"শাস্ত্র" শব্দের অর্থ নিরুপন!

0

 

"শাস্ত্র" শব্দের অর্থ নিরুপন!

আমরা সনাতন ধর্মের যারা আছি সবাই বিভিন্ন সমস্যায় জড়িয়ে আছি।কেউ কেউ বলছি "বেদই কেবল শাস্ত্র", কেউ বলছি "পুরাণই শাস্ত্র" আবার কেউ কেউ বলছি বর্তমানে যে গ্রন্থগুলো পাওয়া যায় সবই শাস্ত্র।প্রথমে জানার চেষ্টা করি "শাস্ত্র" শব্দের অর্থ কি?

"শাস্" ধাতু থেকে "শাস্ত্র" শব্দটি এসেছে যার অর্থ বৈদিক কোষে বলা হয়েছে,"শাসন করেন যিনি"!

দ্রষ্টব্যঃবৈদিক কোষ,পৃষ্ঠাঃ১৩৬০,(চন্দ্রশেখর উপাধ্যায় এবং অনিল কুমার উপাধ্যায়)।

"শাস্" ধাতু থেকে "শাসৃ" শব্দও এসেছে যার অর্থ পাওয়া যায়,"শাসক,পরমেশ্বর"!

দ্রষ্টব্যঃ বৈদিক কোষ,পৃষ্ঠাঃ১৩৬১,(চন্দ্রশেখর উপাধ্যায় এবং অনিল কুমার উপাধ্যায়)।

আবার মুনিয়ের উইলিয়ামস তার "Sanskrit-English Dictionary" গ্রন্থে "শাস্" এর অর্থ করেছেন,"Strong form of"!

দ্রষ্টব্যঃ"Sanskrit–English Dictionary" (Sir Monier Williams),page:1069

উপরোক্ত বিষয়গুলো হতে আমরা এটাই বুঝতে পারি যে,যা শাসন করার যোগ্য তাই শাস্ত্র।পরমাত্মায় সবকিছুকে শাসন করছেন।

এবার জানা যাক,যিনি সব কিছুর উপর শাসন করছেন তার বাণী কোনটি!

কর্ম ব্রহ্মোদ্ভবং বিদ্ধি ব্রহ্মাক্ষরসমুদ্ভবম্
তস্মাত্সর্বগতং ব্রহ্ম নিত্যং যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিতম্৷৷
(গীতা ৩/১৫)

অর্থ: যজ্ঞাদি কর্ম বেদ থেকে উদ্ভব হয়েছে এবং বেদ অক্ষর ব্রহ্ম থেকে প্রকাশিত হয়েছে।অতএব সর্বব্যাপক ব্রহ্ম সর্বদা যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিত আছেন।

বৈশষিক দর্শন (১/১/৩) এ বলা হয়েছে,"তদ্বচনাদান্নায়্য প্রামাণ্যম্" ॥

ব্যাখ্যাকার লিখেছেনঃএই উভয়বিধ ধৰ্ম্ম বেদে উপদিষ্ট হইয়াছে ; বেদ সৰ্ব্বজ্ঞ ঈশ্বর কর্তৃক উপদিষ্ট ; অতএব বেদই ধৰ্ম্মসম্বন্ধে মুখ্য প্রমাণ।

বৈশষিক দর্শন(২/১/১৯) এ বলা হয়েছে,"প্রত্যক্ষপ্রবৃত্তত্বাৎ সংজ্ঞাকৰ্ম্মণঃ"॥

ব্যাখ্যাকার লিখেছেনঃসেই বেদে আমাদিগের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ দেবতাদিগের নাম ও কৰ্ম্ম যাহা উক্ত আছে, তাহা অবশ্য ঐ বেদবক্তা (ঈশ্বর ) স্বয়ং প্রত্যক্ষ করিয়াছিলেন; কারণ প্রত্যক্ষ না হইলে, তৎসমস্ত এইরূপ বর্ণিত হইতে পারে না। অতএব বেদ ঈশ্বরবাক্য হওয়ায়, তাহাই অদৃষ্ট বিষয় সম্বন্ধে সৰ্ব্বত্র শ্রেষ্ঠ প্রমাণ।

উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করলে আমরা বুঝতে পারি যে,"বেদই ঈশ্বরবাক্য"!যে ঈশ্বর সমস্ত কিছুর উপর শাসন করছেন।

তাই "শাস্ত্র" শব্দে মূল হিসেবে বেদকেই ধরতে হবে।তবে স্বতঃপ্রমাণ এবং পরতঃপ্রমাণ অনুসারে বেদ এবং বেদানুকূল গ্রন্থগুলোকেও শাস্ত্র বলা যেতে পারে।যেমন স্বামী বিবেকানন্দের বাণীই দেখে নেওয়া যাক–

শাস্ত্র শব্দে অনাদি অনন্ত ‘বেদ’ বুঝা যায়। ধর্মশাসনে এই বেদই একমাএ সক্ষম।পুরাণাদি অন্যান্য পুস্তক স্মৃতিশব্দবাচ্য ; এবং তাহাদেরপ্রামাণ্য -যে পর্যন্ত তাহারা শ্রুতিকে অনুসরণ করে, সেই পর্যন্ত।

‘সত্য’ দুই প্রকার।

এক -যাহা মানব-সাধারণের পঞ্চেন্দ্রিয়-গ্রাহ্য ও 
তদুপস্থাপিত অনুমানের দ্বারা গ্রাহ্য।
দুই-যাহা অতীন্দ্ৰীয় সূক্ষ্ম যোগজ শক্তির গ্রাহ্য।
প্রথম উপায় দ্বারা সঙ্কলিত জ্ঞানকে ‘বিজ্ঞান’ বলা যায়।
দ্বিতীয় প্রকারের সঙ্কলিত জ্ঞানকে 'বেদ' বলা যায়।
(স্বামী বিবেকানন্দ বাণী ও রচনা,খন্ডঃ৬,ভাববারকথা,হিন্দুধর্ম এবং শ্রীরামকৃষ্ণ)
ও৩ম্ কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্যম্

আর্য প্রতিনিধি সভা বাংলাদেশ।

Post a Comment

0Comments

Please Select Embedded Mode To show the Comment System.*