অদ্বৈতবাদ - বেদান্তদর্শন এর বিরুদ্ধ |
ব্রহ্ম এর লেখক বেদান্ত-দর্শনে লিখেছেন-
জন্মাদ্যস্য যতঃ। বেদা০ ১।১।২।।
অর্থাৎ এই জগতের উৎপত্তি,স্থিতি তথা প্রলয় যার দ্বারা হয়,সেই ব্রহ্ম। অতঃ ব্রহ্ম জগতের উৎপত্তিতে নিমিত্তকারণ। ব্রহ্মকে জগতের উপাদান কারণ মানা যেতে পরে না। কেননা উপাদান কারণ পরতন্ত্র এবং পরিণামী হয় এবং ব্রহ্ম একরস তথা স্বতন্ত্র। জগতে এমন কোনো দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না,যা একটিই উপাদান কারণ তথা নিমিত্তকারণ। এবং জগৎকে দেখেও স্পষ্ট হয় যে ব্রহ্ম উপাদান কারণ হতে পারে না। যেহেতু উপাদান কারণ এর গুন কার্য অবশ্যই আছে । ব্রহ্মের চেতনাদি গুন জগতে পাওয়া যায় না, অতঃ ব্রহ্ম জগতের নিমিত্ত কারণ।নবীন বেদান্তীদের মাকড়শার দৃষ্টান্তও তাদের মান্যতা কে সিদ্ধ করে না। কারণ মাকড়শার আত্মা চেতন এবং তাদের জাল জড়। জড় এবং চেতনাকে এক মানা মূর্খের কাজ।যদি মাকড়শার শরীর এবং আত্মা একই হতো তাহলে মৃতক মাকড়শা কোনো সময় দৃষ্টিগোচর হতো না। মৃতক মাকড়শাকে দেখে স্পষ্ট হয়ে যায় চেতন আত্মা এর থেকে পৃথক।অতঃ শরীর মাকড়শার জাল এর উপাদান কারণ এবং চেতনাত্মা নিমিত্ত কারণ।এই দৃষ্টান্ত ব্রহ্মকে জগতের নিমিত্ত কারণ সিদ্ধ করে উপাদান কারণ নয়। নবীন বেদান্তিদের এই দড়ি-সর্পের দৃষ্টান্তও তাদের মান্যতাকে খন্ডন করে। এই দৃষ্টান্তে বেদান্তি ব্রহ্মকে বিবৃতিপাদন হিসেবে বিবেচনা করুন। বিবৃত সমান আকৃতি অথবা সমান ধর্মীওদের মধ্যেই হয় এবং প্রথম থেকে এই দুই বস্তুর জ্ঞানও রয়েছে,তখন ভ্রম হয়।পরন্তু ভিন্ন আকৃতি গুনযুক্ত কদাপি ভ্রম হয় না। রশি তে সর্পের ভ্রম হতে পরে,হাতি ঘোড়ার নয়।সিপিতে রূপার ভ্রম হতে পারে কিন্তু লোহা ও সোনার নয়।অতঃ যখন ব্রহ্ম এবং জগৎ এর মধ্যে না তো আকৃতি মিলে,না ধর্ম তাহলে ব্রহ্মের মধ্যে জগৎ এর ভ্রান্তি কিভাবে হতে পরে? দ্বিতীয় বিবৃতি যেমন মনুষ্যের সর্পের ভ্রম দড়িতে,সামান্য প্রকাশ অথবা সামান্য অন্ধকার এর কারণে হয়ে থাকে। যাদ্বারা স্পষ্ট হয় যে জড় বস্তু বিনা ভ্রম বা বিবৃতি হতে পারে না,কিন্তু অদ্বৈতবাদীদের কাছে ব্রহ্ম ছাড়া কোনো বস্তুই নেই,তাহলে ভ্রম কিভাবে হতে পরে? আর সর্বজ্ঞ ব্রহ্মকে ভ্রম বলা কতো বড় মহাভ্রমি? প্রকৃতি। অল্পজ্ঞ জীবেরই ভ্রম হতে পরে কিন্তু বেদান্তি তার সত্তা স্বীকার করে না।অতঃ কোনো প্রকার অদ্বৈতবাদ মান্যতা সত্য সিদ্ধ হয় না এবং বেদান্তিদের এই প্রতিজ্ঞা -
"ব্রহ্ম সত্যং জগন্মিথ্যা জীবো ব্রহ্মৈব নাপরঃ ।"
সর্বথা ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা। এবং সেই পরব্রহ্ম কে জগতের উপাদান মানার খন্ডন স্বয়ং উপনিষদে স্পষ্ট রূপে করা হয়েছে।
পরাস্য শক্তির্বিবিধৈব শ্রূয়তে স্বাভাবিকী জ্ঞানবলক্রিয়া চ ॥
শ্বেতাশ্ব০ ৬ |৮||
অর্থাৎ সেই পরব্রহ্মর কোনো কার্য তথা কারণ নেই। যদি পরব্রহ্ম জগতের উপাদান কারণ হতো তাহলে জগতে পরব্রহ্মের কার্য অবশ্যই মানতে হতো।
লেখকঃ- আচার্য রাজবীর শাস্ত্রী।
অনুবাদকঃ- বিশাল আর্য।