ভাগবত খণ্ডনম্ বিষয়ে
আক্ষেপ– আপনারা
তো স্বামী দয়ানন্দের সিদ্ধান্ত মানেন, অতএব আমি স্বামী
দয়ানন্দের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই রাধার অস্তিত্বের প্রমাণ দিতেছি। তিনি তার ভাগবত-খণ্ডনম্
নামক পুস্তকে দেবীভাগতকে মান্যতা দিয়েছেন। দেবীভাগবত-৯/৫০/১৬ সহ অনেক শ্লোকে রাধার উল্লেখ আছে, অতএব আপনাদের মান্য
সিদ্ধান্ত অনুযায়ীও রাধার অস্তিত্ব প্রমাণিত।
জবাব
প্রথমেই গ্রন্থটির শুরুর দিকের পেইজে কি
লিখা আছে লক্ষ্য করুন,পেইজটি এখানে দিয়ে দিচ্ছি–
পুস্তকের
নামের পরেই লেখা আছে (ঋষি দয়ানন্দ লিখিত প্রথম খণ্ডনাত্মক গ্রন্থ যা প্রায় ১০০ বছর
পর পুনঃ প্রকাশে এসেছে) তারপর 'মূল গ্রন্থের উদ্ধারক তথা অনুবাদক'
পণ্ডিত যুধিষ্ঠির মীমাংসক।
প্রশ্ন আসবে কেন ১০০ বছর পর প্রকাশ হয়েছে, এর আগে কেন নয়? এর উত্তর পরের লেখাতেই আছে -
উদ্ধারক পণ্ডিত যুধিষ্ঠির মীমাংসক। অর্থাৎ এই বই উপলব্ধ ছিলোনা তাই। কেন উপলব্ধ
ছিলোনা? কারণ ঋষি
দয়ানন্দও এই পুস্তক দ্বিতীয়বার আর ছাপাননি।
স্বামী দয়ানন্দ এই পুস্তক লিখেছেন সং.১৯২১ ও
১৯২২ এ যখন দ্বিতীয়বার আগরা অবস্থান করেন।
পণ্ডিত যুধিষ্ঠিরজী পুস্তকের প্রাক্কথনে
লিখেছেন –
একটা কথা বিশেষ ধ্যান
রাখার যোগ্য। এই পুস্তকে কেবল কৃষ্ণ ভাগবত অর্থাৎ অমল পুরাণেরই খণ্ডন আছে। সেই সময়
পর্যন্ত ঋষি দয়ানন্দ শেষ পুরাণকে পরম্পরা অনুসারে প্রামাণিক মানতেন। এই পুস্তকের
মহত্ব কেবল দুটি বিষয়ের জন্য – ১. এ থেকে স্পষ্ট হয় যে ঋষি দয়ানন্দ এই সময় পর্যন্ত মূর্তিপূজার খণ্ডন
করতে শুরু করে দেন, ২.ঋষি
দয়ানন্দজীর উপলব্ধ কৃতির মধ্যে প্রথম কৃতি হওয়া।
এই পুস্তক রচনার কিছুকাল
পরই সম্ভবত ঋষি দয়ানন্দজীর এটা অনুভব হয়ে গেছে যে, মূর্তিপূজার
আশ্রয় বর্তমান পুরাণসমূহই। অতঃ তাঁকে সকল পুরাণকে পূর্ণতঃ পরিত্যাগ এবং খণ্ডন করতে
হয়েছে। সং.১৯২৬ এর আষাঢ় মাসে, ঋষি দয়ানন্দ কানপুরে
প্রামাণিক পুস্তকের একটি সূচী সংস্কৃতে ছাপিয়েছিলেন। (দেখুন ঋষি দয়ানন্দ কে পত্র
ঔর বিজ্ঞাপন পৃষ্ঠ.১)। এই সূচীতে কোন পুরাণের নাম উল্লেখ নেই। এতটুকুই নয়, “মনুষ্যকৃতাঃ সর্বে ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণাদয়ো গ্রন্থাঃ প্রথমং গপ্পম্”
পংক্তি দ্বারা সমস্ত পুরাণকে ত্যাজ্য বলেছেন। এই সূচী থেকে এটা
স্পষ্ট যে, ঋষি দয়ানন্দ সং.১৯২৬ এর পূর্ব থেকেই বর্তমান
পুরাণসমূহকে বেদ বিরুদ্ধ মানতে শুরু করেন, এবং এর খণ্ডনে
প্রবৃত্ত হন।
পত্র ঔর বিজ্ঞাপনের পেইজ থেকে এখানে আমি সেই
অংশেটুকু দিয়ে দিলাম-
আমাদের
মান্য হলো ঋষি দয়ানন্দ শেষ পর্যন্ত যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন সেটা, সেটা নয় যেটা প্রথমে তিনি মানতেন।
প্রথমে তো তিনি মূর্তিপূজা আদিও মানতেন কিন্তু পরে তো তা ত্যাগ করেছেন।
যেটা তিনিই পরিত্যাগ করেছেন, সেটা নিয়ে এসে যদি বলেন -
দেখুন আপনাদের মান্য ব্যক্তির সিদ্ধান্ত এটা অতএব আপনারা মানুন। এটা তো হাস্যকর
হয়ে গেল। সং.১৯২১ এ তিনি কি
লিখেছেন সেটা দেখলেন কিন্তু পরে সং.১৯২৬ এ কি সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন তা দেখলেন না?
