রাধার বিবাহের প্রসঙ্গ

 

রাধার বিবাহের প্রসঙ্গ

কোথাও কোথাও রাধাকৃষ্ণের বিবাহের উল্লেখ পাওয়া যায়। এর মধ্যে গর্গ সংহিতা এবং ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের তথ্যসূত্র রাধার পরিচয় বিষয়ক লেখার ৩নং এ উল্লেখ করেছি। কিন্তু এই বিবাহ প্রসঙ্গেও কিছু প্রশ্ন আসে এবং বিবাহ বহির্ভূত বিষয়ও বলার মত, এমন তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়।

শ্রীমদ্ভাগবত-৩/২/২৬ শ্লোকে উল্লেখ আছে যে শ্রীকৃষ্ণ ১১বছর পর্যন্ত বৃন্দাবনে ছিলেন।


তারপর তিনি মথুরা চলে যান, এখানে প্রশ্ন হলো - তাহলে রাধার সাথে বিয়ে হলো কখন? ১১ বছরের মধ্যে কত তম বছরে বিয়ে হলো? আর তা কি বাল্যবিবাহ ছিলোনা?

এবার আসুন বিবাহবহির্ভূত সম্বন্ধ ছিলো কিনা সেই প্রসঙ্গে।

ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ,শ্রীকৃষ্ণ-জন্মখণ্ড-৮৪ অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ নিজ পিতাকে বলেন যে, তিনি রাসমণ্ডলস্থা রাধার গর্ভে বীর্য্যাধান করেন, যার ফলে রাধিকা একটি ডিম্ব প্রসব করেন।


এখানে সেই প্রশ্নই- বিবাহ কখন করলেন? রাসলীলা কত বছর বয়সে করেছেন? ইসকন প্রকাশিত 'লীলা পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ' গ্রন্থে ৮বছর বলে উল্লেখ আছে।


বিভিন্ন পৌরাণিক কথাবাচক এর পক্ষে ব্যাখ্যানও দেন যে, রাধার সাথে শ্রীকৃষ্ণের কেন বিবাহ হয়নি, যেমন প্রসিদ্ধ কথাবাচক চিত্রলেখা –

ইসকন প্রভুর ব্যাখ্যান–

ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, শ্রীকৃষ্ণ জন্ম-খণ্ড, পঞ্চদশ অধ্যায়ে রাধা-কৃষ্ণের বিবাহের যে কাহিনী পাওয়া যায়, তা সংক্ষেপে এরূপ

একদা নন্দমহারাজ শিশু শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে ভাণ্ডীর নামক উপবনে গোরু চরাতে যান। যখন গোরু চরছিলো আর তিনি একটি বৃক্ষের নিচে শিশু শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে বসেছিলেন তখন শ্রীকৃষ্ণ মায়া দ্বারা আকাশকে মেঘাচ্ছন্ন করে দিলেন। তারপর বৃষ্টি হচ্ছিলো, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিলো। এমতাবস্থায় নন্দ মহারাজ ভয়ভীত হয়ে যান। তিনি চিন্তিত হয়ে যান যে, গোরু এবং বাছুরগুলোকে ছেড়ে তিনি কিভাবে ঘরে ফিরে যাবেন,  আর যদি না যান তাহলে শিশু শ্রীকৃষ্ণের কি হবে। আর শ্রীকৃষ্ণও কান্না করতেছিলেন, ভয়ে পিতাকে জরিয়ে ধরেন। সেই সময়ই রাধিকার আগমন হয়। নন্দ মহারাজ বিভিন্ন কথোপকথনের পশ্চাৎ শ্রীকৃষ্ণকে রাধার কোলে দেন, আর রাধা তাকে নিয়ে অন্যত্র (বৃন্দাবন) চলে যান। সেখানে যাওয়ার পর রাধার কোল থেকে শ্রীকৃষ্ণ অদৃশ্য হয়ে যান, এবং নবযুবক রূপ ধারণ করেন। তারপর নবযুবককে দেখে রাধিকা কামাতুর হয়ে যান, কামাসক্ত হয়ে বিভিন্ন চিন্তন করতে থাকেন। তারপর উভয়ের মধ্যে বিভিন্ন কথোপকথন চলাকালীন সেখানে ব্রহ্মার আগমন হয়। ব্রহ্মাও বিভিন্ন কথোপকথন বা স্তুতি আদি করার পর - নবযুবক শ্রীকৃষ্ণ এবং রাধিকার বিবাহ কার্য্য সম্পন্ন করেন। তারপর পুনঃ সেই কাম বিষয়ে প্রবেশ করেন এবং কামযুদ্ধ শেষে শ্রীকৃষ্ণ পুনঃ শিশুরূপ ধারণ করেন। তা দেখে রাধা কান্না শুরু করেন, ঐদিকে শিশু শ্রীকৃষ্ণও কান্না করেন। তারপর আকাশবাণী হয় যে - হে রাধে! রোদন কেন করছো? এখন থেকে রাসমণ্ডল পর্যন্ত নিত্য এখানে রাত্রে শ্রীকৃষ্ণ আসবে, আর তুমিও এসে রতি করো। রোদন করিওনা।  তারপর রাধা শ্রীকৃষ্ণকে কোলে করে নন্দগৃহে দিয়ে আসেন।

এই কাহিনী থেকে মনে হতে পারে যে, পূর্বে বলা সকল প্রশ্নের সমাধান তো এখানে হয়েই গেল। দেখুন এই তথ্য থাকা সত্ত্বেও আমি ঐ প্রশ্নগুলো উপস্থাপন করলাম যেন - আপনাদের মনেও প্রশ্ন জাগে। এবার ভাবুন যে, মনে হয়না এমন অযৌক্তিক কাহিনী কেবল কল্পনাতেই সম্ভব। একই কাহিনী গর্গসংহিতা-গোলকখন্ড ১৬ অধ্যায়েও আছে। গর্গ সংহিতা থেকে পুরাণে গেল নাকি পুরাণ থেকে গর্গ সংহিতায়? স্বাভাবিকভাবে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণেই প্রথম উল্লেখ থাকবে বলে বিবেচিত হয়। বিদ্বানগণের অভিমত এই যে, বর্তমানে উপলব্ধ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ সেই প্রাচীন ব্রহ্মবৈবর্ত নয় বরং তা ১৬০০খ্রিষ্টাব্দে এইরূপে এসেছে। অর্থাৎ বর্তমানে উপলব্ধ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অর্বাচীন, অপ্রামাণিক, অতঃ বিবাহের বিষয়টিও অর্বাচীন ও অপ্রামাণিক।

বিদ্বানদের অভিমত নিয়ে আমরা আলাদা করে আর্টিকেল দিয়েছি ব্লগে, সেটা দেখে নিবেন।


অমৃতস্য পুত্রাঃ


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন