ষোড়শ সংস্কার কী কী?

 

"ষোড়শ সংস্কার সমূহ"



🙏
নমস্কার🙏
সনাতনী বন্ধুরা ও গুরুজন আপনি কি জানেন!! সনাতন ধর্মের মূল ধর্ম গ্রন্থ বেদ অনুসারে সনাতন ধর্মের সংস্কার হলো মোট ১৬ টি।

আর এই সকল সংস্কারকে একত্রে বলা হয় "ষোড়শ সংস্কার"যা জন্মের পূর্ব হতে মৃত্যু পর্যন্ত বিস্তৃত।
চলুন আমরা সেই ১৬ টি মানে "ষোড়শ সংস্কার" গুলোর নাম জেনে নেই।

(১) গর্ভাধান,      (২) পুংসবন,         (৩) সীমন্তোন্নয়ন,       (৪) জাতকর্ম,
(৫) নামকরণ,     (৬) নিষ্ক্রমণ,         (৭) অন্নপ্রাশন,          (৮) মুণ্ডন,
(৯) কর্ণবেধ,      (১০) উপনয়ন,      (১১) বেদারম্ভ,            (১২) সমাবর্তন,
(১৩) বিবাহ,        (১৪) বানপ্রস্থ,       (১৫) সন্ন্যাস ও           (১৬) অন্ত্যেষ্টি।

♥ ষোড়শ সংস্কার ♥
বেদে বলা হয়েছে গর্ভাধান থেকে মৃত্যু অবধি আমাদের মোট ষোলটি সংস্কার৷
আর একত্রে এদেরকে “ষোড়শ সংস্কার” বলে অভিহিত করা হয়৷
ও৩ম্ বিশ্বানি দেব সবিতর্দুরিতানি পরা সুব।
যদ্ভদ্রং ন্তন্নऽআ সুব। [যজুর্বেদ- ৩০/৩]
অর্থাৎ হে সকল জগতের উৎপত্তিকর্ত্তা, সমগ্র ঐশ্বর্য যুক্ত শুদ্ধস্বরূপ সর্বসুখদাতা পরমেশ্বর। আপনি দয়া করিয়া আমাদের সম্পূর্ণ দুর্গুণ, দুর্ব্যসন ও দুঃখ দূর করিয়া দিন। যাহা কল্যাণকারক গুণ, কর্ম, স্বভাব ও পদার্থ সেই আমাদিগকে দিন।

