পুরাণ বিমর্শ (ষোড়শ-পর্ব)

প্রিয়রত্ন বিদ্যার্থী
0
পুরাণ বিমর্শ ষোড়শ-পর্ব
পৌরাণিক দেবতাদের চরিত্র



এতক্ষণ পর্যন্ত বহুল পরিচিত ব্রহ্মা বিষ্ণু আদির বিষয়ে পুরাণে কি আছে তার কিঞ্চিৎ অবগত করিলাম এখন অন্যান্য দেবতাদের চরিত্র নিয়ে কি আছে তা দৃষ্টিপাত করি।

                                 "ইন্দ্র"
ইন্দ্রের চরিত্র নিয়ে কমবেশ সকলে জানেন যে তিনি কেমন চরিত্রের। অন্যান্য দেবতাদের মতো ইন্দ্রের এত ভক্ত নেই যে বলে বেড়াবে এইসব অপ্রাকৃত লীলা। ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণে ইন্দ্র সম্পর্কে বলা হয়েছে–

     ইন্দ্র ও রম্ভা– একদা মহাসম্পজ্জনিত মদে উন্মত্ত ইন্দ্র কামপরবশ হইয়া নিজ রাজলক্ষ্মীর অরুরূপ বেশভূষা করিয়া পুষ্পভদ্রানদীর তীরে গমন করিয়াছিলেন। সেখানে নির্জন উদ্যানে রম্ভাকে দেখতে পাইলেন। সেই রম্ভা শ্যামা অর্থাৎ সম্পূর্ণ যৌবনবতী ছিল, তাহার শ্রোণিদেশ সুগঠিত, অধর সুপক্ক বিম্বফলের ন্যায় মনোহর, নিতম্ব অতিবৃহৎ, স্তনদ্বয় অতি উন্নত সুকঠিন, সুতরাং রসিকদিগের সুখপ্রদ। তার কটাক্ষে পীড়িত হইয়া ইন্দ্র বলিতে লাগিলেন কোথায় গমন করিতেছ? কোথা হইতে আগমন হইল? অনেকদিন পর তোমাকে দেখিলাম, আজকাল কে তোমার প্রিয়পাত্র হইয়াছে? দূতদিগের মুখে শুনিয়া তোমার অন্বেষণ করিতে এখানে আসিয়াছি। তুমি জান যে আমি সর্বদাই তোমাতে অনুরুক্ত, তোমা ভিন্ন আর কোন স্ত্রীর চিন্তা করিনা। এই ত্রিজগতে এমন কে মূঢ় আছে যে, তোমাকে একবার আলিঙ্গন করিয়া অপর স্ত্রীতে গমন করিতে ইচ্ছা করে? এসব শুনে রম্ভা ঈষৎ হাস্যের সহিত কটাক্ষ বিক্ষেপ, স্তন ও উরুযুগলের প্রদর্শন এবং কামাগ্নির বাক্য প্রয়োগ করিয়া ইন্দ্রের চৈতন্য হরণ করিল। সে বলিল - এক্ষণে আমি তোমার আজ্ঞাকারিণী দাসীব, আমাকে যথাসুখে গ্রহণ কর। কামশাস্ত্রবিশারদ, দেবরাজ, মদনপীড়িতা রম্ভার অভিপ্রায় অবগত হইয়া, পুষ্পশয্যায় তাহাকে গ্রহণ করত, তাহার সহিত বিহার করিতে লাগিলেন। নির্জনে হঠাৎ রম্ভা, দেবরাজকে চুম্বন করিলে, দেবরাজ ইন্দ্রও তাকে চুম্বন করিতে লাগিলেন। কামী ইন্দ্র, যেন সাক্ষাৎ মূর্তিমান শৃঙ্গাররূপী হইয়া নানা প্রকার বিপরীত প্রভৃতি শৃঙ্গার করিতে লাগিলেন। তখন উভয়ে কামমোহিতচিত্তে নিরন্তর, পরস্পর, পরস্পরকে চিন্তা করত জ্ঞানবর্জিত এবং কামার্ত্ত হইয়া দিবা-রাত্রি কিছুই জানিতে পারিলেন না। সুরেশ্বর রম্ভার সহিত এইরূপ স্থলে ক্রীড়া করত জলবিহারের নিমিত্ত পুষ্পভদ্রা নদীর জলে গমন করিলেন। দেবরাজ, সহর্ষে কিছুকাল রম্ভার সহিত জলক্রীড়া করিয়া বারংবার জল হইতে স্থলে, স্থল হইতে জলে বিহার করিতে লাগিলেন। (সংক্ষিপ্ত)
                       (ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণ, গণেশখণ্ড, বিংশ অধ্যায়)

