ভগবান শ্রী রাম চন্দ্র কর্তৃক শম্বুক নামক শূদ্র বধের মিথ্যাচার খণ্ডন

0

 



নমস্তে সকলকে🙏

ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের চরিত্র হনন করতে উৎসাহী ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে এই লেখা।সনাতন ধর্মের প্রাণ পুরুষ ভগবান শ্রীরামচন্দ্র এবং রামায়ণকে কাল্পনিক মান্য করা প্লাস্টিক ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের রামায়ণে উল্লেখিত প্রক্ষীপ্ত প্রকরণ খুবই প্রিয়।এই লেখায় "শ্রীরামচন্দ্রের শম্বুক নামক শূদ্র বধ" এই বিষয়টা জানার চেষ্টা করবো।আশা করি এই লেখায় কিছুটা হলেও ভ্রান্তি নিবারণ হবে।লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইল।এই লেখায় কিছু বিষয় তুলে ধরা হলঃ

  • (১)ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের অধ্যয়ন কোষ অর্থাৎ ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের অধ্যয়নকৃত শাস্ত্র।
  • (২)রামায়ণে উল্লেখিত শুদ্র এবং ভগবান শ্রীরামচন্দ্র।
  • (৩)নারদজী দ্বারা নারদজীর খণ্ডন।
  • (৪)সমাপ্ত হওয়ার পরেও যুক্ত হল কাণ্ড।
উত্তরকাণ্ডের (৭৩-৭৬) সর্গে "শম্বুক বধ" প্রকরণটি পাওয়া যায়।প্রথমে উত্তরকাণ্ডের কিছু প্রকরণ দেখা যাক তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে।এই লেখার সুবিধার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক তুলে ধরা হল।
প্রস্থাপ্য তু স শত্রুঘ্নং ভ্রাতৃভ্যাং সহ রাঘবঃ ।
প্রমুমোদ সুখী রাজ্যং ধর্মেণ পরিপালয়ন্ ॥ ১
ততঃ কতিপয়াহঃসু বৃদ্ধো জানপদো দ্বিজঃ ।
মৃতং বালমুপাদায় রাজদ্বারমুপাগমৎ ॥ ২
রুদন্ বহুবিধা বাচঃ স্নেহদুঃখসমন্ধিতঃ ।
অসকৃৎ পুত্রপুত্রেতি বাক্যমেতদুবাচ হ ॥ ৩
কিং নু মে দুষ্কৃতং কর্ম পুরা দেহান্তরে কৃতম।। 
 যদহং পুত্রমেকং তু পশ্যামি নিধনং গতম।॥৪
রামায়ণ,উত্তরকাণ্ড(৭৩/১-৪)
অনুবাদঃ শত্রুঘ্নকে মধুরা পাঠিয়ে ভগবান শ্রীরাম ভরত ও লক্ষ্মণের সঙ্গে ধর্মপূর্বক রাজ্যপালনপূর্বক অত্যন্ত আনন্দে থাকতে লাগলেন।কিছুদিন পর জনপদে অবস্থানকারী এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ তাঁর মৃত সন্তানকে নিয়ে রাজদ্বারে আসেন।তিনি স্নেহ ও দুঃখে কাতর হয়ে নানাকথা বলে কাঁদছিলেন এবং বার বার 'পুত্র! পুত্র!' বলে ডাকছেই।হায়! আমি পূর্বজন্মে কী এমন পাপ করেছি যেজন্য আজ আমার সামনেই একমাত্র পুত্রের মৃত্যু দেখছি।



'আরও একটি শ্লোক দেখা যাক,
সুব্যক্তং রাজদোষো হি ভবিষ্যতি ন সংশয়ঃ ।
পুরে জনপদে চাপি তথা বালবধো হ্যযম্ ॥ ১৮ ॥
রামায়ণ,উত্তরকাণ্ড(৭৩/১৮)
অনুবাদঃ সুতরাং এটা স্পষ্ট যে রাজার দ্বারাই রাজ্যে কোনোও অপরাধ হয়েছে; তাই বালকের মৃত্যু হয়েছে, এতে কোনো সংশয় নেই।'


পয়েন্টঃ
(ক) উত্তরকাণ্ড(৭৩/১৮) হতে বুঝা যায়,যে বৃদ্ধ ব্যক্তিটির পুত্র মারা গেছেন সেই ব্যক্তি ছিলেন ব্রাহ্মণ।বৃদ্ধ ব্যক্তিটি উনার সন্তানের মৃত্যুর জন্য রাজ্যের রাজা অর্থাৎ ভগবান শ্রীরামের কোন অপরাধ হওয়াকেই দায়ী করছেন।

৭৪ নং সর্গ থেকে পাওয়া যায়,
ততো দ্বিজা বসিষ্ঠেন সার্ধমষ্টৌ প্রবেশিতাঃ ।
রাজানং দেবসঙ্কাশং বর্ধস্বেতি ততোঽব্রুবন্ ॥ ৩ ॥
মার্কণ্ডেয়োঽথ মৌদ্গল্যো বামদেবশ্চ কাশ্যপঃ ।
কাত্যায়নোঽথ জাবালি গৌতমো নারদস্তথা ॥ ৪ ॥
রামায়ণ,উত্তরকাণ্ড,সর্গঃ৭৪
অনুবাদঃ তারপর বশিষ্ঠজীর সাথে আট ব্রাহ্মণ রাজসভায় প্রবেশ করেছিলেন এবং সেই দেবতুল্য রাজাকে বললেন—   " মহারাজ!আপনার জয় হোক"। সেই আটজনের নাম এই প্রকার—মার্কণ্ডেয়,মৌদ্গল্য,বামদেব,কাশ্যপ,কাত্যায়ন,জাবালি,গৌতম আর নারদ।


