এখন বিষ্ণুর অবতার শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে পুরাণে কি আছে তা দৃষ্টিপাত করি। তারপূর্বে বলে নিই যে, শ্রীকৃষ্ণকে পুরাণে কেবল বিষ্ণুর অবতার বলা হয়নি। পুরাণের যে স্ববিরোধীতা আছে তা তো অদ্যবধি প্রমাণ পেয়েই গেছেন। সেরূপ পুরাণে শ্রীকৃষ্ণ বিষ্ণুর অবতার এর বিপরীত পার্বতীর অবতারের তথ্যও পাওয়া যায়। যথা, মহাভাগবত- ৪৯ নং অধ্যায়ে–
যদি মে ত্বং প্রসন্নাসি তদা পুংস্ত্বমবাপ্নুহি।
কুত্রচিৎপৃথিবীপৃষ্ঠে যাস্যেঽহং স্ত্রীস্বরূপতাম॥ ১৬॥
যথাহং তে প্রিয়ো ভর্তা ত্বং বৈ প্রাণসমাঙ্গনা ।
অনুবাদ– (শিবজী পার্বতীকে বলেন) যদি তুমি আমার প্রতি প্রসন্ন হও, তাহলে পৃথিবীর যে কোন স্থানে পুরুষ রূপে অবতীর্ণ নাও এবং আমি নারী রূপে অবতীর্ণ হব। এই সময়ে আমি যেমন তোমার প্রিয় পতি এবং তুমি আমার প্রাণপ্রিয় পত্নী, এরূপই দাম্পত্য সেই সময়েও যেন হয়। [দেবী] ইহাই আমার মনের অভিলাষা; আমার এই উত্তম যাচনা তুমি পরিপূর্ণ করো।
এতদেব মনোঽভীষ্টং বিদ্যতে প্রার্থ্যমুত্তমম্॥ ১৭॥
কুরুষ্ব পরিপূর্ণ মে ভক্তাভীষ্টফলপ্রদে।
ভবিষ্যেঽহং ত্বৎপ্রিয়ার্থং নিশ্চিতং ধরণীতলে ॥১৮॥
পুংরূপেণ মহাদেব বসুদেবগৃহে প্রভো।
কৃষ্ণোঽহং মৎপ্রিয়ার্থং স্ত্রী ভব ত্বং হি ত্রিলোচন ॥১৯॥
অনুবাদ– (শ্রীদেবী বলেন) মহাদেব! প্রভো! তোমার প্রসন্নতার জন্য আমি পৃথিবীতে বসুদেবের গৃহে পুরুষরূপে শ্রীকৃষ্ণ হয়ে জন্ম নিবো, ত্রিলোচন! আমার প্রসন্নতার জন্য তুমিও স্ত্রীরূপে জন্ম নাও।
বৃষভানোঃ সুতা রাধাস্বরূপাহং স্বয়ং শিবে ॥২০॥
তব প্রাণসমা ভূত্বা বিহরিষ্যে ত্বয়া সহ ।
অনুবাদ– (শ্রীশিবজী বলেন) জগৎ পালনকারী শিবে! তুমি পুরুষরূপে শ্রীকৃষ্ণ হলে আমি স্বয়ং তোমার প্রাণসদৃশ বৃষভানুপুত্রী রাধা হয়ে তোমার সাথে বিহার করবো।
এতদেব মুনিশ্রেষ্ঠ কারণং মূলমীরিতম্ ॥২৯॥
অনুবাদ– সেই কারণেই নবীন মেঘের আভাযুক্ত শ্যামবর্ণের শ্রীকৃষ্ণ রূপে অবতীর্ণ হয়। মুনিশ্রেষ্ঠ! শর্বাণীর শ্রীকৃষ্ণ অবতার ধারণ করার ইহাই মুখ্য কারণ বলা হয়েছে।
এখন পুরাণ মান্যকারী পাঠক স্বয়ং বিচার করুন আপনি কার অবতার মানবেন? শ্রীকৃষ্ণকে পুরাণে কতটা কলঙ্কিত করা হয়েছে তা কমবেশ সকলেই জানেন। রাসলীলা তো শুনেছেন তাইনা? রাসলীলায় মূল নায়ীকা রাধা, পুরাণ অনুযায়ী সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণের কি হতো জানেন? এই বিষয়ে পূর্বেই আমি একটি প্রবন্ধ লিখেছিলাম তা যথাবৎ এখানে দিচ্ছি –
রাধার পরিচয় কি?
আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বেশ অনেকটা অংশের মনেই রাধার অস্তিত্ব বিদ্যমান। রাধা নাম ছাড়া যেন তাদের দিনই শুরু হয়না, রাত তো কাটেইনা। কোথাও কোথাও তো কথা শুরু করা হয় রাধে রাধে বলে এবং শেষও করে রাধে রাধে বলে। কৃষ্ণ নাম করবে সে তো রাধা ব্যতীত সম্পূর্ণই হয়না। যেথায় কৃষ্ণের মন্দির সেথায় কৃষ্ণমূর্তির সহিত রাধা নেই সেটা ভাবাও কঠিন। তাদের নিকট রাধা এতটাই প্রাধান্য যে কৃষ্ণ বলার পূর্বে রাধা নাম উচ্চারণ করে। ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, প্রকৃতি খণ্ড -৪৯/৫৯ শ্লোকেও বলা হয়েছে-
ব্যতিক্রমে ব্রহ্মহত্যাং লভতে নাত্র সংশয়ঃ ॥৫৯
অর্থাৎ অগ্রে রাধার নাম উচ্চারণ করে পশ্চাৎ কৃষ্ণ নাম উচ্চারণ করিবে। অন্যথা অগ্রে কৃষ্ণ পশ্চাৎ রাধা উচ্চারণে ব্রহ্মহত্যারপাপভাগী হইবে।
হরে কৃষ্ণ = রাধা কৃষ্ণ তাদের মান্য অর্থ। পুরাণ অনুযায়ীও তাহাই দাঁড়ায়। অসংখ্য ব্যক্তিদের মনে যে রাধা অবস্থান করছেন সেই রাধা আসলে কে? ছোট এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমরা যখন ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিদের প্রশ্নটি করেছি তখন তারা বিভিন্নরকম উত্তর দিয়েছেন। যেমন -
◾১. রাধা হলো শ্রীকৃষ্ণের প্রেমিকা।↓
অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের দক্ষিণ অংশ শ্রীকৃষ্ণরূপ হলো এবং বাম অংশের অঙ্গ রাধারূপ ধারণ করেছেন।
◾২.শ্রীকৃষ্ণই রাধা রাধাই শ্রীকৃষ্ণ
উপরেই এর প্রমাণ উদ্ধৃত করিয়াছি, তারপরেও আরও একটি প্রমান দেখিতে পাই যে শ্রীকৃষ্ণ নিজেই বলছেন যে, রাধা! তুমিই আমি, আমিই তুমি , আমাদের কোন ভেদ নেই।
(জন্মখণ্ড-১৫/৫৭)
◾৩.রাধা হলো শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী। ↓
গর্গ সংহিতা, গোলকখণ্ড, ১৬ তম অধ্যায়ে ব্রহ্মা দ্বারা রাধা-কৃষ্ণের বিবাহের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই ব্রহ্মাকে তারা চার মস্তকযুক্ত মনে করিয়া থাকেন। ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, প্রকৃতিখণ্ড-৪৮/৪৭ শ্লোকেও 'স্বয়ং রাধা কৃষ্ণপত্নী' বলিয়া উল্লেখিত আছে।
◾৪.রাধা হলো শ্রীকৃষ্ণের হ্লাদিনী শক্তি।