১। গর্ভধানঃ
হে শক্তিধর পুরুষ! গর্ভের পুষ্টির জন্য স্ত্রী যোনীকে বিশেষরূপে রক্ষা কর। হে মর্যাদা ময়ী পত্নী! গর্ভস্থ সন্তানকে বিশেষভাবে পুষ্ট কর। তুমি সে সন্তানকে উপযুক্ত সময়ে প্রসব কর। [অথর্ব্ববেদ- ৬/৮১/২]
২। পুংসবনঃ
হে স্ত্রী! যে ওষধি সমূহের দ্যুলোক পিতা,পৃথ্বীলোক মাতা এবং সমুদ্র লোক মূল আধার সেই ওষধি সমূহ তোমাকে সন্তান লাভের জন্য দান করেতেছি। দিব্য গুণযুক্ত ওষধি সমূহ তোমাকে রক্ষা করুক। [অথর্ব্ববেদ- ৩/২৩/৬]
৩। সীমান্তোন্নয়নঃ
আমি দানশীলা আবাহনযোগ্য স্ত্রীকে স্তুতি দ্বারা আবাহন করিতেছি। সৌভাগ্যবতী স্ত্রী আমার আবাহন শ্রবণ করিয়া আমাকে বিশেষ ভাবে উপলব্ধি করুক। সূক্ষ্ম সূচি দ্বারা সেলাই করিবার ন্যায় অতি সাবধনে সে প্রজনন কর্ম্ম সম্পন্ন করুক। সে আমাকে দানবীর বলবান যশস্বী পুত্র দান করুক। [ঋগ্বেদ- ২/৩২/৪]
৪। জাতকর্মঃ
হে পরমাত্মন্ ! দশমাস পর্যন্ত মাতৃগর্ভে সুকুমার জীব সুপ্ত থাকিয়া যেন প্রাণ ধারণ করে এবং জীবিত মাতার গর্ভ হইতে যেন বিনা কষ্টে ভূমিষ্ঠ হয়। [ঋগ্বেদ- ৫/৭৮/৯]
৫। নামকরণঃ
হে সন্তান! তুমি যে জ্যোতিঃ স্বরূপ, পরম জ্যোতিঃ স্বরূপ, পরমাত্মার পুত্র, তোমার নাম আত্মা, ইহা আমরা ভাল ভাবে জানি। শান্তিদায়ক পদার্থ দ্বারা তোমাকে আমরা তৃপ্ত করিতেছি। প্রাণ স্বরূপ, দুঃখনাশক, সুখময় পরমাত্মার কৃপায় আমার সন্তানেরা সুসন্তান হউক, বীর সন্তান হউক। আমি বীরবৃন্দ দ্বারা পরিবেষ্টিত হইব। পুষ্টিকর পদার্থের দ্বারা আমি সুপুষ্ট হইব। [যজুর্ব্বেদ- ৭/২৯]
৬। নিস্ত্রমণঃ
হে বালক! তোমার নিষ্ক্রমণ কালে দ্যুলোক ও ভূলোক কল্যাণকারী, সন্তাপ হীন, শোভা ও ঐশ্বর্য দাতা হউক। সুর্য তোমার নিকট কল্যাণপ্রদ এবং বায়ু তোমার হৃদয়ের অনুকুল মঙ্গলদায়ক হউক। দিব্য গুণযুক্ত স্বাদু জল তোমার জন্য কল্যাণকারী হইয়া প্রবাহিত হউক। [অথর্ব্ববেদ- ৮/২/১৪]
৭। অন্নপ্রাশনঃ
হে বালক! কৃষি দ্বারা উৎপন্ন যে অন্ন তুমি ভক্ষণ করিতেছ, যাহা ভক্ষ্য এবং যাহা পুরাতন হওয়ায় অভক্ষ্য, সে সবই তোমার জন্য রোগ রহিত অমৃতময় হউক। [অথর্ব্ববেদ- ৮/২/১৯]
৮। মূণ্ডনঃ
অভিজ্ঞ বিদ্বান্ যেরূপ ক্ষুর দ্বারা শান্তস্বভাব রাজা ও শ্রেষ্ঠ পুরুষকে মুন্ডন করেন সেইরূপ ক্ষুর দ্বারা হে ব্রাহ্মণগণ! এই বালকের কেশ কর্ত্তন কর। এই বালক গো, অশ্ব ও সন্তান লাভ করুক। [অথর্ব্ববেদ- ৬/৬৮/৩]
৯। কর্ণবেধঃ
ধাতু নির্ম্মিত অস্ত্র দ্বারা দুই কর্ণের ছেদ করা- বৈদ্য এই শোভা বর্ধ্বক কার্য করুক। সে প্রজার কল্যাণকারী হউক। [অথর্ব্ববেদ-৬/১৪/২]
১০। উপনয়নঃ