পয়েন্টঃ
(খ)৭৪ নং সর্গের ৪ নং শ্লোকে উল্লেখিত নারদ নামটি মনে রাখবেন,পরে কাজে আসবে।

৭৪ নং সর্গের ২৮ এবং ২৯ নং শ্লোকে নারদজী ব্রাহ্মণ এর পুত্রের মৃত্যুর কারণ বললেন,
অধর্মঃ পরমো রাজন্ দ্বাপরে শূদ্রজন্মনঃ ।
স বৈ বিষয়পর্যন্তে তব রাজন্ মহাতপাঃ ॥ ২৮ ॥
অদ্য তপ্যতি দুর্বুদ্ধিস্তেন বালবধো হ্যযম্ ।
রামায়ণ,উত্তরকাণ্ড (৭৪/২৮-২৯)
অনুবাদঃ 'রাজন ! দ্বাপর যুগেও শূদ্রগণের তপস্যায় প্রবৃত্ত হওয়াকে ঘোর অধর্ম বলে মনে করা হয়। (তাহলে ত্রেতার ই ক্ষেত্রে তো কথা নেই)। আপনার রাজ্যে নিশ্চয়ই কোনো ক্ষুদ্র বুদ্ধিসম্পন্ন শূদ্র ঘোর তপস্যা করছেন, সেই কারণেই এই বালকের মৃত্যু হয়েছে।



এখন দেখি ৭৬ নং সর্গ কি বলে–
শূদ্রং মাং বিদ্ধি কাকুৎস্থ শম্বূকং নাম নামতঃ ॥ 
ভাষতস্তস্য শূদ্রস্য খঙ্গং সুরুচিরপ্রভম্ ।
নিষ্কৃষ্য কোশাদ্ বিমলং শিরশ্চিচ্ছেদ রাঘবঃ ॥ 
উত্তরকাণ্ড(৭৬/২-৪)

অনুবাদঃ মহাযশস্বী শ্রীরাম ! আমি শূদ্রযোনিতে উৎপন্ন হয়েছি এবং এই দেহ নিয়ে স্বর্গলোকে গিয়ে দেবত্নপ্রাপ্তি করতে চাই। তাই এমন উগ্র তপ করছি। 'ককুৎঙ্গুকুলভূষণ শ্রীরাম ! আমি মিথ্যা বলি না।দেবলোক জয় করার ইচ্ছাতেই তপস্যায় রত হয়েছি। আপনি আমাকে শূদ্র বলে জানুন। আমার নাম শম্বুক'। তিনি যখন এভাবে বলছিলেন, তখনই শ্রীরামচন্দ্র তলোয়ার বের করে তা দিয়ে শিরচ্ছেদ করেন।



পয়েন্টঃ
(ঘ)যার শিরচ্ছেদ ভগবান শ্রীরাম করেছিলেন তিনি জন্মেছিলেন শুদ্রযোনীতে।

এখন উল্লেখিত বিষয়গুলো বিচার করা যাক।

বিষয় (১):ভগবান শ্রীরামের অধ্যয়নকৃত শাস্ত্র।

রামায়ণের বালকাণ্ড থেকে পাওয়া যায়—
ধর্মজ্ঞঃ সত্যসন্ধশ্চ প্রজানাং চ হিতে রতঃ ।
যশস্বী জ্ঞানসম্পন্নঃ শুচির্বশ্যঃ সমাধিমান্ ॥ ১২ ॥
প্রজাপতিসমঃ শ্রীমান্ ধাতা রিপুনিষূদনঃ ।
রক্ষিতা জীবলোকস্য ধর্মস্য পরিরক্ষিতা ॥ ১৩ ॥
রক্ষিতা স্বস্য ধর্মস্য স্বজনস্য চ রক্ষিতা ।
বেদবেদাঙ্গত্তত্ত্বজ্ঞো ধনুর্বেদে চ নিষ্ঠিতঃ ॥ ১৪ ॥
সর্বশাস্ত্রার্থতত্ত্বজ্ঞঃ স্মৃতিমান্ প্রতিভানবান্ ।
সর্বলোকপ্রিয়ঃ সাধুরদীনাত্মা বিচক্ষণঃ ॥ ১৫ ॥
রামায়ণ,বালকাণ্ড(১/১২-১৫),

নারদজী মহর্ষি বাল্মিকীকে বললেন—
(শ্রীরামচন্দ্র) ধর্মজ্ঞ, সত্যনিষ্ঠ, প্রজা-কল্যাণব্রতী, যশস্বী, জ্ঞানী, পবিত্র, জিতেন্দ্রিয় এবং যোগসমাধিমান পুরুষ।১২
(শ্রীরামচন্দ্র) প্রজাপতি ব্রহ্মার ন্যায় বিশ্বের পালক, সর্বৈশ্বর্যসম্পন্ন, শত্রুমর্দনকারী এবং সকল প্রাণীর 
ও ধর্মের সংরক্ষক।১৩
(তিনি) স্বধর্ম এবং স্বজনদের প্রতিপালক, বেদ ও বেদাঙ্গগুলির গূঢ়রহস্যজ্ঞ এবং ধনুর্বিদ্যা বিষয়ে পারদর্শী। সর্বশাস্ত্রার্থতত্ত্বজ্ঞঃ স্মৃতিমান্ প্রতিভানবান্।১৪
(তিনি) সকল শাস্ত্রের অর্থ ও তত্ত্ববিষয়ে জ্ঞানী, প্রখর স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন, প্রতিভাবান, সর্বজনপ্রিয়, সাধু, উদার ও বিচক্ষণ।১৫





