন অবতার , ভগবান , আচার্য এবং ৎ গুরু  প্রকট হাচ্ছে ন। কোন নূতন মত দাড় করানো  ভারতবর্ষে  কোনাে কঠিন কাজ নয়। যে ব্যক্তি নূতন মত চালায় সে গীতার দুইটি শ্লোকের সহায়তায় ভগবান হওয়ার ছলনা প্রতারনা করতে প্রারম্ভ করে

  • যদা যদাহি ধর্মস্য গ্লানি ভবতি ভারত 
  •  অভ্যূত্থানম ধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম।। 
  • পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশয় দুষ্কৃতাম  
  • ধর্ম সংস্থাপনার্থায় সম্ভাবামি যুগে যুগে।।

অর্থা ) সাধুদের রক্ষার জন্য ) দুষ্টদের নাসের জন্য ) ধর্মের স্থাপনার জন্য আমি যুগে যুগে জন্ম নিই


ব্যাস এটাই - মূলেই ভুল পাখন্ডিরা এখান থেকেই প্রেরনা প্রাপ্ত হয়। যদি এই শ্লোকের অর্থ এটাই হয় যে ভগবান যুগে যুগে এই তিনটি কাজ করার জন্য শরীর ধারন করার কষ্ট করেন তাহাল মেনে নেওয়া উচি যে এই শ্লোকের রচয়িতা  কোন বড় চালাক ব্যক্তি হবেন। আমাদের কাছে সত্য এবং অসত্যের কষ্টি পাথর হল বেদ শ্লোকের ভাৰ বেদ বিরুদ্ধ অতঃ তা মানার যগ্য নয় যার ভাবনা দুষিত সে অবশ্যই স্বার্থসিদ্ধির জন্য একে মেনে নিতাতে আসে যায়না। হিন্দুদেরকে বোকা করার জন্য মির্জাগোলাম আহমদ উক্ত দুই শ্লোকে নিয়েছে। হায়দ্রাবাদেও এক প্রতারক মুসলমান উক্ত দুই শ্লোককে নিয়ে ভাল ভাবে লাভ উঠাচ্ছে এবং আজ পর্যন্ত এই ক্রম বন্ধ হচ্ছে না

পৌরাণিক মতবাদ.- অবতার শব্দের অর্থ হচ্ছে যিনি চিন্ময় জগত থেকে অবতরন করেনঅবতার হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অংশ প্রকাশসমস্ত অবতারগণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ থেকে প্রকাশিত হয়ে এই জগতে অবতার করেন
সমস্ত অবতারেরা হচ্ছেন ভগবানের অংশ অথবা কলা অবতার, কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান স্বয়ংযখন অসুরদের বা নাস্তিকদের ধ্বংস ও সাধুদের রক্ষা করার জন্য ভগবান এই ধরাধামে অবতীর্ন হনএই হলো পৌরানিক ভাষ্যব্রহ্মসংহিতায় (সৃষ্টিকার্যে নিয়োজিত) ব্রহ্মা বলছেনে,
"
ঈশ্বর পরম কৃষ্ণ" সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ অনাদির আদি গোবিন্দ র্সবকারণ কারণাম্
র্অথাৎ শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছনে পরম ঈশ্বর,র্সবকরণে মূল কারণ
চৈতন্যচরিতামৃতে বলা আছে-একলা ঈশ্বর কৃষ্ণ আর সব ভৃত্য
আবার ভাগবতম্ এ বলা আছে-কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ম্র্অথাৎ শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছে ভগবান
ব্যাস দেবের পিতা পরাশর মুনি ভগবানরে সংজ্ঞায় বলছেনে-সমগ্র ঐর্শ্বয, সমগ্র র্বীয, সমগ্র যশ, সমগ্র সৌর্ন্দয, সমগ্র শক্তি ও সমগ্র বৈরাগ্য যার মধ্যে বিদ্যমান তিনিই ভগবান। "একমাত্র কৃষ্ণের মাঝেই সব কিছু বিদ্যমান

সমীক্ষক
যেখানে বেদ, উপনিষদ এবং বৈদিক গ্রন্থে অবতারের কোন প্রমাণ নেইসুতরাং কোন মানুষকে সচ্চিদানন্দবলা যায় না আর কোন মূর্তিকে তো সচ্চিদানন্দবলার প্রশ্নই উঠে নাকেবল পরমাত্মা বা ব্রহ্ম বা ঈশ্বরকে সচ্চিদানন্দবলা যেতে পারেঅন্য কাউকে নয়চিতী সংজ্ঞানে এই ধাতু হইতে চিৎশব্দ সিদ্ধ হয়য়শ্চেততি চেতয়তিসংজ্ঞাপয়তি সর্বান্ সজ্জনান্ য়োগিনস্তুচ্চিৎ পরং ব্রহ্মতিনি চেতন স্বরূপ, সকল জীবকে চেতনা যুক্ত করেন এবং যিনি সত্যাসত্যের জ্ঞাপয়িতা, সেই পরমেশ্বরের নাম চিৎএই তিন শব্দের বিশেষণে পরমেশ্বরকে সচ্চিদানন্দ স্বরূপবলে

