মহর্ষি দয়ানন্দকৃত যজুর্বেদ-২৫/৭ মন্ত্র ভাষ্যের ভ্রান্তিনিবারণ

0

মহর্ষি দয়ানন্দকৃত যজুর্বেদ-২৫/৭ মন্ত্র ভাষ্যের ভ্রান্তিনিবারণ

শঙ্কা :~ স্বামী দয়ানন্দজী যজুর্বেদ (২৫/৭) মন্ত্রে লিখেছেন - "অন্ধ সাপকে স্থূল গুহ্যের দ্বারা ধরো"। কতটা খারাপ অর্থ। কিরকম খারাপ পদ্ধতি বলেছেন সাপ ধরার। একেই কি আর্য সমাজীগণ ঋষি ভাষ্য বলে?

সমাধান- এই মন্ত্রের ভাষ্য করে মহর্ষি লিখেছেন-

স্থূলগুদয়া সহ বর্ত্তমানান্ অন্ধান্ অহীন স্থূলগুদয়া সহ সর্পান বিশেষেণ কুটিলান্ উদরস্থৈর্নাড়ীবিশেষৈর্য়েন যদ্যদ্ কার্যং সিদ্ধ্যেৎ তেন তেন অঙ্গেন পদার্থেন বা তৎ তৎ সাধনীয়ম্"।

এই মন্ত্রে বা ভাষ্যতে দুই রকমের অন্ত্রের বর্ণনা এসেছে। প্রথমটি লম্বা তথা বক্র ছোট হয় যা খাদ্যের পাচনক্রিয়ার কাজ করে যাকে সর্প বলা হয়েছে। আর দ্বিতীয়টি বড়, অন্ধ অন্ত্র যেটাকে ইংরেজিতে ব্লাইন্ড পাউচ (Blind pouch) অর্থাৎ অন্ধ থলি বলা হয়েছে। সেটিকেই " অহি" শব্দ দ্বারা বলা হয়েছে।এই দুই প্রকার অন্ত্রের বর্ণনা এখানে করা হয়েছ।মহর্ষি এখানে স্পষ্ট লিখেছেন "উদরস্থৈর্নাড়ীবিশেষৈঃ" উদরে স্থিত নাড়ীবিশেষ। এই প্রকরণে শরীরের অঙ্গ যেই-যেই কার্য করে থাকে সেই কথার বর্ণনা রয়েছে।

 উদাহরণস্বরূপ - পিত্ত খাদ্যকে পরিপাক্ক করে। ক্ষুদ্রান্ত্র খাদ্যকে পরিপাক করে ইত্যাদি। "নিগৃহ্ণীত" এর অর্থ জানা অথবা প্রাপ্ত করা। যেমন, গুরুর নিকট হতে বিদ্যা গ্রহণ করো এর অর্থ হলো গুরুর থেকে বিদ্যা অধ্যয়ন করা। এখানে বিপক্ষের এরূপ অর্থ সর্বথা অসংগত যে স্বামী দয়ানন্দজী মলদ্বার দ্বারা অন্ধ সাপকে ধরার কথা বলেছে। স্বামীজী লিখেছেন যে - গুদেন্দ্রিয়ের সাথে বর্তমান অন্য কোনো সাপ হতে পারে না কিন্তু অন্ধ অন্ত্র বা ক্ষুদ্র অন্ত্রই হতে পারে। পাঠক! এবার একটু মহীধর এবং করপাত্রীর অর্থ দেখুন। পরবর্তীতে ঋষি ভাষ্যের সাথে উহার তুলনা করুন। 