পয়েন্ট ১ঃ
(ক)বালকাণ্ড(১/১২-১৫) শ্লোকগুলো হতে প্রমাণিত হয় ভগবান শ্রীরাম বেদ-বেদাঙ্গ তত্ত্ব সম্পর্কে জানতেন,তিনি শাস্ত্রজ্ঞ ছিলেন।

এখন বেদমন্ত্র কি বলে দেখা যাক–

সমানো মন্ত্ৰ: সমিতিঃ সমানী সমানং মন: সহ চিত্তমেষাম্ ।
সমানং মন্ত্রমভি মন্ত্রয়ে বঃ সমানেন বো হবিষা জুহোমি ॥
(ঋগ্বেদ-১০/১৯১/৩)

পদার্থঃ(মন্ত্রঃ সমানঃ)তোমাদের বিচারশীলতা সমান হোক;
(সমিতিঃ সমানী)কার্যপ্রকৃতি সমান হোক;(এষাম্ -সমানম্
মনঃ) তোমাদের মন সমান হোক;(চিত্তম্ সহ) চিত্তও সমান
হোক;(বঃ সমাবম্ মন্ত্রম্)তোমাদের মন্ত্র সমান হোক
(অভিমন্ত্ৰয়ে) সম্পাদিত করিয়াছি,সৃষ্টি করিয়াছি;(বঃ)
তোমরা (সমানেন হবিষা) সমানভাবে প্রার্থনা,উপসনা এবং
কর্মকে গ্রহণ কর।
ভাবার্থঃ মনুষ্যের সমান বিচারশীলতা,সমান কার্যপদ্ধতি
মন এবং চিত্ত সমান হওয়া উচিত।আবার
প্রার্থনা,উপসনাও সমান হওয়া উচিত।




যজুর্বেদের একটি মন্ত্র দেখা যাকঃ

রুচং॑ নো ধেহি ব্রাহ্ম॒ণেষু॒ রুচ॒ꣳ রাজ॑সু নস্কৃধি ।
রুচং॒ বিশ্যে॑ষু শূ॒দ্রেষু॒ ময়ি॑ ধেহি রু॒চা রুচ॑ম্ ॥ 
যজুর্বেদ(১৮/৪৮)

পদার্থঃ– হে জগদীশ্বর বা বিদ্বন্! আপনি (নঃ) আমাদের (ব্রাহ্মণেষু) ব্রহ্মবেত্তা বিদ্বান্দিগের মধ্যে (রুচা) প্রীতিপূর্বক (রুচম্) প্রীতিকে (ধেহি) স্থাপন করুন । (নঃ) আমাদিগের (রাজসু) রাজপুত ক্ষত্রিয় মধ্যে প্রীতিপূর্বক (রুচম্) প্রীতিকে (কৃধি) করুন (বিশ্যেষু) প্রজাগণের মধ্যে, বৈশ্যগণের মধ্যে তথা (শূদ্রেষু) শূদ্রদের মধ্য প্রীতিপূর্বক (রুচম্) প্রীতিকে এবং (ময়ি) আমার মধ্যেও প্রীতিপূর্বক (রুচম্) প্রীতিকে (ধেহি) স্থাপন করুন ॥ ৪৮ ॥
ভাবার্থঃ– এই মন্ত্রে শ্লেষালঙ্কার আছে । যেমন পরমেশ্বর পক্ষপাত ছাড়িয়া ব্রাহ্মণাদি চার বর্ণের মধ্যে সমান প্রীতি করেন সেইরূপ বিদ্বান্গণও সমান প্রীতি করুক । যাহারা ঈশ্বরের গুণ, কর্ম ও স্বভাব হইতে বিরুদ্ধ বর্ত্তমান তাহার সব নীচ এবং তিরষ্কার করার যোগ্য ॥ ৪৮ ॥





আবার রামায়ণে পাওয়া যায় ভগবান শ্রীরাম মনুস্মৃতিও পড়েছেন এবং জানতেন।
শক্যং ত্বয়াপি তৎকার্য ধর্মমেবানুবর্ততা ।
শ্রূয়তে মনুনা গীতৌ শ্লোকৌ চারিত্রবৎসলৌ ।
গৃহীতৌ ধর্মকুশলৈস্তথা তচ্চরিতং ময়া ॥ ৩০ ॥
রামায়ণ,কিস্কিন্ধ্যাকাণ্ড(১৮/৩০)

অনুবাদঃ যদি রাজা হয়ে তুমি ধর্মের অনুসরণ কর তাহলে তোমার সেই কাজই করতে হবে,যা আমি করেছিলাম।মনু(মনু মহারাজ) রাজার সদাচার প্রতিপাদনের জন্য দুইটি শ্লোক বলেছেন,যা স্মৃতিতে(স্মৃতি গ্রন্থে) শোনা যায় এবং যেটিকে ধর্মপালনে উত্তম পুরুষগণ সাদরে গ্রহণ করেছিলেন।উনার অনুসারে এই সময় আমার আচরণ এমন হয়েছে।



পয়েন্ট ১ঃ
(খ)ভগবান শ্রীরামচন্দ্র মনুর বচন অর্থাৎ মনুস্মৃতিও অধ্যয়ন করেছিলেন।

এবার মনুস্মৃতি থেকে দেখা যাক,

শূদ্রো ব্রাহ্মণতামেতি ব্রাহ্মণশ্চৈতি শূদ্রতাম্ ।
ক্ষত্রিয়াজ্জাতমেবং তু বিদ্যাদ্বৈশ্যাত্তথৈব চ ॥
মনুস্মৃতি(১০/৬৫)