আচ্ছা মানলাম
দেখলেন না,
কিন্তু সত্যার্থ প্রকাশের পিছনে তো সারাদিন ব্যস্ততম সময় কাটে
আপনাদের কারো না কারো, সেটা কবে লিখলেন, আর কি লিখলেন তাও দেখেননি?
ঋষি দয়ানন্দ "ভাগবত
খণ্ডন" পুস্তক লেখার প্রায় ৮বছর পর সত্যার্থপ্রকাশ গ্রন্থ লিখেন। এটি
সং.১৯৩২ (সন্ ১৮৭৫) এ প্রকাশিত হয়। এর প্রায় ৭-৮ বছর পর সং.১৯৩৯ এ
সত্যার্থপ্রকাশের সংশোধিত সংস্করণ তৈয়ার করেন, যা সং.১৯৪০
এ প্রকাশিত হয়। গ্রন্থকার দ্বারা স্বয়ং সংশোধিত হওয়ার কারণে দ্বিতীয় সংস্করণই
প্রামাণিক।
সত্যার্থপ্রকাশের ভূমিকার শেষে কি লেখা আছে
লক্ষ্য করুন,
ভাগবত খণ্ডন আগে নাকি সত্যার্থ প্রকাশের সংশোধিত সংস্করণ?
এইপর্যন্ত আশাকরি বুঝে গেছেন যে, সত্যার্থপ্রকাশ ভাগবত খণ্ডনের
অনেক পরের লেখা, আর সেই সত্যার্থপ্রকাশে অষ্টাদশ পুরাণ
নিয়ে কি লিখেছেন দেখুন–
এখানে
প্রশ্ন ছিলো- ব্যাসদেব অষ্টাদশপুরাণের রচয়িতা। ব্যাসের বচন অবশ্য
প্রমাণ বলিয়া গ্রহণ করা উচিৎ।
উত্তরে ঋষি দয়ানন্দ
লিখেছেন– ব্যাসদেব অষ্টাদশ পুরাণের কর্তা হইলে
পুরাণগুলিতে এত অলীক গল্প থাকিত না, কেননা শারীরক সূত্র,
যোগশাস্ত্র ভাষ্য প্রভৃতি ব্যাসোক্ত গ্রন্থ সমূহ অবলোকন করিলে
জানা যায় যে, ব্যাসদেব মহান্ বিদ্বান, সত্যাবাদী, ধার্মিক যোগী ছিলেন। তিনি এরূপ
মিথ্যা কথা কখনও লেখেন নাই। এতদ্বারা সিদ্ধ হয় যে, যে সকল
সম্প্রদায়ী লোকেরা পরস্পর বিরোধী ভাগবতাদি নবীন কপোল কল্পিত গ্রন্থসমূহ রচনা
করিয়াছে, তাহাদের মধ্যে ব্যাসদেবের গুণের লেশমাত্রও ছিল
না। আর বেদশাস্ত্রের বিরুদ্ধে অসত্য কথা লেখা ব্যাসদেবের ন্যায় বিদ্বান্ পুরুষের কার্য
নহে। কিন্তু ইহা (বেদশাস্ত্র) বিরোধী, অবিদ্বান্
ব্যক্তিদের কর্ম।
অর্থাৎ অষ্টাদশ পুরাণকে ঋষি দয়ানন্দ ব্যাসদেব প্রণীত তথা প্রামাণিক মানিতেন না। এটাই ঋষি দয়ানন্দজীর শেষ সিদ্ধান্ত। তাই এটা বলা ঠিক নয় যে, ঋষি দয়ানন্দ দেবীভাগবতকে মানতেন।
©️অমৃতস্য পুত্রাঃ