আচার্য ব্রহ্মচারীকে উপনয়ন দিয়া নিজের সাহচর্যে রাখেন। আধ্যাত্মিক, আধিভৌতিক ও আধিদৈবিক এই তিন অবিদ্যা অন্ধকার দূর করিতে নিজের বিদ্যার বেষ্টনীর মধ্যে তাহাকে ধারণ করেন। যখন ব্রহ্মচারী বিদ্যালাভ করিয়া দ্বিতীয় জন্ম লাভ করে তখন তাহাকে দেখিবার জন্য সব দিক হইতে বিদ্বানেরা আসিয়া সমবেত হন। [অথর্ব্ববেদ- ১১/৫/৩]
১১। বেদারম্ভঃ
ব্রহ্মচারী জ্যোতির্ম্ময় বৈদিক জ্ঞানকে ধারণ করে। এজন্য তাহার মধ্যে সব দিব্য গুণ অবস্থান করে। সে প্রাণ অপান, ব্যান বাক্য, মন, হৃদয়, জ্ঞান ও মেধাকে উৎকর্ষ দান করে। [অথর্ব্ববেদ- ১১/৫/২৪]
১২। সমাবর্ত্তনঃ
ব্রহ্মচর্য পূর্ব্বক বিদ্যালাভ করিয়া, উত্তমবস্ত্র পরিধান করিয়া যৌবন কালে যিনি গার্হস্থ্য আশ্রমে উপনীত হন তিনিই দ্বিজত্ব লাভে খ্যাতি অর্জ্জন করিয়া মহৎ হন। ধ্যান পরায়ণ, মননশীল, জ্ঞান প্রচারক, ধৈর্যবান্ বিদ্বানেরা সেই পুরুষকে উন্নতি লাভে সহায়তা প্রদান করেন। [ঋগ্বেদ- ৩/৮/৪]
১৩। বিবাহঃ
ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করিবার পর কুমারী কন্যা যুবা পতিকে লাভ করিবে। বলবান্ ও বুদ্ধিমান্ ব্যক্তিই ভোগ্য পদার্থকে সম্যক ভোগ করিতে পারে। [অথর্ব্ববেদ- ১১/৫/১৮]
১৪। বানপ্রস্থঃ
বান প্রস্থ গ্রহণকারীকে বন্য পশু হনন করে না অন্যান্য প্রাণীও ইহাদিগকে হনন করে না। ইহারা সুমিষ্ট ফল ভক্ষণ করিয়া শান্তিময় জীবন অতিবাহিত করেন। [ঋগ্বেদ- ১০/১৪১/৫]
১৫। সন্ন্যাসঃ
হে সত্যকীৰ্ত্তি, সত্যকৰ্ম্মা, জ্ঞানময়, আনন্দ দাতা সন্ন্যাসী। সত্য বাণী ন্যায় বাক্য বলিয়া সত্য ধারণের উপদেশ করিয়া এবং পরমাত্মার উপাসনা দ্বারা শুদ্ধ হইয়া যোগ দ্বারা সিদ্ধি প্রাপ্তির জন্য প্রযত্ন কর। [ঋগ্বেদ- ৯/১১৩/৪]
১৬ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াঃ
হে কর্মশীল জীব! শরীর ত্যাগের সময় পরমাত্মার নাম ওঙ্কার স্মরন কর, আধ্যাত্মিক প্রাণ, আধিদৈবিক প্রাণ এবং পুনরায় সেই প্রাণস্বরূপ পরমাত্মাকে প্রাপ্ত হও। তৎপর ভৌতিক শরীর ভস্মে পরিণত হউক।
[যজুর্ব্বেদ- ৪০/৫]
**{অন্ত্যেষ্টি শেষ সংস্কার। ইহার পর শরীরের জন্য অন্য কোন সংস্কারই অবশিষ্ট থাকে না। ইহার নাম নরমেধ, পুরুষমেধ, নর যাগ ও পুরুষ যাগ। শ্মশান ভূমিতে জ্বলন্ত চিতায় সমিধা, সুগন্ধি, রোগনাশক ও বুদ্ধিবৰ্দ্ধক ওষধি এবং ঘৃত আহুতি দ্বারা মৃত শরীরকে ভস্মীভূত করাই অন্ত্যেষ্টি সংস্কার। জীব তাহার কৃত কর্ম্মের ফল নিজেই ভোগ করে। বংশধরদের কোন কার্যই তাহাকে সাহায্য করিতে পারে না।}**


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন