২য় পর্ব
৮ঃ
৮নং আক্ষেপঃ"সত্যার্থ প্রকাশ" এর চতুর্থ সমুল্লাসে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী নিয়োগের মাধ্যমে পুত্র সন্তান জন্ম দেওয়ার কথা বলেছেন।এটা কত নিকৃষ্ট কথা।
৮নং আক্ষেপ নিবারণঃ যারা শুরু থেকেই কপি করে অভ্যস্ত, তারা আজও সেটা ছাড়তে পারে নি। ভালোভাবে পড়তে জানে না অথচ কপি করতে উস্তাদ।"নিয়োগ" সনাতন ধর্মের শাস্ত্রীয় নিয়ম। তবে নিয়োগের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম এবং নির্দিষ্ট সময় আছে। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিয়োগ করা যাবে। এটি হল আপদ্ধর্ম!প্রয়োজন ব্যতীত এটি প্রযোজ্য নয়।
"নিয়োগ" বিষয়ে শাস্ত্রীয় প্রমাণ জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করে বিস্তারিত পড়ুন-
https://aryapsbd.blogspot.com/2023/01/blog-post_3.html
যদি আমরা ইসলাম মতবাদের দিকে দৃষ্টিপাত করি তাহলে দেখি যে,"ইসলামে দাসীর সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্ভোগ করার পারমিশন রয়েছে। এটাকে কি তাহলে খারাপ বলা যাবে না?"নিয়োগ" এবং দাসীর সাথে বিবাহবহির্ভূত যৌনমিলন করার মধ্যে পুরোপুরি পার্থক্য আছে।"নিয়োগ" কেবল সন্তান উৎপাদনে অক্ষম নারী,পুরুষের জন্য। এর নির্দিষ্ট নিয়ম এবং সময় আছে। অন্যদিকে দাসীপ্রথায় যে কেউ দাসীর সাথে যৌনমিলন করতে পারবে এবং ক্রয়,বিক্রয় করতে পারবে এমন লিখনী ইসলামিক স্কলারদের বইয়েই পাই। তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ,"মারিয়া আল কিবতীয়া"!আশা করি সকলে সেই নারীকে/দাসীকে চিনেন।
৯ঃ
৯নং আক্ষেপঃ সত্যার্থ প্রকাশের একাদশ সমুল্লাসে(৫ম সংস্করণ) দয়ানন্দ সরস্বতী লিখিয়াছে যে সুভদ্রাকে বামমার্গীগণ জগন্নাথ এবং বলরামের মাঝখানে বসিয়ে স্ত্রী বানাইয়া দিয়েছে।
৯নং আক্ষেপ নিবারণঃ কপিবাজ পাখণ্ডীগণের জ্ঞান যে কবে হবে!প্রথমে " সত্যার্থ প্রকাশ" এ লিখিত বিষয়টি দেখি।
এই জগন্নাথে বামমার্গিগণ ভৈরবী চক্র রচনা করিয়াছিল। কারণ সুভদ্রা শ্রীকৃষ্ণ ও বলদেবের ভগ্নী। তাঁহাকেই দুই ভ্রাতার মধ্যস্থলে স্ত্রী ও মাতার স্থানে বসাইয়াছে। ভৈরবী চক্র না হইলে এ ব্যাপার কখনও হইত না।
উপরোক্ত লেখায় উল্লেখিত "স্ত্রী" শব্দটি নিয়েছেন পাখণ্ডীগণ অথচ "মা" শব্দটি চোখে দেখেনি।এখানে ভৈরবী চক্রের বর্ণনায় মহর্ষি দয়ানন্দ এই কথাগুলো লিখেছিল।
১০ঃ
১০নং আক্ষেপঃ "সত্যার্থ প্রকাশ" এর ৩য় সংস্করণের,২য় সমুল্লাস,৩০ নং পৃষ্ঠায় মহর্ষি দয়ানন্দ বলেছেন,"ব্রহ্মচর্য পালন করে অনেকেই চারশ বছর পর্যন্ত আয়ু পেতে পারেন"!
১০নং আক্ষেপ নিবারণঃ এই কথাটিও কপি করেছে অন্যের কাছ থেকে। নিজেদের জাত ভাইদের থেকে কপি করে মিথ্যাচার করা কোন ভালো মানুষের কাজ কি হতে পারে?মুমিন ভাই যে দাবী করেছেন তা একদম মিথ্যা।
"চোরে চোরে মাসতুতো ভাই,ধরা খাইলে জামিন নাই"!
এক মূর্খ যখন অন্য মূর্খকে কপি করে এমনই হয়।"সত্যার্থ প্রকাশ",তৃতীয় সংস্করণ,২য় সমুল্লাস,৩০ নং পৃষ্ঠায় কি আদৌ এমন কোন কিছু লিখিত আছে?চলুন দেখা যাক—
দেখুন,এইখানে কোথায় এমন কথা লেখা আছে? ছাগলে খেয়ে ফেলা আয়াতগুলো খুঁজতে গিয়ে নতূন কথাটি আবিষ্কার করে ফেললো মুমিন ভাই।
১১ঃ
১১নং আক্ষেপঃ স্ত্রী যদি কটু কথা বলে স্বামীর উচিত সেই স্ত্রীকে পরিত্যাগ করে অন্য নারীর সাথে নিয়োগ করা।
এইরূপ পুরুষের পক্ষেও নিয়ম আছে স্ত্রী বন্ধ্যা হইলে অষ্ট বর্ষ অর্থাৎ বিবাহ হইতে অষ্ট বর্ষের মধ্যে গর্ভ না হইলে, সন্তান হইয়া মরিয়া যাইলে দশ বৎসর, কেবল কন্যামাত্র প্রসবিনী হইলে একাদশ বৎসর এবং দুর্ব্বাক্যবাদিনী হইলে সদ্য উক্ত স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া নিয়োগ দ্বারা সন্তানোৎপত্তি করিয়া লইবে। ২।
তদ্রূপ পুরুষও অত্যন্ত দুঃখদায়ক হইলে স্ত্রীর উচিত যে উক্ত স্বামীকে ত্যাগ করিয়া অপর পুরুষ হইতে নিয়োগ দ্বারা সন্তানোৎপত্তি করিয়া উক্ত পতির দায়াধিকারী সন্তান করিয়া লইবে।পূর্বোক্ত প্রমাণ এবং যুক্তিসমূহ অনুসারে স্বয়ম্বর বিবাহ এবং নিয়োগদ্বারা স্ব স্ব কুলের উন্নতি করিতে হইবে। মিথ্যাবাদী ভণ্ডরা কি দাবী করেছিলো আর এখানে কি আছে?
কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করা যাক,
১ঃ"সত্যার্থ প্রকাশ" এর ২য় সংস্করণে মনুস্মৃতির রেফারেন্সের স্থলে প্রিন্টিং মিসটেক আছে।সেখান (৯/৭৬ এবং ৮১) হবে।
২ঃমহর্ষি দয়ানন্দ এখানে মনুস্মৃতির শ্লোক উদ্ধৃত করেছেন।তাই বিষয়টা মনুস্মৃতি দিয়েই বিচার করতে হবে।
বিচারঃ "সত্যার্থ প্রকাশ" ২য় সংস্করণ,৪র্থ সমুল্লাস,৮৮ পৃষ্ঠায় মূর্খদের দাবীকৃত বাক্যগুলো নেই।অর্থাৎ তারা কেবল মিথ্যাচারই করেছে।তাই মূর্খদের অনুরোধ করবো যে,সত্যটা না জেনে মিথ্যা প্রচার করবেন না।
১২ঃ
১২ নং আক্ষেপঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সত্যার্থ প্রকাশ,৫ম সংস্করণ,৪র্থ সমুল্লাস,পৃষ্ঠা ৮১ তে বলেছে,"তামাটে গায়ের রঙ, পুরুষ অপেক্ষা লম্বা নারী, শক্তিশালী নারী, স্থুলকায়া/ মোটা মেয়ে, শরীরে লোমহীন বা অধিক লোমযুক্ত নারী, কপিল বর্ণের চোখ যে নারীর তাদেরকে বিয়ে করা যাবে না।
১২ নং আক্ষেপ নিবারণঃ উটের বাচ্চা এমন কথা কোথায় পেল?তারা কি আবার নতুন করে "সত্যার্থ প্রকাশ" লিখতে চাই নাকি?চলুন দেখি ৮১ নং পৃষ্ঠায় কি লেখা আছে—
উপরোক্ত ছবির প্রমাণ থেকে বুঝা যায় যে,উটের বাচ্চারা কতটা মিথ্যাবাদী।তাদের দাবীকৃত কোন কথায় উক্ত পৃষ্ঠায় নেই।
১৩ঃ
১৩নং আক্ষেপঃ গুগলে "মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী" লিখে চার্জ দিলে তার বাবা মায়ের নাম আসে না কেন?
১৩নং আক্ষেপ নিবারণঃ চলুন আমরা নিজেরাই দেখে আসি—
ছোট বাচ্চাদের মত আচরণ কেন করে এই মূর্খরা এটাই বুঝি না।সমস্ত কুরআন,হাদীস্,বাইবেল ইত্যাদি খুঁজলেও মুসলিমদের নবী ঈসা (সাঃ) এর বাবার নাম পাওয়া যায় না,তাহলে ঈসারও কি জন্ম নিয়োগের মাধ্যমে হয়েছে এটা মেনে নিব?তাই মূর্খতা করার আগে অন্তত পক্ষে ভালো করে পড়া বা জানা উচিত।
১৪ঃ
১৪নং আক্ষেপঃ আর্যদের গৃহে শুদ্ররা এবং স্ত্রী পুরুষরা রন্ধন আদি সেবা কার্য্য করবে।এখানে দয়ানন্দ সরস্বতী শুদ্রদের বিদ্বেষ করেছেন এবং মূর্খ বলেছেন!