অনুবাদঃ(শুদ্রঃব্রাহ্মণতাম্+এতি) শুদ্র বা শুদ্র কূলে উৎপন্ন ব্যক্তি জীবদ্দশায় যে কোন সময় ব্রাহ্মণ বর্ণের শিক্ষা-দীক্ষা প্রাপ্ত করে ব্রাহ্মণ বর্ণকে গ্রহণ করতে পারবেন;(চ) এবং(ব্রাহ্মণঃ শুদ্রনাম+এতি) ব্রাহ্মণ বা ব্রাহ্মণ কূলে উৎপন্ন ব্যক্তি যদি নিজের কর্তব্য পালন না করে তাহলে উনি শুদ্র বর্ণে পতিত হয়ে যাবেন;(এবম্ তু) এই প্রকার নিশ্চিতভাবে (ক্ষত্রিয়াত্ জাতম্) জন্মে ক্ষত্রিয় মাতা-পিতা দ্বারা উৎপন্ন বালক বা ব্যক্তিরও ভালো-মন্দ কর্মের উপর নির্ভর করে উচ্চ এবং নিম্ন বর্ণ পরিবর্তন হয়ে যায়;(চ)এবং (তথৈব)সেই উপযুক্ত প্রকারে (বৈশ্যাৎ বিদ্যাৎ)জন্মে বৈশ্য কূলে উৎপন্ন ব্যক্তিরও বর্ণ পরিবর্তন হয়ে যায়;এটিই বর্ণব্যাবস্থার সিদ্ধান্ত,এমন জানো।
(বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি)

বিষয় ২ঃরামায়ণে উল্লেখিত শুদ্র এবং ভগবান শ্রীরামচন্দ্র।

রামায়ণে "শুদ্র" শব্দটি খুব কমই পাওয়া যায়।যেখানে যেখানে পাওয়া যায় সেই প্রকরণগুলো বিচার করা যাক।
স ত্বপশ্যদ্ বিনিষ্ক্ৰান্তং সুমন্ত্রং নাম সারথিম্।
দ্বারে মনুজসিংহস্য সচিবং প্রিয়দর্শনম্ ৷৷ ৩২
তমুবাচ মহাতেজাঃ সুতপুত্রং বিশারদম্।
বসিষ্ঠঃ ক্ষিপ্ৰমাচ নৃপতেমামিহাগতম্৷৷ ৩৩
রামায়ণ,অযোধ্যাকাণ্ড(১৪/৩২-৩৩)

অনুবাদঃ মহর্ষি বশিষ্ঠদেব নরসিংহ মহারাজ দশরথের সচিব প্রিয়দর্শন সুমন্ত্র নামক সারথিকে দ্বারদেশ দিয়ে নিষ্ক্রান্ত হতে দেখলেন।৩২
অনুবাদঃ মহান তেজস্বী বশিষ্ঠদেব তখন কার্যদক্ষ সূতপুত্র সুমন্ত্রকে বললেন—'আমার এখানে আগমন সংবাদ রাজাকে শীঘ্র জানাও।৩৩



পয়েন্ট ২ঃ
(ক) অযোধ্যাকাণ্ড(১৪/৩২-৩৩) শ্লোকে সুমন্ত্রকে সূতপুত্র অর্থাৎ শূূূদ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

অযোধ্যা কাণ্ড,৫০ নং সর্গে পাওয়া যায়,

তামূর্মিকলিলাবর্তামন্ববেক্ষ্য মহারথঃ।
সুমন্ত্ৰমব্রবীৎ সূতমিহৈবাদ্য বসামহে ।। ২৭
লক্ষ্মণশ্চ সুমন্ত্ৰশ্চ বাঢ়মিত্যেৰ রাঘবম্।
উক্লা তমিসুদীবৃক্ষং তদোপয়যতূহয়ৈঃ।।
৩০
অযোধ্যাকাণ্ড(৫০/২৭,৩০)

অনুবাদঃতরঙ্গ ও আবর্তসঙ্কুলা গঙ্গাকে দেখে মহাবীর রাম সারথি সুমন্ত্রকে বললেন—‘আমরা আজ এখানেই অবস্থান করব"।২৭

অনুবাদঃ তখন লক্ষ্মণ এবং সুমন্ত্র রঘুনন্দন রামকে ‘বেশ তাই হোক’, এই বলে অশ্বচালনা করে সেই ইঙ্গুঁদীবৃক্ষের নিকট উপস্থিত হলেন।৩০






পয়েন্ট ২ঃ
(খ)অযোধ্যাকাণ্ড(৫০/২৭,৩৩) অনুসারে সূতপুত্র সুমন্ত্রর প্রতি রামচন্দ্রের ব্যবহার ছিল নম্র,তিনি কখনো তাকে ঘৃণা কিংবা অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখেন নি।

আরও দেখুন,
এবমুক্তঃ স ধর্মাত্মা শবর্ষা শবরীমিদম্।। ১৮ 
রাঘবঃ প্রাহ বিজ্ঞানে তাং নিত্যমবহিষ্কৃতাম্।
অরণ্যকাণ্ড(৭৪/১৮)

অনুবাদঃ শবরী এইরকম বললে, ধর্মাত্মা রঘুনন্দন শ্রীরাম, আত্মজ্ঞানস্বরূপে অবহিষ্কৃতা (অনার্যা হয়েও আর্যসমাজে স্বীকৃতা) শবরীকে বললেন-



শবরীর প্রতি ভগবান শ্রীরামের আচরণ—
তৌ দৃষ্টুা তু তদা সিদ্ধা সমুখায় কৃতাঞ্জালঃ।
 পাদৌ জগ্রাহ রামস্য লক্ষ্মণস্য চ ধীমতঃ৷৷ ৬
পাদ্যমাচমমীয়ং চ সর্বং প্রাদাদ্ যথাবিধি। 
তামুবাচ ততো রামঃ শ্রমণীং ধর্মসংস্থিতাম্।। ৭