মহীধর তার যজুর্বেদ(২৫/৭) ভাষ্যে লিখেছেন–
মহীধর ভাষ্যঃ- 
বনিষ্ঠুঃ স্থূলান্ত্রং তেন পূষণং দেবং প্রীণামি। গুদস্য স্থূলভাগেন অন্ধান্ অহীন্ প্রীণামি৷ স্থূলগুদাতিরিক্তৈর্গুদভাগৈঃ সর্পান্ প্রীণামি৷ অন্ত্রসম্বধিনৌ মাংসভাগাঃ তৈর্বিহ্নতো দেবান্ প্রীণামি। নাভেরধো বর্তমানং মূত্রপুটং তেন আপো দেবতাঃ প্রীণামি। লিঙ্গোভয়পার্শ্বস্থাভ্যাং মাংসপিন্ডাভ্যাং বৃষণং দেবং প্রীণামি। শেপো লিঙ্গং তেন বাজিনং দেবং প্রীণামি। রেতো বীর্যং তেন প্রজাং দেবতাং প্রীণামি। গুদতৃতীয়ভাগেন প্রদরান দেবান্ প্রীণামি। বিষ্ঠায়াঃ৷ পিন্ডৈঃ কুশ্মান্ দেবান্ প্রীণামি।"

ভাষার্থঃ- স্থূল অন্ত্রের দ্বারা পূষাদেবতাকে তৃপ্ত করি। গুহ্যের স্থূলভাগ দ্বারা অন্ধ সাপেদেরকে, গুহ্যেরঅতিরিক্ত অংশের দ্বারা সাপেদের, অন্ত্র-সমন্ধী মাংসভাগ দ্বারা দেবতাদেরকে, নাভীর নিচের অংশ মূত্রাশয় দ্বারা জল দেবতাকে, লিঙ্গের আশেপাশের মাংস পিন্ডের দ্বারা বৃষণ দেবতাকে,শুধু লিঙ্গের দ্বারা বাজিদেবতাকে, বীর্যের দ্বারা প্রজাদেবতাকে, গুহ্যের তৃতীয় ভাগ দ্বারা প্রদর দেবতাদেরকে, আর বিষ্ঠা দ্বারা কুশ্ম দেবতাতেরকে তৃপ্ত করি।।

করপাত্রী তার যজুর্বেদ (২৫/৭) মন্ত্রের ভাষ্যে লিখেছেন- 

করপাত্রী ভাষ্যঃ- বৃহৎ অন্ত্রের স্থানভূরত ঘৃতের দ্বারা পূষা দেবতাকে, স্থূল গূহ্যের দ্বারা অন্ধ সর্পদেরকে, গুহ্যের অন্য ভাগগুলোর দ্বারা সর্পদেরকে, ছোট অন্ত্রের দ্বারা বিহ্নুত দেবতাকে, বস্তি [মুত্রস্থলী] দ্বারা জল দেবতাকে, বৃষণসমূহের দ্বারা কামনাবর্ষী বৃষণ দেবতাকে, মেঢ [লিঙ্গের] দ্বারা বাজীকে, বীর্য দ্বারা প্রজাকে, পিত্ত দ্বারা চাষ কে, পায়ু দ্বারা প্রদরকে এবং বিষ্ঠার পিন্ড দ্বারা কুশ্ম দেবতাকে প্রসিন্ন করি।।


source - শ্রীকরপাত্রীস্বামীদ্বারা প্রণীত যজুর্বেদ বেদার্থ-পরিজাত-ভাষ্য (করপাত্রভাষ্য)

করপাত্রী স্বামীকৃত, যজুর্বেদ-২৫/৭ মন্ত্র ভাষ্যের Archive Lingk- https://archive.org/details/yajurvedakarpatrabhashya07/page/ n186/mode/1up

