![]() |
আর্য সমাজ কি মানেন? |
» এই পঠনে পাঠকদের সামনে আর্য সমাজের মান্যতা গুলোকে দেখানো হবে যেনো পংপন্থী গণের মনের ময়লা দূর হয়ে যায় এবং শতপথের পথিক হয় তথা যেনো এটা বুঝে নেয় আর্য সমাজের মান্যতা সার্বভৌমিক এবং বেদানুকুল।তাদের বিশ্বাস করা মানুষের কর্তব্য,আর্য সমাজ এবং সংসারের সকল মতালম্বীদের মান্যতা এবং সকলে মুক্তকন্ঠে স্বীকার করেন যে বেদ ঈশ্বরের বাণী, সার্বভৌমিক, সর্বমান্য গ্রন্থ,এর পঠন-পাঠন মানব মাত্রের পরম কতব্য।
🔹আর্য সমাজের মান্যতা🔹
১.ঈশ্বর- যার ব্রহ্মা পরমাত্মাদি নাম। যিনি সচ্চিদানন্দাদি লক্ষণ- যুক্ত, যার গুন-কর্ম-স্বভাব পবিত্র,সর্বজ্ঞ, নিরাকার, সর্বব্যপক,অজন্মা,অনন্ত, সর্বশক্তিমান,দয়ালু,ন্যায়কারি,সর্ব সৃষ্টির কর্তাধর্তা, সমস্ত জীবের কর্মনুসার সত্য ন্যায় দ্বারা ফলদাতা আদি লক্ষণযুক্ত,উনাকে আমরা পরমেশ্বর মানি।
—- মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী
২.চার বেদ- ( ধর্মবিদ্যা যুক্ত ঈশ্বর প্রণীত সংহিতা মন্ত্র ভাগ ) কে নিষ্পত্তিমূলক স্বতঃসিদ্ধ প্রমাণ বলে বিশ্বাস করি। এটি স্বতঃসিদ্ধ প্রমাণরূপ,যায় প্রমাণের জন্য অন্য কোনো গ্রন্থের আবশ্যকতা নেই। যেমন- সূর্য্য বা প্রদীপ তার স্বরূপ এর স্বতঃ প্রকাশক এবং পৃথিব্যাদিরও প্রকাশক,তেমন চারটি বেদ রয়েছে এবং চার বেদের ব্রাহ্মণ,ছয় অঙ্গ,ছয় উপাঙ্গ,চার উপবেদ এবং ১১২৩ টি ( এগারো থেকে সাতশ ) বেদের শাখা রয়েছে। যা বেদের ব্যাখ্যান রূপ,অর্থাৎ বেদনুকুল হওয়ায় প্রমাণ এবং এর মধ্যে যে বেদ বিরুদ্ধ বচন রয়েছে,তাকে অপ্রমাণ বলে মানি।
৩.জীব- যে ইচ্ছা-দ্রেষ,সুখ-দুঃখ এবং জ্ঞানাদি গুনযুক্ত,অল্পগ্য,নিত্য তাকেই জীব বলে মানি।
৪.অনাদি পদার্থ- তিনটি। এক ঈশ্বর,দ্বিতীয় জীব এবং তৃতীয় প্রকৃতি,অর্থাৎ জগতের কারণ,একে নিত্য বলা হয়,যা নিত্য পদার্থ,তার গুন-কর্ম-স্বভাবও নিত্য।
৫.মুক্তি- অর্থাৎ সমস্ত দোষ আদি থেকে মুক্ত হয়ে বন্ধন রহিত হয়ে, সর্বব্যাপক ঈশ্বর এবং তার সৃষ্টিতে সেচ্ছায় বিচরণ করা,নিয়ত সময় পর্যন্ত মুক্তির আনন্দকে ভোগ করে পুনঃ জগতে ফিরে আসা।
৬.মুক্তির সাধনা- ঈশ্বরোপাসনা অর্থাৎ যোগাভ্যাস, ধর্মানুষ্ঠান বা ব্রহ্মচর্য দ্বারা বিদ্যাপ্রাপ্তি,উপযুক্ত বিদ্বানের সঙ্গ,সত্যবিদ্যা,সুবিচার এবং পুরুষার্থ আদি।
৭.দেব- বিদ্বানদের দেব এবং অবিদ্বানদের অসুর, পাপীদের রাক্ষস, অনাচারীদের পিশাচ মানি।
— মহর্ষি
৮.দেবপূজা- সেই বিদ্বানদের মাতা-পিতা-আচার্য, অতিথি,ন্যায়কারী এবং ধর্মত্মাজন,পতিব্রতা স্ত্রী এবং স্ত্রীব্রতপতির সৎকার করাকে দেবপূজা বলা হয়, এর বিপরীত হলো অদেবপূজা,মূর্তিকে কে পূজা এবং এর পাশাপাশি জড় মূর্তিকে সর্বথা অপুজ্য মানি।
— মহর্ষি
৯.পুরাণ- যা ব্রহ্মাদির তৈরি ঐতরিযাদি ব্রাহ্মণপুস্তক,তাদেরই পুরাণ,ইতিহাস,কল্প,গাঁথা এবং নরশংসী নামে মানি,অন্য ভগবদাদি কে নয়।
১০.তীর্থ- যার দ্বারা 'দুঃখ' সাগর অতিক্রম হয়। সত্যভাষণ,বিদ্যা,সৎসঙ্গ,যোগাভ্যাস, পুরুষার্থ, বিদ্যাদানাদি শুভ কর্ম, একেই তীর্থ মনে করি,অন্য জল-স্থলাদিকে নয়।
১১.স্বর্গ- স্বর্গনাম সুখ বিশেষ ভোগ এবং সেই সামগ্রীর প্রাপ্তি।
১২.নরক- যা দুঃখ বিশেষ ভোগ এবং সেই সামগ্রীর প্রাপ্তি হওয়া।
অনুবাদক:- বিশাল আর্য।