তপস্বিনীকে বললেন- 
কচ্চিত্তে নির্জিতা বিঘ্নাঃ কচ্চিত্তে বর্ধতে তপঃ। 
কচ্চিত্তে নিয়তঃ কোপ আহার্য তপোধনে।। ৮ '
কচ্চিত্তে নিয়মাঃ প্রাপ্তাঃ কচ্চিত্তে মনসঃ সুখম্। 
কচ্চিত্তে গুরুশুশ্রূষা সফলা চারুভাষিণি॥ ৯
অরণ্যকাণ্ড(৭৪/৬-৯)

অনুবাদঃ তখন তাঁদের দুজনকে দেখে সিদ্ধা তপস্বিনী শবরী কৃতাঞ্জলিপুটে উঠে দাঁড়ালেন এবং রাম-লক্ষ্মণের চরণ বন্দনা করলেন।শবরী শ্রীরাম-লক্ষ্মণকে শাস্ত্রীয় বিধিমতো পদপ্রক্ষালনের জল, ফল-পুষ্পাদি, অর্ঘ্য আচমনীয় ইত্যাদি সব কিছুই দিলেন। তখন শ্রীরামচন্দ্র ধর্মপরায়ণা সেই তপস্বিনীকে বললেন—অয়ি তপস্বিশ্রেষ্ঠ ! তোমার তপস্যার বিঘ্নসকল নিবারিত হয়েছে তো? তোমার তপস্যা বর্ধিত হচ্ছে তো? তোমার ক্রোধ এবং আহার সংযত আছে তো? 'অয়ি মধুরভাষিণি ! তোমার তপস্যার নিয়ম সব পালিত হচ্ছে তো? তোমার মনে আনন্দ বিরাজ করছে - তো? তোমার গুরুশুশ্রূষা সার্থক হয়েছে তো!'




পয়েন্ট ২:
(গ)অরণ্যকাণ্ড(৭৪/৬-৯) অনুসারে অনার্য শবরীর প্রতি ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের আচরণ ছিল উত্তম।অনার্য হওয়া সত্ত্বেও শবরীকে ধর্মের বিষয় অবগত করান।

বিষয় (৩):নারদজী দ্বারা নারদজীর খণ্ডন।

পূর্বে উল্লেখিত উত্তরকাণ্ডে শম্বুক বধ প্রকরণে (৭৪/৪) এ নারদজীর নাম পাওয়া যায়,যেখানে ৮ জন ব্রাহ্মণ উপস্থিত ছিলেন এবং (৭৪/২৮-২৯) এ তিনি ব্রাহ্মণ বালকের হত্যার জন্য শুদ্রের তপস্যাকে দায়ী করেছেন।
এবার পয়েন্ট(খ) পুণরায় দেখুন!এখন সেটি কাজে দিবে।
ওঁ তপঃ-স্বাধ্যায়নিরতং তপস্বী বাগ্বিদাং বরম্। 
নারদং পরিপপ্রচ্ছ বাল্মীকিমুনিপুঙ্গবম্।। ১
 কো স্বস্মিন্ সাম্প্রতংলোকে গুণবান্ কশ্চ বীর্যবান। 
ধর্মজ্ঞশ্চ কৃতজ্ঞশ্চ সত্যবাক্যো দূরেতঃ ।। ২
 চারিত্রেণ চ কো যুক্তঃ সর্বভূতেষু কো হিতঃ। 
বিদ্বান্কঃ কঃ সমর্থশ্চ কশ্চৈকপ্রিয়দর্শনঃ।। ৩ 
আত্মবান্ কো জিতক্রোধো দ্যুতিমান্ কোহনসূয়কঃ।
 কস্য বিভ্যতি দেবাশ্চ জাতরোষস্য সংযুগে৷৷ ৪ 
রামায়ণ,বালকাণ্ড(১/১-৪)

অনুবাদঃ তপস্যা ও (নিত্য) বেদাদি পাঠরত বিদ্বদ্বরেণ্য (শ্রেষ্ঠ বিদ্বান) মুনিশ্রেষ্ঠ নারদকে তপস্বী বাল্মীকি জিজ্ঞাসা করলেন-
'মুনে! বর্তমানে এই পৃথিবীতে এমন কোন্ মহাত্মা আছেন, যিনি সর্বগুণান্বিত মহাবীর, ধর্মজ্ঞ, কৃতজ্ঞ, সত্যভাষী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, সচ্চরিত্র, সকল প্রাণীর হিতসাধনকারী, বিদ্বান, কর্মদক্ষ, প্রিয়দর্শনও। সংযতাত্মা ক্রোধজয়ী, কান্তিমান, অদোষদর্শী এবং যুদ্ধে ক্রুদ্ধ হলে (তাঁকে দেখে) দেবতারাও ভীত হন?