জ্বালাপ্রসাদ মিশ্রকৃত ভাষ্য– 

পদার্থ :- (বনিষ্ঠুনা) স্থুলান্ত্র দ্বারা (পূষণম্) পূষাদেবতাকে প্র০ (স্থুলগুদয়া) গুদার স্থূলভাগ দ্বারা (অন্ধাহীন্) অন্ধ সর্পকে প্র০ (গুদাভিঃ) স্থূল গুদাতিরিক্ত ভাগ দ্বারা (সর্পান্) সর্পকে প্র০ (আন্ত্রৈঃ) অন্ত্রসম্বন্ধী মাংসভাগ দ্বারা (বিহ্রুতঃ) বিহ্রুত দেবকে প্র০ (বস্তিনা) নাভীর নিচ ভাগ দ্বারা (অপঃ) জলদেবকে প্র০ (আণ্ডাভ্যাম্) অণ্ডকোষদ্বয় দ্বারা (বৃষণম্) বৃষণকে (শেপেন) লিঙ্গ দ্বারা (বাজিনম্) বাজীকে [অশ্বকে] (রেতসা) বীর্য দ্বারা (প্রজাম্) সন্ততিকে (পিত্তেন) পিত্ত দ্বারা (চাষান্) চাষদেবকে (পায়ুনা) গুদার তৃতীয় ভাগ দ্বারা (প্রদরান্) প্রদরকে (শপকপিণ্ডৈঃ) বিষ্ঠার পিণ্ড দ্বারা (কুশ্মান্) কুশ্মকে প্রসন্ন করি।

উপরে আমি ঋষি দয়ানন্দ তথা মহীধরের এবং করপাত্রীর ও জ্বালাপ্রসাদ মিশ্রজীর ভাষ্য দিয়ে দিয়েছি। মহর্ষি দয়ানন্দ এই মন্ত্রের ভাষ্য করেছেন যে - এই শরীরে কি কি অঙ্গ আছে? এগুলো কি-কি করে তথা তাদের দ্বারা কি কি উচিত কার্য নেওয়া উচিত। মহীধর ও করপাত্রী - এর বিপরীতে শরীরের অঙ্গসমূহের দ্বারা তথা মল-মূত্রাদির দ্বারা দেবতাদেরকে তৃপ্ত করার কথা লিখেছে। এখন এই কথাকে অদ্বৈতবাদী পৌরণিক পন্ডিতই বলুক বা করেই দেখাক যে এই অঙ্গগুলো এবং মলমূত্রাদির দ্বারা কিভাবে দেবতাদেরকে তৃপ্ত করা যায়। আশ্চর্যের বিষয় হলো পৌরাণিক ব্যক্তিবর্গ মহর্ষি দয়ান্দের এতটা যুক্তিযুক্ত ভাষ্যের উপহাস করে এবং যুক্তিশূন্য মহীধর ও করপাত্রীর ভাষ্যের উপর গর্ব করে।

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী মহারাজ যজুর্বেদ (২৫/৭) মন্ত্রের ওপর যে সংস্কৃত ভাষ্য করেছেন আমি তাহা অনুবাদ করতেছি -
পূষণং বনিষ্ঠুনান্ধাহীন্ত্স্হূগুদয়া সর্পান্ গুদিভির্বিহুত আন্ত্রৈরপো বস্থিনা বৃষমাণ্ডাভ্যাং বাজিনং শেপেন প্রজাংতেরসা চাষান্ পিত্তেন প্রদরান্ পায়ুনা কূশ্মাঞ্ছকপিণ্ডৈঃ।। যজুর্বেদ-২৫/৭

পদার্থঃ (পূষণম্) পুষ্টিকরম (বনিষ্ঠুনা) যাচনেন (অন্ধাহীন্) অন্ধান্ সর্পান্ (স্থূলগুদয়া) স্থূল গুদয়া সহ (সর্পান্) (গুদাভিঃ) (বিহ্নুতঃ) বিশেষেণ কুটিলান্ (আন্ত্রৈঃ) উদরস্থৈর্নাড়ীবিশেষৈঃ (অপ) জলানি (বস্তিনা) নাভেরধোভাগেন (বৃষণম্) বীর্যাধরম্ (আন্ডাভ্যাম্) অন্ডাকারাভ্যাং বৃষণাবয়বাভ্যাম্ (বাজিনম্) অশ্বম্ (শেপেন) লিঙ্গেন (প্রজাম্) সন্ততিম্ (রেতসা) বীর্যেণ (চাষান্) ভক্ষণানি (পিত্তেন) (প্রদরান্) উদরাবয়বান্ (পায়ুনা) এতদিন্দ্রিয়েণ (কুশ্মান্) শাসনানি। অত্র কশধাতোর্মক্প্রত্যয়োহন্যেষামপীতি দীর্ঘশ্চ। (শকপিণ্ডৈঃ) শক্তৈঃ সংঘাতৈঃ।।

