গন্ধর্বকিন্নরাণাং চ মনুষ্যাণাং চ সর্বতঃ॥১॥
মন্ত্রেণ তাঃ সমাকৃষ্য ত্বতিদূরে বিহায়সি
তপোব্যাজপরো দেবস্তাসু সঙ্গতমানসঃ॥২॥
অতিরম্যাং কুটীং কৃত্বা তাভিঃ সহ মহেশ্বরঃ
ক্রীডাং চকার সহসা মনোভব পরাভবঃ॥৩॥
এতস্মিন্নন্তরে গৌর্যাশ্চিত্তমুদ্ভ্রান্ততাং গতম্
অপশ্যদ্ধ্যানয়োগেন ক্রীডন্তং জগদীশ্বরম্॥৪॥
স্ত্রীভিরন্তর্গতং জ্ঞাত্বা রোষস্য বশগাভবৎ
ততঃ ক্ষেমঙ্করী রূপা ভূত্বা চ প্রবিবেশ সা॥৫॥
ব্যোমৈকান্তেতিদূরে চ কামদেব সমপ্রভম্
বামাতিমধ্যগং শুভ্রং পুরুষং পুরুষোত্তমম্॥৬॥
স্ত্রীভিঃ সহ সমালিগ্য প্রক্রীডন্তং মুহুর্মুহুঃ
চুম্বন্তং নির্ভরং দেবং হরং রাগপ্রপীডিতম্॥৭॥
বৃত্তং ক্ষেমঙ্করী দৃষ্ট্বা নিপপাতাগ্রতস্তদা
তাসাং কেশেষু চাকৃষ্য চকার চরণাহতিম্॥৮॥
ত্রপয়া পীডিতশ্শর্বঃ পরাঙ্মুখমবস্থিতঃ
কেশেষ্বাকৃষ্য রোষাত্তাঃ পাতয়ামাস ভূতলে॥৯॥
স্ত্রিয়ঃ সর্বাধরাং প্রাপ্য সহসা বিকৃতাননাঃ
উমাশাপপ্রদগ্ধাঙ্গা ম্লেচ্ছানাং বশমাগতাঃ॥১০॥
তাশ্চাণ্ডালস্ত্রিয়ঃ খ্যাতা অধবা ধবসংয়ুতাঃ
অদ্যাপ্যুমাকৃতং শাপং সর্বাস্তাশ্চ সমশ্নুয়ুঃ॥১১॥
(পদ্মপুরাণ,সৃষ্টিখণ্ড-৫৬/১-১১)
পুরাকালে মহাদেব গন্ধর্ব্ব কিন্নর ও মনুষ্যগণের রূপবতী যুবতী স্ত্রীসকল দেখিয়া মন্ত্রবলে তাহাদিগকে আকর্ষণপূর্ব্বক অতি দূরে আকাশপথে লইয়া গেলেন। দেবদেব তপস্যাব্যাজে তাহাদের সহিত সঙ্গম করিবার মানসে এক অতিরম্য কুটীর নির্মাণ করিলেন। তিনি মনোভবের পরাভবকর্তা হইলেও সেই সকল রমণীর সহিত ক্রীড়া করিতে লাগিলেন। ইত্যবসরে গৌরীর চিত্ত উদ্ভাস্ত হইল। তিনি ধ্যানযোগে জগদীশ্বরকে স্ত্রীগণ মধ্যে ক্রীড়া করিতে দেখিলেন। দোখয়াই রোষাবিষ্ট হইলেন। অনন্তর তিনি ক্ষেমঙ্করীরূপ ধারণ করিয়া সুদূর আকাশপ্রান্তে সেই রম্য কুটীরে প্রবেশ করিলেন; দেখিলেন-শুভ্র সুপুরুষ দেবদেব রমণীগণমধ্যে কামদেব তুল্য কান্তি ধারণ করিয়া তাহাদিগকে গাড় আলিঙ্গন, তাহাদের সহিত মুহুর্মুহু ক্রীড়ন ও নির্ভরভাবে তাহা- দিগকে চুম্বন করিতেছেন। ক্ষেমঙ্করী এই ব্যাপার দেখিয়া তাঁহার অগ্রেই গিয়া উপস্থিত হইলেন এবং সেই সকল নারীর কেশাকর্ষণ করিয়া চরণাঘাত প্রদান করিলেন। মহাদেব লজ্জায় মুখ ফিরাইয়া, অবস্থান করিতে লাগি- লেন। ক্ষেমঙ্করী রোষে কেশাকর্ষণ করিয়া সেই সকল নারীকে ভূতলে পাতিত করি- লেন। স্ত্রীগণ ধরাতল প্রাপ্ত হইয়া সকলেই সহসা বিকৃতবদন হইয়া গেল। উমার শাপে তাহাদের অঙ্গ দগ্ধ হইল। মেচ্ছগণের বশীভূত হইয়া পড়িল। তাহারা তাহারা চণ্ডাল স্ত্রী নামে বিখ্যাত এবং পতিবির- হিত হইয়াও পতিযুক্ত হইল। ঐ সকল নারী অদ্যাপি উমাকৃত শাপ সমানভাবে ভোগ করিতেছে।
সার্দ্ধং তপো মহৎকুর্বন্ব্রহ্মধ্যানপরোঽভবৎ ॥৬৭
তদা ব্রহ্মা হরিশ্শ-যুঃ স্বস্ববাহনমাস্থিতাঃ।
বরং ব্রূহীতি বচনং তমাহুস্তে সনাতনাঃ ॥৬৮
ইতি শ্রুত্বা বচস্তেষাং স্বয়ম্ভূতনয়ো মুনিঃ ।
নৈব কিঞ্চিদ্বচঃ প্রাহ সংস্থিতঃ পরমাত্মনি ॥৬৯
তস্য ভাবং সনালোক্য ত্রয়ো দেবাঃ সনাতনাঃ ।
অনসূয়াং তস্য পত্নীং সমাগম্য বচোঽব্রুবন্ ॥৭০
লিঙ্গহস্তঃ স্বয়ং রুদ্রো বিষ্ণুস্তদ্রসবর্দ্ধনঃ ।
ব্রহ্মা কামব্রহ্মলোপঃ স্থিতস্তস্যা বশং গতঃ ॥৭১
রতিং দেহি মাঘূর্ণে নো চেৎপ্রাণাংস্ত্যজাম্যহম্
পতিব্রতাঽনসূয়া চ শ্রুত্বা তেষাং বচোঽশুভম্ ।
নৈব কিঞ্চিদ্বচঃ প্রাহং কোপভীতা সুরান্প্রতি ॥৭২
মোহিতাস্তত্র তে দেবা গৃহীত্বা তাং বলাত্তদা ।
মৈথুনায় সমুদ্যোগং চক্রুর্মায়াবিমোহিতাঃ ॥৭৩
তদা ক্রুদ্ধা সতী সা বৈ তাঞ্ছশাপ মুনিপ্রিয়া।
মম পুত্রা ভবিষ্যন্তি য়ুয়ং কামবিমোহিতাঃ ॥৭৪
মহাদেবস্য বৈ লিঙ্গং ব্রহ্মণোঽস্য মহাশিরঃ ।
চরণৌ বাসুদেবস্য পূজনীয়া নরৈ স্সদা ॥
ভবিষ্যন্তি সুরশ্রেষ্ঠা উপহাসোঽয়মুত্তমঃ ॥৭৫
(ভবিষ্য০, প্রতি০, চতুর্থ খ০, অধ্যায়-১৭ শ্লোক-৬৭-৭৫)
একবার ভগবান্ অত্রি ঋষি নিজ অনসূয়া নামক পত্নী সহ গঙ্গার তটে ব্রহ্মধ্যানে নিমগ্ন হয়ে মহান তপ আরম্ভ করেন। সেই সময় ব্রহ্মা, বিষ্ণু, এবং শিব জী নিজ-নিজ বাহনে বসে সেখানে পৌঁছানোর প্রযত্ন করেন। সেখানে পৌঁছে তাঁরা ব্রহ্মপুত্র অত্রিকে বরযাচনার জন্য বলেন। কিন্তু অত্রি তাদের কথায় ধ্যান না দিয়ে পূর্বের ন্যায় ব্রহ্মধ্যানে মগ্ন থাকেন। তাঁর ভাব বুঝে সেই তিন দেব তাঁর পত্নী অনসূয়ার নিকটে গিয়ে তাঁকে বলতে আরম্ভ করেন। সেই সময় অনসূয়ার বশীভূত হয়ে রুদ্র হাত দিয়ে লিঙ্গ গ্রহণ করেছিলেন, বিষ্ণু তাতে রস বৃদ্ধি করছিলেন এবং ব্রহ্মা নিজ কামবাসনা নষ্ট করতে উদ্যত হয়েছিলেন। তাঁরা বারংবার অনসূয়াকে ইহাই বলছিলো যে– নেশাগ্রস্তকারী নেত্র দ্বারা কটাক্ষপাতকারী প্রিয়ে! আমায় রতি দান প্রদান করো, অন্যথা তোমার সামনে আমার প্রাণ বের হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সেই সময় পতিব্রতা অনসূয়া তাঁদের অশুভ বাণী শুনেও তাদের কোপভয়ে ভয়ভীত হওয়ায় কিছুই বলেননি। কিন্তু অত্যন্ত মোহিত সেই বলবান্ ব্রহ্মা,বিষ্ণু, মহাদেব যে মায়া বিমুগ্ধ ছিলো, বলাৎ (জবরদস্তি) অনসূয়াকে ধরে মৈথুন করার প্রযত্ন করেন। সেই সময় ক্রুদ্ধ হয়ে সেই সতী মুনিপত্নী তাঁদের অভিশাপ দিলেন যে– কামমোহিত হওয়ার জন্য তোমরা আমার পুত্র হইবে। সুরশ্রেষ্ঠ! মহাদেবের লিঙ্গ, ব্রহ্মার মস্তক, এবং বিষ্ণুর চরণের পূজা মনুষ্যদের দ্বারা সদৈব যা হয়, তা এক উত্তম উপহাসের কথা হইবে।
এখন বিষ্ণুর অবতার শ্রীকৃষ্ণের লীলা নিয়ে জানা যাক। তারপূর্বে বলে নিই যে, শ্রীকৃষ্ণকে পুরাণে কেবল বিষ্ণুর অবতার বলা হয়নি। পুরাণের যে স্ববিরোধীতা আছে তা তো অদ্যবধ প্রমাণ পেয়েই গেছেন। সেরূপ পুরাণে শ্রীকৃষ্ণ বিষ্ণুর বদলে........(চলবে)