ব্রতধারী, আর্য সাহিত্যের অভিবৃদ্ধিকারী স্বামী দর্শনানন্দ সরস্বতী জীর জন্ম - মাঘ কৃষ্ণা ১০ সংবৎ ১৯১৮ বি. লুধিয়ানা জেলার এক গ্রামে হয়েছিল। স্বামীজীর পূর্বনাম ছিল প. কৃপারাম। তাঁর পৈতৃক জীবিকার সাধন ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল, কিন্তু প.কৃপারামজীর এর মধ্যে মননিবেশ না হওয়ায়, গৃহ ত্যাগ করে কাশী চলে যান। সেখানে পণ্ডিত হরিনাথ (সন্যাস নাম স্বামী মনীষ্যানন্দ) এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। কাশী নিবাসকালে প. কৃপারাম অনুভব করেন যে সেই বিদ্যাক্ষেত্রে থেকে অধ্যয়নে প্রবৃত্ত শিষ্যজনের শাস্ত্রগ্রন্থ সুলভে উপলব্ধ হয়না। তাদের এই কাঠিন্যতা দূর করার জন্য তিনি কাশীতেই স্ব ব্যয় দ্বারা 'তিমিরনাশক' প্রেসের স্থাপনা করেন এবং শাস্ত্র গ্রন্থ স্বল্প মূল্যে নিয়ে আসেন। তিনি -
সামবেদ মূল, অষ্টাধ্যায়ী, মহাভাষ্য তথা কাশিকা বৃত্তি, বৈশেষিক উপস্কার, ন্যায়দর্শন বাৎস্যায়ন ভাষ্য, সাংখ্য দর্শন বিজ্ঞানভিক্ষু প্রবচন ভাষ্য এবং অনিরুদ্ধ বৃত্তি, কাত্যায়ন শ্রৌতসূত্র, মূল ঈশাদিদশোপনিষত্সংগ্রহ (১৮৮৯), শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা মূল, অন্নংভট্টের তর্ক-সংগ্রহ মূল, তর্ক-সংগ্রহের ন্যায়বোধিনী টীকা, অন্নপূর্ণাষ্টক স্তোত্র, শব্দ-রূপাবলী, মীমাংসাদর্শন মূল, বাদরায়ণকৃত শারীরক সূত্র শঙ্করানন্দকৃত বৃত্তি সহিত (১৯৪৫ বি.) প্রকাশ করেছেন।
তখনপর্যন্ত তিনি আর্য সমাজের সম্পর্কে এসে আর্য সমাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নেন। ১৮৯৩ হইতে ১৯০১ পর্যন্ত তিনি উত্তর ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বৈদিক ধর্মের প্রচার করেন। ১৯০১ সনে শান্ত স্বামী অনুভবানন্দ জীর নিকট সন্যাস দীক্ষা নিয়ে প. কৃপারাম হইতে স্বামী দর্শনানন্দ নাম ধারণ করেন। তিনি নিজ জীবনকালে - পৌরাণিক, জৈন, খ্রিষ্টান তথা মুসলিম [অ]ধর্মাচার্যদের সাথে অনেক শাস্ত্রার্থ করেছেন। অনেক স্থানে গুরুকুল স্থাপনাও করেন তথা অনেক পত্র প্রকাশ করেন। ১১মে ১৯১৩ সনে স্বামীজীর দেহান্ত হয়ে যায়।
লে.কা.– স্বামীজী ১৮৯৬ সনে এক নিয়ম ধারণ করেন যে তিনি প্রতিদিন ১টি আর্টিকেল লিখবেন এবং এই নিয়ম বর্ষ পর্যন্ত চলতেই থাকে। পণ্ডিত নরদেব শাস্ত্রীর মতে সেই আর্টিকেলের সংখ্যা ২৫০। এই সকল আর্টিকেল একত্র করে 'দর্শনানন্দ গ্রন্থ সংগ্রহ' নামে প্রকাশিত হয়। মূলত এই আর্টিকেল উর্দু ভাষায় ছিল পরবর্তীতে তা হিন্দী ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।
স্বামীজীর অন্য গ্রন্থসমূহ –
১.সাংখ্যদর্শন ভাষ্য
২.ন্যায়দর্শন ভাষ্য
৩.বৈশেষিক দর্শন ভাষ্য
৪.বেদান্তদর্শন (ব্রহ্মসূত্র) ভাষ্য (অপূর্ণ)
এই ভাষ্যগুলোকে উর্দু হইতে হিন্দী ভাষায় অনুবাদ করেছেন পণ্ডিত গোকুলচন্দ্র দীক্ষিত জী।
৫.ঈশোপনিষদ্, কেনোপনিষদ, কঠোপনিষদ্, মুণ্ডকোপনিষদ্, মাণ্ডূক্যোপনিষদ্ এর প্রশ্নোত্তর পূর্বক শঙ্কা-সমাধান শৈলীতে ভাষ্য। [অনুবাদ করেছেন মাস্টার অবধবিহারীলাল চাঁদপুরী]
৬.মনুস্মৃতি তথা গীতা টীকা।
স্বামীজী ইসলাম ও জৈন আদি মতের খণ্ডণ মূলক অনেক গ্রন্থ লিখেছেন। যেমন –
ইসলাম বিষয়ক সমীক্ষাত্মক গ্রন্থ–
১.কুরান কী ছানবীন
২.অকায়দ ইসলাম পর অকলী নজর (৮ ভাগ)
৩.বৈদিক ধর্ম ঔর অহলে ইসলাম কে অক়ায়দ কা মুকাবলা
৪.অহলে ইসলাম কে বেদোং পর নাজায়জ হমলে
৫.কুরান কী জান বেদ কা এক মন্ত্র হৈ
৬.শৈতান
৭.ময়ারে সদাক়ত
৮.জবাব রদ্দে তনাসুখ
৯.প্রশ্নোত্তর অহলে ইসলাম
১০.নিয়োগ ঔর উসকে দুশমন
১১.প্রশ্নোত্তর মৌলবী নবন্দঅলী
১২.ইসলাম মেং নজাত কী বাকফিয়ত
১৩.ইসলাম নজাত মুমতনে উল্বাবজূদ ।
জৈনমত সমীক্ষাত্মক গ্রন্থ–
১.জৈনিয়োং কা জীব
২.জৈনিয়োং কি মুক্তি
৩.স্যাদ্বাদ-সমীক্ষা
৪.জৈন ভ্রান্তিনিবারণ
৫.জৈনী পণ্ডিতোং কে প্রশ্নোত্তরোং কি সমীক্ষা
৬.ঈশ্বর কতৃত্ত্ব সমীক্ষা
৭.জৈনী পণ্ডিতোং সে প্রশ্ন
৮.ভূমণ্ডল কে সমস্ত আর্যোং কে সমক্ষ কমণ্ডল সমান সরাবগিয়োং কে প্রতি প্রশ্নোত্তর
৯.আত্মারাম জৈনী কি পোল
১০ জৈনমত সমীক্ষা
খ্রিষ্টান মত বিষয়ক আলোচনাত্মক গ্রন্থ–
১.ঈসাঈ মত কে বিদ্বানোং সে প্রশ্ন
২.ঈসাঈ মত খণ্ডন
৩.পাদরী সাহব ঔর রামদাস
৪.ঈসাঈমত পরীক্ষা
৫.পাদরিয়োং কো চুনৌতী
৬.মসীহী মজহব কে নিয়মোং পর অক়লী নজর
৭.ভোংদু জাট ঔর পাদরী সাহব কা শাস্ত্রার্থ
৮.ঈসাঈ মত মেং মুক্তি অসম্ভব হৈ
অন্যান্য লঘু পুস্তিকা–
১.গঞ্জে আজাদী, (১৮৭৯) উর্দুতে লিখা প্রথম পদ্যাত্মক পুস্তক
২.মূর্খতা (১৮৮৭)
৩.নৌজবানোং উঠো (১৮৯২)
৪.উন্নীসবীং সদী কা সচ্চা বলিদান - পণ্ডিত লেখরামজীর বলিদান নিয়ে লিখনী।
৫.হম নির্বল ক্য়োং হৈং? (১৯০০) [আমরা নির্বল কেন?]
