পুরাণ বিমর্শ ত্রয়োদশ-পর্ব (পুরাণে "শ্রীকৃষ্ণ")

প্রিয়রত্ন বিদ্যার্থী
0
পুরাণ বিমর্শ ত্রয়োদশ-পর্ব
পুরাণে "শ্রীকৃষ্ণ" [রাসলীলা]


এখন এত পরিচয় থেকে আপনি কোনটি মানবেন। যেটাই মানুন, দেখুন রাসলীলায় কি কি হয়েছে, ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ থেকে–


নারদ মুনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে গোপিকাগণের সাথে শ্রীকৃষ্ণের কিরূপে সঙ্গম হইল? এর উত্তরে সূত ঋষির বর্ণনায় জানা যায় - (সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো) একদা শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে গিয়ে দেখেন সেখানকার পরিবেশ খুবই সুন্দর এবং মনোহর। এত সুন্দর সুশোভিত পরিবেশ দেখে কৌতুকবশতঃ সেই স্থানে কামুকী গোপিকাদিগের কামবর্দ্ধনের কারণভূত বিনোদমুরলীধ্বনি করিলেন। রাধা তা শুনে কামাধীনচিত্তে তৎক্ষণাৎ মোহিতা হইলেন। ক্ষণকাল পর চেতনা পাইয়া বিচলিত হইয়া সেদিক যাইতে লাগিলেন। রাধিকার সখিরাও "কুলধর্ম্মৎ পরিত্যাজ্য নিঃশঙ্কা কামমোহিতাঃ" কামবশে মোহিত হইয়া কুলধর্ম পরিত্যাগ করত শীঘ্র গৃহ হইতে বহির্ভূতা হইলেন(১)। [শ্রীমদ্ভাবতে উল্লেখ আছে - কোন কোন গোপী শিশুকে দুধ পান করাচ্ছিলেন বা তাদের পতিদের একান্ত সেবা করছিলেন, সেসব তৎক্ষণাৎ ত্যাগ করে গমণ করেছিলেন।]

গোপীদের সংখ্যা ছিলো– 

সুশীলার সাথে– ১৬,০০০।    শশিকার সাথে–১৪,০০০।
চন্দ্রমুখীর সাথে– ১৩,০০০।  মাধবীর সাথে– ১৬,০০০।
কালিকার সাথে– ১৪,০০০।  কমলার সাথে– ১৩,০০০।
সরস্বতীর সাথে– ১৩,০০০।   ভারতীর অনুগামী –১০,০০০।
অপর্ণার সাথে– ১০,০০০।     রতি সহ– ১০,০০০।
গঙ্গার সাথে– ১৪,০০০।      কৃষ্ণপ্রিয়ার সাথে–১৬,০০০।
সতীর সাথে– ১৩,০০০।      নন্দিনীর সাথে– ১০,০০০।
সুন্দরীর সাথে– ১৩,০০০।   কৃষ্ণপ্রাণার সাথে–১৬,০০০।
মধুমতীর সাথে– ১৪,০০০।  চম্পার সাথে– ১৩,০০০।
চন্দনার সাথে– ১৪,০০০।


দুই লক্ষ, বাহান্ন হাজারেরও অধিক, তবে এই অধ্যায়েই পরে বলা হয়েছে যে 'গোপিনাং নব লক্ষানি' ৯লক্ষ গোপী ছিলো । সেখানে যাওয়ার পর শ্রীকৃষ্ণ রাধিকার দিকে কটাক্ষ দৃষ্টিনিক্ষেপ করিলেন, তা দেখে রাধা লজ্জায় বস্ত্রাঞ্চলে মুখ আচ্ছাদন করিলেন এবং কামবাণে পীড়িত হইয়া তৎক্ষণাৎ মূর্চ্ছিতের ন্যাত চৈতন্যশূণ্য হইলেন, এইরূপে কামবাণে প্রপীড়িত হইয়া শ্রীকৃষ্ণও মূর্চ্ছিতভাবে স্থাণুর ন্যায় নিশ্চলভাবে দণ্ডায়মান রহিলেন। ক্ষণকাল পর চেতনা লাভ করে রাধাকে জরিয়ে ধরে চুম্বন করতে লাগিলেন।  শ্রীকৃষ্ণ নয় লক্ষ গোপীর সহিত নব লক্ষ গোপরূপ ধারণ করেন  এবং ১৮লক্ষ গোপ গোপী সকলেই কামবশে মত্ত ছিলো। সকলে স্থল-জল ক্রীড়া করেন। তারপর কোন গোপী শ্রীকৃষ্ণের বংশী নিলেন তো কোন কামপ্রমত্তা গোপী বিবস্ত্র করে দিলেন, কোন গোপী আলিঙ্গনপূর্বক বিম্বোষ্ঠে চুম্বন করিতে লাগিলেন। শ্রীকৃষ্ণ রাধার শ্রোণীদেশ ও কুচযুগল নখক্ষত করিলেন ও দন্তদ্বারা পক্কবিম্বসদৃশ অধর দংশন করিলেন। ক্ষণকাল গোপিকাগণের সাথে ক্রীড়া করেন, শ্রীকৃষ্ণ তাদের স্তনের উপরে স্বীয় নখাঘাত  ও সুকঠিন শ্রোণীদেশেও নক-চিত্র বিন্যস্ত করিলেন। তৎপর তিনি নববিধ আলিঙ্গন, অষ্টপ্রকার চুম্বন ও ষোড়শ প্রকার শৃঙ্গার করিলেন। কামুকপ্রবর শ্রীকৃষ্ণ কামুকী গোপীকাগণের অঙ্গের দ্বারা অঙ্গ, প্রত্যঙ্গে প্রত্যঙ্গ আলিঙ্গন করিলেন। কামশাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতগণ নারী- গণের ষোড়শ কলানুসারে শৃঙ্গার কলাভেদে যে ভিন্ন- রূপ অবগত আছেন এবং প্রকৃত শৃঙ্গার দ্বাদশ প্রকার ও বিপরীত চারিপ্রকার, যহা কামশাস্ত্রে নিরূপিত আছে, কৃষ্ণ তাহা হইতে অধিকরূপে গোপীগণের সহিত বিহার করিলেন। ক্রীড়ারন্তে ক্রীড়ামধ্যে ও ক্রীড়ার অবসানকালে শ্রীকৃষ্ণ কামিনীগণের প্রীতির নিমিত্ত ক্রীড়ার আনুষঙ্গিক কার্য্য সকলও যাহা কামশাস্ত্রে নিরূপিত আছে, তাহা অপেক্ষা অধিকরূপে সম্পন্ন করিলেন। সেখানে মুনি, ঋষি,  সুর, সিদ্ধ পুরুষ সহ স্বীয় পত্নী নিয়ে আগমণ করেন। শঙ্কর ও পার্বতীও আগমণ করেন [(২)মহাভাগবতে তো বলা হয়েছে শ্রীকৃষ্ণ হয়ে পার্বতী অবতীর্ণ হবেন এবং রাধা ও গোপীগণ হয়ে শঙ্কর অবতীর্ণ হবেন, তাহলে এখানে আবার আসার প্রসঙ্গ কেন?] দেবপত্নীগণ এসব দেখে কামবাণে প্রপীড়িত হইলেন। তারপর শ্রীকৃষ্ণ ও গোপীগণ যমুনাজলে গমন করিলেন। শ্রীকৃষ্ণ জোরপূর্বক রাধিকার বস্ত্র গ্রহণ করিলে রাধা নগ্না হইলেন। তিনি বিবস্ত্র রধিকাকে আলিঙ্গন করতে জলমধ্যে নিমগ্ন হইলেন এবং জলাভ্যন্তরে ক্রীড়া করে রাধিকাসহ উত্তিত হইলেন। তাহার পর কৃষ্ণ, লজ্জানম্রমুখী নগ্না রাধিকাকে গোপিকামণ্ডলী- মধ্যে দর্শন করাইয়া পুনর্ব্বার যমুনাজলে নিঃক্ষেপ করিলেন। শ্রীকৃষ্ণ নগ্না রাধিকাকে চুম্বন করিতেন, জরিয়ে ধরতেন। এই ক্রীড়া শেষে বস্ত্রবিহীন শ্রীকৃষ্ণ এবং বস্ত্রবিহীন রাধিকা  উভয়ে উভয়ের নিকট বস্ত্র প্রার্থনা করিলেন এবং একে অপরকে বস্ত্র প্রদান করিলেন। গোপীগণও কাম নিবারণ করার জন্য শ্রীকৃষ্ণের সাথে বিবিধ কিছু করছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ এসব দেখে তাদের মানসিক ভাব অবগত হইয়া রাধিকাকে নিয়া অন্তর্হিত হইলেন আর রাধার সাথে অতি নির্জন স্থানে বিবিধ স্থানে গমন করে সেখানে সুখভোগ করতে লাগলেন। (শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ড- ২৮,২৯ অধ্যায়)


এ নিয়ে কেহ যদি বলেন শ্রীকৃষ্ণ বালক ছিলো, কামবাসনা বুঝিতেন না, এইসব অপ্রাকৃত লীলা, তাহলে উপরোক্ত লিখা তিনি বুঝিতে অক্ষম। তারপরেও তাদের জন্য পূর্বে উল্লেখিত তথ্য থেকে পুনঃ এইটুকু তথ্য দিই পুরাণের কৃষ্ণ সম্পর্কে– 

বালস্তু গোপকন্যাভির্বনে ক্রীড়াং চকার সঃ
দশ লক্ষাণি পুত্রানাং গোপালানাং সসর্জ্জ হ॥৬৪॥
             (শিবপুরাণ ধর্ম সংহিতা অধ্যায় ৯)


বাল্যাবস্থাতেই গোপকন্যাগণের সহিত বনমধ্যে বিহার করত তাহাদিগের গর্ভে দশ লক্ষ পুত্র উৎপাদন করিয়াছিলেন। 


তারপরেও কি কিছু বলার বাকি থাকবে? যদি থাকে তাহলে বুদ্ধিহীন কিনা যাচাই করা প্রয়োজন।  অন্যদিকে শ্রীকৃষ্ণ অন্য গোপীদের সাথে এহেন কার্য করলে আর তা রাধা জানতে পারলে তৎক্ষণাৎ সেই গোপীদের অভিশাপ দিতেন,  পূর্বে যে উল্লেখ করেছি বিষ্ণু 'পরস্ত্রীধর্ষণং'(শিবপুরাণ) পরস্ত্রী ধর্ষণ করেছে অর্থাৎ তুলসীকে শঙ্খচূড় সেজে করেছেন সেই তুলসীকেও রাধা অভিশাপ দিয়েছিলেন।

       (ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, প্রকৃতিখণ্ড, পঞ্চদশ অধ্যায়)

🖋️প্রিয়রত্ন বিদ্যার্থী

 ╔════ஜ۩۞۩ஜ════╗  
 ❣    * অমৃতস্য পুত্রাঃ *         ❣    
 ╚════ஜ۩۞۩ஜ════╝

Post a Comment

0Comments

Please Select Embedded Mode To show the Comment System.*