যদি তাঁরা একই হতো তাহলে এমন বিভেদ থাকতো না। একই মানলেও পুরাণের বিরোধ করা হবে আবার একই নয় বললেও। দেবীভাগবতের কথায় আসি। ভবিষ্যপুরাণে বলা হয়েছে -
স্বকীয়াং চ সুতাং ব্রহ্মা বিষ্ণুদেবঃ স্বমাতরম্ ।
ভগিনীং ভগবাঞ্ছম্ভুর্গৃহীত্বা শ্রেষ্ঠতামগাৎ ॥
(ভবিষ্যপুরাণ-প্রতিসর্গপর্ব, চতুর্থ খণ্ড, অধ্যায় ১৮/২৭ )
অর্থাৎ ব্রহ্মা তাঁর কন্যাকে, বিষ্ণু তাঁর মাতাকে এবং মহাদেব তাঁর বোনকে পত্নী হিসেবে গ্রহণ করে শ্রেষ্ঠতা প্রাপ্ত করেছে।
নিজ কন্যা, মাতা, এবং বোনকে বিবাহ করে আবার কেমন শ্রেষ্ঠতা প্রাপ্ত করেছে? শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণে দেখা যায় ব্রহ্মা তাঁর কন্যার প্রতি কামাতুর হয়ে তার অভিলাষ করেছিলেন। শ্রীমদ্ভাগবতে যেমন রয়েছে তা নিম্নরূপ-
শ্রীল প্রভুপাদ ভাষ্যম্, শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ -৩/১২/২৮-৩৩
বাচং দুহিতরং তন্বীং স্বয়ম্ভূর্হরতীং মনঃ ।
অকামাং চকমে ক্ষত্তঃ সকাম ইতি নঃ শ্রুতম্ ॥ ২৮
অনুবাদ : হে বিদুর! আমরা শুনেছি যে, ব্রহ্মার বাক্ নাম্নী এক কন্যা ছিলেন, যিনি তাঁর শরীর থেকে উৎপন্ন হয়েছিলেন। ব্রহ্মা কামে উন্মত্ত হয়ে তাঁকে অভিলাষ করেছিলেন, কিন্তু সেই কন্যা নির্বিকারা ছিলেন।
তমধর্মে কৃতমতিং বিলোক্য পিতরং সুতাঃ।
মরীচিমুখ্যা মুনয়ো বিশ্রস্তাৎপ্রত্যবোধয়ন্॥ ২৯
অনুবাদ : মরীচি প্রমুখ ব্রহ্মার পুত্রেরা এইভাবে তাঁদের পিতাকে বিভ্রান্ত হয়ে অনৈতিক আচরণ করতে দেখে, গভীর শ্রদ্ধা সহকারে তাঁকে বললেন।
নৈতৎপূর্বৈঃ কৃতং ত্বদযে ন করিষ্যন্তি চাপরে ।
যস্ত্বং দুহিতরং গচ্ছেরনিগৃহ্যাঙ্গজং প্রভুঃ॥ ৩০
অনুবাদ : হে পিতা! এই প্রকার কর্ম যার ফলে আপনি নিজেকে সমস্যাগ্রস্ত করছেন, তা পূর্বে কোন ব্রহ্মা কখনও করেননি, অন্য কেউ করেনি, অথবা পূর্ব কল্পে আপনিও করেননি, এবং ভবিষ্যতেও কেউ তা করতে সাহস করবে না। এই ব্রহ্মাণ্ডে আপনি হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী, তাহলে কিভাবে আপনি আপনার কন্যার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে চান, এবং আপনার সেই বাসনাকে সংযত করতে পারেন না?
তেজীয়সামপি হোতন্ন সুশ্লোক্যং জগদ্গুরো ।
যদ্বৃত্তমনুতিষ্ঠন্ বৈ লোকঃ ক্ষেমায় কল্পতে॥ ৩১
অনুবাদ : আপনি যদিও সবচাইতে শক্তিশালী ব্যক্তি, তবুও এই আচরণ আপনার শোভা পায় না কেননা পারমার্থিক উন্নতি সাধনের জন্য জনগণ আপনার চরিত্রের অনুসরণ করে।
তস্মৈ নমো ভগবতে য ইদং স্বেন রোচিষা ।
আত্মস্থং ব্যঞ্জয়ামাস স ধৰ্মং পাতুমর্হতি॥ ৩২
অনুবাদ : আমরা পরমেশ্বর ভগবানকে আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি, যিনি আত্মস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাঁর স্বীয় জ্যোতির দ্বারা এই জগৎ সৃষ্টি করেছেন। সর্বাঙ্গীণ কল্যাণের জন্য তিনি যেন দয়া করে ধর্মকে রক্ষা করেন।
স ইথং গৃণতঃ পুত্ৰান্ পুরো দৃষ্ট্বা প্রজাপতীন্ ।
প্রজাপতিপতিস্তম্বং তত্যাজ ব্রীড়িতস্তদা ।
তাং দিশো জগৃহুর্ঘোরাং নীহারং যদ্বিদুত্তমঃ॥ ৩৩
অনুবাদ : প্রজাপতিদের পিতা ব্রহ্মা তাঁর পুত্র সমস্ত প্রজাপতিদের এইভাবে বলতে দেখে অত্যন্ত লজ্জিত হয়েছিলেন এবং তৎক্ষণাৎ তিনি তাঁর শরীর ত্যাগ করেছিলেন। তাঁর সেই শরীর তখন সর্বদিকে অন্ধকারে ভয়ঙ্কর কুটিকারূপে প্রকাশিত হয়েছিল।
ভবিষ্যপুরাণে তো বলা হয়েছে - ব্রহ্মা নিজ হইতে উৎপন্না সরস্বতীর দিব্য সৌন্দর্যপূর্ণ অঙ্গ দেখে -
বলাদ্ গৃহীত্বা তাং কন্যামুবাচ স্মরপীডিতঃ ।
রতিং দেহি মদাঘূর্ণে রক্ষ মাং কামবিহ্বলম্ ॥৩॥
কামপীড়িত হয়ে বলাৎ তাকে ধরে নিজ অধীরতা প্রকট করেছিলো - সে বলে - মদোন্মত্তে! রতিদান দ্বারা আমার কামপীড়া শান্তিপূর্বক রক্ষা করো। ইহা শুনে মাতা সরস্বতী ক্রুদ্ধ হয়ে ব্রহ্মাকে বলেন – তোমার এই পঞ্চম মুখ অশুভ হওয়ার জন্য তোমার কাঁধে থাকার অযোগ্য। তুমি সর্বেশ্বর, অতঃ বেদময় এই চার মুখই তোমার স্কন্ধে থাকার যোগ্য। এইটুকু বলে মাতা সরস্বতী অন্তর্হিত হয়ে যান, যা দেখে ব্রহ্মা ক্রুদ্ধ হয়ে যান।
ভবিষ্য০, প্রতি০, চতুর্থ খ০, অধ্যায়-১৩ শ্লোক-২-৫
অপরদিকে (শ্রীমদ্ভাবত-৩/২০/২৩-২৪) যখন ব্রহ্মা অসুরদের সৃষ্টি করা মাত্রই তারা ব্রহ্মাকে দেখে কামাতুর হয়ে ব্রহ্মার সহিত মিলিত হওয়ার উদ্দ্যেশ্যে ব্রহ্মার দিকে ধাবিত হলে তিনি ভয়ে দ্রুত পলায়ন করেন।........... (চলবে)
🖋️প্রিয়রত্ন বিদ্যার্থী
©️অমৃতস্য পুত্রাঃ