নারদজীর উত্তরঃ
সমঃ সমবিভক্তাঙ্গঃ স্নিগ্ধবর্ণঃ প্রতাপবান্।
 পীনবক্ষা বিশালাক্ষো লক্ষ্মীবাণ্ডুভলক্ষণঃ।। ১১ 
ধর্মজ্ঞঃ সত্যসন্ধশ্চ প্রজানাঞ্চ হিতে রতঃ। 
যশস্বী জ্ঞানসম্পন্নঃ শুচিবশ্যঃ সমাধিমান্।। ১২
প্রজাপতিসমঃ শ্রীমান ধাতা রিপুনিযূদনঃ। 
রক্ষিতা জীবলোকস্য ধর্মস্য পরিরক্ষিতা।। ১৩
বালকাণ্ড(১/১১-১৩)

অনুবাদঃ শ্রীরামচন্দ্রের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি সামঞ্জস্যপূর্ণ সুবিভক্ত, তাঁর গাত্রবর্ণ সুস্নিগ্ধ। তিনি তেজস্বী। তাঁর বক্ষঃস্থল বিশাল এবং নেত্রদ্বয় আয়ত। তিনি লক্ষ্মীবান ও শুভলক্ষণযুক্ত।(শ্রীরামচন্দ্র) ধর্মজ্ঞ, সত্যনিষ্ঠ, প্রজা-কল্যাণব্রতী, যশস্বী, জ্ঞানী, পবিত্র, জিতেন্দ্রিয় এবং যোগসমাধিমান পুরুষ। (শ্রীরামচন্দ্র) প্রজাপতি ব্রহ্মার ন্যায় বিশ্বের পালক, সর্বৈশ্বর্যসম্পন্ন, শক্রমর্দনকারী এবং সকল প্রাণীর ও ধর্মের সংরক্ষক।



বালকাণ্ড(১/২৯-৩১) শ্লোকে নারদজী নিষাদরাজ এর বর্ণন এবং বালকাণ্ড(১/৫৬-৫৭) এ শবরী এর বর্ণন করেছিলেন, কোথাও শম্বুক নামক কোন বালক বা ব্যক্তির উল্লেখ করেননি।কিন্তু উত্তরকাণ্ডে তিনিই বলেছিলেন ব্রাহ্মণ বালক হত্যার কারণ ছিল শুদ্রের তপস্যা।
আরও দেখুন,
পঠন্ দ্বিজো বাগ্‌ষভত্বমীয়াৎ
স্যাৎ ক্ষত্রিয়ো ভূমিপতিত্বমীয়াৎ।
বণিঞ্জনঃ পণ্যফলত্বমীয়া-
জনশ্চ শূদ্রোহপি মহত্ত্বমীয়াৎ৷৷ ১০০

অনুবাদঃ 'এই রামায়ণ-পাঠের দ্বারা ব্রাহ্মণ শাস্ত্রে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করবেন, ক্ষত্রিয় রাজ্যের আধিপত্য লাভ করবেন, বণিক তথা বৈশ্য বাণিজ্যে সাফল্য এবং সাধারণ শূদ্রজন (সংসার জীবনে) প্রতিষ্ঠা প্রাপ্ত হবেন।'



আবার নারদজী বালকাণ্ডের ১ম সর্গে রাম রাজ্য বিষয়ে বলেন—
প্রহৃষ্টমুদিতো লোকন্তুষ্টঃ পুষ্টঃ সুধার্মিকঃ।
 নিরাময়ো হ্যরোগশ্চ দুর্ভিক্ষ-ভয়বর্জিতঃ। ৯০
 ন পুত্রমরণং কেচিদ্ দ্রক্ষ্যন্তি পুরুষাঃ ক্বচিৎ। 
নার্যশ্চাবিধবা নিত্যং ভবিষ্যন্তি পতিব্রতাঃ। ৯১
 ন চাগ্নিজং ভয়ং কিঞ্চিন্নালু মজ্জন্তি জন্তবঃ। 
ন বাতজং ভয়ং কিঞ্চিন্নাপি জ্বরকৃতং তথা। ৯২
 ন চাপি ক্ষুদ্ভয়ং তত্র ন তঙ্করভয়ং তথা। 
নগরাণি চ রাষ্ট্রাণি ধনধান্যযুতানি চ।। ৯৩ 
নিত্যং প্রমুদিতাঃ সর্বে যথা কৃতযুগে তথা।
বালকাণ্ড(১/৯০-৯৩)

অনুবাদঃ 'রামরাজ্যে জনগণ প্রসন্ন, সুখী, সন্তুষ্ট, হৃষ্টপুষ্ট, ধার্মিক এবং ব্যধিমুক্ত হবে; দুর্ভিক্ষের ভয় তাদের থাকবে না।কোনও পুরুষ কখনও পুত্রের মৃত্যু দর্শন করবেন না; নারীগণ হবেন অবিধবা ও পতিপরায়ণা।'কোনও প্রাণীরই অগ্নি ভয়, জলে ডুবে যাওয়ার ভয় বা ঝঞ্ঝার (প্রবল ঝড়ের) ভয় থাকবে না, এমনকি জ্বরের ভয়ও থাকবে না।'সেই রামরাজ্যে ক্ষুধার ভয় এবং চোরের ভয় থাকবে না। নগর এবং রাষ্ট্রগুলি ধনধান্যে সমৃদ্ধ থাকবে।'যেমন সত্যযুগে তদ্রুপ এই (ত্রেতাযুগেও রামরাজ্যে) সকলেই সদানন্দময় থাকবে।



পয়েন্ট ৩:
(ক)নারদজী বালকাণ্ড(১/৯১-৯৩) এ বলছেন এক কথা আবার উত্তরকাণ্ড(৭৪/২৮-২৯) এ বলছেন আরেক কথা।

বিষয় (৪):সমাপ্ত হওয়ার পরও যুক্ত হলো কাণ্ড।

সনাতন ধর্মের ইতিহাস গ্রন্থের শেষে সেই গ্রন্থের ফল বর্ণনা করা হয়,যাকে "ফলশ্রুতি" বলে।যেমনঃ
মহাভারতের স্বর্গারোহন পর্বের ৫নং অধ্যায়ের ৬৮ নং শ্লোকটিই শেষ শ্লোক এবং সেখানেই মহাভারত সমাপ্ত।দেখুন,
যো গোশতং কনকশ্টঙ্গময়ং দদাতি
 বিপ্রায় বেদবিদুষে সুবহুশ্রুতায় ।
পুণ্যাং চ ভারতকথাং সততং শৃণোতি
 তুল্যং ফলং ভবতি তস্য চ তস্য চৈব ॥
মহাভারত,স্বর্গারোহণপর্ব(৫/৬৮)

