"অগ্নি" শব্দের পরমাত্মাবাচক অর্থ এবং পারম্পরিক আচার্য্য

 "অগ্নি" শব্দের 
পরমাত্মাবাচক অর্থ এবং পারম্পরিক আচার্য্য 


আর্য সমাজের সংস্থাপক মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী জী তার কালজয়ী গ্রন্থ সত্যার্থ প্রকাশ, ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকা এবং বেদভাষ্যতে "অগ্নি" শব্দ দ্বারা ভৌতিক অগ্নি অর্থ করার পাশাপাশি পরমাত্মাবাচক অর্থও করেছেন। নিরুক্তের "অগ্নি অগ্রণীর্ভবতি" ব্যুৎপত্তির অনুসারে তিনি সেই অগ্নি শব্দের অর্থ করেছেন, এই বিষয়ে আদি শঙ্করাচার্য জীও সহমত -

"অগ্নিশব্দদোঽপি বিপ্যগ্রণীত্বাদিযোগাশ্রয়েণ পরমাত্মাবিষয় এব ভবিষ্যতি।" 
              (ব্রহ্মসূত্রের ১.২.২৮ সূত্রের ওপর শঙ্করভাষ্য)

অর্থাৎ - "অগ্নি" শব্দ অগ্রণী আদি যোগের আশ্রয় নেওয়াতে পরমাত্মারই দ্যোতক হয়।

আজকাল আধুনিক পাখণ্ডী পৌরাণিক সংস্কৃত বিদ্বান আদি মহর্ষির এরূপ অর্থের উপর আপত্তি জ্ঞাপন করে যে, স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী জী মহারাজ কিসের আধারে অগ্নি শব্দের অর্থ পরমাত্মা করলেন? আমরা এখন নিরুক্ত এবং স্বয়ং ঋগ্বেদে থাকা (১.১৬৪.৪৬) এ "একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্তি" প্রভৃতি মহৎ শাস্ত্রের কথা বলছি না, বরং এই সকল সম্প্রাদায়াভিমানী আলোচকদের মান্য সাম্প্রদায়িক গ্রন্থগুলো থেকেই প্রমাণ দিচ্ছি যে "অগ্নি" এর পরমাত্মাপরক অর্থ তাদের বিশিষ্টাদ্বৈত মতের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য্য রামানুজই করে গিয়েছেন - 

"এবমগ্নিশব্দোঽপ্যগ্রনয়নাদিনা যেনৈব গুণেন যোগাজ্জ্বলনে বর্ত্ততে, তস্যৈব গুণস্য নিরুপাধিকস্য কাষ্ঠাগতস্য পরমাত্মনি সম্ভবাদস্মিন্ প্রকরণে পরমাত্মাসাধারণধর্মবিশেষিতঃ পরমাত্মানমেবাভিধত্ত ইতি।।"  ( ব্রহ্মসূত্র ১.২.২৯ এর ওপর শ্রীভাষ্য)

"অগ্নি" শব্দও "অগ্রে নিয়ে যাওয়া" (প্রকাশ, ঊর্জা, প্রেরণ) আদি গুণের দ্বারা প্রজ্বলন অর্থে প্রযুক্ত হয়। উক্ত গুণকে যখন কোনো উপাধি ছাড়াই এবং শুদ্ধরূপে দেখা হয়, তখন সেটি পরমাত্মার মধ্যে সম্ভব (কেননা পরমাত্মাতেই সেই বিশেষ ধর্ম অসাধারণ রূপে নিহিত)।  একারণে এই প্রসঙ্গে "অগ্নি" শব্দ কেবলমাত্র পরমাত্মারই বাচক।

এখন রামানুজাচার্যের সাথে যদি কোনো রামানন্দী সম্প্রদায়বাদী অমত পোষণ করে তা অমান্য করে। সেক্ষেত্রে তার জন্য তার মান্য আচার্য্য বা পরম পূজনীয় গুরুদেব রামভদ্রাচার্যজীর ভাষ্য থেকেই প্রমাণ উপস্থাপন করছি - 

"এনং পুরুষং পরং অপি নিশ্চয়েন চ অগ্নিনাম্না অধীয়তে জনাঃ স্মরন্তি।"
            (ব্রহ্মসূত্র ১.২.২৭ সূত্রের উপর রাঘবকৃপাভাষ্য)

"এই পুরুষ, যিনি হলেন পরম পুরুষ, নিশ্চিতরূপে তাকে " অগ্নি" নামেও বর্ণনা এবং স্মরণ করা হয়।

এভাবে এটি স্পষ্ট হয়ে যে, "অগ্নি" শব্দ কেবল ভৌতিক অগ্নির জন্য নয় বরং বিবিধ প্রসঙ্গে পরমাত্মার বা পরম পুরুষের জন্যেও প্রযুক্ত হয়। আর এবিষয়ে অদ্বৈতবাদী আদি শঙ্করাচার্য, বিশিষ্টাদ্বৈতবাদী রামানুজাচার্য এবং রামানন্দী সম্প্রদায়ের আচার্য স্বামী রামভদ্রাচার্য জী প্রভৃতি পরম্পরাবাদী সাম্প্রতিক আচার্যগণও একমত।

সুতরাং, পরিশিষে এইটুকু বলব যে, আপনাদিগের মান্য আচার্যগণেরাই যখন নিজেদের "পারম্পরিক" ভাষ্যতে "অগ্নি", "বৈশ্বানর" আদি শব্দের পরমাত্মাপরক অর্থ করেছে তখন মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী এবং আর্য সমাজের কৃত অর্থে এতটা আপত্তি করা অনুচিত।। 

নমস্কার 
🖋️অনুবাদক - বাধন চক্রবর্তী 
©️অমৃতস্য পুত্রাঃ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন