ঋগ্বেদে নৃসিংহ অবতারের অস্তিত্বের দাবীর খণ্ডন

ရိုရို
0

ঋগ্বেদে নৃসিংহ অবতারের অস্তিত্বের দাবীর খণ্ডন


নমস্তে, আমাদের সনাতনী সমাজে কিছু জ্ঞানপাপী আছে যারা নিজেদের জ্ঞানের মাত্রাটা বিচার না করেই জ্ঞান দিতে আসে। হ্যাঁ এমনই এক জ্ঞানপাপী কপি পেস্ট করে দাবী করেছে যে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর ঋগ্বেদ (১/১৫৪/২) মন্ত্রের ইংরেজী অনুবাদে নাকি নৃসিংহ অবতারের কথা উল্লেখ আছে। এমন হাস্যকর দাবী কেবল মূর্খরাই করতে পারে কারণ তারা নিজেদের মান্য বেদভাষ্যকারদের ভাষ্য (সংস্কৃত) এবং অনুবাদ (হিন্দি এবং বাংলা) না পড়েই বক পণ্ডিত হয়ে যায়। আজকে পাখণ্ডীদের ধূর্ততা উম্মোচন করা হবে। চলুন পাখণ্ডী নিধন করা যাক.......

★পয়েন্ট(১)–

চলুন প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী ঋগ্বেদ (১/১৫৪/২) নং মন্ত্রের ভাবার্থে কি লিখেছেন–

ভাবার্থঃ কোন পদার্থই ঈশ্বর এবং সৃষ্টির নিয়মকে উলঙ্গন করতে পারে না। যিনি ধার্মিকজনদের মিত্রের সমান আনন্দ প্রদান করেন, দুষ্টদের সিংহের সমান ভয় প্রদান করেন এবং ন্যায়াধিগুণ ধারণকারী পরমাত্মা, তিনিই সবার অধিষ্ঠাতা এবং ন্যায়াধ ন্যয়াধীশ। এটি জানা উচিত!

✍️ভাষ্যকারঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী

👇



এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী জী এর আগের মন্ত্র অর্থাৎ ঋগ্বেদ (১/১৫৪/১) মন্ত্রের বিষয় লিখেছেন–"অথেশ্বরমুক্তিপদবর্ণনমাহ" অর্থাৎ এখন ঈশ্বর এবং মুক্তিপদের বর্ণনা করেছেন।

এর পরবর্তী মন্ত্রের বিষয় লিখেছেন–"পুনস্তমেব বিষয়মাহ" অর্থাৎ পুণরায় সেই বিষয়ে পরবর্তী মন্ত্রে বলেছেন।

তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম ঋগ্বেদ(১/১৫৪) সূক্তের মন্ত্রগুলোর বিষয় "ঈশ্বর  এবং মুক্তিপদ এর বর্ণনা"।

এবার ইংরেজী অনুবাদ বিষয়ে বলা যাক!পাখণ্ডীদের উল্লেখিত ইংরেজী অনুবাদটি সম্পূর্ণ নয়।অনুবাদের প্রথম অংশটিই পাখণ্ডীগণ তুলে ধরেছেন।সম্পূর্ণ অনুবাদ নিম্নে দেওয়া হল—

Subject [विषय - स्वामी दयानन्द]

The mightiness of God is highlighted

Translation [अन्वय - स्वामी दयानन्द]


The Vishnu (Omnipresent God) is glorified on account of His Mightiness For the wicked, He is like a terrible lion that ranges in the difficult terrains and whose lair is on the mountain-tops. It is He in Whose three-dimensions creation, all the planets find their dwelling place.

Commentator's Notes [पदार्थ - स्वामी दयानन्द]

Purport [भावार्थ - स्वामी दयानन्द]

There is simile (Upama = resemblance ) used in the Mantra. No object in the world can transgress the laws of nature ordained by God. All must know, that God is giver of joy to the righteous persons like friend, while He is terrible to the wicked like a fierce lion. God is just the Lord and ordainer of the world and Dispensers of Justice.

👇


লিঙ্কঃ👇

https://vedicscriptures.in/rigveda/1/154/2

উপরোক্ত ইংরেজী অনুবাদেও ভাষ্যকারের ভাবার্থ অনুবাদ করা হয়েছে।কিন্তু পাখণ্ডীগণ "There is simile (Upama = resemblance ) used in the Mantra" লেখাটি দেখায় নি।কারণ তারা জানে তারা ধরা পরে যাবে।

প্রাপ্ত বিষয়ঃউক্ত মন্ত্রে উপমা ব্যবহৃত হয়েছে। সিংহের মস্তকযুক্ত মনুষ্য শরীরধারী অদ্ভূদ কোন প্রাণীর কথা বলা হয় নি।যা অনুবাদকও ভাষ্যকারের মন্ত্রের ভাবার্থে তুলে ধরেছেন।

★পয়েন্ট(২)–

এবার পাখণ্ডীগণের সর্বোচ্চ মান্য বেদভাষ্যকারগণের কিছু বিষয় তুলে ধরা যাক।

সায়ণাচার্য্য ঋগ্বেদ(১/১৫৪/২) মন্ত্রের ভাষ্যে নিরুক্ত(১/২০) এর প্রমাণ দেখিয়েছেন।

দ্রষ্টব্যঃঋগ্বেদ(১/১৫৪/২),সায়ণভাষ্য(সংস্কৃত)

👇


 আবার সায়ণাচার্য্যের বেদভাষ্যের প্রচলিত বিশেষ গৃহীত অনুবাদগুলোতেও সরাসরি এই মন্ত্রের অনুবাদে, কোথাও নিসৃংহ অবতারের কথা উল্লেখ নেই।

দ্রষ্টব্যঃঋগ্বেদ(১/১৫৪/২),সায়ণভাষ্যের হিন্দি অনুবাদ(গঙ্গা সহায় শর্মা)।

👇


একইভাবে দেখুন,

ঋগ্বেদ(১/১৫৪/২),সায়ণভাষ্যের বাংলা অনুবাদ(রমেশ চন্দ্র দত্ত)।

👇


★পয়েন্ট(৩)–

যেহেতু সায়ণাচার্য্য ঋগ্বেদ(১/১৫৪/২) মন্ত্রের ভাষ্যে নিরুক্ত(১/২০) এর প্রমাণ দেখিয়েছেন সেই বিষয়েও কিছু বলা দরকার।

নিরুক্ত(১/২০) এ "ন" দ্বারা উপমা বুঝানো হয়েছে।👇


পাখণ্ডীগণের অতি প্রিয় অমরেশ্বর ঠাকুরও তার নিরুক্ত ভাষ্যে "মৃগ" কে উপমায় বলেছেন।

দ্রষ্টব্যঃনিরুক্ত(১/৩/৯/১৪),পৃষ্ঠা ১৭৯।(অমরেশ্বর ঠাকুর)

👇


★পয়েন্ট(৪)–

ঋগ্বেদ(১/১৫৪/২),যজুর্বেদ(৫/২০) এবং ঋগ্বেদ(১/১৮০/২) এ উল্লেখিত মন্ত্র এবং মন্ত্রাংশ দ্বারা অবতারবাদ সিদ্ধ করার কোন উপায় নেই কারণ অমরেশ্বর বাবু (১/১৮০/২) মন্ত্রে উল্লেখিত মন্ত্রাংশটির দেবতা পক্ষের ব্যাখ্যায় ইন্দ্রকে সর্বত্র বিরাজমান  মেনেছেন অর্থাৎ নির্দিষ্ট কোথাও বিরাজিত নয়।

দ্রষ্টব্যঃনিরুক্ত(১/৩/৯/১৪),পৃষ্ঠা ১৭৯।(অমরেশ্বর ঠাকুর)

👇


🙄কিন্তু অবতার কি সর্বত্র বিরাজিত হয়ে অবতার ধারণ করতে পারেন?

★পয়েন্ট(৫)–

ঋগ্বেদ(১/১৫৪/২) মন্ত্রটি সম্পূর্ণ যজুর্বেদ(৫/২০) এ ও পাওয়া যায় এবং মন্ত্রাংশ পাওয়া যায় ঋগ্বেদ(১/১৮০/২) এ।

শুক্লযজুর্বেদের দুইজন বিখ্যাত বেদভাষ্যকার উব্বট এবং মহিধর শুক্লযজুর্বেদের ভাষ্য করতে গিয়ে (৫/২০) মন্ত্রে  উপমার বিষয় মেনেছেন।

দ্রষ্টব্যঃশুক্লযজুর্বেদ(৫/২০),ভাষ্যকারঃউব্বট(সংস্কৃত)

👇



দ্রষ্টব্যঃশুক্লযজুর্বেদ(৫/২০),ভাষ্যকারঃমহিধর(সংস্কৃত)

👇


★পয়েন্ট(৬)–

আরও যদি দেখতে চাই তাহলে পাখণ্ডীগণকে অনুরোধ করবো দূর্গাদাস লাহিড়ীর শুক্লযজুর্বেদ (৫/২০) এর অনুবাদ দেখুন,যা আচার্য্য মহিধর এর শুক্লযজুর্বেদ ভাষ্যের অনুবাদ।👇


★পয়েন্ট(৯)–

মহিধর উক্ত মন্ত্রের ভাষ্য করতে গিয়ে অষ্টাধ্যায়ী (৩/৪/৭৪) সূত্রটির প্রমাণ দেখিযেছেন,সেটিও যদি বিচার করি তাহলে সেখানেও "ভীমঃ" দ্বারা নিসৃংহ কখনোই নির্দেশ করে না।




দ্রষ্টব্যঃঅষ্টাধ্যায়ী(৩/৪/৭৪)


বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ

সিংহের মাথা এর সাথে মনুষ্য শরীর যুক্ত হয়ে অদ্ভূদ সৃষ্ট কোন প্রাণীর সন্ধান এখনো জীববিজ্ঞান দিতে পারেনি।

💥"ও৩ম্ কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্যম্"💥

🙏"অমৃতস্য পুত্রাঃ"🙏

Post a Comment

0Comments

Please Select Embedded Mode To show the Comment System.*