অনুবাদঃ যিনি গরুর সিং এ সোনা মুড়িয়ে বেদবেত্তা এবং অনেক ব্রাহ্মণদের একশত গরু দান দেন এবং মহাভারতকথা প্রতিদিন শ্রবণ করেন,এই দুইয়ে প্রত্যেকের যথাযোগ্য ফল প্রাপ্ত হয়।







তেমনইভাবে রামায়ণের যুদ্ধ কাণ্ডের ১২৮ নং সর্গের ১২৫ নং শ্লোকটিই শেষ শ্লোক এবং সেখানের রামায়ণ সমাপ্ত হওয়ার কথা কিন্তু তা হয় নি।দেখুন—
আয়ুষ্যমারোগ্যকরং যশস্যং
সৌভ্রাতৃকং বুদ্ধিকরং শুভং চ।
 শ্রোতব্যমেতন্নিয়মেন সম্ভি-
রাখ্যানমোজস্করমৃদ্ধিকামৈঃ।। ১২৫
রামায়ণ,যুদ্ধকাণ্ড(১২৮/১২৫)

অনুবাদঃ এই কাব্য আয়ু, আরোগ্য, যশ এবং সৌভাতৃত্বের বিবর্ধনকারী, উত্তম বুদ্ধিবৃত্তির জনক ও মঙ্গলকর। অতএব, সুখসমৃদ্ধির কামনায় সৎপুরুষগণের এই উৎসাহব্যঞ্জক ইতিহাস যথানিয়মে শ্রবণ করা কর্তব্য।



আবার উত্তরকাণ্ডের ৯৪ নং সর্গ দেখুন।
সন্নিবদ্ধং হি শ্লোকানাং চতুর্বিংশৎসহস্রকম্।
উপাখ্যানশতং চৈব ভার্গবেণ তপস্বিনা।। ২৬ 
আদিপ্রভৃতি বৈ রাজন পঞ্চসর্গশতানি চ। 
কাণ্ডানি ষট্‌কৃতানীহ সোত্তরাণি মহাত্মনা৷ ২৭ 
রামায়ণ,উত্তরকাণ্ড(৯৪/২৬-২৭)

অনুবাদঃ 'সেই তপস্বী কবি রচিত এই মহাকাব্যে চব্বিশ হাজার শ্লোক এবং একশত উপাখ্যান রয়েছে। 'রাজন! সেই মহাত্মা আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত পাঁচশত সর্গ এবং ছয় কাণ্ডের রচনা করেছেন। এছাড়া তিনি উত্তরকাণ্ডও রচনা করেছেন।



একই কথা পাওয়া যায় বালকাণ্ডেও,
চতুর্বিংশৎ-সহস্রাণি শ্লোকানামুক্তবান্ ঋষিঃ।
তথা সৰ্গশতাপঞ্চ ষট্ কাণ্ডানি ততোত্তরম্।। ২
কৃত্বা তু তন্মহাপ্রাজ্ঞঃ সভবিষ্যং সহোত্তরম্।
চিন্তয়ামাস কো স্বেতৎপ্রযুঞ্জীয়াদিতি প্রভুঃ ।। ৩
রামায়ণ,বালকাণ্ড(৪/২-৩)

অনুবাদঃ এই কাব্যে মহর্ষি চব্বিশ হাজার শ্লোক, পাঁচ শত সর্গ এবং ছয়টি কাণ্ড ও উত্তর কাণ্ড (উত্তর কাণ্ড সহ মোট সাত কাণ্ড) রচনা করেছেন।(চব্বিশ হাজার শ্লোক সমন্বিত পাঁচ শত সর্গে সপ্তকাণ্ড রামায়ণ রচিত হয়েছে)।২
মহাপ্রাজ্ঞ মহর্ষি বাল্মীকি শ্রীরামচন্দ্রের ভবিষ্যৎ কর্মধারাসহ, উত্তরকাণ্ড সমন্বিত সেই মহাকাব্য রচনা করে চিন্তা করতে লাগলেন-এমন কে আছে যে এই কাব্য জনসমাজে প্রচার করতে সমর্থ !৩



 পয়েন্ট ৪ঃ
(ক)মহাভারতের স্বর্গারোহণপর্ব(৫/৬৮) এ উল্লেখিত "ফলশ্রুতি" এর পর সমাপ্ত হয়েছিল কিন্তু রামায়ণে তা হয় নি।রামায়ণের যুদ্ধকাণ্ড(১২৮/১২৫) এ "ফলশ্রুতি" এর উল্লেখ থাকলেও রামায়ণ সেখানে শেষ হয়নি।আবার উত্তরকাণ্ড রামায়ণের অংশই যদি হয়ে থাকে তাহলে এটাকে আলাদাভাবে বলার প্রয়োজন কেন?

