" অসুর ইন্দ্র " কথার রহস্য উন্মোচন |
অজ্ঞানী ব্যক্তিরা ঋগ্বেদ হতে একটি মন্ত্র উদ্ধৃত করে অপপ্রচার করে যে বেদে ইন্দ্রকে দৈত্য,দানবের মতো অসুর বলা হয়েছে!! তাদের উদ্ধৃত মন্ত্রটি -
ঋগ্বেদ (১০/৯৯/১২)
এবা মহো অসুর বক্ষথায় বম্রকঃ পডুভিরূপ সর্পদিন্দ্রম্। স ইয়ান। করতি স্বস্তিমস্মা ইষমূর্জং সুক্ষিতিং বিশ্বমাভাঃ।।১২।।
অনুবাদঃ হে অসুর ইন্দ্র! আমি বস্ত্র, প্রচুর হোমদ্রব্য দেবার জন্য পাদচারী হয়ে তোমার নিকট এসেছি। তুমি এসে এই ব্যক্তির অর্থাৎ আমার মঙ্গল করো, অন্ন ও বল এবং উৎকৃষ্ট গৃহ, এমন কি সকল বস্তুই দান কর।।১২।।
শঙ্কা - এখানে অসুর শব্দ দ্বারা কি আসলেই গল্পের দৈত্য দানবের মতো বোঝানো হয়েছে?
সমাধান - না।। নিরুক্ত অনুসারে "অসুর" শব্দের অর্থ --
নিরুক্ত ১০ম অধ্যায় ৩৪ তম পরিচ্ছেদ ৩য় শ্লোক
"অসুরিতি প্রজ্ঞানাম,অস্যত্যনর্থান, অস্তাশ্চাস্যামর্থাঃ।।৩।।
অন্বয়ঃ অসুঃ ইতি প্রজ্ঞানাম (অসু শব্দ প্রজ্ঞাবাচক) - অস্যতি অনর্থান (অনর্থসমূহ নিক্ষিপ্ত বা দূরীভূত করে) অস্তাশ্চ অস্যাম্ অর্থাঃ (আর অর্থ - ধনাদি বস্তু বা পুরুষার্থ ইহাতে নিক্ষিপ্ত বা নিহিত থাকে)।
অসু শব্দ প্রজ্ঞাবাচী (নিঘ.৩/৯); ক্ষেপণার্থক " অস্" ধাতু হইতে নিষ্পন্ন - প্রজ্ঞা অনর্থ ক্ষেপণ বা বিনাশ করে এবং প্রজ্ঞায় ধনধান্যাদি বস্তু অথবা পুরুষার্থ অস্ত অর্থাৎ নিক্ষিপ্ত বা নিহিত থাকে, প্রজ্ঞা দ্বারাই এতৎসমস্তের লাভ সম্ভবপর হয়৷ প্রজ্ঞাই অর্থপ্রাপ্তি এবং অনর্থনিবৃত্তির সাধক। পুর্ব্বোক্ত ব্যুৎপত্তিতেই অসু শব্দ প্রাণ বা বলকেও বুঝাইতে পারে - বলের দ্বারাও অর্থপ্রাপ্তি এবং অনর্থ নিবৃত্তি হয়।
মহচ্চাস্মৈ দেবনামসুরত্বমেকং প্রজ্ঞাবত্ত্বং বানবত্ত্বং বাপি বা৷।২।।
অসুরত্বং = প্রজ্ঞাবত্ত্বং বা অনবত্ত্বং বা (অসুরত্ব শব্দের অর্থ প্রজ্ঞাবত্ত্ব অথবা প্রাণবত্ত্ব অর্থাৎ বলবত্ত্ব - যাহার বল বা প্রজ্ঞা নাই তিনি উৎপত্তি, পুষ্টি ও বৃদ্ধি সাধন করিবেন কি করিয়া?)