শ্রীকৃষ্ণ জন্মখণ্ড-১৫/৬৩ শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলছেন যে -
হে রাধা! তুমি আমার এবং সকলের শক্তিস্বরূপা।
স্কন্দ পুরাণ,বিষ্ণুখণ্ডের শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্য-১/২২, ২/১১ শ্লোকে রাধাকে শ্রীকৃষ্ণের আত্মা বলা হয়েছে।
◾৫. রাধা শ্রীকৃষ্ণের পরম ভক্ত ছিল।
রাধা ভজতি শ্রীকৃষ্ণং স চ তাঞ্চ পরস্পরম ॥৩৮
অর্থাৎ রাধা শ্রীকৃষ্ণকে এবং শ্রীকৃষ্ণ রাধাকে আরাধনা করতেন।
এখানে শ্রীকৃষ্ণকেও রাধার ভক্ত বলা হয়েছে।
◾৬.রাধা মানে শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত অর্থাৎ যে/যারা শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত সে/তাহারাই রাধা।
বৃষভানুসুতা সা চ মাতা যস্যাঃ কলাবতী।
(ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, শ্রীকৃষ্ণ-জন্মখণ্ড-১৩/৯৩)
অর্থাৎ রাধা বৃষভানুসুতা তাহার মাতার নাম কলাবতী।
প্রকৃতিখণ্ড-৪৮/৫৫ শ্লোকেও রাধার পিতা-মাতার নাম বৃষভানু-কলাবতী পাওয়া যায়।
যখন রাধা ভক্তদের কতিপয় এই উত্তর ব্যতীত আর কোন উত্তর আছে কি নেই তা জানার জন্য গ্রন্থাদি অধ্যয়ণ করি, তখন চমৎকার কিছু তথ্য আমাদের নজরে আসে। আর সে তথ্যানুযায়ী রাধার আরও কিছু পরিচয় -
◾৭. রাধা শ্রীকৃষ্ণের মামি।
অতীতে দ্বাদশাব্দে তু দৃষ্ট্বা তাং নবযৌবনাম্।
সার্দ্ধং রায়াণবৈশ্যেন তৎ সম্বন্ধং চকার সঃ॥
(ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, প্রকৃতিখণ্ডম- ৪৯/৩৯)
অনুবাদঃ- দ্বাদশ বৎসর অতীত হইলে, বৃষভানু, রায়াণ বৈশ্যের সহিত নবযৌবনা নিজ-কন্যার [রাধার] বিবাহ সম্বন্ধ করে।
কৃষ্ণমাতা যশোদা যা রায়াণস্তৎসহোদরঃ।
(ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, প্রকৃতিখণ্ডম- ৪৯/৪২)
অনুবাদঃ- রায়াণ, কৃষ্ণজননী যশোদার সহোদর (অর্থাৎ এক মাতার গর্ভজাত ভ্রাতা)
◾৮.রাধা শ্রীকৃষ্ণের কন্যা।
তেন রাধা সমাখ্যাতা পুরাবিদভির্শ্বজোত্তম ॥ (ব্রহ্মখণ্ড-৫/২৬)
অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের বামপার্শ্ব হইতে এক কন্যা আবির্ভূত হইয়াছিলো, পুরাণজ্ঞ পন্ডিতেরা তাহাকে রাধা নাম দিয়াছেন।
প্রকৃতিখণ্ড-৪৮/৪১ ও শ্রীকৃষ্ণ জন্মখণ্ড-১৭/২৩৪, দেবী ভাগবত পুরাণ-৯/২/৫৪ শ্লোকেও শ্রীকৃষ্ণের বামাংশ হইতে রাধার উৎপত্তির উল্লেখ রয়েছে।
যে যার হইতে উৎপন্ন হয় সে তাহার সন্তান, আর রাধা যেহেতু মেয়ে/নারী সেহেতু পুরাণের উক্ত শ্লোকানুযায়ী সে শ্রীকৃষ্ণের কন্যা বলিয়া প্রমাণিত হয়।
অনেকে বলে থাকেন শ্রীরাধা লক্ষ্মী দেবীর অবতার। কিন্তু ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, প্রকৃতিখণ্ড-৪৮/৪৪ শ্লোকে বলা হয়েছে-
চতুর্ভূজস্য সা পত্নী দেবী বৈকুণ্ঠবাসিনী ॥৪৪
অর্থাৎ রাধার বাম অংশ হইতে মহালক্ষ্মী উৎপন্ন হন এবং তিনি চতুর্ভুজ নারায়ণের প্রিয়তমা ; বৈকুণ্ঠে তাঁহার বাস।
তদংশা রাজলক্ষ্মীচ রাজসম্পৎপ্রদায়িনী॥ ৫
অর্থাৎ মহালক্ষ্মীর অংশ রাজলক্ষ্মী, রাজগণের সম্পদ বৃদ্ধি করেন।
শুধু তাহাই নয়, অন্যান্য গোপীসকলেও রাধার অংশ বিশেষ বলিয়া উল্লেখিত রয়েছে।
বভূব তস্য বৈশ্যস্য বিবাহশ্চছায়য়া সহ ॥
(ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণ, প্রকৃতিখণ্ড-৪৯/৪০)
অর্থাৎ রাধার ছায়ার সহিত রায়াণ বৈশ্যের বিবাহ হয়।
স্বয়ম্ রাধা হরেঃ ক্রোড়ে ছায়া রায়াণ মন্দিরে॥ ৪৯/৪৪
অর্থাৎ রাধা স্বয়ম্ শ্রীকৃষ্ণের ক্রোড়ে বাস করিতেন এবং রায়াণ গৃহে রাধার ছায়া অবস্থান করিতেন।
নন্দাত্মজেন রাধায়া রহোবস্থানতোমুনে।
সহালাপাৎ সহাবেশা দনুরাগাৎ পরস্পরং॥
(ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ - ২৪/১)
অনুবাদঃ- জগৎস্রষ্টা জগৎপিতা পিতামহ ব্রহ্মা অঙ্গিরাকে কহিতেছেন - হে বৎস! এইরূপে নন্দনন্দন শ্রীকৃষ্ণের সহিত শ্রীরাধিকার সর্ব্বদা গোপন স্থানে সহবাস এবং যমুনাকচ্ছে আলাপন ও রতিক্রীড়া পরস্পর উভয়ের লীলানুরাগ ও রসাবেশের জন্য গোকুলবাসীজনেরা পরস্পর কর্ণাকর্ণি করিতে লাগিলেন। [ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ অনুযায়ী এইসকলের জন্যই রাধা - কলঙ্কিনী রাধা বলিয়া পরিচিত হন ]
ছোট করে একটি কথা না বললেই নয় যে- কোন ছায়ার সহিত পৌরাণিক পদ্ধতিতে কারো বিবাহ সম্পন্ন করা আদৌতে কি সম্ভব? মালাবদল আদি কতো কি আচার অনুষ্ঠান পালন করা সম্ভব কি? আর এখানে শ্রীকৃষ্ণকে রায়াণের সহিত ছলনা করার, ধোকাবাজ বলে আরোপ করার একটা রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে।
◾৯. রাধা হল মূল প্রকৃতি।
প্রশ্ন- প্রকৃতি কাকে বলা হয়?
উত্তর : কার্য্য জগতের মূল উপাদান কারণ তথা সত্ত্ব-রজঃ-তমঃ গুণের সাম্যাবস্থাকে প্রকৃতি বলা হয়।
আর এই মূল প্রকৃতি জড় পদার্থ। শ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, শ্রীকৃষ্ণ জন্মখণ্ড-১৫/৬৬ শ্লোকে রাধাকে মূল প্রকৃতি বলিয়াছেন।
সংগৃহ্যেমাং প্রিয়ামিষ্টাং গোলোকাদ্গচ্ছ লম্পট।
অন্যথা ন হি তে ভদ্রং ভবিষ্যতি ব্রজেশ্বর ॥
(ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, প্রকৃতিখণ্ডম্ - ১১/৪৪)
অনুবাদঃ- লম্পট! তুমি এই প্রিয় ভার্য্যা লইয়া গোলোক হইতে দূর হও। ব্রজেশ্বর। তাহা না হইলে কিছুতেই তোমার মঙ্গল নাই।
পুরাণের বিভিন্ন স্থানেই রাধাকে খুব রাগান্বিতা নারী বলেই পরিচয় করানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
➤কিন্তু বৈষ্ণবদিগের অতি প্রিয় ও প্রধান গ্রন্থ ভাগবত পুরাণেই রাধার নাম উল্লেখ নেই। অনেকে বলে শ্রীমদ্ভাগবত-১০/৩০ অধ্যায়ে রাধার উল্লেখ আছে, তা আদৌতে সত্য নয়। সেখানে শুধু এটা উল্লেখ আছে যে, সকল গোপিদের মধ্য থেকে কোন এক গোপিকে নিয়ে কৃষ্ণ পালিয়েছিলো।
➤শ্রীকৃষ্ণের প্রমাণ্য ইতিহাস -মহাভারতে এই রাধার উল্লেখ নেই। মহাভারতে কর্ণের লালনপালন করেছেন যে মাতা সেই মাতা রাধার নাম উল্লেখ আছে। কর্ণ স্বয়ম্ শ্রীকৃষ্ণের সহিত বলেছেন যে - [যখন শিশু ছিল তখন] সুত আমাকে এনে নিজ পত্নী রাধাকে দিয়েছে, আর রাধা একজন মাতার যা দায়িত্ব তা সম্পূর্ণই করেছেন। (মহাভারত, উদ্যোগপর্ব - ১৪১/৫-৬)
বৈদেহ্যাং চ যথা রামো রুক্মিণ্যাং চ জনার্দনঃ।
(উদ্যোগপর্ব-১১৭/১৭)
অর্থাৎ যেমন বিদেহনন্দিনী সীতার জন্য রাম তেমনি রুক্মিণীর জন্য ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ।
রাধার এত এত পরিচয় দ্বারা এটা প্রমাণিত যে রাধার পরিচয়েরই ঠিক নেই। ঠিক থাকার কথাও নয় কেননা আদৌতে শ্রীকৃষ্ণের প্রেমিকা.... রাধার কোন অস্তিত্বই ছিলনা। বিয়ের পূর্বেই রুক্মিণী দেবী শ্রীকৃষ্ণের গুণে মুগ্ধ ছিল, ভালোবেসেও ছিল শ্রীকৃষ্ণকে, শ্রীকৃষ্ণও রুক্মিণীর প্রতি তেমনই ছিল। দুজন বিয়ের পর ১২ বছর ব্রহ্মচর্য পালন করে প্রদ্যুম্ন নামের এক সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। অথচ পুরাণে অসংখ্যাত পুত্রাদির গল্প রচনা করে দিয়েছে।
রাধার অস্তিত্ব ছিল কিনা তা নিয়ে অনেকেই অনেক গবেষণা করেছেন। সেই গবেষকগণ এটাই বলেছেন যে, রাধার উল্লেখ প্রথমে অর্বাচীন ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ থেকেই শুরু হয়, সেই কাল্পনিক রাধার বিস্তার হতে হতে অন্যান্য পুরাণেও প্রবেশ করানো হয় রাধার বিষয়ে। কবিদের কল্পনায় বহু গল্প রচিত হয় রাধাকে নিয়ে, কিন্তু সত্যিকারে রাধা বলতে এমন কারো অস্তিত্বই ছিলনা।
শ্রীকৃষ্ণের চরিত্রের জন্য কলঙ্ককর বিষয় রাধা গোপীদের লীলা কাহিনি । অনেকেই বলেন যে তখন কৃষ্ণ শিশু ছিল, তাই কলঙ্কের প্রশ্ন আনাটাই ভুল। কিন্তু ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, শ্রীকৃষ্ণ জন্মখণ্ড -১৫ অধ্যায়ের শ্লোকানুযায়ী কৃষ্ণ শিশু থেকে কিশোর হতে পারতেন এবং হইতেন।
অতঃ আমাদের উচিত রাধা-কৃষ্ণকে নয় বরং মাতারুক্মিণী এবং শ্রীকৃষ্ণকে মান্যতা দেওয়া। ]
এখন এত পরিচয় থেকে আপনি কোনটি মানবেন। যেটাই মানুন, ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ অনুযায়ী রাসলীলায় কি কি হয়েছে তার নমুনা তুলে ধরছি।...........