৬.ক্য়া ধর্মসভা আর্যসমাজ সে শাস্ত্রার্থ কর সকতী হৈ
৭.ধর্মসভা সে ৬৪ প্রশ্ন
৮.বেসমঝোং কে স্বামী দয়ানন্দ পর ঝুঠে ইল্জাম
৯.অঙ্গ্রেজী তালীম যাফ্তাওং মেং বৈদিক ধর্ম কে প্রচার কা আসান তরীকা
১০. আর্য ধর্ম সভা (১৮৮৯)
১১. ক্য়া সংস্কৃত মৃত ভাষা হৈ ? (১৯০৪)
১২. ভারত কা দুর্ভাগ্য
১২. 'প্রকাশ' কে নাম খুলী চিট্ঠী
১৪ অক়্ল কা অজীরণ
১৫. সময় কা প্রবাহ তথা সফলতা
১৬. মুন্শী- রামজী কী আখিরী ভেন্ট (১৯১০)
১৭. আর্যসমাজ ক্য়োং কমজোর হৈ
১৮. নিঃশুল্ক শিক্ষা (মুফ্ত তালীম)
১৯. প্রাচীন ঔর নবীন শিক্ষা প্রণালী কী তুলনা
২০. জগন্নাথ লীলা
২১.জগন্নাথ কা বেসুরা প্রলাপ-- মুরাদাবাদ নিবাসী আর্যসমাজ কে কটু আলোচক মুন্শী জগন্নাথ দাস কে মন্তব্যোং কা খণ্ডন
২২.দেবসমাজ সে প্রশ্ন
২৩.গুরুকুল, গুরু শিক্ষা।
স্বামীজীর কথাত্মক পুস্তিকা–
১. সত্যব্রতী মহানন্দ, ২. ধর্মবীর (উপন্যাস), ৩. ক্ষমাচন্দ্রোদয় (উপন্যাস), ৪. কথা পচ্চীসী (লঘু কথাওং কা সঙ্গ্রহ ১৯৬৯), ৫. চাণ্ডাল চৌকড়ী (আর্যসমাজ কে আন্তরিক কলহ — গুরুকুল ঔর কালেজ দল কে পারস্পরিক বিবাদ পর লিখা গয়া উপন্যাস), ৬. বিচিত্র ব্রহ্মচারী ।
স্বামীজী বিবিধ বিষয়ে অসংখ্য পুস্তক লিখেছেন। স্বামী দর্শনানন্দের বইগুলি প্রধানত নিম্নলিখিত প্রকাশকদের দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল –
১.বজীরচন্দ্র শর্মা দ্বারা সঞ্চালিত বৈদিক পুস্তকালয় লাহৌর
২.প. শঙ্করদত্ত শর্মা দ্বারা সঞ্চালিত বৈদিক পুস্তকালয় মুরাদাবাদ
৩.স্বামীজী কে অনুজ স্বামী ব্রহ্মানন্দ দ্বারা সঞ্চালিত দর্শনানন্দ টেক্স্ট সোসাইটী
৪.প্রেম পুস্তকালয় বরেলী
৫.গুরুকুল মহা- বিদ্যালয় জ্বালাপুর
৬.দয়ানন্দ বেদ প্রচারক মিশন নাহৌর
৭.ভাস্কর পুস্তকালয় কনখল
৮.রাজপাল এণ্ড সন্স দিল্লী
৯. দর্শনানন্দ গ্রন্থাগার মথুরা
১০.আর্যপ্রকাশ পুস্তকালয় আগরা
১১. গোবিন্দরাম হাসানন্দ দিল্লী
১২. দেহাতী পুস্তক ভণ্ডার দিল্লী
১৩. মধুর প্রকাশন দিল্লী আদি।
©️আর্যপ্রতিনিধি সভা বাংলাদেশ