[ নিরুক্ত ১০.৩৪.২ ]
নিরুক্তের এই প্রমাণ থেকে দেখা যায় "অসুর" শব্দের অর্থ
১. প্রজ্ঞাবত্ত্ব
২.প্রাণবত্ত্ব অর্থাৎ বলবান
৩.ক্ষেপণ করা
আর ইন্দ্র শব্দটি ঐশ্বর্যর্থক। অর্থাৎ ঐশ্বর্যকে বোঝায়। সুতরাং "অসুর ইন্দ্র" শব্দ দ্বারা বোঝানো হয়
১. প্রাণদাতা, বলবান ইন্দ্র
২. কামনা-বাসনাকে সদূর ক্ষেপণকারী ইন্দ্র
৩. প্রজ্ঞাবান ইন্দ্রও
কিন্তু কখনই ঠাকুমার ঝুলিতে দেখা দৈত্য, দানবের মতো কোনো সত্ত্বা বলতে পারি না কারণ এটি নিরুক্তবিরুদ্ধ মত ৷ ইন্দ্র শব্দটি ঐশ্বর্যর্থক হওয়ায় পরমাত্মা পক্ষে- ইন্দ্র শব্দের অর্থ "পরমৈশ্বর্যবান পরমেশ্বর "।। এখন ঋগ্বেদের অন্যান্য ভাষ্য থেকে দেখব "অসুর" শব্দের অর্থ -
আর্য বিদ্বান পণ্ডিত জয়দেব শর্মাকৃত ভাষ্য -
ঋগ্বেদ (১০/৯৯/১২)
পদার্থঃহে (অসুর) প্রাণদাতা বলবান প্রভু!(এব) এই প্রকার (মহঃ বক্ষথায়) মহান ঐশ্বর্যকে ধারণ করার জন্য বা সমস্ত সংসারকে বহনকর্তা মহান প্রভু তোমাকে লাভ করার জন্য (পডভিঃ) নানাপ্রকার জ্ঞানময় আচরণের দ্বারা, পদচারী হয়ে (বভ্রকঃ ইন্দ্রম, উপসর্পৎ) স্তোতা [সেই ভক্ত] সেই উক্ত ঐশ্বর্যবান প্রভুকে প্রাপ্ত করে নেয়। (সঃ ইয়ানঃ) সেই প্রভু প্রাপ্ত হয়ে (অস্মৈ) এই জীবের (স্বস্তি করতি) কল্যাণ করেন এবং এই জীবের হিতার্থেই (ইষম্ ঊর্জম্ সু-ক্ষিতিম্) উত্তম বৃষ্টি, অন্ন এবং ভূমি তৈরি করেন এবং এভাবেই (বিশ্বম) দেহ মধ্যে প্রবিষ্ট জীব এবং সমস্ত জগৎ যার মধ্যে এই সমস্ত প্রাণী এবং লোক প্রবিষ্ট রয়েছে তাদের (অ অভাঃ) পালন করে থাকেন।।১২।।
জয়দেব শর্মা এখানে "অসুর" শব্দের অর্থ নিয়েছেন " প্রাণদাতা বলবান প্রভু এবং "ইন্দ্র" শব্দের অর্থ নিয়েছে "ঐশ্বর্যবান প্রভু"
নিরুক্ত থেকে যেহেতু দেখলাম " অসুর " শব্দের আরেকটি অর্থ ক্ষেপণ করা বা বিনাশ করা। তাই আর্যবিদ্বান পণ্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্তালংকার তিনি তাঁর ঋগ্বেদ ভাষ্যে উক্ত মন্ত্রটিতে থাকা "অসুর" পদের অর্থ করেছেন --
ড. তুলশীরাম শর্মাও নিজ ঋগ্বেদ ভাষ্যানুবাদে " অসুর" পদের অনুবাদে লিখেছে O lord of life and pranic energy of the universe,
নিরুক্ত (১০.৩৪.৩) নিরুক্ত (১০.৩৪.২) |
পন্ডিত জয়দেব শর্মা - ঋগ্বেদ (১০.৯৯.১২) |
পন্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্তালংকার - ঋগ্বেদ (১০.৯৯.১২) |
অসুনীতি শব্দ বিশ্লেষণ |
ড.তুলশীরাম শর্মা - ঋগ্বেদ |