এবার বিচার করা যাকঃ–

পয়েন্টঃ
(ক) উত্তরকাণ্ড(৭৩/১৮) হতে বুঝা যায়,যে বৃদ্ধ ব্যক্তিটির পুত্র মারা গেছেন সেই ব্যক্তি ছিলেন ব্রাহ্মণ।বৃদ্ধ ব্যক্তিটি উনার সন্তানের মৃত্যুর জন্য রাজ্যের রাজা অর্থাৎ ভগবান শ্রীরামের কোন অপরাধ হওয়াকেই দায়ী করছেন।
(খ)৭৪ নং সর্গের ৪ নং শ্লোকে উল্লেখিত নারদ নামটি মনে রাখবেন,পরে কাজে আসবে।
(গ)ক্রেতাযুগের গ্রন্থে দ্বাপর যুগের রাজ্যের বর্ণনা।
(ঘ)যার শিরচ্ছেদ ভগবান শ্রীরাম করেছিলেন তিনি জন্মেছিলেন শুদ্রযোনীতে।
বিচারঃ
ব্রাহ্মণের সন্তান শুদ্রযোনীতে জন্মেছে এটা বলার কারণ কি?আবার তিনি বলেছিলেন যে উনি একটুও মিথ্যা বলছেন না।এটি কি মিথ্যা ছিল না?ক্রেতাযুগের গ্রন্থে দ্বাপর যুগের নাম আসা কি যৌক্তিক?কখনই নয়।কারণ তার মধ্যে অনেক সময়ের পার্থক্য থাকে।
পয়েন্ট ১ঃ
(ক)বালকাণ্ড(১/১২-১৫) শ্লোকগুলো হতে প্রমাণিত হয় ভগবান শ্রীরাম বেদ-বেদাঙ্গ তত্ত্ব সম্পর্কে জানতেন,তিনি শাস্ত্রজ্ঞ ছিলেন।
(খ)ভগবান শ্রীরামচন্দ্র মনুর বচন অর্থাৎ মনুস্মৃতিও অধ্যয়ন করেছিলেন।
বিচারঃ


 
যিনি বেদ-বেদাঙ্গ এবং মনুস্মৃতি বিষয়ে জানতেন তিনি কখনো অমানবিক কাজ করতে পারেন?ভগবান শ্রীরাম যিনি রাবণকে পর্যন্ত শান্তি প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি কি এমন কাজ করতে পারেন?
পয়েন্ট ২ঃ
(ক) অযোধ্যাকাণ্ড(১৪/৩২-৩৩) শ্লোকে সুমন্ত্রকে সূতপুত্র অর্থাৎ শুদ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
(খ)অযোধ্যাকাণ্ড(৫০/২৭,৩৩) অনুসারে সূতপুত্র সুমন্ত্রর প্রতি রামচন্দ্রের ব্যবহার ছিল নম্র,তিনি কখনো তাকে ঘৃণা কিংবা অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখেন নি।
(গ)অরণ্যকাণ্ড(৭৪/৬-৯) অনুসারে অনার্য শবরীর প্রতি ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের আচরণ ছিল উত্তম।অনার্য হওয়া সত্ত্বেও শবরীকে ধর্মের বিষয় অবগত করান।
বিচারঃ
রামায়ণে উল্লেখিত শুদ্র বর্ণের সুমন্ত্র এবং অনার্য শবরীর প্রতি ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের ব্যবহার ছিল অতি উত্তম্।যিনি সমস্ত মনুষ্যকে সমভাবে বিচার করতেন তিনি করবেন শম্বুককে বধ!এটি কি হতে পারে?
পয়েন্ট ৩ঃ
(ক)নারদজী বালকাণ্ড(১/৯১-৯৩) এ বলছেন এক কথা আবার উত্তরকাণ্ড(৭৪/২৮-২৯) এ বলছেন আরেক কথা।
বিচারঃ
নারদজী বালকাণ্ডে বলছেন এক কথা আবার উত্তরকাণ্ডে বলছেন অন্য কথা।অর্থাৎ তিনি নিজেই নিজের কথার খণ্ডন করছেন।নারদজীর কোন কথাটা সত্য বালকাণ্ডেরটা নাকি উত্তরকারণ্ডেরটা?
পয়েন্ট ৪ঃ
(ক)মহাভারতের স্বর্গারোহণপর্ব(৫/৬৮) এ উল্লেখিত "ফলশ্রুতি" এর পর সমাপ্ত হয়েছিল কিন্তু রামায়ণে তা হয় নি।রামায়ণের যুদ্ধকাণ্ড(১২৮/১২৫) এ "ফলশ্রুতি" এর উল্লেখ থাকলেও রামায়ণ সেখানে শেষ হয়নি।আবার উত্তরকাণ্ড রামায়ণের অংশই যদি হয়ে থাকে তাহলে এটাকে আলাদাভাবে বলার প্রয়োজন কেন?
বিচারঃ
রামায়ণে ২টা ফলশ্রুতি পাওয়া যায়।একটি যুদ্ধকাণ্ডের শেষে আর একটি হল উত্তরকাণ্ডের শেষে।একটি ইতিহাস গ্রন্থে দুইটি ফলশ্রুতি!এটি হওয়া কি উচিত?
পুণর্বিচারঃ
বর্তমানে প্রচলিত রামায়ণ অনেকাংশে প্রক্ষীপ্ত।"শম্বুক বধ" বিষয়টিও রামায়ণের প্রক্ষীপ্ত একটি প্রকরণ।শুধু তাই নয় সম্পূর্ণ উত্তরকাণ্ডই মূল বাল্মীকি রামায়ণের অংশ নয়।উত্তরকাণ্ড কেন মূল বাল্মীকি রামায়ণের অংশ নয় সেটি জানতে নিচের লিংকে প্রবেশ করুন।
লিংকঃ
https://aryapsbd.blogspot.com/2023/06/blog-post_23.html?m=1

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
এখানে গীতাপ্রেস এর রামায়ণের রেফারেন্স ব্যবহার করা হয়েছে।
নমস্তে,
জয় শ্রী রাম
সত্যমেব জয়তে
কলমেঃঅমৃতস্য পুত্রাঃ

Post a Comment

0Comments

Please Select Embedded Mode To show the Comment System.*