পুরাণ বিমর্শ (পঞ্চদশ পর্ব)

প্রিয়রত্ন বিদ্যার্থী
0
 পুরাণ বিমর্শ পঞ্চদশ-পর্ব
 পুরাণে "শ্রীকৃষ্ণ"


     অর্জুন– অর্জুন এক সরোবরে স্নান করে জল হইতে উঠিয়া নিজেকে নবযৌবনসম্পন্না নারীরূপে দেখিতে পাইলেন (৬৩-৬৫)। নারীরূপী অর্জুন যখন শ্রীকৃষ্ণকে দেখেন–

সমালোক্যার্জ্জুনীয়াঽসৌ মদনাবেশবিহ্বলা ॥১৮৮॥
ততস্তাঞ্চ তথা জ্ঞাত্বা হৃষীকেশোঽপি সর্ব্ববিৎ।
তস্যাঃ পাণিং গৃহীত্যৈব সর্বক্রীড়াবনান্তরে ॥১৮৯॥
যথাকামরুহো রেমে মহায়োগেশ্বরো বিভুঃ।
ততস্তস্যাঃ স্কন্ধদেশে প্রদত্তভুজ পল্লবঃ ॥১৯০॥
আগত্য শারদাং প্রাহ পশ্চিমেঽস্মিন্সরোবরে।
শীঘ্রং স্নাপয় তন্বঙ্গীং ক্রীড়াশ্রান্তাং মৃদু স্মিতাম্॥১৯১॥
ততস্তাং শারদাদেবীতস্মিন্ক্রীড়াসরোবরে।
স্নানং কুর্ব্বিত্যুবাচৈনাং সা চ শ্রান্তা তথাঽকরোৎ ॥১৯২॥জলাভ্যন্তরমাপ্তাঽসৌ পুনরর্জ্জুনতাং গতঃ। ৯৩

                (পদ্মপুরাণ, পাতালখণ্ড, ত্রিচত্বারিংশ অধ্যায়)

নারীরূপী অর্জুন এই প্রকার শ্রীকৃষ্ণকে দেখিয়া কামবশে বিবশ হইলেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের মনোভাব জানিতে পারিয়া তাহার হাত ধরিয়া ক্রীড়াকাননের মধ্যে আনিয়া তাহার সহিত যথাভিলাষিত বিহার করিলেন। অনন্তর তাহার স্কন্ধদেশে করপল্লব রাখিয়া সখীজনসন্নিধানে আসিয়া শারদাকে বলিলেন।– এই ক্রীড়া পরিশ্রান্তা মৃদুহাসিনী কৃশাঙ্গীকে শীঘ্র পশ্চিম সরোবরে স্নান করাও। শারদাও তাঁহার আদেশে অর্জুনকে সেই ক্রীড়াসরোবরে আনিয়া স্নান করিতে বলিল। অর্জুন শ্রান্ত ছিলেন; সুতরাং তাহাই করিতে উদ্যত হইলেন। অর্জুন যেমনি জলমধ্যে প্রবেশ করিলেন, অমনি পূর্ব্ববৎ অর্জুন- রূপ প্রাপ্ত হইলেন।

     নারদ– অমৃতসরোবরে স্নান করিবামাত্র নারদ নারী হইয়া গেলেন (৩১-৩২)। তারপর শ্রীকৃষ্ণের নিকট গেলে তিনি মদীয় নারীমূর্ত্তি দর্শনেই আনন্দিত হইয়া বারংবার বলিলেন, হে প্রিয়ে! হে কান্তে! আইস, ভক্তিসহকারে আমাকে আলিঙ্গন কর। নারদ বলেন–