 তারপরও ব্রহ্মসংহিতায়, চৈতন্যচরিতামৃতে, ভাগবতম্ এ, ব্যাস দেবের পিতা পরাশর মুনি কিভাবে কৃষ্ণ অর্থাৎ একজন মহামানবকে ভগবান বলে আখ্যায়িত করেছিলেন এবং আমরা কিভাবে একজন মানুষকে ভগবান বলিসনাতন ধর্মের অধঃপতনের মূল কারন কি এই সেই পুরানের প্যাঁচাল এবং তথাকথিক মুনি নামের উর্বর মস্তিষ্কভগবানের জন্ম-মৃত্যু, রূপ নেই কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ একজন মানুষ হয়ে জন্মে ছিলেন এবং মৃত্যু বরন করেছেন, গান্ধারীর অভিশাপে তীরের আঘাতে কৃষ্ণের মৃত্যু হয় কি আশ্চার্য্যের বিষয় ভগবানের আবার তীরের আঘাতে মৃত্যু হয়?
ভগবান নামটা হলো ঈশ্বরের গুণবাচক নামএই ভগবান শব্দটা প্রাচীন কাল থেকেই সম্মান সূচক শব্দে প্রয়োগ করে এসেছেনপ্রাচীনকালে গুরু,গোঁসাই ও জ্ঞানীদের এই নামে সম্বোধন করতেনবেদ ছেড়ে যখনই মানুষ অন্য পথে হাটতে শিখেছে ঠিক তখনই মানুষ ভগবান শব্দটা ব্যবহার করেছেবর্তমানে যেমন বাবুজী, মহাশয়জী, আচার্যজী, মহারাজজী, প্রভূ জী, সেঠজী, সাঁই বাবাজী, বাবা লোকনাথজী, বাবা মনি জী, লালাজী ইত্যাদি বলা তদ্রুপ প্রাচীন কালের গুরুকূলীয় শিক্ষার মধ্যে একে অন্যের সম্মান রক্ষার্থে ভগবান শব্দটা ব্যবহার করা হতোমূলত তারা ভগবান নয়সম্মানসূচক হিসাবে এটা গুরুকূলীয় আচার্যদের নামের আগে ব্যবহৃত হতোসেই শব্দকেই ব্যক্তি বিশেষ ভগবান কৃষ্ণ, ভগবান রাম, ভগবান চৈতন্য, ভগবান শিব, ভগবান শংকরাচার্য, ভগবান অনুকুল, ভগবান রামকৃষ্ণ ইত্যাদি অনেক নাম হতে পারে কিন্তু এভাবে ভগবানের নাম কোন মানুষের সাথে জুড়ে দেওয়া সঠিক নয় এটা আমাদের অজ্ঞতার কারনে এমনটা হয়ে আসছে এবং আমরা অজ্ঞানী বিদায় মানুষকেও ভগবান বলে আখ্যায়িত করছি আসলে মানুষ কখনও ভগবান নয়ভগবান হলো সৃষ্টিকর্তার গুণবাচক নামএখনও কিছু কিছু মানুষ আছে মঠ, মন্দির ও আশ্রমে থাকা ব্রহ্মচারীদের নাম ভগবান পরমেশ্বর গৌর দাস প্রভু, কেবল পরমেশ্বর এমনকি বাড়িতে খুজাখুজি করলে অনেক ছেলেরও এই নাম পাওয়া যাবে যা মা-বাবা আদর করে হউক অথবা অন্য কোন উদ্দেশ্যে হউক এমন নাম রেখেছেআসলে এই ভগবান নামটা সৃষ্টিকর্তা ভগবানকে মানায় অন্য কারো নয়যিনি আমাদের তথা বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সবকিছুর সৃষ্টি কর্তা; তাহার নামের স্থানে অন্য কোন মহাপুরুষ বা লৌকি ইতিহাস শ্রেষ্ঠদের নাম জুরে দিয়ে পরম ব্রহ্ম, পূর্ণ ব্রহ্ম, পরমেশ্বরের অনন্ত মায়া লীলা মহিমা বলে গ্রহন করাটা অন্যায়, অধর্ম এবং ইতিহাসের সাথে মিল হয় নাগেরুয়া ধারী, কিছু পুরানে শ্লোক ও বেদের কয়েকটি ম্নত্র মুখস্থকারীকে নিজ নিজ শিষ্যরা গুরুদেব বলে সম্বোধন করে এবং সাথে সাথে এও বলে গুরুদেব হলো সাক্ষাৎ ভগবানএই কূপমুন্ডতা থেকে সনাতন মানুষদের সরে আসতে হবে এবং সত্যের পথ অনুসরন করতে হবেপৃথিবীতে প্রায় চার থেকে সাড়ে চার হাজারের ধর্ম আছে তাদের প্রত্যেকের একটা ধর্মগ্রন্থ আছে কিন্তু কেবল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে দেখা যায় তাদের মূলধর্মগ্রন্থ বেদ ছেড়ে অন্য গ্রন্থ অধ্যায়ন করতে এবং সেটাকে ধর্মগ্রন্থ বলে মানেকি অদ্ভূত!