ভাবার্থঃ যেন যেন যদ্যতকার্যং সিধ্যেৎ তেন তেনাঙ্গেন পদার্থেন বা তত্তৎসাধনীয়ম্।।

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী কৃত সংস্কৃত ভাষ্য আধারিত হিন্দি অর্থের বাংলা অনুবাদ

পদার্থ : হে মনুষ্যগণ ! তোমরা (বনিষ্ঠুনা) যাঞ্চা দ্বারা (পূষণম্) পুষ্টিকারীকে (স্থূলগুদয়া) স্থূল গুদেন্দ্রিয়ের সহিত বর্ত্তমান (অন্ধাহীন্ ) অন্ধ সর্পের [অর্থাৎ বৃহদান্ত্রের প্রথম অংশ বা বড়ো অন্ত্র = Blind intestine or Caecum ] ন্যায় দেখতে বৃহৎ অন্ত্রকে (গুদাভিঃ) গুদেন্দ্রিয়ের সহিত (বিহ্নতঃ) (সর্পান্) বিশেষ কুটিল সর্পদের [অর্থাৎ ক্ষুদ্রান্ত্র বা ছোট অন্ত্র= Small Intestine ] ন্যায় দেখতে ছোট অন্ত্রকে , (আন্ত্রৈঃ) উদরে স্থিত নাড়ী বিশেষ হতে (অপ) জলসমূহকে ,(বস্তিনা) নাভির নিম্নভাগ অর্থাৎ মূত্রাশয় দ্বারা (বৃষণম্) বীর্য্যকে ধারণকারী অণ্ডকোষ ও লিঙ্গকে, (আন্ডাভ্যাম্) ডিম্বাকৃতির অন্ডকোষ দ্বারা (বাজিনম্) ঘোড়ার ন্যায় শক্তিশালী বেগবান লিঙ্গ কে , (শেপেন) লিঙ্গ এবং (রেতসা) বীর্যের দ্বারা (প্রজাম্) সন্তান উৎপন্ন করো ,(পিত্তেন) পিত্ত দ্বারা (চাষান্) ভোজন সমূহকে (প্রদরান্) পেটের অঙ্গসমূহকে (পায়ুনা) গুদেন্দ্রিয় দ্বারা এবং (শকপিণ্ডৈঃ) শক্তির দ্বারা (কূশ্মান্) শাসনকে গ্রহণ করো ॥

ভাবার্থ : যা যা দ্বারা যেই যেই কার্য্য সিদ্ধ হয় , সেই সেই অঙ্গ বা পদার্থ দ্বারা সে কার্য্য সিদ্ধ করা উচিৎ ॥

[The cecum is the porximal blind pouch of the ascending colon,]
Source:- National Library of Medicine National
Center for Biotechnology Information
(An official website of the United States government)



Source :- Biology NCERT Textbook (हिन्दी माध्यम) कक्षा :- 11

अध्याय :- 16 पाचन एवं अवशोषण) (Page-258)
Link:- https://www.ncbi.nlm.nih.gov/books/NBK470577/


Source :- Biology NCERT Textbook (English Medium)

Class :- 11

Chapter :- 16 {DIGESTION AND ABSORPTION} (Page-259)


মীরপুরী-সর্বস্ব

 সহায়ক গ্রন্থ - মীরপুরী-সর্বস্ব, মীমাংসক আর্ষ অনুসন্ধান কেন্দ্র দ্বারা প্রকাশিত লিখনী।

অনুবাদ- অমৃতস্য পুত্রাঃ।

আর্য প্রতিনিধি সভা বাংলাদেশ 

Post a Comment

0Comments

Please Select Embedded Mode To show the Comment System.*