প্রমাণ শ্রবণ কর :-
আর্য্যদিগের গৃহে শূদ্র অর্থাৎ মূর্খ স্ত্রী এবং পুরুষ পাকাদি সেবা করিবে কিন্তু ইহারা শরীর এবং বস্ত্রাদি সম্বন্ধে পবিত্র থাকিবে।
এখানে আপস্তম্ভ ধর্মসূত্র(২/২/৩/৪) সূত্রটি উল্লেখ করেছে।সেই সূত্রটি দেখা যাক—
এবার দেখি শুদ্রদের কাজ কি?
স শুদ্রঃ সম্পিততপাঃ সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয়ঃ ।
শুশ্রুষুরতিথি প্রাপ্তম্ তপঃ সম্চিনুতে মহত্ (৫৮)
নিত্যম্ স হি শুভাচারো দেবতাদ্বিজপুজকঃ ।
শুদ্রো ধর্মফলৈরিষ্টৈঃ সম্প্ৰয়ুজ্যেত বুদ্ধিমান্। (৫৯)
(মহাভারত অনুশাসন পর্ব, দানধর্ম পর্ব, অধ্যায়ঃ১৪১, গীতাপ্রেস)
অনুবাদঃ শূদ্রের পরম ধর্ম হল তিন বর্ণের সেবা করা। যে শূদ্র সত্যবাদী, জিতেন্দ্রিয়,আর ঘরে আসা বিদ্বান অতিথির সেবাকারী, সে মহান তপের সঞ্চয় করে নেয়। তার সেবারূপ ধর্ম হল তার জন্য কঠোর তপস্যা।নিত্য সদাচার পালন আর ঈশ্বরভক্ত তথা বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যকে সম্মানকারী বুদ্ধিমান শূদ্র ধর্মের মনোবাঞ্ছিত ফল প্রাপ্ত করে।
মহাভারত থেকে দেখলাম শুদ্রের কাজ হল অন্য তিন বর্ণের সেবা করা।যার যা কর্ম সেটায় তুলে ধরেছেন মহর্ষি দয়ানন্দ।
এবার দেখা যাক," অন্য বর্ণ গ্রহণ করতে পারবে"?
জ্ঞানবিজ্ঞানসম্পন্নঃ সস্কৃতো বেদপারগঃ ।
বিপ্রো ভবতি ধর্মাত্মা ক্ষত্রিয়ঃ স্বেন কর্মণা।।৪৫
অনুবাদঃ এইভাবে ধর্মাত্মা ক্ষত্রিয় নিজের কর্মের দ্বারা জ্ঞানবিজ্ঞান সম্পন্ন,সংস্কারযুক্ত তথা বেদের পারঙ্গত বিদ্বান ব্রাহ্মণ হয়।
অনুবাদঃ দেবী ! এই কর্ম ফলের প্রভাব দ্বারা নীচ জাতি এবং হীন কুলে উৎপন্ন হওয়া শূদ্রও শাস্ত্র জ্ঞান সম্পন্ন আর সংস্কারযুক্ত ব্রাহ্মণ হয়।
আবার,ব্রাহ্মণও তার কর্মগুণে শুদ্র বর্ণে পতিত হয়।
স্বধর্মাত্ প্রয়ুতো বিপ্ৰস্ততঃ শুদ্রত্বমাপ্লুতে।। ১১
অনুবাদঃ যদি বৈশ্য শূদ্রের কর্মকে গ্রহণ করে, তাহলে সে শূদ্রত্বকে প্রাপ্ত করে। শূদ্রচিৎ কর্ম করে নিজের ধর্মে ভ্রষ্ট হওয়া ব্রাহ্মণ শূদ্রত্বকে প্রাপ্ত করে।
তাহলে উপরোক্ত প্রমাণ হতে বুঝা যায় মহর্ষি দয়ানন্দ শুদ্র বিদ্বেষ করে নি বরং শুদ্রের কাজ সম্পর্কে বলেছেন।
উদাহরণ হিসেবে আমরা মুসলিমদের নবীর কথা বলতে পারি।
আমরা দুই পর্বে মূর্খদের "সত্যার্থ প্রকাশ" নিয়ে মিথ্যাচারের খণ্ডন করেছি।তবুও তারা মিথ্যাচার করে যাবে কারণ যারা স্বয়ম্ মিথ্যার উপরই প্রতিষ্ঠিত তারা কি আর সত্যকে মেনে নিবে?
[বি.দ্রঃমুমিন(মূর্খ) হইতে সাবধান।]
বিব্রত হবেন না!
কারণ,
"সত্যমেব জয়তে"
ও৩ম্ কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্যম্