 স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন - অজ্ঞের হৃদয়ে অন্ধ বিশ্বাসের সৃষ্টি করে সম্প্রদায় সৃষ্টি, দলগঠন এবং নিজেদের প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য ব্যক্তি বিশেষকে অবতার বলে প্রচার করে হরেক রকম আজগুবি ঘটনার সৃষ্টি এবং ধর্ম নিয়ে ব্যবসা ও বাণিজ্য চলছেব্যাপক আকাশকে যেমন হাতের মুঠোয় আনা যায় না যা কল্পনা করা যায় মাত্র তেমনি সর্বব্যাপক ভগবানকে তাঁর বিশালত্ব ত্যাগ করে নারীর গর্ভাশয়ে রজবীর্যসহ জন্ম নেন এ কল্পনা পাগলের প্রলাপ মাত্র

ডঃ বি, আর আম্বেদকর এর বাণী
১. অবতারবাদ মানুষ্যত্বের অবমাননামানুষ যে সাধনার দ্বারা অলৌকিক শক্তি অর্জন করতে পারে তা অস্বীকার করাঅবতারবাদ মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাসকে খর্ব করে এবং হীনমন্যতাবোধ সৃষ্টি করে


 

 কলি যুগ ৪,৩২,০০০ বৎসর কল্কি-এই ভবিষ্যৎ অবতার কলিযুগের শেষ পর্বে অবতীর্ণ হবেন

অথচ ১৮১১ ইং সাল থেকে ১৮৯৬ ইং সালের মধ্যে মাত্র ৮৬ বছরে দেখুন কতিপয় অবতারের নমুনা-
(১) হরিচাঁদ ঠাকুর, জন্ম-১৮১১ ইং দেহত্যাগ-১৮৭৭ইং -
(২) রামকৃষ্ণ পরমহংস, জন্ম-১৮৩৬ ইং দেহত্যাগ-১৮৮৬ ইং
(৩) গুরুচাঁদ, জন্ম-১৮৪৬ ইং দেহত্যাগ-১৯৩৭ ইং
(৪) রামঠাকুর, জন্ম-১৮৫৯ ইং দেহত্যাগ- ১৯৪৬ ইং
(৫) বিবেকানন্দ, জন্ম- ১৮৬৩ ইং দেহত্যাগ-১৯০২ ইং
(৬) জগদ্বন্ধু, জন্ম- ১৮৭১ ইং দেহত্যাগ-১৯২২ ইং
(৭) নিগমানন্দ, জন্ম- ১৮৭৯ ইং দেহত্যাগ-১৯৩৫ ইং
(৮) অনুকুল, জন্ম-১৮৮৮ ইং দেহত্যাগ-১৯৬৯ ইং
(৯) প্রণবানন্দ, জন্ম-১৮৯৬ ইং দেহত্যাগ-১৯৪১ ইং
একটি বিষয় এই যে, লোকনাথ ব্রহ্মচারী মহাশয়ের জীবিতকালেই উপরি উক্ত
প্রায় ব্যক্তিবর্গ জন্মগ্রহণ করেছেন।
(১০) লোকনাথ, জন্ম-১৭৩০ ইং দেহত্যাগ-১৮৯০ ইং
আর একটি বিষয় লক্ষ্য করুন-
লোকনাথ জন্মের ৮১ বছর পর হরিচাদের জন্ম।
হরিচাদের জন্মের ২৫ বছর পর রামকৃষ্ণের জন্ম।
রামকৃষ্ণের জন্মের ১০ বছর পর গুরুচাদের জন্ম।
গুরুচাদের জন্মের ১৩ বছর পর রামঠাকুরের জন্ম।
রামঠাকুরের জন্মের ৪ বছর পর বিবেকানন্দের জন্ম।
বিবেকানন্দের জন্মের ৮ বছর পর জগদ্বন্ধুর জন্ম।
জগদ্বন্ধুর জন্মের ৮ বছর পর নিগমানন্দের জন্ম।
নিগমানন্দের জন্মের ৯ বছর পর অনুকুলের জন্ম।
অনুকুলের জন্মের ৮ বছর পর প্রণবানন্দের জন্ম।
সুধীবৃন্দ, এবার বিচার করে দেখুন- ‘সম্ভবামি যুগে যুগে'—যুগে যুগে অবতার পুরুষ অবতীর্ণ হন। এই ‘যুগে যুগে' অর্থাৎ যুগ বলতে কি ৪ বছরে, ৮ বচরে, ৯বছরে, ১০ বছরে, ১৩ বছরে, ২৫ বছরে না- কি ৮১ বছরে? আর এত অল্প সময়ের
মধ্যে এতই ধর্মের গ্লানি হল যে ভগবানকে ৪ বছর, ৮ বছর, ১০ বছর পরপর আসতে হল? গীতায় ‘যুগে যুগে’ বলতে ভগবান কি তাই জানায়েছেন? ধন্য কলি তোমার তামাশা, দেখে পাই দুঃখ। এক পূর্ণ ব্রহ্মের বিদায় না হতেই আর এক পূর্ণ
ব্রহ্ম হাজির, এক ভগবান বিদায় না হতেই আর এক ভগবান, এক পুরুষোত্তম যেতে না যেতেই আর এক পুরুষোত্তম এসে উপস্থিত। এক Latest থাকতেই আর এক latest, এক most perfect সিংহাসনে থাকতেই আর এক most perfect-এর
আগমন! তাই এখন সবাই বলছে আমাদের দাবীকৃত অবতার ব্যক্তিই the latest and the most perfect (বিবেকানন্দের ভাষায়)

 রামকৃষ্ণ যে অবতার নন সে বিষয়ে স্বামী বিবেকানন্দের একটি কথাই যথেষ্ট তিনি বলেছিলেন- আমার গুরু রামকৃষ্ণ পরমহংসকে ঈশ্বরাবতার রূপে প্রচার করতে আমার অন্যান্য গুরু ভাইগন সবাই বদ্ধ পরিকার, একমাত্র আমিই ঐরূপ প্রচারের বিরোধ। (ভারতে বিবেকানন্দ ৪৮১ পৃষ্ঠা, বিবেকানন্দ চরিত পৃষ্ঠা ২৮২)

