বেদের শাখাবিভাগকর্তা-অপান্তরতমা
(ক)
আচার্য শংকর তার বেদান্তসূত্র ভাষ্য ৩/৩/৩২ এ লিখেছেন -
তথা হি - অপান্তরতমা নাম বেদাচার্যঃ পুরাণর্ষিঃ বিষ্ণুনিয়োগাৎ কলিদ্বাপরয়োঃ সন্ধৌ কৃষ্ণদ্বৈপায়নঃ সংবভূব ইতি স্মরন্তি।
[দ্র০–৩/৩/৩২ পৃ.৩৩৫, ব্রহ্মসূত্র শাঙ্করভাষ্য, মোতী লাল
বনারসী দাস,১৯৬৪] [স্কিনসর্ট চৌখম্বা সংস্কৃত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত]
অর্থাৎ - অপান্তরতমা নামক বেদাচার্য ও প্রাচীন ঋষিই কলি-দ্বাপরের সন্ধিক্ষণে ভগবান বিষ্ণুর আজ্ঞাতে কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন রূপে উৎপন্ন হয়॥
(খ) এই সম্বন্ধে অহির্বুধ্ন্যসংহিতা অধ্যায় ১১তে লেখা রয়েছে -
অথ কালবিপর্যাসাদ্ যুগভেদসমুদ্ভবে॥৫০॥
ত্রেতাদৌ সত্বসংকোচাদ্রজসি প্রবিজৃম্ভতে।
অপান্তরতমা নাম মুনির্বাক্ সম্ভবো হরেঃ॥৫৩॥
কপিলশ্চ পুরাণর্ষিরাদিদেবসমুদ্ভবঃ।
হিরণ্যগর্ভো লোকাদিরহং পশুপতিঃ শিবঃ॥৫৪॥
উদ্ভূত্তত্র ধীরুপমৃগ্যজুঃ সামসংকুলম্।
বিষ্ণুসংকল্পসংভূতমেতদ্ বাচ্যায়নেরিতম্॥৫৮॥
[দ্র০–অধ্যায়
১১,পৃ.১০০,১০১, সম্পাদক রামানুজাচার্য, অড্যার ১৯৬৬]অর্থাৎ - বাক্ এর পুত্র বাচ্যায়ন অপরনাম ছিল অপান্তরতমা। (কালক্রমের বিপর্যয় হওয়াতে ত্রেতাযুগের আরম্ভে) বিষ্ণুর আজ্ঞাতে অপান্তরতমা, কপিল ও হিরণ্যগর্ভ আদি জন ক্রমশঃ ঋগ্যজুঃ, সামবেদ, সাংখ্য শাস্ত্র এবং যোগ আদির বিভাগ করেন।
অহির্বুধ্ন্য সংহিতা শঙ্করাচার্যের থেকেও অধিক প্রাচীন সময়ের।
(গ) এই অহির্বুধ্ন্য সংহিতার থেকেও অনেক পূর্বের মহাভারতে বৈশম্পায়ন রাজা জনমেজয়কে বলছেন -
অপান্তরতমা নাম সুতো বাক্ সম্ভবো বিভোঃ।
ভূতভব্যভবিষ্যজ্ঞঃ সত্যবাদী দৃঢ়ব্রতঃ॥৩৮॥
তমুবাচ নতং মূর্ধ্না দেবানামাদিরব্যয়ঃ।
বেদাখ্যানে শ্রুতিঃ কার্যা ত্বয়া মতিমতাং
বর॥৪০॥
তস্মাৎকুরু যথাজ্ঞপ্তং ময়ৈতদ্বচনং মুনে।
তেন ভিন্নাস্তদা বেদা মনোঃ
স্বায়ম্ভুবেঽন্তরে॥৪১॥
অপান্তরতমাশ্চৈব বেদাচার্যঃ স উচ্যতে ।
প্রাচীনগর্ভ তমৃষিং প্রবদন্তীহ কেচন ॥৬১॥
[দ্র০–অধ্যায় ৩৩৭,
মহাভারত, ভ০ ও০ রি০ ই০, পূনা।] [স্কিনসর্ট গীতাপ্রেসের দেওয়া হয়েছে]এই শ্লোকগুলোর এবং মহাভারতের এই অধ্যায়ের অন্য শ্লোকগুলোর অভিপ্রায় এই যে অপান্তরতমা ঋষিকে বেদাচার্য অথবা প্রাচীনগর্ভ বলা হয়ে থাকে। তিনিই পূর্বে একবার বেদগুলোর শাখাবিভাগ করেছিলেন।
অপান্তরতমার কোনো সিদ্ধান্ত গ্রন্থও ছিল। যোগিযাজ্ঞবল্ক্যতে তার উল্লেখ পাওয়া যায়।
[দ্র০–যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি অপরার্ক টীকা। তথা ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ, পাদ ২, অধ্যায় ৩৫, শ্লোক ২৪-১২৬ বেঙ্কটেশ্বর প্রেস, সংবৎ ১৯৯২বোম্বাই। এখানে ৩২ ব্যাসের নাম উদ্ধৃত করে অন্তে বলেন যে- এই ২৮ ব্যাস হয়ে গেছে]।
সাতটি মহান সিদ্ধান্ত গ্রন্থের মধ্যে এটি ছিল অন্যতম। সেই অপান্তরতমাই যিনি একদিকে শাখাসমূহের প্রবক্তা ছিলেন, অন্যদিকে লৌকিকভাষাতে নিজের সিদ্ধান্ত গ্রন্থের উপদেশ করতেন। এই ঐতিহাসিক তথ্যের বিরুদ্ধ পাশ্চাত্য কল্পিত ভাষা-মত মান্য নয়।
এই বর্ণনা থেকে স্পষ্ট যে কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাস হতে অনেক পূর্বেই বেদ বিভাগ বিদ্যমান ছিল এবং সম্ভবত বেদের অনেক চরণ বিদ্যামান ছিল। [দ্র০- বায়ুপুরাণ অধ্যায় ২৩, শ্লোক ১১৪ হতে সামনে ]।
এই চরণ সামগ্রী ব্যাসের কাল পর্যন্ত এদিক-সেদিক বিকীর্ণ অবস্থায়
ছিল। ব্যাস জী সেসবকে একত্রিত করে দেন এবং প্রত্যেক বেদের শাখা পৃথক-পৃথক করে দেন।
এই শাখাগুলোর ব্রাহ্মণ ভাগগুলোতে নতুন প্রবচনও মিলিত করা হয়েছে॥
অনুবাদ : অমৃতস্য পুত্রাঃ
©️অমৃতস্য পুত্রাঃ