আমি শ্রীকৃষ্ণের সহিত এক বর্ষ রমণ করিলাম। আমার সহিত রতিকার্য্য শেষ হইলে প্রভু সেই দেবী রাধিকাকে বলিলেন। এক্ষনে ইহাকে রমণীয় অমৃতসরোবরে স্নান করাইয়া পূর্ব্বরূপ প্রাপ্ত করাও। আমি সরোবরে যেমনি মজ্জন করিলাম অমনি পূর্ব্বরূপ নারদ হইয়া বীণাহস্তে সেই অদ্ভূতে রহস্যব্যাপার গান করিতে  করিতে পূর্ব্বস্থানে উপস্থিত হইলাম।
     (পদ্মপুরাণ, পাতালখণ্ড, চতুশ্চত্বারিংশ অধ্যায়)

     বস্ত্রহরণ লীলা– গোপীরা ব্রতপালন কালে প্রতিদিন নদিতে স্নান করতেন। ১মাস পূর্ণ হওয়ার পর অর্থাৎ ব্রত সমাপ্তির দিন পূর্বের ন্যায় নদীতে এসে অঙ্গবিস্ত্রগুলি তীরে রেখে নগ্ন হয়ে জল্ক্রীড়া করছিলেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ এসে তাদের বস্ত্র হরণ করে কদম্ববৃক্ষে আরোহণ করলেন। তারপর তিনি তাদের নগ্নতা জানা সত্ত্বেও গোপীদের বললেন- দেখো তোমাদের বস্ত্রগুলি এইখানে, এসো নিয়ে যাও। কিন্তু তারা লজ্জায় প্রথমে জল থেকে উঠলেন না। তারা শ্রীকৃষ্ণকে বললেন এমন নীতিবিরুদ্ধ কাজ করোনা। আমরা তোমার দাসী, তুমি যা বলবে তাহাই করবো, তুমি কাপড়গুলি দিয়ে দাও, নয়তো নন্দমহারাজকে বলে দিতে বাধ্য হবো। তখন শ্রীকৃষ্ণ বললেন তোমরা নিজেকে আমার দাসী বলে স্বীকার করেছো আর আমি যাহা বলিবো তাই করবে বলে অঙ্গীকার করেছো - তাই এখানে এসে কাপড় নিয়ে যাও। তারা শীতে অত্যন্ত কষ্ট পাচ্ছিলেন, সর্বাঙ্গ কম্পিত হচ্ছিল। অবশেষে দুই হাত লজ্জাস্থানে আবৃত করে জল থেকে উঠে বস্ত্র নিলেন।(সংক্ষিপ্ত)
                 (শ্রীমদ্ভাবত, দশম স্কন্ধ, দ্বাবিংশ অধ্যায়)

এই লীলা ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণেও কিঞ্চিৎ ভিন্নভাবে আছে। যে কারণেই এই লীলা করুক, সেটা এভাবে না করলেও হতো। ভাবুন এরূপ লীলা আদির ফলে কি শ্রীকৃষ্ণের ঈশ্বরত্ব প্রকাশ হইলো? যদ্যপি পূর্বেই পুরাণ থেকে উল্লেখ করেছি যে তারা কেহই ঈশ্বর নয়। বলা বাহুল্য পুরাণে যে শ্রীকৃষ্ণের ১৬হাজার (বিষ্ণুপুরাণ-৪/১৩/৬৯) বা ১৬হাজার ১শত একটি  (বিষ্ণুপুরাণ-৪/১৫/১৯) অথবা ৩০কোটি পত্নীর (ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ড-১১৫/৮৭-৮৮) উল্লেখ পাই সেসকল স্ত্রীদের নামের তালিকা আমার দৃষ্টিতে পড়েনি এখনো। কারো কারো মনে হইতে পারে আমি একবার গোপিদের শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী বলছি আবার কখনো অন্যদের স্ত্রী বলছি - এটা আসলে আমি নই পুরাণকার পুরাণে বলছে আর আমি তথ্য তুলে ধরেছিমাত্র।

🖋️প্রিয়রত্ন বিদ্যার্থী
╔════ஜ۩۞۩ஜ════╗ 
❣    * অমৃতস্য পুত্রাঃ *       ❣   
╚════ஜ۩۞۩ஜ════╝

Post a Comment

0Comments

Please Select Embedded Mode To show the Comment System.*