ঠাকুর অনুকুল চন্দ্রের শিষ্যগণ বলেন রামকৃষ্ণ দেহ ত্যাগ করে অনুকুল ঠাকুর হিসাবে জন্ম গ্রহণ করেছেনরামকৃষ্ণ ১৮৮৬ইং সালে মারা যানমহর্ষি ভৃগু তাঁর শ্রীভৃগু সংহিতা গ্রন্থের ৫৯-৬২ পৃষ্ঠায় প্রকাশ করেন রামকৃষ্ণ মৃত্যু বরণ করে অনুকুল ঠাকুর হিসাবে জন্মগ্রহন করেনসাধারনভাবে প্রশ্ন জাগে ভৃগু মহাশয় এই তাজা খবর জানলেন কিভাবে? ঠাকুর অনুকুল চন্দ্রের অপর শিষ্য আরো তাজা খবর দেন অনুকুলের মা নাকি আগ্রার হুজুর মহারাজের ২২ বছর সেবা করেন এবং হুজুরের মত পুত্র কামনা করেন সেই কারনে হুজুর মহারাজ নাকি অনুকুল ঠাকুর রূপে জন্ম গ্রহণ করেনহুজুর মহারাজ মারা যান ১৮৯৮ ইং সালে আর অনুকুল ঠাকুর জন্ম গ্রহন করেন ১৮৮৮ ইং সালেকি অদ্ভূত ব্যাপার! গুরুবাদ, ঋষিবাদ পুস্তকের ৬২ পৃষ্ঠায় লেখেন এই কল্প কথা


মজার ব্যাপার পৌরাণিক বন্ধুদের ভাষা এখনো সংযত হলো না আর হবেও নাদশ অবতারের কথা থাকলে তাদের শাস্ত্রে এই অনুকুল ও রামকৃষ্ণ সহ আরো যত শত অবতার আছে তারা আসলো কোথায় হতেবিবেক কি একবারও সাড়া দেয় নানাকি বিবেক অন্য কারো কাছে বিক্রি করা আছে? যে মালিকের কথা ছাড়া সেই বিবেক সাড়া দিবে না সেইজন্য চাই যুক্তি-বুদ্ধিদীপ্ত মানুষেরযারা অবতার নামক কুসংস্কার থেকে বেড়িয়ে আসতে পারবেসত্যের নিশান ও অধর্মের অবসান ঘটাতে পারবেইদানীং আধুনিক কালের বৈজ্ঞানিক ধ্যান ধারনার মানুষ এসব বিশ্বাস কিছুটা ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে এবং সত্যের দিকে ছুটছে অসত্যকে পেছনে ফেলে
পুরুষোত্ত ও অবতার দুটো খ্যতি তাঁর নামের সাথে আছেকোন ভক্তই তার গুরুদেবকে ছোট করতে নারাজ তাই পুরুষোত্তম ও অবতার বলতে হবে শা্েসত্রর মাথামুন্ড ভেংগে দিয়েটাকা নামের বস্তুটা যে জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা সে ভালভাবেই বুঝত! নিজে দুঃখ দারিদ্রের মধ্যে জীবনের প্রথম দিনগুলি পার করলেও পরবর্তী প্রজন্ম যাতে (ধর্ম বেঁচে) আরাম আয়েসে দিনাতিপাত করতে পারে সেই ব্যবস্থা সে করে গেছে
Ò
মানুষ আপন টাকা পর
যত পারিস মানুষ ধরÓ

উপরের বাণীটি ভক্তদের শিখালেও নিজে কিন্তু টাকার পিছন ছাড়েনি! ইষ্টভৃতি নামের প্রার্থণা তার উদাহরণতার ভক্তরা রোজ সকালে ইষ্টভৃতি (প্রার্থনা) করে নিদিষ্ট পরিমাণ টাকা ঈশ্বরের নামে রাখে কিন্তু মাসের শেষে তা জমা হয় অনুকূলের নাতীল (বর্তমানে) একাউন্টে! এ নিয়ে আবার প্রশ্ন করা যাবে না টাকাগুলো কোথায় যায় কিংবা কি কাজে ব্যবহার হয়! প্রশ্ন করা নিষেধ কারণ টাকাগুলি আপনি ঈশ্বরের নামে দিয়েছেন, ঈশ্বর টাকাগুলো কি করল সেটা সেটা আপনার জানার দরকার নাই! লোক ঠকানোর অভিনব বুদ্ধি! মৃত্যু ভয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে দেশ ছাড়ে, হাজারো শিষ্যের নিরাপত্তর কথা যার মাথায় নেই, শুনেছি উনি নাকি ছোট ভাইয়ের বউকে বিবাহ করেছেনউনার আবার তামাকের নেশা ছিলহুকা টানতেনদুধের ছোট কুপ খনন করে স্নান করতেনএগুলো পুরুষোত্ত ও অবতারের কাজ?

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর তার সত্যার্থ প্রকাশের সপ্তম সমুল্লাসে গীতার ৪ অধ্যায়ের ৭ এবং ৮ নং শ্লোকের ব্যাখ্যায় লিখেছেন।
প্রশ্ন – ঈশ্বর অবতার হয় কিনা?
উত্তর – না। কারণ, 'অজ একপাৎ' 'সপয়গাচ্ছুক্রমকায়ম্' ইত্যাদি যজুর্বেদের বচন; এই সব বচন হইতে সিদ্ধ হয় যে, ঈশ্বর জন্মগ্রহণ করেন না।
প্রশ্ন – য়দা য়দা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভূত্থানমধর্মস্য তদাত্মানাং সৃজাম্যহম্ || ভগী০
শ্রীকৃষ্ণ বলিতেছেন, যখন যখনই ধর্মের গ্লানি উপস্থিত হয়, তখন তখনই আমি শরীর ধারণ করিয়া থাকি।
উত্তর – এই কথা বেদবিরুদ্ধ বলিয়া প্রমাণ নহে। কিন্তু এইরূপ হইতে পারে যে, শ্রীকৃষ্ণ ধর্মাত্মা ছিলেন এবং তিনি ধর্মের রক্ষা করিতে ইচ্ছা করিয়াছিলেন। “আমি যুগে যুগে জন্মগ্রহণ করিয়া শ্রেষ্ঠদিগকে রক্ষা এবং দুষ্টদিগকে বিনাশ করিয়া থাকি”। এইরূপ হইলে কোন দোষ নাই। কারণ 'পরোপকারায় সতাং বিস্তৃতয়ঃ', সৎপুরুষদিগের দেহ মন-ধন পরোপকারের জন্য। সুতরাং ইহা দ্বারা শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর হইতে পারেন, ইহা প্রমাণিত হয় না। প্রশ্ন – যদি এরূপ হয় – তাহা হইলে সংসারে যে ঈশ্বরের ২৪টি অবতার হইয়াছে, তাহাদের মানা হয় কেন?
উত্তর – বেদার্থ না জানায় সাম্প্রদায়িক লোকদিগের দ্বারা বিভ্রান্ত হইয়া নিজেদের মূর্খতাবশতঃ তাহারা ভ্রমজালে আবদ্ধ হয় এবং এইরূপ অপ্রামাণিক কথা বলে ও বিশ্বাস করে। 
প্রশ্ন— যদি ঈশ্বরের অবতার না হয়, তবে কংস ও রাবণ প্রভৃতি দুর্বত্তগণের বিনাশ কীরূপে হইতে পারে ?
উত্তর – প্রথমতঃ যে জন্মগ্রহণ করে, সে অবশ্যই মৃত্যু মুখে পতিত হয়। যদি ঈশ্বর অবতার দেহ ধারণ ব্যতীত জগতের সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয় করেন, তাহার নিকট কংস, রাবণ প্রভৃতি একটা কটি তুলাও নহে। তিনি সর্বব্যাপক বলিয়া কংস রাবণাদির শরীরেও পরিপূর্ণ হইয়া আছেন। যখনই ইচ্ছা তখনই মর্মচ্ছেদন করিয়া তাহাদিগকে বিনাশ করিতে পারেন। বলুন তো? যাহারা এই অনন্ত গুণ-কর্ম-স্বভাব বিশিষ্ট পরমাত্মাকে একটি ক্ষুদ্র জীবের বধের জন্য জন্ম- মরণশীল বলে, তাহাদিগকে মূর্খ ভিন্ন অন্য কীসের সহিত তুলনা দেওয়া যাইতে পারে?
যদি কেহ বলে যে, ভক্তজনের উদ্ধারের জন্য ঈশ্বর জন্মগ্রহণ করেন, তবে তাহাও সত্য নহে। কারণ যে সকল ভক্ত ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারে চলেন, তাহাদিগকে উদ্ধার করিবার পূর্ণ সামর্থ্য। ঈশ্বরে আছে। পৃথিবী ও চন্দ্র সূর্য্যাদি সমন্বিত জগতের সৃষ্টি-স্মৃতি - প্রলয়রূপ কর্ম অপেক্ষা কংস-রাবণাদির বিনাশ অথবা গোবর্দ্ধন উত্তোলন কি গুরুতর কর্ম? যদি কেহ এই সৃষ্টিতে পরমেশ্বরের কর্ম সম্বন্ধে বিচার করেন, তবে মনে হইবে যে 'ন ভূতো ন ভবিষ্যতি", অর্থাৎ ঈশ্বর সদৃশ বেহ হয় নাই এবং হইবেও না। যুক্তি দ্বারাও ঈশ্বরের জন্ম সিদ্ধ হয় না। যদি কেহ বলে যে, অনন্ত গর্ভস্থ হইল, অথবা আকাশকে হাতের মুষ্টিতে রাখিল, তবে তাহা কখনও সত্য হইতে পারেনা। কারণ আকাশ অনন্ত ও সর্বব্যাপক; অতএব আকাশ ভিতরেও যায় না, বাহিরেও আসে না। সেইরূপ পরমাত্মা অনন্ত ও সর্বব্যাপক বলিয়া তাঁহার গমনাগমন কখনও সিদ্ধ হইতে পারে না। যে স্থানে যাহা নাই, সে স্থানেই তাহার গমনাগমন হইতে পারে। পরমেশ্বর কি গর্ভে ব্যাপক ছিলেন না যে, অন্য কোন স্থান হইতে বহির্গত হইলেন? ঈশ্বর সম্বন্ধে বিদ্যাহীন ব্যক্তি ব্যতীত আর কে এইরূপ বলিতে ও বিশ্বাস করিতে পারে? 'অতএব ঈশ্বরের গমনাগমন ও জন্মমৃত্যু কখনও সিদ্ধ হইতে পারে না। এতদ্দ্বারা বুঝিতে হইবে যে 'ঈশা' (খৃষ্ট) প্রভৃতি ঈশ্বরের অবতার নহেন। কেননা রাগ, দ্বেষ, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ভয়, শোক, দুঃখ, জন্ম এবং মৃত্যু প্রভৃতি গুণধর্মযুক্ত বলিয়া তাহারা মনুষ্য ছিলেন।