     ইন্দ্র ও অহল্যা– একদা অহল্যা তীর্থযাত্রা উপলক্ষে সূর্য্য-পর্ব্বদিনে পুষ্করে আগমন করেন, সেই সময়ে পাকশাসনের দৃষ্টিপথে পতিতা হন। মহেন্দ্র সেই পীনশ্রোণিপয়োধরা সম্মিতা সুদতী শান্তা অহল্যাকে দর্শনমাত্রে মূর্ছাপন্ন হইলেন; পরদিনে আবার অহল্যা, যখন মন্দাকিনীতে নগ্না হইয়া সহাস্যবদনে সলজ্জভাবে একাকিনী স্নান করিতেছিলেন, সেই সময়েও ইন্দ্রের নেত্রপথে পতিতা হন। দেবরাজ তখন অহল্যার বিপুল শ্রোণি ও স্তনযুগল দর্শনে কাম- পীড়িত হইয়া পুনরায় মূর্ছাপন্ন হওয়ায় বিচেতন হইলেন। পরে ক্ষণমধ্যে সংজ্ঞা লাভ করিয়া অহল্যাসমীপে গমনপূর্ব্বক সবিনয়ে মধুর বাক্যে সেই পতি- ব্রতাকে বলিতে লাগিলেন, শোভনে! তোমার কি অদ্ভুত রূপগুণ! কি কমনীয় নবীন বয়ঃক্রম! শরচ্চন্দ্র- বিনিন্দিত কি আশ্চর্য্য তোমার মুখশ্রী! সুন্দরি! তোমার মনোহর কুটিল কটাক্ষ দর্শনমাত্রে পুরুষের চিত্ত আকর্ষিত হয়; তোমার রমণীয় লোচনদ্বয় পদ্মপ্রভাকে অপহরণ করিয়াছে। তোমার কি অদ্ভুত মুনি-যানসমোহিনী মনোহরা বিপুলা শ্রোণী, উহা কামের আধার বলিয়া বোধ হয়, কারণ দর্শন মাত্রেই কামি-হৃদয়ে কামের আবির্ভাব হইয়া থাকে; উহা অতি কঠিনা ও পীনা; উহার দর্শনে রম্ভাস্তম্ভকে বিড়ম্বিত বিবেচনা হয়। তোমার নিতম্বযুগলও চন্দ্র বিশ্বের ন্যায় বর্তুল এবং তোমার ত্রৈলোক্যচিত্তমোহন অভ্যুন্নত সুকঠিন শ্রীযুক্ত স্তনযুগ্ম দর্শন করিলে শ্রীফলযুগল বলিয়া বোধ হয়। তপোধন গৌতম কি অনির্বচনীয় তপস্যাই করিয়াছেন! যাহার ফলে তাঁহার ভাগ্যে ঈদৃশী পরমাসুন্দরী ভার্য্যা ঘটিয়াছে। তোমার সাথে কিভাবে রমণ করতে হয় তা কি গৌতম জানে? উর্ব্বশী প্রভৃতি আমাকে কামশাস্ত্রে নিপুণ বলিয়া প্রশংসা করিয়া থাকেন। তুমি এক্ষণে নিষ্কাম দুর্ব্বল তপস্বী গৌতমকে পরিত্যাগ করিয়া বিপুল ত্রৈলোক্য লক্ষ্মী গ্রহণ কর। কামুক ইন্দ্রের একথা শুনে অহল্যা বলেন– ইন্দ্র! তুমি কশ্যপের কু-সন্তান। বিবিধ উপদেশ দিয়া তিনি দ্রুতপদে স্বগৃহে গমন করিলেন। পরে একদা গৌতম শঙ্করালয়ে গমন করিলে ইন্দ্র গৌতমরূপ ধারণ করিয়া সম্ভোগ করিলেন। গৌতম জানিতে পারিয়া গৃহে এসে যখন ইন্দ্রকে গৃহ হইতে নির্গত ও অহল্যাকে নির্জ্জনে নগ্না হইয়া অবস্থান করিতে দেখিলেন তখন ইন্দ্রকে ভগাঙ্গ হও বলিয়া অভিসম্পাত করিলেন। আর স্ত্রীকে পাষাণী হইয়া অবস্থান কর বলিয়া অভিসম্পাত করিলেন। 
      (ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণ, শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ড, একষষ্ঠিতম অধ্যায়)

এজন্য ব্রহ্মাও ইন্দ্রকে বলেন –
পরস্ত্রীলোলুপঃ সদা। ৭
গৌতমস্যভিশাপেন ভগাঙ্গ সুরসাদি।
পুনর্লজ্জাবিহীনস্ত্বং পরস্ত্রীলোলুপঃ॥৮ 
          (ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণ, গণেশখণ্ড, একবিংশ অধ্যায়)

তুমি পরস্ত্রীতে লোভ করিয়া থাক। পূর্ব্বে তুমি গৌতমের অভিশাপে সুরসমাজে ভগাঙ্গ হইয়াছিলে, পুনর্ব্বার তুমি পরস্ত্রীতে লোভ করিয়াছ।

🖋️প্রিয়রত্ন বিদ্যার্থী
 ╔════ஜ۩۞۩ஜ════╗  
 ❣    * অমৃতস্য পুত্রাঃ *       ❣    
 ╚════ஜ۩۞۩ஜ════╝

Post a Comment

0Comments

Please Select Embedded Mode To show the Comment System.*