মহাভারতের মূল অংশে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতার তত্তের কোন অনুসঙ্গ পাওয়া যায় নাতবে হরিবংশ নামক প্রক্ষিপ্তাংশেই সর্ব প্রথম শ্রীকৃষ্ণের অতিমানবীয় রূপের বর্নণা পাওয়া যায়যাহা অপেক্ষাকৃত আধুনিক বলে কথিত আছেতাছাড়া শ্রীকৃষ্ণের জন্ম সম্পর্কিত কোন বিবরণ মহাভারতে উল্লেখ না থাকায়, এই দুর্বল সড়ক ধরে পুরাণ প্রণেতারা নিজ নিজ সম্প্রদায়ের ইচ্ছার অনুকুলে বেদবাহ্য যুক্তিহীন নানা কুরুচিকর পুস্তক লিখে ব্যাস দেবের নামে প্রচার করেছেনযাহা মূলতঃ বৈদিক পরবর্তী সময়ের শীর্ণয়মান মানষীকতার রুগ্ন অভিব্যক্তি

অবতার (সংস্কৃত: আবির্ভূত দেবতাঅবতরণবা জীবদেহধারী ঈশ্বর বা দেবতাঅবতরণ”) হল হিন্দুধর্মের একটি মতবাদপৃথিবীতে কোনও দেবতার আবির্ভাব বা আবির্ভূত জীবদেহকে অবতারবলা হয়শব্দটি সাধারণ ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষের [দেবতা] আবির্ভাবের জন্য অবতরণঅর্থে ব্যবহৃত হয়কোনও কোনও ক্ষেত্রে সম্মানীয় গুরু বা কোনও মানুষকেও অবতার বলে উল্লেখ করা হয়এগুলি হলো সবই পৌরানিক ভাষা যা বেদ এর সাথে মিল খুজে পাওয়া যায় নাএখানে শ্রীকৃষ্ণ হলেন অনেক গুণাবলী সম্পন্ন একজন মহামানব কিন্তু একশ্রেণীর বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা ও দেশীয় ভন্ড দালাল চক্র শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর ও ভগবান (সৃষ্টিকর্তা) হিসাবে উপস্থাপন করেছেএর ফলে মানুষ স্বাভাবিকভাবে সত্যাসত্যের বিচার করতে পারবে নাহাজারো ভূল পথের মানুষের সাথে মিশে যাবে ভূল পথের মানুষের সংখ্যা কোটি কোটি হতে পারে সঠিক পথের মানুষের সংখ্যা খুবই কম সুতরাং মানুষের বিবেক দিয়ে যদি নিজে সত্যের অনুসন্ধান না করে তাহলে মিথ্যার র্গতে পরতে বাধ্যমানুষ দেখে শিখে কিন্তু ভূল দেখে শিখলে ভূল হবে আর সত্য দেখে শিখলে সত্য হবে

বর্তমানে মানুষ এতো অন্ধবিশ্বাসী যে, গুরুদেরকে নিজের অবতার জ্ঞানে মূর্তি গড়ে পূজা করে। ফলে হিন্দু সমাজের মধ্যে একটি বিভাগের সৃষ্টি হয়। আজ গোটা দেশে অনেক নাম রূপ ধারী ঈশ্বরের অবতার তৈরি হলো। এরফলেই হিন্দুসমাজ সংগঠিত হতে পারছে না। না জানি সৃষ্টি যত দিন থাকবে, আরো কত অবতারের নাম আসবে তার কোনো ইয়ত্তা নেই।

একটু ভাবুন বন্ধুরা! শরীর ধারী মানুষ কখনো কি ঈশ্বর সমান হতে পারে? শরীর আছে তার মানে তার শক্তি অনেক সীমিত। তাকে একটি শরীরের মধ্যে বন্ধ থাকতে হয়। দূর দেশের খবর জানা তো দূর নিজের খবরই জানতে পারে না। তাই ভয়ঙ্কর রোগে মারা যায়। কেউ মারতে আসছে তাও সে জানতে পারে না। তাকে জরা, রোগ, ব্যাধি সব কিছুই সহ্য করতে হয়। আর ঈশ্বর না জন্ম নেয় না মরে। মহর্ষি পতঞ্জলির ভাষায়----

ক্লেশকর্মবিপাকাশয়ৈরপরামৃষ্টপুরুষবিশেষ ঈশ্বরঃ

তিনি পঞ্চক্লেশ, কর্ম বিপাক, আসয় থেকে আলাদা হন। তাই তিনি ঈশ্বর হন। আর শরীরধারী অবতারগণ ভয়ঙ্কর রোগে কষ্ট পায়, কর্ম বিপাক সহ্য করতে হয়, তো তাদেরকে আমরা ঈশ্বর কিকরে ভাবতে পারি? বন্ধুরা! আজ যদি হিন্দু সমাজ সংগঠিত হতে পারছেনা তার মূল কারণ হল অবতারবাদ।

তাছাড়া আমাদের যে নারাশংসি (মহাপুরুষদের প্রশংসা গ্রন্থ) যাকে ইতিহাস বলা হয়; সেই রামায়ণ মহাভারত; তার মূল অংশকে ছেড়ে দিলে যে প্রক্ষিপ্ত অংশ পাওয়া যায় তাতেও তাদের বর্ণনা পাওয়া যায়। মহাভারতের অংশ গীতার মধ্যে অবতারবাদের সমর্থন পাওয়া যায়। অর্জুনকে তার কর্তব্যবোধ করানো শ্লোকের থেকে শ্রীকৃষ্ণকে অবতাররূপে প্রতিপন্ন করার শ্লোকের সংখ্যা অনেক বেশি। মানে এটা স্পষ্ট বোঝা যায় পুরান গুলিকে লেখার সময় মহাভারতের প্রক্ষেপগুলির রচনা হয়

এখন প্রশ্ন হয়, কি এমন দরকার হলো যে, তৎকালি তথাকথিত ব্রাহ্মণ সমাজ নিরাকার উপাসনাকে ছেড়ে অবতারবাদের প্রচার করল??


বন্ধুরা! ঈশ্বরের মুখ্য নাম হল ওম। অসংখ্য গুন, কর্ম, স্বভাবের জন্য তার অসংখ্য নাম গুলির মধ্যে এগুলিও আছে। ঈশ্বরকে "কাল" বলা হয়। তিনি জীবের সংখ্যা করেন বলে। কল সংখ্যানে ধাতু থেকে "কাল" শব্দের উৎপত্তি। কালি শব্দটি রং-এর নাম। দুষ্ট পাপী তার কাছে যেতে পারে না তাই তার নাম দুর্গা। শব্দ, অর্থ সম্বন্ধের জ্ঞানী বলে তিনি "সরস্বতী" সব জায়গায় ব্যাপক বলে "বিষ্ণু" কল্যাণকারী তাই "শিব",সৃষ্টিকর্তা তাই তিনি "ব্রহ্মা", ইত্যাদি ইত্যাদি। এক ঈশ্বরকে বুদ্ধিমানগণ অনেক নামে ডাকেন। এই নামগুলি বেদ থেকে নিয়ে ঐতিহাসিক পুরুষদের রাখা হয়েছে। যেমন গ্রামের কোন সন্তান জন্মালে তার মা বাপ আদরের সঙ্গে তার নাম রাখে কৃষ্ণ। কেউ রাখে বিষ্ণু। কেউ রাখে রাম। তার মানে এটা নয় যে এইরাম সেই রামায়ণের রাম। এই কৃষ্ণ সেই মহাভারতের কৃষ্ণ। যখন সৃষ্টির আদিতে কোন লৌকিক শব্দের উৎপত্তি হয় নি, তখন বৈদিক শব্দকে নিয়ে ব্যবহার করা হতো। এবং ভাষাও বৈদিক ভাষা ছিল। পরে সেই বৈদিক লৌকিক শব্দের যাতে অনর্থ না হয়, যাতে অপভ্রংশ না হয়, যাতে 'পশ্যক'-কে 'কশ্যপ' না বলা হয় তার জন্য ব্যাকরন বানানো হয়। আমরা জানি বিরাটের পুত্র ছিলেন বিষ্ণু, সোমসদ, অগ্নিষ্বাত। মহর্ষি অগ্নিষ্বাতের পুত্র শিব ছিলেন। মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী তার পুনা প্রবচনে বলেছিলেন। তেমনি ব্রহ্মা ছিলেন অমৈথুনি সৃষ্টির আদি মানব। যিনি অগ্নি, বায়ু, আদিত্য, অঙ্গিরা- এই চারজন ঋষির কাছে থেকে চারটি বেদ পড়েছিলেন। তাই তার চারটি মাথার কল্পনা করা হয়। অমৈথুনি সৃষ্টিতে কেবল একজন মানুষ সৃষ্টি হয়নি। বরং চার বর্ণের অনেক মানুষ তৈরি হয়। একজনের দ্বারা সব কাজ করা সম্ভব নয়। কেউ জ্ঞান দেবে, কেউ রক্ষা করবে, কেউ কৃষি, কেউ সেবা করবে। তাই অনেক ব্যক্তির প্রয়োজন হয়। বালক বৃদ্ধ দুজনেই সন্তান উৎপত্তি স্বাবলম্বী হয়ে বাঁচার জন্য অসমর্থ হওয়ায় ঈশ্বর যুবক অবস্থার মানুষদেরকে সৃষ্টি করেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন ব্রহ্মা। এখানে সৃষ্টি বিষয়কে বুঝাতে চাই না। বিষয়ান্তর হবে। তবে যে বিষয়ে বলতে চাই তা হল, বেদ থেকে নিয়েই মহাপুরুষদের নাম রাখা হয়। যোগ, বিদ্যা, পরাক্রম, প্রজাপালন ইত্যাদি দ্বারা তারা সেই সময়ে বিশিষ্ট হয়ে ছিলেন। সেই মহাপুরুষদেরকে পরে অবতার রূপে কল্পনা করা হয়েছে।  

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর লেখা সত্যার্থ প্রকাশ পড়ুন

পাঠক এই কথাটা সর্বদা স্মরনে রাখবেনযে চার বেদে  অবতার শব্দ নাই। ছয়টি দর্শনে (Philosophy) অবতার শব্দ নাই। মনুস্মৃতিতে অবতার শব্দ নাই। বাল্মীকি রামায়ন , মহাভারত এবং গীতাতেও অবতার শব্দ নাই। কোন প্রামানিক উপনিষদে অবতার শব্দ নাই - তা সত্বেও পৌরানিক হিন্দু অবতারবাদে বিশ্বাস রাখে। এটি মূলেই ভুল নয় তো আর কি ? হয় হিন্দু বেদ, উপনিষদে, দর্শন সাহিত্যকে সর্বদা অমান্য ঘোষিত  করুক অথবা এই মূলের ভুলকে সংশোধন করুক | সমস্ত অবতার ভারতেই প্রকট হয়েছে ভগবান ইউরোপ  ইরান, ইরাক, জাপান, রাশিয়া , ফ্রান্স ইত্যাদি দেশে কখনও জন্ম নেয়নি। উপাস্যের উপহাস কেন ? ভারতেই কি ধর্মের গ্লানি হয়ে থাকে? যদি তাই হয় তাহলে ভারতকে পূণ্যভূমি, ঋষি ভূমি না বলে পাপ - ভুমি মানতে এবং বলতে হবে। এটা কি মুলে ভুল নয় যে আমরা এটা মেনে নিই বা প্রচারিত করি যে ভগবান ধর্মের উত্থানের জন্য বারবার পুণ্যভূমি ভারতে জন্ম নিয়েছেন এতো হবে ভগবান এবং ভারত দুইয়েরই অপমান

 

উ প সং হা র 

বৈদিক সাহিত্যে অবতার শব্দটি পাওয়া যায় নাতবে বেদ-পরবর্তী সাহিত্যে এটি ক্রিয়াপদ আকারে উল্লিখিতহয়েছেখিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীর পরে রচিত পৌরাণিক সাহিত্যেই এই শব্দটিকে স্বতন্ত্রভাবে বিশেষ্য পদের আকারে ব্যবহার করা হয়েছেঋগ্বেদের বর্ণনা অনুসারে, ইন্দ্র একটি রহস্যময় শক্তির বলে ইচ্ছামতো যে কোনও রূপ ধারণ করতে পারেনভগবদগীতা গ্রন্থে অবতার মতবাদটি বিস্তারিত ও সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা হলেও সেখানে অবতার শব্দটির পরিবর্তে অন্যান্য পারিভাষিক শব্দ ব্যবহৃত হয়েছেসনাতন ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ বেদ মতে অবতার বিশ্বাস করা যাবে নাঅবতার বিশ্বাস করলে তার ধর্ম জ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞতার প্রকাশ এটা ভাবা হয়এর কারণ হলো বেদে অবতারবাদ নেইপৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে বিভিন্ন সময়ে বিদেশী প্রভুদের অর্থে লালিত পালিত হয়ে কিছু অসুর এই কাজটি করেছেআজও দেখবেন ভারতের কলকাতায় প্রায় সকল মিডিয়া মধ্যপ্রাচ্যের অর্থে লালিত পালিত হয়ে সত্যি ঘটনা মিডিয়াতে প্রকাশ পর্যন্ত করে নাআর আমেরিকার লালিত পালিত সংগঠনের লম্ফ জম্ফ দেখলে মনে হয় এই বুঝি ধর্ম এল রে, অবতার অবতরন করল রে

অবতার সম্পর্কে যা লেখা হলো বুঝলে তা যথেষ্ট কিন্তু না বুঝলে কেবল তর্ক করা যাবে সমাধানে আসা যাবে নাসমাধানে আসা যাবে তখন যখন প্রামাণ্য শাস্ত্রের সহযোগিতা নিয়ে বিবেক, বুদ্ধি, যুক্তি দিয়ে বিচার করা হবে আর না হয় সারারাত রামায়ন পড়ে ও কিচ্ছা কাহিনী শুনে সকালে যারা বলে সীতা কার বাপ? ঠিক তাদের মতো অবস্থা হয়ে যাবে আমাদের মতো সাধারন হিন্দুদেরতবু আমি শেষ যুক্তি ও তর্ক রেখে যাচ্ছিযেহেতু ঈশ্বরের জন্ম, মৃত্যু, জরা, ব্যাধি নেই এবং তিনি নিরাকার বেদ প্রমান দিচ্ছে তবু একশ্রেণীর মূর্খ মানুষ তাকে সাকার হিসাব, ভগবান হিসাবে, পূর্ণব্রহ্ম হিসাবে মৃত মানুষের পূজা করে চলেছেসেই মানুষগুলো বিদ্যা, বুদ্ধি, চেতনা কখনো স্পফুটিত হবে না বলেই মনে হয়আর যদি চেতনার বহিপ্রকাশ ঘটত তাহলে আজ সনাতন ধর্মটা বিলুপ্তি পথে চলে যেত নাতার জন্য দায়ী তথাকথিত সনাতনীরাআজ আমার মনে প্রশ্ন জাগে সনাতনী বড় বড় বিদ্ধান ব্যক্তিদের কাছে যে আপনারা এত বড় বড় শিক্ষিত হয়েও কেন আমার ধর্মগ্রন্থ বেদ এর শিক্ষা থেকে বঞ্চিত

 


 

Post a Comment

0Comments

Please Select Embedded Mode To show the Comment System.*